ঢাকা ১০:০৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মেট্রো উচ্ছ্বাসের দ্বিতীয় দিনে যাত্রী পারাপারে গতি

  • আপডেট সময় : ০৯:৫৬:৪৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২২
  • ১০২ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের প্রথম মেট্রেরেল দেখার উচ্ছ্বাস অব্যাহত আছে দ্বিতীয় দিনেও; কারিগরি বোঝাপড়ায় উন্নতি হওয়ায় যাত্রী পরিবহন আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে; সেই সঙ্গে কমেছে অপেক্ষার সময়। আগের দিনের মতই গতকাল শুক্রবার ছুটির দিন ভোর থেকে দর্শনার্থীরা স্টেশনের বাইরে অপেক্ষা শুরু করেন। সকাল ৮টা বাজতে বাজতে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের কিউ দীর্ঘ আকার পায়। তবে টিকেট বিক্রির গতি বাড়ায় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার সময়টা বৃহস্পতিবারের চেয়ে কমে এসেছে কিছুটা। যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন জানা গেল, মোটামুটি ঘণ্টাখানেক লাইনে দাঁড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে মেট্রোর সিঙ্গেল জার্নি টিকেট। পরিবার নিয়ে মেট্রোতে চড়তে আগারগাঁও স্টেশনে আসা আরিফুল ইসলাম জানালেন, সকাল ৮টার কিছু পরে তিনি লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। ৯টার দিকেই টিকেট কাউন্টারের কাছে চলে এসেছেন। সেখানে শৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যরা জানালেন, দ্বিতীয় দিনে প্রায় দ্বিগুণ গতিতে যাত্রী পারাপার করা যাচ্ছে। আসা যাওয়ার চিত্রও আগের চেয়ে সুশৃঙ্খল হয়েছে।
“আমরা এক সঙ্গে ৫০/৬০ জন করে যেতে দিচ্ছি। কিছুক্ষণ পরপরই যেতে দেওয়া হচ্ছে। ঝামেলা কিছুটা কমে এসেছে,” বলেন এক পুলিশ সদস্য।
অপেক্ষমাণ যাত্রীদেরও দেখা গেছে উৎসবমুখর। কিছুক্ষণ পর পর বাইরের লাইন থেকে যখন যাত্রী প্রবেশ করানো হচ্ছিল স্টেশনে, দূরে অপেক্ষমাণ যাত্রীরা তখন হৈ হৈ করে উঠছিলেন।
বৃহস্পতিবার প্রথম দিনে টিকেট ভেন্ডিং মেশিনগুলো বার বার বিকল হয়ে যাওয়ায় যাত্রীদের হাতে একবার ব্যবহারযোগ্য টিকেট হস্তান্তর করতে পারছিলেন না কাউন্টারকর্মীরা। ফলে ট্রেনগুলোও ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অনেক কম যাত্রী নিয়ে আসা যাওয়া করছিল। অন্যদিকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও ট্রেনে না চড়েই ফিরে গিয়েছিলেন অনেকে। প্রথম দিনে এক প্রান্ত থেকে এসে নিচ না নেমে আবার টিকেট কেটে ফিরে যাওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় দিনে সেই সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। যাত্রীরা উত্তরা থেকে এলে স্টেশন প্লাজার নির্ধারিত পথ ধরে নিচে নেমে যেতে হয়েছে। আবার উত্তরা যেতে চাইলে নিচে লাইন ধরে অপেক্ষার পর আবার উপরে উঠতে পেরেছেন।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানির ব্যবস্থাপক মহাফুজুর রহমান বলেন, যাত্রীরা বহির্গমন না করে আবার ফিরে যাবেন এমন নিয়ম নেই। তাদেরকে একবার বের হতে হবে। সবাইকে এভাবে আসা যাওয়ার সুযোগ দিলে তো বাইরে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের আমরা সুযোগ দিতে পারব না। এখন যারা ভ্রমণ করছেন, তাদের অধিকাংশই দর্শনার্থী। শখের বসে তারা মেট্রো ট্রেনে উঠছেন।”
স্টেশনের শৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত রোভার স্কাউট সদস্য শুভ চন্দ্র দাস জানান, ভেন্ডিং মেশিনগুলো এখন আগের চেয়ে ভালো কাজ করছে। নরম হয়ে যাওয়া টাকা কিংবা অন্য কোনো কারিগরি কারণে মেশিন থেমে গেলে টেকনিশিয়ানরা কিছুক্ষণের মধ্যে তা আবার ঠিক করে দিচ্ছেন। সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে দেখা গেল, একজন যাত্রী ভেন্ডিং মেশিন থেকে একসঙ্গে দুটি করে টিকেট কিনতে পারছেন। একজন যাত্রী নিজের জন্য প্রয়োজনীয় ছয়টি টিকেট কেটেছেন। এতে সময় লেগেছে দুই মিনিট।
