ঢাকা ০৩:২৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৫ অগাস্ট ২০২৫

শ্রম বেচাকেনার হাট

  • আপডেট সময় : ১২:১৫:০৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৩
  • ১১০ বার পড়া হয়েছে

রাজবাড়ী প্রতিনিধি : বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা নামার অপেক্ষা। তখনও চোখে-মুখে চিন্তার ছাপ। পকেটে কোনো টাকা নেই। সকালে দুইটি রুটি খেলেও দুপুরে খাবার খাননি। বয়সের ভাড়, ক্লান্ত শরীর ও ক্ষুদার্ত পেটে এভাবেই রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ বাজার রেল স্টেশনে শ্রম বিক্রি করতে বসে থাকতে দেখা যায় আবুল মোল্লাকে (৭০)। সকালের আলো ফুটতেই ব্যস্ত হয়ে ওঠে গোয়ালন্দ বাজার রেল স্টেশন। ভোর থেকেই এখানে শ্রম বেচাকেনার হাট বসে। এই হাটে শ্রম বেচতে আসেন কয়েকশ মানুষ। সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, পাবনা, কুষ্টিয়া মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, রাজশাহী, কুড়িগ্রাম, গাইবান্দা জেলাসহ বিভিন্ন উপজেলার নি¤œ আয়ের মানুষ হাটে এসেছেন। তারা এখানে রাজমিস্ত্রি, কাঠমিস্ত্রি, রংমিস্ত্রি, সেনেটারি মিস্ত্রি, দিনমজুরসহ নানা কাজের শ্রম বিক্রি করতে উপস্থিত হয়েছেন। তবে শ্রম কিনতে আসা কেউ আবুল মোল্লাকে কাজে নিতে দামদর করেননি।
আবুল মোল্লা বলেন, প্রয়োজনের তাগিদে শ্রম বিক্রির জন্য ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলা থেকে রাজবাড়ীতে এসেছি। বাড়ি থেকে ২০০ টাকা নিয়ে এসেছিলাম দুইদিন আগে। প্রথমে রাজবাড়ী রেল ষ্টেশন ও পরে গোয়ালন্দ রেল ষ্টেশন আসি শ্রম বিক্রির জন্য। তবে দুইদিন অতিবাহিত হলেও কেউই আমাকে কাজে নিচ্ছে না। তিনি আরোও বলেন, এলাকায় তেমন কাজ-কর্ম নেই। যে কারণে এসেছিলাম। রাজবাড়ীতে এসে দেখি এই জেলাতেও তেমন কাজ-কর্ম নেই। যা আছে তাতে শক্তিশালী যুবক লোকদের নেওয়া হচ্ছে। আমাদের মত বয়স্ক ব্যক্তিদের এই বাজারে কোনো মূল্য নেই। চাহিদা না থাকার কারণে গত দুই দিনেও নিজেকে কাজের জন্য বিক্রি করতে পারলাম না। মুন্নাফ সরদার (৫৫) নামের অপর এক ব্যক্তি বলেন, রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলা থেকে এসেছি কাজের সন্ধানে। দুপুর ১২টার দিকে এই বাজারে এসেছি কাজের জন্য। শ্রম বিক্রির এই হাটে আগেও এসেছি অনেকবার। কিন্ত সন্ধ্যা হয়ে আসলেও কোনো ব্যক্তি শ্রম কিনতে আমাদের কাছে আসছেন না। মূলত এলাকায় কাজ না থাকার কারণে আমরা ছয়জন এসেছি এই হাটে। কেউ দাম-দর করছে না। যাদের ঠিক করা হচ্ছে তারাও শ্রমের মজুরি ৩০০ টাকার বেশি নয়। কুরমান খান (৪২) নামের অপর এক ব্যক্তি বলেন, শুনেছি এই উপজেলায় এখন অনেক কাজ। যে কারণে আমরা এসেছি। প্রতি বছর এই সময় আসি কাজের জন্য। কিন্ত এবার কোনো কাজ পাচ্ছি না। দুইজন এসেছিলেন দাম করতে। ৩০০ টাকার বেশি বলেন না তারা। তিনি দুঃখ করে বলেন, সন্ধ্যা গড়িয়ে এলো এখনো কাজ পেলাম না। কাজ না পেলে বাধ্য হয়ে বাড়ি ফিরে যেতে হবে। আবার অনেকেই রয়ে যাবেন রেল ষ্টেশনে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

