ঢাকা ০৩:৫৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৫

প্রাথমিকে বৃত্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে বিশিষ্টজনদের বিবৃতি

  • আপডেট সময় : ০১:২৫:৩৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২২
  • ১০৫ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : বছরের একেবারে শেষ সময়ে এসে আকস্মিকভাবেই প্রাথমিক স্তরে বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে ৩০ জন বিশিষ্ট নাগরিক বিবৃতি দিয়েছেন। গতকাল সোমবার ‘গণসাক্ষরতা অভিযান’ থেকে পাঠানো বিবৃতিতে প্রাথমিকের মেধাবৃত্তি প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, এটা সর্বজনবিদিত যে ২০১৩ সালে ২৬ হাজার ১৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ এবং সাম্প্রতিক সময়ে গৃহীত শিক্ষাক্রম সংস্কারসহ বর্তমান সরকারের কিছু শিক্ষাবান্ধব কৌশল ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে বেশ কিছু দৃশ্যমান সাফল্য এনে দিয়েছে। এই অর্জনগুলো এখন সারাবিশ্বেও স্বীকৃত। একসময় প্রচলিত ব্যবস্থায় মেধাবৃত্তি প্রদানের উপায় হিসেবে বাছাই করা শিক্ষার্থীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হতো ‘প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা’। ২০০৯ সালে সেটি বাদ দিয়ে শুরু হয় ‘প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি)’ পরীক্ষা। কিন্তু আমরা জানি যে করোনা-পরবর্তী পরিস্থিতি ও নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখা বিবেচনায় নিয়ে তিন বছর ধরে পিইসি পরীক্ষা হচ্ছে না। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে চালু হচ্ছে নতুন শিক্ষাক্রম, যে শিক্ষাক্রমে প্রাথমিক পর্যায়ে পাবলিক পরীক্ষাকে কম গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই ধারাবাহিক মূল্যায়নের ওপর অধিকতর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। তা পর্যায়ক্রমে অন্যান্য শ্রেণিতেও বাস্তবায়ন করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ অবস্থায় বছরের একেবারে শেষ সময়ে আকস্মিকভাবেই পুরনো ব্যবস্থার মতো ‘প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা’ নেওয়ার সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা ও নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।
বিবৃতিতে বলা হয়, নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখা অনুযায়ী, শিক্ষায় পরিবর্তনের যে ইতিবাচক ধারা তৈরি হচ্ছে, সেখানে এভাবে হুট করে বৃত্তি পরীক্ষা চালু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হলে শিক্ষার্থীদের ওপর নানামুখী মানসিক ও শারীরিক চাপ পড়বে বলে আমাদের বিশ্বাস। এছাড়াও নতুন শিক্ষাক্রমে যেখানে সব শিক্ষার্থীর মেধার সম্পূর্ণ বিকাশের নানা দিককে উৎসাহিত করা হচ্ছে, সেখানে মাত্র ২০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে বাছাই করে একটি বৃত্তি কার্যক্রম শুরু করলে সুবিধাভোগী ও সুবিধাবঞ্চিতদের মধ্যে বৈষম্য আরও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এটি আমাদের সংবিধানের মূলনীতির পরিপন্থি।
মূল্যায়নের প্রসঙ্গ টেনে বিবৃতিতে বলা হয়, দ্রুত পরিবর্তনশীল পৃথিবীর সঙ্গে খাপ-খাওয়ানোর লক্ষ্যে বর্তমানে প্রচলিত সনাতন শিখনকালীন মূল্যায়ন পদ্ধতি এবং পরীক্ষা-নির্ভর, সনদসর্বস্ব শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে সাম্প্রতিককালে প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন সময়ে দেওয়া বক্তব্য আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। কিন্তু শুধু ২০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে একটি বৃত্তি পরীক্ষা চালুর ঘোষণা আমাদের হতাশ করেছে। শিক্ষা নিয়ে প্রায়শ এত পরীক্ষা-নিরীক্ষা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বিভ্রান্ত করে থাকে, যা মোটেই বাঞ্ছনীয় নয়। তাছাড়া, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং আন্তমন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে প্রতি বছর ‘সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ’ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে যেভাবে আমাদের বিভিন্ন স্তরের ও নানা ধরনের আর্থসামাজিক অবস্থানে থাকা, এমনকি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদেরও বাছাই করা হয়ে থাকে, তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। সব শিক্ষার্থীর মেধা যাচাইয়ের এরকম একটি সুন্দর ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও কেন শুধু ২০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য হঠাৎ করে ‘বৃত্তি পরীক্ষা’ চালু করা হচ্ছে—তা আমাদের বোধগম্য নয়। তদুপরি, এই পরীক্ষা চালুর মাধ্যমে কোচিং বাণিজ্য ও গাইড বইয়ের দৌরাত্ম্য বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে, যা ইতোপূর্বে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা নিয়ে পরিচালিত বিভিন্ন গবেষণায় সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এ কারণে অভিভাবকদের বাড়তি খরচেরও সম্মুখীন হতে হবে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়—আমরা আশা করছি নীতিনির্ধারকরা আকস্মিকভাবে ঘোষিত এবং জাতীয়ভাবে পরিচালিত ‘প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা’র মতো পাবলিক পরীক্ষার পরিবর্তে জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এর দিকনির্দেশনার আলোকে সব শিক্ষার্থীর জন্য উপজেলাভিত্তিক বাছাইয়ের মাধ্যমে মেধাবৃত্তি প্রদানের বিষয়টিকে বিবেচনা করবেন। এর মাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্থাপনা বিকেন্দ্রীকরণের পথে এগিয়ে যাবে বলে আমরা মনে করি। যা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নসহ ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত বাংলাদেশের প্রত্যাশা পূরণ এবং এসডিজি-৪-এর লক্ষ্য ‘সবার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতাভিত্তিক মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণ এবং জীবনব্যাপী শিক্ষা’র অধিকার প্রতিষ্ঠায় নতুন মাত্রা যুক্ত করবে, বেগবান হবে জাতীয় সম্মিলিত প্রয়াস- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
বিবৃতিতে সই করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ প্রণয়ন কমিটি কো-চেয়ার ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, প্রখ্যাত অভিনেতা ও নাট্যকার রামেন্দু মজুমদার, বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, প্রখ্যাত নাট্যকার নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম এম আকাশ, গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিরেটাস অধ্যাপক ড. মনজুর আহমেদ, নিরাপদ সড়ক চাই’র চেয়ারম্যান অভিনয়শিল্পী ইলিয়াস কাঞ্চন, বিশ্ব শিক্ষক ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক মাহফুজা খানম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদাউস, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ প্রণয়ন কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ, নাট্যব্যক্তিত্ব ফেরদৌসী মজুমদার, নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ, সাবেক সচিব মো. নজরুল ইসলাম খান, ঢাকা আহছানিয়া মিশনের প্রেসিডেন্ট কাজী রফিকুল আলম, নাট্যব্যক্তিত্ব ডা. এজাজুল ইসলাম, প্রতিবন্ধী বিষয়ক মানবাধিকারকর্মী মনসুর আহমেদ চৌধুরী, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম।
এছাড়াও সই করেছেন এডুকেশন ওয়াচের আহ্বায়ক ড. মোস্তাক রাজা চৌধুরী, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব.) সাখাওয়াত হোসেন, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিব দ্রং, জাগো ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক করভি রাকসন্দ, নারীনেত্রী মালেকা বেগম, প্রখ্যাত ক্রিকেটার খালেদ মাসুদ পাইলট, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক অধ্যাপক শফি আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইইআরের অধ্যাপক তারিক আহসান।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