ভোগান্তি কমাবে এমআরটি পাস? গড়ে ১০ থেকে ১২ মিনিট পর পর স্টেশন থেকে একটি ট্রেন ছেড়ে গেছে শুক্রবার। একই সময় পর পর ট্রেন আসছে।
ট্রেনে চড়ে দেখা যায়, একটি স্টেশন থেকে ছাড়ার পর কিছুক্ষণের মধ্যে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার গতি পাচ্ছে মেট্রোরেল। উত্তরার কাছাকাছি পৌঁছানোর পর গতি উঠে যাচ্ছে ৮৮ থেকে ৯০ কিলোমিটারে। মাঝে স্টেশনগুলোর পার হওয়ার সময় গতি কমে ৫০ কিলোমিটারে নেমে আসছে। শুক্রবার ছুটির দিনে মেট্রোরেলে দিয়াবাড়ি প্রান্তে গিয়ে অনেক যাত্রীই সেখানে খোলা আকাশের নিচে ঘুরে বেড়িয়েছেন। আগের দিনের তুলনায় চা-নাস্তার দোকানপাটও বেড়েছে দিয়াবাড়িতে।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন সিদ্দিক আগারগাঁওয়ে বলেন, “গতকালের তুলনায় আজকে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নত হয়েছে। যাত্রীদের সহজে ভ্রমণের সুবিধার্থে আমরা এমআরটি পাস সংগ্রহের পরামর্শ দিচ্ছি।”
“৫০০ টাকা দামের একটি এমআরটি পাসে ৩০০ টাকা রিচার্জ করা থাকবে। এই পাস থাকলে কাউকে কোনো লাইনে দাঁড়াতে হবে না। এক সঙ্গে অনেক মানুষ টিকেট কিনতে গিয়ে যে ভোগান্তিতে পড়ছেন, তারা এমআরটি পাস কিনে নিলে আর কোনো সমস্যার মুখোমুখি হবেন না। আমাদের কাউন্টারগুলোতেও চাপ কমবে।”
মেট্রোরেলে ময়লা না ফেলার আহ্বান মেয়র আতিকের: ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিজয়ের মাসে আমাদের মেট্রোরেল উপহার দিয়েছেন। কিছুদিন আগেই পদ্মাসেতু উপহার দিয়েছেন। এগুলো জনগণের সম্পদ। এগুলো পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব সবার। দয়া করে মেট্রোরেল পরিষ্কার রাখুন, ট্রেন, বাথরুম, প্লাটফর্ম পরিষ্কার রাখুন। আমরাইতো ব্যবহার করবো। এর সুফলতো আমরাই পাব। আমাদেরই সম্পত্তি। এটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখাও আমাদের দায়িত্ব।
গতকাল শুক্রবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর মহাখালী টিঅ্যান্ডটি মাঠে প্লাস্টিক দূষণরোধে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে পরিত্যক্ত প্রায় অর্ধ কোটি প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে তৈরি করা নানা প্রতিকৃতি প্রদর্শনীর উদ্বোধনকালে মেয়র এসব কথা বলেন। পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিডি ক্লিন ৯ দিনব্যাপী (৩০ ডিসেম্বর থেকে ৭ জানুয়ারি) এ বোতল প্রদর্শনীর আয়োজন করে। মেয়র বলেন, প্লাস্টিক বোতল পরিবেশের ক্ষতি করছে। প্লাস্টিক দূষণ রোধ করতে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকেই দায়িত্ব নিতে হবে। তবে জনগণকেও যত্রতত্র প্লাস্টিক বোতল ফেলা বন্ধ করতে হবে। ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, নালা বা লেক পরিষ্কার করতে গেলে আমরা বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্য পাই। এসব প্লাস্টিকের কারণে নালাগুলো ব্লক হয়ে যায়। ফলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এছাড়াও সুয়ারেজ লাইনে পয়ঃবর্জ্যের লাইন দেওয়া হয়েছে। ৪ জানুয়ারি গুলশান, বনানী, নিকেতন ও বাড়িধারা এলাকায় অভিযান চালাবো। মেয়র আরও বলেন, সৃষ্টিকর্তা মানুষের প্রয়োজনেই জলজ প্রাণী, কচ্ছপ, মাছ, বৃক্ষ সবই সৃষ্টি করেছেন। এগুলো পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। অথচ আমরা নির্দয় হয়ে এগুলো ধ্বংস করছি। যারা ধ্বংস করছে তারা চিন্তা করেন না আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের, তারা চিন্তা করেন না লাল-সবুজের পতাকার। তারা চিন্তা করেন না কষ্টার্জিত এ দেশটার। দেশপ্রেম থাকলে কেউ দেশের ক্ষতি করতে পারে না। বিডি ক্লিনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে মেয়র বলেন, বিডি ক্লিন শুধু নামে না, কথায় না, কাজের মাধ্যমে, ত্যাগের মাধ্যমে, কষ্টের মাধ্যমে তাদের অবস্থান প্রমাণ করেছে। বিডি ক্লিনের সদস্যরা নিজেদের খেয়ে পরের মোষ তাড়িয়ে তারা পরিবেশের জন্য কাজ করছে। এ ছেলেমেয়েরা মাদকাসক্ত না হয়ে, ঘরে বসে স্মার্ট ফোনে সময় নষ্ট করে দেশকে, শহরকে পরিচ্ছন্ন করা জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। সত্যিই প্রশংসনীয়। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসেবে বিডি ক্লিন বর্তমানে একটি ব্র্যান্ড। এটি এরই মধ্যে সুনাম অর্জন করেছে। এ সুনাম ধরে রাখতে হবে। এসময় বিডি ক্লিনকে দশ লাখ টাকা অনুদান দেওয়ার ঘোষণা দেন ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
সবশেষে মেয়র দেশকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা ও দেশের আইন মেনে দেশসেবার জন্য বিডি ক্লিনের সদস্যদের শপথ পাঠ করান। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিডি ক্লিনের প্রতিষ্ঠাতা ফরিদ উদ্দিন। তিনি বলেন, পুরো দেশে বিডি ক্লিনের প্রায় ৪০ হাজার সদস্য কাজ করছে। পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের পাশাপাশি একটি সুশৃঙ্খল, সুস্থ ও উন্নত মানসিকতাসম্পন্ন জাতি গঠনই এ সংগঠনটির মূল লক্ষ্য। মানসিক পরিবর্তন নিশ্চিত হলেই দেশ পরিচ্ছন্ন হবে, দেশ উন্নত হবে। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির অঞ্চল ৩ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল বাকী এবং ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. নাছির।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মেট্রো উচ্ছ্বাসের দ্বিতীয় দিনে যাত্রী পারাপারে গতি

আপডেট সময় : ০৯:৫৬:৪৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের প্রথম মেট্রেরেল দেখার উচ্ছ্বাস অব্যাহত আছে দ্বিতীয় দিনেও; কারিগরি বোঝাপড়ায় উন্নতি হওয়ায় যাত্রী পরিবহন আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে; সেই সঙ্গে কমেছে অপেক্ষার সময়। আগের দিনের মতই গতকাল শুক্রবার ছুটির দিন ভোর থেকে দর্শনার্থীরা স্টেশনের বাইরে অপেক্ষা শুরু করেন। সকাল ৮টা বাজতে বাজতে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের কিউ দীর্ঘ আকার পায়। তবে টিকেট বিক্রির গতি বাড়ায় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার সময়টা বৃহস্পতিবারের চেয়ে কমে এসেছে কিছুটা। যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন জানা গেল, মোটামুটি ঘণ্টাখানেক লাইনে দাঁড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে মেট্রোর সিঙ্গেল জার্নি টিকেট। পরিবার নিয়ে মেট্রোতে চড়তে আগারগাঁও স্টেশনে আসা আরিফুল ইসলাম জানালেন, সকাল ৮টার কিছু পরে তিনি লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। ৯টার দিকেই টিকেট কাউন্টারের কাছে চলে এসেছেন। সেখানে শৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যরা জানালেন, দ্বিতীয় দিনে প্রায় দ্বিগুণ গতিতে যাত্রী পারাপার করা যাচ্ছে। আসা যাওয়ার চিত্রও আগের চেয়ে সুশৃঙ্খল হয়েছে।
“আমরা এক সঙ্গে ৫০/৬০ জন করে যেতে দিচ্ছি। কিছুক্ষণ পরপরই যেতে দেওয়া হচ্ছে। ঝামেলা কিছুটা কমে এসেছে,” বলেন এক পুলিশ সদস্য।
অপেক্ষমাণ যাত্রীদেরও দেখা গেছে উৎসবমুখর। কিছুক্ষণ পর পর বাইরের লাইন থেকে যখন যাত্রী প্রবেশ করানো হচ্ছিল স্টেশনে, দূরে অপেক্ষমাণ যাত্রীরা তখন হৈ হৈ করে উঠছিলেন।
