ঢাকা ০২:৪৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫

ভারতে নোট বাতিলের সিদ্ধান্তকে বৈধ বললেন সুপ্রিম কোর্ট

  • আপডেট সময় : ১২:১৫:৪৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ জানুয়ারী ২০২৩
  • ৮৪ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : নরেন্দ্র মোদি সরকারের নেওয়া ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত বৈধ ছিল। ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সেই সিদ্ধান্তের আইনগত বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে করা মামলার রায়ে সুপ্রিম কোর্ট গতকাল সোমবার এ কথা জানান। পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠের (৪-১) রায়ে সরকারের সিদ্ধান্ত বৈধ জানিয়ে বলেন, ভাবনাচিন্তা করেই ওই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। যদিও কালোটাকা উদ্ধার, সন্ত্রাসবাদীদের অর্থাগম বন্ধের মতো উদ্দেশ্য সফল হয়েছে কি না, তা প্রাসঙ্গিক নয়।
সাংবিধানিক বেঞ্চের চার বিচারপতি এস আবদুল নাজির, বি আর গাভাই, এ এস বোপানা ও ভি রামাসুব্রাহ্মণ্যম সিদ্ধান্তের বৈধতার পক্ষে রায় দিলেও বিচারপতি বি ভি নাগরতœা সরকারের সিদ্ধান্তকে অবৈধ বলে মত দিয়েছেন। তিনি বিরুদ্ধ মত দিয়ে বলেন, ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিলের মতো সিদ্ধান্ত অত্যন্ত গুরুতর। ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক (রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া) নিজস্ব বিচার অনুযায়ী ওই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি। স্রেফ সরকারের মতে সায় দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, রিজার্ভ ব্যাংকের পেশ করা তথ্যই জানাচ্ছে, সরকার চেয়েছে বলে তারা মত দিয়েছে। এক দিন আগে, ২০১৬ সালের ৭ নভেম্বর, সরকারই রিজার্ভ ব্যাংককে চিঠি দিয়ে নোট বাতিলের কথা জানায়। অথচ আইন অনুযায়ী হওয়া উচিত ছিল ঠিক বিপরীত। রিজার্ভ ব্যাংককেই নোট বাতিলের সুপারিশ জানাতে হতো। গোটা প্রক্রিয়া সারা হয়েছিল ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই।
যদিও সরকারের দাবি, সিদ্ধান্তের ছয় মাস আগে থেকেই তারা রিজার্ভ ব্যাংকের সঙ্গে ওই বিষয়ে আলোচনা চালাচ্ছিল। নোট বাতিলের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মোট ৫৮টি আবেদন করা হয়েছিল। আবেদনকারীদের যুক্তি ছিল, ভবিষ্যতের স্বার্থে এ ধরনের প্রক্রিয়ার ত্রুটি–বিচ্যুতি প্রতি নজর দেওয়া প্রয়োজন। সরকারের যুক্তি ছিল, ঘড়ির কাঁটা পেছনের দিকে নিয়ে যাওয়া যায় না। গত বছরের ৭ সেপ্টেম্বর শুনানি শেষ রায়দান স্থগিত রেখেছিলেন সুপ্রিম কোর্ট। এ রায় সরকারের পক্ষে বড় জয় বলে বিবেচিত হচ্ছে। যদিও নোট বাতিলের উদ্দেশ্য আদৌ সফল কি না, কালোটাকা উদ্ধার হয়েছে কি না, সন্ত্রাসবাদীদের অর্থাগম বন্ধ হয়েছে কি না কিংবা নগদ লেনদেন বন্ধ হয়ে ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’ গড়ে উঠেছে কি না, সে বিতর্ক অব্যাহত থাকছে। বিজেপি অবশ্য এ রায়কে নতুন বছরের উপহার বলে মনে করছে। দেশের সাবেক অর্থমন্ত্রী, কংগ্রেস নেতা ও আইনজীবী পি চিদাম্বরম এ মামলার অন্যতম আইনজীবী। সংখ্যাগরিষ্ঠ রায়ের পর তিনি টুইট করে বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতার সঙ্গে সহমত হননি। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যও যে পূর্ণ হয়েছে, তা বলেননি। তবু সংখ্যাগরিষ্ঠের রায় মানতে হবে।’ বিচারপতি নাগরতœার ভিন্নমতকে স্বাগত জানিয়ে চিদাম্বরম বলেন, ‘আমরা খুশি যে তিনি অবৈধতা ও অনিয়মগুলোর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তাঁর ভিন্নমত সরকারের বাহুতে একটা চড়। ওই চড়কে স্বাগত।’
আচমকা নোট বাতিলের জন্য ২০১৬ সালের শেষাশেষি গোটা দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছিল। বহু সাধারণ মানুষ বাতিল নোট জমা দেওয়ার লাইনে মারা গিয়েছিলেন। ছোট ব্যবসায়ীরা পথে বসেছিলেন। কর্মহীন হয়েছিলেন বহু মানুষ। পরবর্তীকালে যেসব মামলা দায়ের হয়, তাতে বলা হয়েছিল, সুপ্রিম কোর্ট পুরোনো সিদ্ধান্ত বাতিল করতে পারেন না ঠিকই, কিন্তু যে প্রক্রিয়ায় তা করা হয়েছিল, তা অবৈধ ছিল বলা হলে ভবিষ্যতে সরকার সজাগ হবে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ভারতে নোট বাতিলের সিদ্ধান্তকে বৈধ বললেন সুপ্রিম কোর্ট

