ঢাকা ০৩:৫৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫

ক্যানসার নিরাময়ের মোক্ষম দাওয়াই আলু

  • আপডেট সময় : ১১:০০:০৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৩
  • ৭৬ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : আলু ছাড়া বাঙালির খাবার ভাবা যায় না। হোক সে মাছের ঝোল কিংবা আলু দিয়ে সবজি রান্না। সব তরকারিতে অল্প অল্প করে আলু দিলে যেন স্বাদ বেড়ে যায় কয়েক গুণ। আলু যে শুধু রসনাতৃপ্তি দেয়, তা কিন্তু নয়। শরীরের যতœ নিতেও এই আলুর জুড়ি মেলা ভার। অনেকে ডায়াবেটিসের ভয়ে কিংবা আলু খেলেই মনে হয় মোটা হয়ে যাবেন। শরীর খারাপ হবে। ইত্যাদি চিন্তা থেকে আমরা প্রতিদিনের রুটিন থেকে আলু বাদ দিয়ে দেই। অথচ বহু রোগের ক্ষেত্রে মহৌষধের মতো কাজ করে আলু।
আলুর বৈজ্ঞানিক নাম সোলানাম টিউবারোসাম। আলু উদ্ভিদ শ্বেতসারসমৃদ্ধ কন্দ এবং আমেরিকার স্থানীয় একটি মূল সবজি। উদ্ভিদটি সোলানেসি নামক নাইটশেড পরিবার বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। বন্য আলুর প্রজাতি আমেরিকাজুড়ে কানাডা থেকে দক্ষিণ চিলি পর্যন্ত পাওয়া যায়।
যুক্তরাজ্যে আলু ঐতিহ্যবাহী প্রধান খাবার মাছ এবং চিপসের অংশ। বিশ্বব্যাপী প্রায় ৫,০০০ আলুর জাত রয়েছে। তাদের মধ্যে তিন হাজার শুধুমাত্র আন্দিজ অঞ্চলে পাওয়া যায়, প্রধানত পেরু, বলিভিয়া, ইকুয়েডর, চিলি এবং কলম্বিয়াতে।
বাংলাদেশে সুপরিচিত সবজি আলু। যেটি ব্যাপকভাবে খাওয়া হয়। আলু ভর্তা, ভাজি, ঝোল, আলু দম, আলুর পরোটা নানাভাবে খাওয়া যায় এই সবজিটি। এছাড়া আলুই একমাত্র সবজি যেটি সারা বছর ব্যাপক হারে পাওয়া যায় বাজারে এবং অন্যান্য সবজির তুলনায় দামেও বেশ সস্তা। নি¤œ ও মধ্যবিত্তের আলু ভর্তার গ-ি থেকে বেরিয়ে এখন ফ্রেঞ্চ ফ্রাই আর চিপস হিসেবেও জায়গা করে নিয়েছে। আলু উৎপাদনে বিশ্বে সপ্তম বাংলাদেশ। আর বাংলাদেশের ওপরে আছে চীন, ভারত, রাশিয়া, ইউক্রেন, যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি। আলুতে রয়েছে ভরপুর পটাশিয়াম। কিন্তু সোডিয়ামের পরিমাণ অত্যন্ত কম। উচ্চ রক্তচাপ এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে সোডিয়াম। তাই হৃদ্যন্ত্র ভালো রাখতে ভরসা রাখতে পারেন আলুর উপরে। অনেকেরই হয়তো অজানা, আলু কিন্তু হার্ট ভালো রাখতে দারুণ সদর্থক ভূমিকা পালন করে। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, হৃদ্রোগ থাকলে প্রতিদিন পাতে রাখতে পারেন আলু। এতে কোলেস্টেরল বা স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ একেবারে কম। নেই বললেই চলে। হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বাড়াতে এই দুটি উপাদানই অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। আলুর মধ্যে থাকা ফোলেট ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে। ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট-সমৃদ্ধ আলু মলাশয়ের ক্যানসার রোধে কার্যকরী। এছাড়া আলুর মধ্যে থাকা ফাইবার হজম ক্ষমতা উন্নত করতে সহায়তা করে। ডায়েটারি ফাইবার হজমশক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি ওজন নিয়ন্ত্রণেও সমান ভূমিকা রাখে।