বৃহস্পতিবার প্রথম দিনে টিকেট ভেন্ডিং মেশিনগুলো বার বার বিকল হয়ে যাওয়ায় যাত্রীদের হাতে একবার ব্যবহারযোগ্য টিকেট হস্তান্তর করতে পারছিলেন না কাউন্টারকর্মীরা। ফলে ট্রেনগুলোও ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অনেক কম যাত্রী নিয়ে আসা যাওয়া করছিল। অন্যদিকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও ট্রেনে না চড়েই ফিরে গিয়েছিলেন অনেকে। প্রথম দিনে এক প্রান্ত থেকে এসে নিচ না নেমে আবার টিকেট কেটে ফিরে যাওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় দিনে সেই সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। যাত্রীরা উত্তরা থেকে এলে স্টেশন প্লাজার নির্ধারিত পথ ধরে নিচে নেমে যেতে হয়েছে। আবার উত্তরা যেতে চাইলে নিচে লাইন ধরে অপেক্ষার পর আবার উপরে উঠতে পেরেছেন।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানির ব্যবস্থাপক মহাফুজুর রহমান বলেন, যাত্রীরা বহির্গমন না করে আবার ফিরে যাবেন এমন নিয়ম নেই। তাদেরকে একবার বের হতে হবে। সবাইকে এভাবে আসা যাওয়ার সুযোগ দিলে তো বাইরে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের আমরা সুযোগ দিতে পারব না। এখন যারা ভ্রমণ করছেন, তাদের অধিকাংশই দর্শনার্থী। শখের বসে তারা মেট্রো ট্রেনে উঠছেন।”
স্টেশনের শৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত রোভার স্কাউট সদস্য শুভ চন্দ্র দাস জানান, ভেন্ডিং মেশিনগুলো এখন আগের চেয়ে ভালো কাজ করছে। নরম হয়ে যাওয়া টাকা কিংবা অন্য কোনো কারিগরি কারণে মেশিন থেমে গেলে টেকনিশিয়ানরা কিছুক্ষণের মধ্যে তা আবার ঠিক করে দিচ্ছেন। সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে দেখা গেল, একজন যাত্রী ভেন্ডিং মেশিন থেকে একসঙ্গে দুটি করে টিকেট কিনতে পারছেন। একজন যাত্রী নিজের জন্য প্রয়োজনীয় ছয়টি টিকেট কেটেছেন। এতে সময় লেগেছে দুই মিনিট।
ভোগান্তি কমাবে এমআরটি পাস? গড়ে ১০ থেকে ১২ মিনিট পর পর স্টেশন থেকে একটি ট্রেন ছেড়ে গেছে শুক্রবার। একই সময় পর পর ট্রেন আসছে।
ট্রেনে চড়ে দেখা যায়, একটি স্টেশন থেকে ছাড়ার পর কিছুক্ষণের মধ্যে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার গতি পাচ্ছে মেট্রোরেল। উত্তরার কাছাকাছি পৌঁছানোর পর গতি উঠে যাচ্ছে ৮৮ থেকে ৯০ কিলোমিটারে। মাঝে স্টেশনগুলোর পার হওয়ার সময় গতি কমে ৫০ কিলোমিটারে নেমে আসছে। শুক্রবার ছুটির দিনে মেট্রোরেলে দিয়াবাড়ি প্রান্তে গিয়ে অনেক যাত্রীই সেখানে খোলা আকাশের নিচে ঘুরে বেড়িয়েছেন। আগের দিনের তুলনায় চা-নাস্তার দোকানপাটও বেড়েছে দিয়াবাড়িতে।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন সিদ্দিক আগারগাঁওয়ে বলেন, “গতকালের তুলনায় আজকে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নত হয়েছে। যাত্রীদের সহজে ভ্রমণের সুবিধার্থে আমরা এমআরটি পাস সংগ্রহের পরামর্শ দিচ্ছি।”
“৫০০ টাকা দামের একটি এমআরটি পাসে ৩০০ টাকা রিচার্জ করা থাকবে। এই পাস থাকলে কাউকে কোনো লাইনে দাঁড়াতে হবে না। এক সঙ্গে অনেক মানুষ টিকেট কিনতে গিয়ে যে ভোগান্তিতে পড়ছেন, তারা এমআরটি পাস কিনে নিলে আর কোনো সমস্যার মুখোমুখি হবেন না। আমাদের কাউন্টারগুলোতেও চাপ কমবে।”
মেট্রোরেলে ময়লা না ফেলার আহ্বান মেয়র আতিকের: ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিজয়ের মাসে আমাদের মেট্রোরেল উপহার দিয়েছেন। কিছুদিন আগেই পদ্মাসেতু উপহার দিয়েছেন। এগুলো জনগণের সম্পদ। এগুলো পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব সবার। দয়া করে মেট্রোরেল পরিষ্কার রাখুন, ট্রেন, বাথরুম, প্লাটফর্ম পরিষ্কার রাখুন। আমরাইতো ব্যবহার করবো। এর সুফলতো আমরাই পাব। আমাদেরই সম্পত্তি। এটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখাও আমাদের দায়িত্ব।
