দ্য গার্ডিয়ান : গতকাল সোমবার ভোরের প্রায় কাছাকাছি মাত্রার একটি ভূমিকম্প ১৯৯৯ সালে তুরস্কে আঘাত হেনেছিল। ওই ভূমিকম্পে লন্ডভন্ড হয় ইজমিত ও জনবহুল পূর্বাঞ্চলীয় মারমারা সাগর অঞ্চল। ওই ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা ১৭ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান সোমবারের ভূমিকম্পকে ১৯৩৯ সালের পর সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্যোগ বলে আখ্যায়িত করেছেন। ১৯৩৯ সালের ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা ছিল ৩২ হাজারের বেশি এবং আহত হয়েছিলেন লক্ষাধিক। একুশ শতকে এখন পর্যন্ত সাতটি ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়েছে। এসব ভূমিকম্পের প্রতিটিতে নিহতের সংখ্যা ছিল ২০ হাজারের বেশি। ২০০১ সালে ভারতের গুজরাত এবং ২০১১ সালে তহুকু ভূমিকম্প ও সুনামিতে জাপানে নিহতের সংখ্যা ছিল ২০ হাজারের সামান্য বেশি। ২০০৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর ইরানে বাম ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা ২৬ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ২০০০ দশকের মাঝামাঝিতে দুটি বড় ভূমিকম্প হয়। ২০০৫ সালের অক্টোবরে কাশ্মিরের ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ভারত, পকিস্তান ও আফগানিস্তান। আর ২০০৮ সালের মে মাসে চীনের সিচুয়ানে হয়েছিল ভূমিকম্প। দুটি ভূমিকম্পে সম্মিলিত প্রাণহানির সংখ্যা ৮৭ হাজার।
একুশ শতকের সবচেয়ে প্রাণঘাতী দুটি ভূমিকম্পের প্রতিটিতেই নিহতের সংখ্যা ২ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। যদিও নিহতের সংখ্যা একেবারে সঠিক নয়। ২০১০ সালে হাইতির ভূমিকম্পে দ্বীপটি লন্ডভন্ড হয়ে যায়। বলা হয়ে থাকে নিহতের সংখ্যা ২ লাখ ২০ হাজার। এই শতকের সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্প হয় ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর। ভারত মহাসাগরের এই ভূমিকম্পের পর সুনামি দেখা দেয়। এতে ২ লাখ ২৫ হাজার মানুষের প্রাণহানি হয়। এই ভূমিকম্পের তীব্রতা ছিল রিখটার স্কেলে ৯ দশমিক ১ থেকে ৯ দশমিক ৩। রেকর্ডকৃত ভূমিকম্পের মধ্যে এটি ছিল তৃতীয় সর্বোচ্চ মাত্রার এবং এর ব্যাপ্তি ছিল আট ও দশ মিনিটের মধ্যে।
৮৪ বছরে এত শক্তিশালী ভূমিকম্প দেখেনি তুরস্ক
৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প তুরস্ক ও সিরিয়ায় আঘাত হেনেছে। এটি দেশটিতে গত ৮৪ বছরের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প। সোমবার ভোরের দিকে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী দল ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে জীবিত ও নিহতদের উদ্ধার করছে। ভূমিকম্পটির কেন্দ্রস্থল ছিল তুরস্কের গাজিয়ান্তেপ শহরে, যা সিরিয়ার সীমান্ত থেকে ৯৫ কিলোমিটার দূরে। তুরস্ক, সিরিয়া, লেবানন, সাইপ্রাস ও ইসরায়েলের কোটি মানুষ ভূমিকম্পটি টের পেয়েছেন।
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের ভূকম্পনবিদ স্টিফেন হিকস বলেন, এর আগে ১৯৩৯ সালের ডিসেম্বরে তুরস্কের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণহাণি ঘটে। হিস্টোরি কালেকশন নামে একটি ওয়েবসাইট বলছে, ১৯৩৯ সালের ২৬ ডিসেম্বর ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। এর কেন্দ্রস্থল ছিল এরজিনকান শহরের।স্থানীয় সময় রাত ১টা ৫৭ মিনিটে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। তাৎক্ষণিকভাবেই এই ভূমিকম্পে ৮ হাজার মানুষ নিহত হন। সব মিলিয়ে ৩৩ হাজার মানুষ মারা যান। এতে ১ লাখ ১৬ হাজার ৭২০টি ভবন ধ্বংস হয়।
সাম্প্রতিক কয়েকটি ভূমিকম্প
২০২০ সালের অক্টোবরে ৭ মাত্রার একটি ভূমিকম্প এজিয়ান সাগরে তুরস্ক উপকূলের কাছাকাছি গ্রিক দ্বীপ সামোসের কাছে আঘাত হানে। এতে তুরস্কে ২৪ জন নিহত হন। গ্রিসেও বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়।
২০২০ সালের জানুয়ারিতে ৬ দশমিক ৭ মাত্রার একটি ভূমিকম্প তুরস্কের পশ্চিমাঞ্চলে আঘাত হানে। এতে ২২ জনের প্রাণহানি ঘটে। আহত হন কয়েকশ। সিরিয়া, জর্জিয়া ও আর্মেনিয়াতেও ক্ষয়ক্ষতি হয়।
২০১১ সালের অক্টোবরে তুরস্কের পূর্বাঞ্চলে ৭ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্পে ১৩৮ জনের প্রাণহানি হয়। আহত হন অন্তত ৩৫০ জন। এর কেন্দ্রস্থল ছিল ভ্যান প্রদেশে, ইরান সীমান্তের কাছাকাছি। ইরাকের উত্তরাঞ্চলে এটি বেশ ভালোভাবে অনুভূত হয়।
২০১০ সালে ৬ মাত্রার একটি ভূমিকম্প তুরস্কের পূর্বাঞ্চলে আঘাত হানে। এতে ৫১ জনের প্রাণহানি হয়। একটি গ্রামে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়, আরও চারটি গ্রামও এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে একই অঞ্চলে ৫ দশমিক ৬ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয়।
১৯৯৯ সালের আগস্টে ৭ দশমিক ৪ মাত্রার ভূমিকম্প তুরস্কের পশ্চিমাঞ্চলের শহর ইজমিতে আঘাত হানে। এতে ১৭ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে।
একুশ শতকের ভয়াবহ ৭টি ভূমিকম্প
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ






