আপডেট সময় : ১২:১৫:৪৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ জানুয়ারী ২০২৩

প্রত্যাশা ডেস্ক : নরেন্দ্র মোদি সরকারের নেওয়া ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত বৈধ ছিল। ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সেই সিদ্ধান্তের আইনগত বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে করা মামলার রায়ে সুপ্রিম কোর্ট গতকাল সোমবার এ কথা জানান। পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠের (৪-১) রায়ে সরকারের সিদ্ধান্ত বৈধ জানিয়ে বলেন, ভাবনাচিন্তা করেই ওই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। যদিও কালোটাকা উদ্ধার, সন্ত্রাসবাদীদের অর্থাগম বন্ধের মতো উদ্দেশ্য সফল হয়েছে কি না, তা প্রাসঙ্গিক নয়।
সাংবিধানিক বেঞ্চের চার বিচারপতি এস আবদুল নাজির, বি আর গাভাই, এ এস বোপানা ও ভি রামাসুব্রাহ্মণ্যম সিদ্ধান্তের বৈধতার পক্ষে রায় দিলেও বিচারপতি বি ভি নাগরতœা সরকারের সিদ্ধান্তকে অবৈধ বলে মত দিয়েছেন। তিনি বিরুদ্ধ মত দিয়ে বলেন, ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিলের মতো সিদ্ধান্ত অত্যন্ত গুরুতর। ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক (রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া) নিজস্ব বিচার অনুযায়ী ওই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি। স্রেফ সরকারের মতে সায় দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, রিজার্ভ ব্যাংকের পেশ করা তথ্যই জানাচ্ছে, সরকার চেয়েছে বলে তারা মত দিয়েছে। এক দিন আগে, ২০১৬ সালের ৭ নভেম্বর, সরকারই রিজার্ভ ব্যাংককে চিঠি দিয়ে নোট বাতিলের কথা জানায়। অথচ আইন অনুযায়ী হওয়া উচিত ছিল ঠিক বিপরীত। রিজার্ভ ব্যাংককেই নোট বাতিলের সুপারিশ জানাতে হতো। গোটা প্রক্রিয়া সারা হয়েছিল ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই।
যদিও সরকারের দাবি, সিদ্ধান্তের ছয় মাস আগে থেকেই তারা রিজার্ভ ব্যাংকের সঙ্গে ওই বিষয়ে আলোচনা চালাচ্ছিল। নোট বাতিলের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মোট ৫৮টি আবেদন করা হয়েছিল। আবেদনকারীদের যুক্তি ছিল, ভবিষ্যতের স্বার্থে এ ধরনের প্রক্রিয়ার ত্রুটি–বিচ্যুতি প্রতি নজর দেওয়া প্রয়োজন। সরকারের যুক্তি ছিল, ঘড়ির কাঁটা পেছনের দিকে নিয়ে যাওয়া যায় না। গত বছরের ৭ সেপ্টেম্বর শুনানি শেষ রায়দান স্থগিত রেখেছিলেন সুপ্রিম কোর্ট। এ রায় সরকারের পক্ষে বড় জয় বলে বিবেচিত হচ্ছে। যদিও নোট বাতিলের উদ্দেশ্য আদৌ সফল কি না, কালোটাকা উদ্ধার হয়েছে কি না, সন্ত্রাসবাদীদের অর্থাগম বন্ধ হয়েছে কি না কিংবা নগদ লেনদেন বন্ধ হয়ে ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’ গড়ে উঠেছে কি না, সে বিতর্ক অব্যাহত থাকছে। বিজেপি অবশ্য এ রায়কে নতুন বছরের উপহার বলে মনে করছে। দেশের সাবেক অর্থমন্ত্রী, কংগ্রেস নেতা ও আইনজীবী পি চিদাম্বরম এ মামলার অন্যতম আইনজীবী। সংখ্যাগরিষ্ঠ রায়ের পর তিনি টুইট করে বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতার সঙ্গে সহমত হননি। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যও যে পূর্ণ হয়েছে, তা বলেননি। তবু সংখ্যাগরিষ্ঠের রায় মানতে হবে।’ বিচারপতি নাগরতœার ভিন্নমতকে স্বাগত জানিয়ে চিদাম্বরম বলেন, ‘আমরা খুশি যে তিনি অবৈধতা ও অনিয়মগুলোর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তাঁর ভিন্নমত সরকারের বাহুতে একটা চড়। ওই চড়কে স্বাগত।’
আচমকা নোট বাতিলের জন্য ২০১৬ সালের শেষাশেষি গোটা দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছিল। বহু সাধারণ মানুষ বাতিল নোট জমা দেওয়ার লাইনে মারা গিয়েছিলেন। ছোট ব্যবসায়ীরা পথে বসেছিলেন। কর্মহীন হয়েছিলেন বহু মানুষ। পরবর্তীকালে যেসব মামলা দায়ের হয়, তাতে বলা হয়েছিল, সুপ্রিম কোর্ট পুরোনো সিদ্ধান্ত বাতিল করতে পারেন না ঠিকই, কিন্তু যে প্রক্রিয়ায় তা করা হয়েছিল, তা অবৈধ ছিল বলা হলে ভবিষ্যতে সরকার সজাগ হবে।