ডায়াবেটিস বা এই ধরনের কোনো ক্রনিক সমস্যা না থাকলে, রোজ পাতে আলু রাখার কথা বলে থাকেন পুষ্টিবিদরা। ফাইবার-সমৃদ্ধ আলু রক্তে গ্লুকোজের ভারসাম্য বজায় রাখে। ফলে অল্প পরিমাণে খেলেও আলু দীর্ঘক্ষণ পেট ভর্তি রাখতে সাহায্য করে। ফাইবার যতœ নেয় হৃদযন্ত্রেরও। আবার ওজন নিয়ন্ত্রণেও কিন্তু আলুর ভূমিকা একেবারে ফেলে দেওয়ার মতো নয়। এছাড়া বহু রোগের ক্ষেত্রে মহৌষধের মতো কাজ করে আলু। দেখে নেওয়া যাক সেগুলো কী কী। আলুতে আছে পটাশিয়াম, ভিটামিন বি৬ এবং ভিটামিন সি। পাচনতন্ত্রের প্রদাহ থেকে সৃষ্ট পেট জ্বালাপোড়ার অনুভূতি থেকে মুক্তি দিতে কাজ করে এই উপাদানগুলো। গেঁটে বাত ও আর্থ্রাইটিসেও রোগীরা আলুর পুষ্টিগুণ থেকে উপকার পান। খুব বেশি প্রোটিনযুক্ত খাবার খেলে কিডনিতে পাথর হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কারণ হাই-প্রোটিনযুক্ত খাবার শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। আলুর মতো মূল জাতীয় সবজি পাথর জমাতে বাধা দেয়। ক্যালসিয়াম জমে পাথর হওয়া ঠেকাতে আলুর ম্যাগনেশিয়াম দারুণ কাজ করে। আলু ফাইবার জাতীয় খাদ্য, যা হজমে সহায়তা করে। তাই পেটের সমস্যায় নিশ্চিন্তে খেতে পারেন আলু। এ ছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেও দারুণ কাজ করে আলু। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে আলু কাজ করে। মধুর সঙ্গে আলুর পেস্ট নিয়মিত মাখলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে। এ ছাড়া আলুর পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, জিঙ্ক, ফসফরাস ত্বকের উজ্জ্বলতা ফেরানোর জন্য কাজ করে। আলুতে গ্লুকোজ, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, এমিনো এসিড, ওমেগা-৩ ও অন্যান্য ফ্যাটি এসিড আছে, যা মস্তিষ্ককে সচল ও কর্মক্ষম রাখে। তাছাড়া আলু মানসিক চাপ কমিয়ে মন ভালো করতে সহায়তা করে। যথেষ্ট পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে আলুতে। ম্যাগনেসিয়াম কিডনি ও শরীরের অন্যান্য টিস্যুতে অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম জমতে বাধা দেয়। ফলে কিডনিতে পাথর হওয়ার আশঙ্কা থাকে না। আলু থেকে প্রাপ্ত শক্তি গ্লাইকোজেন হিসেবে মাংসপেশি ও লিভারে সঞ্চিত থাকে। তাই শারীরিক ব্যায়ামের ক্ষেত্রে বিশেষ করে খেলোয়াড়দের জন্য আলু একটি উত্তম খাদ্য। নিয়মিত আলু খেলে প্রস্রাবের জ্বালা পোড়া থাকে না। ডায়রিয়া হলে আলু খেলে সহজে ঘাটতি পূরণ হয় এতে অতিরিক্ত ক্যালরি থাকার কারণে। শিশুদের জন্য আলু খুবই সহায়ক খাদ্য।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ক্যানসার নিরাময়ের মোক্ষম দাওয়াই আলু

