রাজশাহী প্রতিনিধি : রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) নয়জন শিক্ষক-কর্মকর্তার কাছে ডাকযোগে কাফনের কাপড় পাঠিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়ার প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। রুয়েট প্রধান ফটকের সামনে সোমবার (২ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে এক ঘণ্টা এ কর্মসূচি পালিত হয়। রুয়েট প্রশাসন এই মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করে। কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন- রুয়েটের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্টার অধ্যাপক ড. মো. সেলিম হোসেন, যন্ত্রকৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক, গবেষণা ও সম্প্রসারণের পরিচালক ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. ফারুক হোসেন, ছাত্রকল্যাণ পরিচালক ও শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. রবিউল আওয়াল, বঙ্গবন্ধু পরিষদের রুয়েটের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আশরাফুল আলম, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. কামরুজ্জামান রিপন, আইপিই বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মোশাররফ হোসেন ও ইসিই বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. শহীদুল ইসলাম। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন রুয়েটের কম্পট্রোলার ও কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি নাজিমউদ্দীন আহম্মদ, শিক্ষা শাখার অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার ও কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার ঘোষ, কর্মকর্তা সমিতির দপ্তর সম্পাদক প্রকৌশলী মো. রাইসুল ইসলাম, শিক্ষার্থী মাহমুদুর রহমান প্রমুখ।
মানববন্ধনে রুয়েটের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, দপ্তর প্রধান, বিভাগীয় প্রধান, শাখা প্রধান, অন্যান্য শিক্ষক, কর্মকর্তা, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা অংশ নেন। মানববন্ধন চলাকালে রুয়েটে কোনো ক্লাস কিংবা দাপ্তরিক কাজকর্ম হয়নি। কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, রুয়েটের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের কাফনের কাপড় পাঠিয়ে হুমকি দেওয়া অত্যন্ত লজ্জাজনক। এই ঘটনায় শিক্ষক-কর্মকর্তারা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন। কিন্তু এর পেছনে কে বা কারা, তা এখনও বের হয়নি। তারা এভাবে কাফনের কাপড় পাঠানোর তীব্র প্রতিবাদ জানান এবং একই সঙ্গে দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে দ্রুত দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানান। গত ২১ ডিসেম্বর রুয়েটের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম সেখ, শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মো. ফারুক হোসেন, সহ-সভাপতি ড. জগলুল শাহাদাত, সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালক ড. রবিউল আওয়াল, সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ড. মো. সেলিম হোসেন, কম্পট্রোলার নাজিম উদ্দীন আহমেদ, সহকারী প্রকৌশলী হারুন-অর-রশিদ এবং সেকশন অফিসার রাইসুল ইসলাম রোজ ডাকপিয়নের মাধ্যমে একটি করে চিঠি পান। খাম খুলে তারা কাফনের কাপড়ের দুটি করে টুকরো পান। চিঠির প্রেরকের ঠিকানায় ‘সচেতন নাগরিক সমাজ, রাজশাহী’ লেখা ছিল। এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ড. সেলিম হোসেন নগরীর মতিহার থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এতে চিঠির বর্ণনা দিয়ে বলা হয়, গত ৬ ডিসেম্বর জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পরিদর্শন কমিটির সঙ্গে ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার যোগসূত্র থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর সঠিক তদন্ত প্রয়োজন।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৬ ডিসেম্বর জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়ন কমিটি রুয়েটের বিভিন্ন দপ্তর ও শাখা আকস্মিক পরিদর্শন করেন। সেদিন পরিষদ শাখায় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। বিষয়টি কমিটির রেজুলেশন খাতায় লিপিবদ্ধ করা হয়। এতে বলা হয়, কমিটি পরিষদ শাখা পরিদর্শনকালে শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার শাহ মো. আলরেরুনী, সংস্থাপন ও প্রশাসন শাখার জুনিয়র সেকশন অফিসার মুরাদ হোসেন এবং প্রকৌশল দপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোতাহার হোসেন (সাময়িকভাবে বরখাস্ত) পরিদর্শন কমিটিকে কটাক্ষ করেন। তারা পরিদর্শন কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বাগবিত-ায় জড়ান। তারপর এই কাফনের কাপড়ের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে বলে হুমকিপ্রাপ্তরা মনে করছেন। জানতে চাইলে নগরীর মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টা আমরা গোপনে তদন্ত করছি। আর এই ধরনের জিডি তদন্ত করতে হলে আদালতের অনুমতি লাগে। আগামী ১০ তারিখে আদালতে শুনানি আছে। আদালত অভিযোগকারীর বক্তব্যও শুনবেন। তারপর আদালত যে নির্দেশনা দেবেন, সেভাবে কাজ করা হবে।’