শ্রম বেচাকেনার হাট

আপডেট সময় : ১২:১৫:০৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৩

রাজবাড়ী প্রতিনিধি : বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা নামার অপেক্ষা। তখনও চোখে-মুখে চিন্তার ছাপ। পকেটে কোনো টাকা নেই। সকালে দুইটি রুটি খেলেও দুপুরে খাবার খাননি। বয়সের ভাড়, ক্লান্ত শরীর ও ক্ষুদার্ত পেটে এভাবেই রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ বাজার রেল স্টেশনে শ্রম বিক্রি করতে বসে থাকতে দেখা যায় আবুল মোল্লাকে (৭০)। সকালের আলো ফুটতেই ব্যস্ত হয়ে ওঠে গোয়ালন্দ বাজার রেল স্টেশন। ভোর থেকেই এখানে শ্রম বেচাকেনার হাট বসে। এই হাটে শ্রম বেচতে আসেন কয়েকশ মানুষ। সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, পাবনা, কুষ্টিয়া মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, রাজশাহী, কুড়িগ্রাম, গাইবান্দা জেলাসহ বিভিন্ন উপজেলার নি¤œ আয়ের মানুষ হাটে এসেছেন। তারা এখানে রাজমিস্ত্রি, কাঠমিস্ত্রি, রংমিস্ত্রি, সেনেটারি মিস্ত্রি, দিনমজুরসহ নানা কাজের শ্রম বিক্রি করতে উপস্থিত হয়েছেন। তবে শ্রম কিনতে আসা কেউ আবুল মোল্লাকে কাজে নিতে দামদর করেননি।
আবুল মোল্লা বলেন, প্রয়োজনের তাগিদে শ্রম বিক্রির জন্য ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলা থেকে রাজবাড়ীতে এসেছি। বাড়ি থেকে ২০০ টাকা নিয়ে এসেছিলাম দুইদিন আগে। প্রথমে রাজবাড়ী রেল ষ্টেশন ও পরে গোয়ালন্দ রেল ষ্টেশন আসি শ্রম বিক্রির জন্য। তবে দুইদিন অতিবাহিত হলেও কেউই আমাকে কাজে নিচ্ছে না। তিনি আরোও বলেন, এলাকায় তেমন কাজ-কর্ম নেই। যে কারণে এসেছিলাম। রাজবাড়ীতে এসে দেখি এই জেলাতেও তেমন কাজ-কর্ম নেই। যা আছে তাতে শক্তিশালী যুবক লোকদের নেওয়া হচ্ছে। আমাদের মত বয়স্ক ব্যক্তিদের এই বাজারে কোনো মূল্য নেই। চাহিদা না থাকার কারণে গত দুই দিনেও নিজেকে কাজের জন্য বিক্রি করতে পারলাম না। মুন্নাফ সরদার (৫৫) নামের অপর এক ব্যক্তি বলেন, রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলা থেকে এসেছি কাজের সন্ধানে। দুপুর ১২টার দিকে এই বাজারে এসেছি কাজের জন্য। শ্রম বিক্রির এই হাটে আগেও এসেছি অনেকবার। কিন্ত সন্ধ্যা হয়ে আসলেও কোনো ব্যক্তি শ্রম কিনতে আমাদের কাছে আসছেন না। মূলত এলাকায় কাজ না থাকার কারণে আমরা ছয়জন এসেছি এই হাটে। কেউ দাম-দর করছে না। যাদের ঠিক করা হচ্ছে তারাও শ্রমের মজুরি ৩০০ টাকার বেশি নয়। কুরমান খান (৪২) নামের অপর এক ব্যক্তি বলেন, শুনেছি এই উপজেলায় এখন অনেক কাজ। যে কারণে আমরা এসেছি। প্রতি বছর এই সময় আসি কাজের জন্য। কিন্ত এবার কোনো কাজ পাচ্ছি না। দুইজন এসেছিলেন দাম করতে। ৩০০ টাকার বেশি বলেন না তারা। তিনি দুঃখ করে বলেন, সন্ধ্যা গড়িয়ে এলো এখনো কাজ পেলাম না। কাজ না পেলে বাধ্য হয়ে বাড়ি ফিরে যেতে হবে। আবার অনেকেই রয়ে যাবেন রেল ষ্টেশনে।