আপডেট সময় : ১১:০০:০৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৩

প্রত্যাশা ডেস্ক : আলু ছাড়া বাঙালির খাবার ভাবা যায় না। হোক সে মাছের ঝোল কিংবা আলু দিয়ে সবজি রান্না। সব তরকারিতে অল্প অল্প করে আলু দিলে যেন স্বাদ বেড়ে যায় কয়েক গুণ। আলু যে শুধু রসনাতৃপ্তি দেয়, তা কিন্তু নয়। শরীরের যতœ নিতেও এই আলুর জুড়ি মেলা ভার। অনেকে ডায়াবেটিসের ভয়ে কিংবা আলু খেলেই মনে হয় মোটা হয়ে যাবেন। শরীর খারাপ হবে। ইত্যাদি চিন্তা থেকে আমরা প্রতিদিনের রুটিন থেকে আলু বাদ দিয়ে দেই। অথচ বহু রোগের ক্ষেত্রে মহৌষধের মতো কাজ করে আলু।
আলুর বৈজ্ঞানিক নাম সোলানাম টিউবারোসাম। আলু উদ্ভিদ শ্বেতসারসমৃদ্ধ কন্দ এবং আমেরিকার স্থানীয় একটি মূল সবজি। উদ্ভিদটি সোলানেসি নামক নাইটশেড পরিবার বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। বন্য আলুর প্রজাতি আমেরিকাজুড়ে কানাডা থেকে দক্ষিণ চিলি পর্যন্ত পাওয়া যায়।
যুক্তরাজ্যে আলু ঐতিহ্যবাহী প্রধান খাবার মাছ এবং চিপসের অংশ। বিশ্বব্যাপী প্রায় ৫,০০০ আলুর জাত রয়েছে। তাদের মধ্যে তিন হাজার শুধুমাত্র আন্দিজ অঞ্চলে পাওয়া যায়, প্রধানত পেরু, বলিভিয়া, ইকুয়েডর, চিলি এবং কলম্বিয়াতে।
বাংলাদেশে সুপরিচিত সবজি আলু। যেটি ব্যাপকভাবে খাওয়া হয়। আলু ভর্তা, ভাজি, ঝোল, আলু দম, আলুর পরোটা নানাভাবে খাওয়া যায় এই সবজিটি। এছাড়া আলুই একমাত্র সবজি যেটি সারা বছর ব্যাপক হারে পাওয়া যায় বাজারে এবং অন্যান্য সবজির তুলনায় দামেও বেশ সস্তা। নি¤œ ও মধ্যবিত্তের আলু ভর্তার গ-ি থেকে বেরিয়ে এখন ফ্রেঞ্চ ফ্রাই আর চিপস হিসেবেও জায়গা করে নিয়েছে। আলু উৎপাদনে বিশ্বে সপ্তম বাংলাদেশ। আর বাংলাদেশের ওপরে আছে চীন, ভারত, রাশিয়া, ইউক্রেন, যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি। আলুতে রয়েছে ভরপুর পটাশিয়াম। কিন্তু সোডিয়ামের পরিমাণ অত্যন্ত কম। উচ্চ রক্তচাপ এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে সোডিয়াম। তাই হৃদ্যন্ত্র ভালো রাখতে ভরসা রাখতে পারেন আলুর উপরে। অনেকেরই হয়তো অজানা, আলু কিন্তু হার্ট ভালো রাখতে দারুণ সদর্থক ভূমিকা পালন করে। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, হৃদ্রোগ থাকলে প্রতিদিন পাতে রাখতে পারেন আলু। এতে কোলেস্টেরল বা স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ একেবারে কম। নেই বললেই চলে। হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বাড়াতে এই দুটি উপাদানই অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। আলুর মধ্যে থাকা ফোলেট ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে। ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট-সমৃদ্ধ আলু মলাশয়ের ক্যানসার রোধে কার্যকরী। এছাড়া আলুর মধ্যে থাকা ফাইবার হজম ক্ষমতা উন্নত করতে সহায়তা করে। ডায়েটারি ফাইবার হজমশক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি ওজন নিয়ন্ত্রণেও সমান ভূমিকা রাখে।
