নিজস্ব প্রতিবেদক : বঙ্গবন্ধুর সন্তান দুর্নীতি করে টাকা আয় করতে ক্ষমতায় আসেনি বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেন, দুর্নীতি করে টাকা আয় করতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসেনি।
গতকাল শনিবার রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের ২২তম ত্রিবার্ষিক জাতীয় সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। আওয়ামী লীগের হাতেই দেশের উন্নয়ন এমন মন্তব্য করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকা কালে দুর্নীতি ও লোটপাটতন্ত্র কায়েম করেছিল। মানুষের ভোটের অধিকার কেঁড়ে নিয়েছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে উন্নত সমৃদ্ধ ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তাবায়ন করেছে। মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থেকে বিদ্যুতের কথা বলে খাম্বা দিয়েছিল। আর আওয়ামী লীগ সরকার দেশের প্রতিটি ঘরে আলো পৌঁছে দিয়েছে।
জীবন থাকতে বাংলাদেশের স্বার্থ নষ্ট হবে না:
বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের মধ্যেও বাংলাদেশের বর্তমান মাথা পিছু আয় ২৮২৪ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশ যখন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন করছে তখন দেশ উন্নত মর্যাদায় উন্নীত হয়েছে। তাই নিজের জীবন থাকতে বাংলাদেশের স্বার্থ নষ্ট হবে না বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। বলেন, জীবন থাকতে দেশের এতটুকু স্বার্থ নষ্ট হবে না। দেশ কারো হাতে তুলে দেব না।
১৯৯৬ সালে ভোট চুরি করে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসেছিল বলে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ভোট চুরি করলে জনগণ ছেড়ে দেয় না। বিএনপিকেও ছাড়েনি। তাদের ক্ষমতা থেকে টেনে নামায় জনগণ। পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে হাত দেয়।
২০০৮ সাল থেকে পরপর তিনবার ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশকে পৃথিবীর মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন বাস্তব।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে বলে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ক্ষমতায় যেতে ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার তৈরি করেছিল খালেদা জিয়া। বর্তমানে ভোটার আইডি স্মার্ট করা হয়েছে। ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছে আওয়ামী লীগ।
এদিন সকাল সাড়ে ১০টায় শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে দিনব্যাপী এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এর আগে সম্মেলন মঞ্চে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের পাশাপাশি জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। ‘উন্নয়ন অভিযাত্রায় দেশরতœ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত, সমৃদ্ধ ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে’- এই স্লোগানে আয়োজিত হয়েছে এবারের কাউন্সিল।
কানায় কানায় পূর্ণ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান:
শনিবার সকাল থেকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দোয়েল চত্বর, রমনা কালীমন্দির গেট ও টিএসসি এবং চারুকলার বিপরীত গেট দিয়ে মিছিল নিয়ে সম্মেলন স্থলে ঢুকতে দেখা গেছে নেতাকর্মীদের। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে সম্মেলন রূপ নেয় জনসমুদ্রে। সম্মেলন স্থল সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কানায় কানায় পূর্ণ হয়।
আওয়ামী যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, মৎস্যজীবী লীগ, শ্রমিক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, তাঁতি লীগ এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সারাদেশের সাংগঠনিক জেলা থেকেও নেতাকর্মীদের ঢল নেমেছে।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০ ও ২১ ডিসেম্বর। সেই সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের দ্বিতীয় বারের মতো সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন ওবায়দুল কাদের।
আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন, বন্ধ বিভিন্ন সড়ক:
সম্মেলনকে কেন্দ্র করে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশে বেশ কিছু সড়কের ১১টি পয়েন্টে বন্ধ রয়েছে যানবাহন চলাচল। তবে এসব সড়কের বিকল্প হিসেবে রোড ডাইভারশন করে দেয় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা ট্রাফিক বিভাগ।
রাজধানীর কাঁটাবন ক্রসিং, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ক্রসিং, কাকরাইল ক্রসিং, কাকরাইল চার্চ ক্রসিং, হাইকোর্ট ক্রসিং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার, ভাস্কর্য ক্রসিং, উপাচার্য ভবন ক্রসিং, ইউবিএল ক্রসিং, দোয়েল চত্বর ও জগন্নাথ হল ক্রসিং সড়ক বন্ধ ছিল।
সতর্ক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী:
সকাল থেকে সম্মেলনস্থলে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা নেতাকর্মীদের ঢল নামতে শুরু করে। এসময় সমাবেশস্থল ঘিরে সতর্ক অবস্থানে যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
সরেজমিনে সমাবেশস্থল এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সকালে থেকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দোয়েল চত্বর, রমনা কালী মন্দির গেট ও টিএসসি ও চারুকলার বিপরীত গেট দিয়ে মিছিল নিয়ে সম্মেলন স্থলে প্রবেশ করেন নেতাকর্মীরা। এছাড়া ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন ও শিখাচিরন্তন সংলগ্ন গেট দিয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও অতিথিরা প্রবেশ করেন। এদিকে সমাবেশস্থলের আশপাশে কঠোর নজরদারিতে থাকতে দেখা গেছে পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীর সদস্যদের। এছাড়া বিভিন্ন বিভাগ থেকে আসা নেতাকর্মীদের জন্য গাড়ি রাখার স্থানও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, ১৯৪৯ সালের ২৩ ও ২৪ জুন পুরান ঢাকার রোজ গার্ডেনে কর্মী সম্মেলনের মাধ্যমে জন্ম হয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের। এ দলের জন্মের পর থেকে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা অর্জনসহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও অর্জনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে দলটির নাম। ১৯৫৫ সালের তৃতীয় জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে সকল ধর্ম, বর্ণের প্রতিনিধি হিসেবে দলের নাম থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ যায়। এরপর ১৯৭১ সালে হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
বঙ্গবন্ধুর সন্তান দুর্নীতি করে টাকা আয় করতে ক্ষমতায় আসেনি: শেখ হাসিনা
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ
