গতকাল শুক্রবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর মহাখালী টিঅ্যান্ডটি মাঠে প্লাস্টিক দূষণরোধে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে পরিত্যক্ত প্রায় অর্ধ কোটি প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে তৈরি করা নানা প্রতিকৃতি প্রদর্শনীর উদ্বোধনকালে মেয়র এসব কথা বলেন। পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিডি ক্লিন ৯ দিনব্যাপী (৩০ ডিসেম্বর থেকে ৭ জানুয়ারি) এ বোতল প্রদর্শনীর আয়োজন করে। মেয়র বলেন, প্লাস্টিক বোতল পরিবেশের ক্ষতি করছে। প্লাস্টিক দূষণ রোধ করতে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকেই দায়িত্ব নিতে হবে। তবে জনগণকেও যত্রতত্র প্লাস্টিক বোতল ফেলা বন্ধ করতে হবে। ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, নালা বা লেক পরিষ্কার করতে গেলে আমরা বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্য পাই। এসব প্লাস্টিকের কারণে নালাগুলো ব্লক হয়ে যায়। ফলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এছাড়াও সুয়ারেজ লাইনে পয়ঃবর্জ্যের লাইন দেওয়া হয়েছে। ৪ জানুয়ারি গুলশান, বনানী, নিকেতন ও বাড়িধারা এলাকায় অভিযান চালাবো। মেয়র আরও বলেন, সৃষ্টিকর্তা মানুষের প্রয়োজনেই জলজ প্রাণী, কচ্ছপ, মাছ, বৃক্ষ সবই সৃষ্টি করেছেন। এগুলো পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। অথচ আমরা নির্দয় হয়ে এগুলো ধ্বংস করছি। যারা ধ্বংস করছে তারা চিন্তা করেন না আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের, তারা চিন্তা করেন না লাল-সবুজের পতাকার। তারা চিন্তা করেন না কষ্টার্জিত এ দেশটার। দেশপ্রেম থাকলে কেউ দেশের ক্ষতি করতে পারে না। বিডি ক্লিনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে মেয়র বলেন, বিডি ক্লিন শুধু নামে না, কথায় না, কাজের মাধ্যমে, ত্যাগের মাধ্যমে, কষ্টের মাধ্যমে তাদের অবস্থান প্রমাণ করেছে। বিডি ক্লিনের সদস্যরা নিজেদের খেয়ে পরের মোষ তাড়িয়ে তারা পরিবেশের জন্য কাজ করছে। এ ছেলেমেয়েরা মাদকাসক্ত না হয়ে, ঘরে বসে স্মার্ট ফোনে সময় নষ্ট করে দেশকে, শহরকে পরিচ্ছন্ন করা জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। সত্যিই প্রশংসনীয়। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসেবে বিডি ক্লিন বর্তমানে একটি ব্র্যান্ড। এটি এরই মধ্যে সুনাম অর্জন করেছে। এ সুনাম ধরে রাখতে হবে। এসময় বিডি ক্লিনকে দশ লাখ টাকা অনুদান দেওয়ার ঘোষণা দেন ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
সবশেষে মেয়র দেশকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা ও দেশের আইন মেনে দেশসেবার জন্য বিডি ক্লিনের সদস্যদের শপথ পাঠ করান। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিডি ক্লিনের প্রতিষ্ঠাতা ফরিদ উদ্দিন। তিনি বলেন, পুরো দেশে বিডি ক্লিনের প্রায় ৪০ হাজার সদস্য কাজ করছে। পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের পাশাপাশি একটি সুশৃঙ্খল, সুস্থ ও উন্নত মানসিকতাসম্পন্ন জাতি গঠনই এ সংগঠনটির মূল লক্ষ্য। মানসিক পরিবর্তন নিশ্চিত হলেই দেশ পরিচ্ছন্ন হবে, দেশ উন্নত হবে। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির অঞ্চল ৩ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল বাকী এবং ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. নাছির।