ডায়াবেটিস বা এই ধরনের কোনো ক্রনিক সমস্যা না থাকলে, রোজ পাতে আলু রাখার কথা বলে থাকেন পুষ্টিবিদরা। ফাইবার-সমৃদ্ধ আলু রক্তে গ্লুকোজের ভারসাম্য বজায় রাখে। ফলে অল্প পরিমাণে খেলেও আলু দীর্ঘক্ষণ পেট ভর্তি রাখতে সাহায্য করে। ফাইবার যতœ নেয় হৃদযন্ত্রেরও। আবার ওজন নিয়ন্ত্রণেও কিন্তু আলুর ভূমিকা একেবারে ফেলে দেওয়ার মতো নয়। এছাড়া বহু রোগের ক্ষেত্রে মহৌষধের মতো কাজ করে আলু। দেখে নেওয়া যাক সেগুলো কী কী। আলুতে আছে পটাশিয়াম, ভিটামিন বি৬ এবং ভিটামিন সি। পাচনতন্ত্রের প্রদাহ থেকে সৃষ্ট পেট জ্বালাপোড়ার অনুভূতি থেকে মুক্তি দিতে কাজ করে এই উপাদানগুলো। গেঁটে বাত ও আর্থ্রাইটিসেও রোগীরা আলুর পুষ্টিগুণ থেকে উপকার পান। খুব বেশি প্রোটিনযুক্ত খাবার খেলে কিডনিতে পাথর হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কারণ হাই-প্রোটিনযুক্ত খাবার শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। আলুর মতো মূল জাতীয় সবজি পাথর জমাতে বাধা দেয়। ক্যালসিয়াম জমে পাথর হওয়া ঠেকাতে আলুর ম্যাগনেশিয়াম দারুণ কাজ করে। আলু ফাইবার জাতীয় খাদ্য, যা হজমে সহায়তা করে। তাই পেটের সমস্যায় নিশ্চিন্তে খেতে পারেন আলু। এ ছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেও দারুণ কাজ করে আলু। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে আলু কাজ করে। মধুর সঙ্গে আলুর পেস্ট নিয়মিত মাখলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে। এ ছাড়া আলুর পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, জিঙ্ক, ফসফরাস ত্বকের উজ্জ্বলতা ফেরানোর জন্য কাজ করে। আলুতে গ্লুকোজ, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, এমিনো এসিড, ওমেগা-৩ ও অন্যান্য ফ্যাটি এসিড আছে, যা মস্তিষ্ককে সচল ও কর্মক্ষম রাখে। তাছাড়া আলু মানসিক চাপ কমিয়ে মন ভালো করতে সহায়তা করে। যথেষ্ট পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে আলুতে। ম্যাগনেসিয়াম কিডনি ও শরীরের অন্যান্য টিস্যুতে অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম জমতে বাধা দেয়। ফলে কিডনিতে পাথর হওয়ার আশঙ্কা থাকে না। আলু থেকে প্রাপ্ত শক্তি গ্লাইকোজেন হিসেবে মাংসপেশি ও লিভারে সঞ্চিত থাকে। তাই শারীরিক ব্যায়ামের ক্ষেত্রে বিশেষ করে খেলোয়াড়দের জন্য আলু একটি উত্তম খাদ্য। নিয়মিত আলু খেলে প্রস্রাবের জ্বালা পোড়া থাকে না। ডায়রিয়া হলে আলু খেলে সহজে ঘাটতি পূরণ হয় এতে অতিরিক্ত ক্যালরি থাকার কারণে। শিশুদের জন্য আলু খুবই সহায়ক খাদ্য।