১৮ বছর আগে বরখাস্ত ৮৫ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে পুনর্বহালের নির্দেশ

প্রাথমিকে বৃত্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে বিশিষ্টজনদের বিবৃতি

আপডেট সময় : ০১:২৫:৩৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : বছরের একেবারে শেষ সময়ে এসে আকস্মিকভাবেই প্রাথমিক স্তরে বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে ৩০ জন বিশিষ্ট নাগরিক বিবৃতি দিয়েছেন। গতকাল সোমবার ‘গণসাক্ষরতা অভিযান’ থেকে পাঠানো বিবৃতিতে প্রাথমিকের মেধাবৃত্তি প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, এটা সর্বজনবিদিত যে ২০১৩ সালে ২৬ হাজার ১৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ এবং সাম্প্রতিক সময়ে গৃহীত শিক্ষাক্রম সংস্কারসহ বর্তমান সরকারের কিছু শিক্ষাবান্ধব কৌশল ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে বেশ কিছু দৃশ্যমান সাফল্য এনে দিয়েছে। এই অর্জনগুলো এখন সারাবিশ্বেও স্বীকৃত। একসময় প্রচলিত ব্যবস্থায় মেধাবৃত্তি প্রদানের উপায় হিসেবে বাছাই করা শিক্ষার্থীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হতো ‘প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা’। ২০০৯ সালে সেটি বাদ দিয়ে শুরু হয় ‘প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি)’ পরীক্ষা। কিন্তু আমরা জানি যে করোনা-পরবর্তী পরিস্থিতি ও নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখা বিবেচনায় নিয়ে তিন বছর ধরে পিইসি পরীক্ষা হচ্ছে না। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে চালু হচ্ছে নতুন শিক্ষাক্রম, যে শিক্ষাক্রমে প্রাথমিক পর্যায়ে পাবলিক পরীক্ষাকে কম গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই ধারাবাহিক মূল্যায়নের ওপর অধিকতর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। তা পর্যায়ক্রমে অন্যান্য শ্রেণিতেও বাস্তবায়ন করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ অবস্থায় বছরের একেবারে শেষ সময়ে আকস্মিকভাবেই পুরনো ব্যবস্থার মতো ‘প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা’ নেওয়ার সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা ও নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।
বিবৃতিতে বলা হয়, নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখা অনুযায়ী, শিক্ষায় পরিবর্তনের যে ইতিবাচক ধারা তৈরি হচ্ছে, সেখানে এভাবে হুট করে বৃত্তি পরীক্ষা চালু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হলে শিক্ষার্থীদের ওপর নানামুখী মানসিক ও শারীরিক চাপ পড়বে বলে আমাদের বিশ্বাস। এছাড়াও নতুন শিক্ষাক্রমে যেখানে সব শিক্ষার্থীর মেধার সম্পূর্ণ বিকাশের নানা দিককে উৎসাহিত করা হচ্ছে, সেখানে মাত্র ২০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে বাছাই করে একটি বৃত্তি কার্যক্রম শুরু করলে সুবিধাভোগী ও সুবিধাবঞ্চিতদের মধ্যে বৈষম্য আরও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এটি আমাদের সংবিধানের মূলনীতির পরিপন্থি।
মূল্যায়নের প্রসঙ্গ টেনে বিবৃতিতে বলা হয়, দ্রুত পরিবর্তনশীল পৃথিবীর সঙ্গে খাপ-খাওয়ানোর লক্ষ্যে বর্তমানে প্রচলিত সনাতন শিখনকালীন মূল্যায়ন পদ্ধতি এবং পরীক্ষা-নির্ভর, সনদসর্বস্ব শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে সাম্প্রতিককালে প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন সময়ে দেওয়া বক্তব্য আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। কিন্তু শুধু ২০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে একটি বৃত্তি পরীক্ষা চালুর ঘোষণা আমাদের হতাশ করেছে। শিক্ষা নিয়ে প্রায়শ এত পরীক্ষা-নিরীক্ষা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বিভ্রান্ত করে থাকে, যা মোটেই বাঞ্ছনীয় নয়। তাছাড়া, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং আন্তমন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে প্রতি বছর ‘সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ’ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে যেভাবে আমাদের বিভিন্ন স্তরের ও নানা ধরনের আর্থসামাজিক অবস্থানে থাকা, এমনকি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদেরও বাছাই করা হয়ে থাকে, তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। সব শিক্ষার্থীর মেধা যাচাইয়ের এরকম একটি সুন্দর ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও কেন শুধু ২০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য হঠাৎ করে ‘বৃত্তি পরীক্ষা’ চালু করা হচ্ছে—তা আমাদের বোধগম্য নয়। তদুপরি, এই পরীক্ষা চালুর মাধ্যমে কোচিং বাণিজ্য ও গাইড বইয়ের দৌরাত্ম্য বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে, যা ইতোপূর্বে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা নিয়ে পরিচালিত বিভিন্ন গবেষণায় সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এ কারণে অভিভাবকদের বাড়তি খরচেরও সম্মুখীন হতে হবে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়—আমরা আশা করছি নীতিনির্ধারকরা আকস্মিকভাবে ঘোষিত এবং জাতীয়ভাবে পরিচালিত ‘প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা’র মতো পাবলিক পরীক্ষার পরিবর্তে জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এর দিকনির্দেশনার আলোকে সব শিক্ষার্থীর জন্য উপজেলাভিত্তিক বাছাইয়ের মাধ্যমে মেধাবৃত্তি প্রদানের বিষয়টিকে বিবেচনা করবেন। এর মাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্থাপনা বিকেন্দ্রীকরণের পথে এগিয়ে যাবে বলে আমরা মনে করি। যা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নসহ ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত বাংলাদেশের প্রত্যাশা পূরণ এবং এসডিজি-৪-এর লক্ষ্য ‘সবার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতাভিত্তিক মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণ এবং জীবনব্যাপী শিক্ষা’র অধিকার প্রতিষ্ঠায় নতুন মাত্রা যুক্ত করবে, বেগবান হবে জাতীয় সম্মিলিত প্রয়াস- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
বিবৃতিতে সই করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ প্রণয়ন কমিটি কো-চেয়ার ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, প্রখ্যাত অভিনেতা ও নাট্যকার রামেন্দু মজুমদার, বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, প্রখ্যাত নাট্যকার নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম এম আকাশ, গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিরেটাস অধ্যাপক ড. মনজুর আহমেদ, নিরাপদ সড়ক চাই’র চেয়ারম্যান অভিনয়শিল্পী ইলিয়াস কাঞ্চন, বিশ্ব শিক্ষক ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক মাহফুজা খানম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদাউস, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ প্রণয়ন কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ, নাট্যব্যক্তিত্ব ফেরদৌসী মজুমদার, নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ, সাবেক সচিব মো. নজরুল ইসলাম খান, ঢাকা আহছানিয়া মিশনের প্রেসিডেন্ট কাজী রফিকুল আলম, নাট্যব্যক্তিত্ব ডা. এজাজুল ইসলাম, প্রতিবন্ধী বিষয়ক মানবাধিকারকর্মী মনসুর আহমেদ চৌধুরী, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম।
এছাড়াও সই করেছেন এডুকেশন ওয়াচের আহ্বায়ক ড. মোস্তাক রাজা চৌধুরী, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব.) সাখাওয়াত হোসেন, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিব দ্রং, জাগো ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক করভি রাকসন্দ, নারীনেত্রী মালেকা বেগম, প্রখ্যাত ক্রিকেটার খালেদ মাসুদ পাইলট, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক অধ্যাপক শফি আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইইআরের অধ্যাপক তারিক আহসান।