ঢাকা ১২:৫৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

স্পেনে জন্ম, নিষিদ্ধ করেছিল ফিফা, তার পানেকা কিকেই বিদায় সাবেক চ্যাম্পিয়নদের!

  • আপডেট সময় : ০১:২২:৪৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২২
  • ৯৬ বার পড়া হয়েছে

ক্রীড়া ডেস্ক : এবারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে আলোচিত খেলোয়াড়দের মধ্যে অন্যতম আশরাফ হাকিমি। যিনি আফ্রিকার দেশ মরক্কোর হয়ে খেলছেন কাতার বিশ্বকাপে। মাঠের পারফরম্যান্সের চেয়ে আশরাফ হাকিমি বিশ্বজুড়ে ফুটবলপ্রেমীদের মন কেড়েছেন উদযাপন দিয়ে। কারণ, জয়ের পর তার উদযাপন একেবারেই ভিন্ন। খেলা শেষ হলেই তিনি ছুঁটে যান গ্যালারিতে। সেখানে মাকে চুমু দিয়ে উদযাপন করেন জয়। আর তার এই উদযাপন নজর কেড়েছে দর্শকদের। বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হচ্ছেন তিনি। তবে শুধু উদযাপনই নয়, তাকে এবার বিশ্ব চিনল আরও গভীর থেকে। চিনবেই না কেন, তার ‘পানেক কিকেই’ তো বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেল সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন স্পেন। অথচ এই স্পেনেই জন্মেছিলেন আশরাফ হাকিমি। মঙ্গলবার বিশ্বকাপের ‘রাউন্ড অব ১৬’-এ নির্ধারিত সময় স্পেন ও মরক্কোর খেলার ফল গোলশূন্য ছিল। অতিরিক্ত সময়ও কোনো গোল হয়নি। পেনাল্টি শুটআউটে একটি গোলও করতে পারেনি স্পেন। অন্যদিকে, মরক্কোর চতুর্থ শটে ‘পানেকা কিক’ মেরে নিজ দলকে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে তোলেন হাকিমি। মরক্কোর হয়ে খেললেও আদতে স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে জন্মগ্রহণ করেন আশরাফ হাকিমি। তবে মরক্কোর জনসংখ্যার একটা বড় অংশ স্পেনে বাস করেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আপাতত প্রায় ৯০,০০০ মরোক্কান স্পেনে বসবাস করেন। স্পেনে কর্মরত মরোক্কান ফুটবল ফেডারেশনের স্কাউট রাবি তাসাকা বলেছিলেন, “আমি ওকে ২০১০ সালে আবিষ্কার করেছিলাম। ওর সঙ্গে নিয়মিত কথা বলতাম। ওকে দেখার জন্য মাদ্রিদে এসেছিলেন ফেডারেশনের টেকনিকাল ডিরেক্টর। আমার পরিকল্পনার বিষয়ে ওকে জানিয়েছিলাম, যা অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক ছিল। আমার মনে হয়, (কোন দেশের হয়ে খেলবে), তা নিয়ে ওর মনে কোনো সংশয় ছিল।” স্প্যানিশ সংবাদপত্র মার্কার প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাদ্রিদের গেটাফেতে ছেলেবেলা কাটিয়েছিলেন হাকিমি। ছয় বছর থেকে স্থানীয় ক্লাব কোলোনিয়া ওফিগেভির হয়ে খেলতেন। তারপর রিয়াল মাদ্রিদের অ্যাকাডেমিতে যোগ দিয়েছিলেন। সেই সময় তার বয়স ছিল সাত। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, যখন রিয়ালের অ্যাকাডেমিতে খেলার চিঠি এসেছিল, তখন প্রাথমিকভাবে বিশ্বাস করেননি হাকিমি। একেবারে ছেলেবেলায় রিয়ালের অ্যাকাডেমিতে পা রাখার থেকেই ফুটবল বিশেষজ্ঞদের নজর কাড়তে থাকেন হাকিমি। মাদ্রিদের প্রাক্তন কোচ জিনেদিন জিদানের সঙ্গে বিশেষ যোগও ছিল তার। জিদানের ছেলের সঙ্গে রিয়ালের যুব দলে খেলতেন হাকিমি। তার উপর নজর ছিল জিদানেরও। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, লোনে আলাভেজে যাওয়ার সুযোগ ছিল হাকিমির। সেক্ষেত্রে নিয়মিত প্রথম একাদশে খেলার সুযোগ মিলত। তবে জিদান তাকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে কমপক্ষে ২০টি ম্যাচে খেলাবেন। কিন্তু ২০১৬ সালে ধাক্কা খেয়েছিলেন হাকিমি। কম বয়স্ক বিদেশি খেলোয়াড়কে রিয়াল মাদ্রিদ বেআইনিভাবে সই করিয়েছে কি না, সেই সংক্রান্ত তদন্তের অংশ হিসেবে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে হাকিমিকে নিষিদ্ধ করেছিল ফিফা। যিনি ততদিনে প্রাক-মৌসুম সফরে মাদ্রিদের প্রথম দলের হয়ে অভিষেক করে ফেলেছিলেন। সেই সময় হাকিমির পাশে দাঁড়িয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। হাকিমি যে স্পেনে জন্মেছেন, সেই সংক্রান্ত প্রমাণও পেশ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে হাকিমির উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে যায়। বিষয়টি নিয়ে একটি সংবাদমাধ্যমে তাসাকা বলেছিলেন, “আমার মনে হয়, কোথায় কোন বালক জন্মেছে, সেটা দেখার পরিবর্তে শুধুমাত্র অভিবাসীদের তালিকা থেকে উদ্ভট নাম দেখছিল ফিফা। ওরা মরোক্কান নাম দেখেছিল এবং বিনা দোষে ওকে শাস্তি দিয়েছিল। মাদ্রিদের হাসপাতালে যে ও জন্মগ্রহণ করেছে, মাদ্রিদে পড়াশোনা করেছে এবং সেখানেই বড় হয়ে উঠেছে, তা দেখানোর জন্য সমস্ত নথি পেশ করেছিল রিয়াল মাদ্রিদ ও ওর পরিবার।” পরবর্তীতে সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছিল ফিফা। তারপর ২০১৬ সালের অক্টোবরে মরক্কোর সিনিয়র দলের হয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিষেক হয় হাকিমির (জুনিয়র পর্যায়েও মরক্কোর হয়ে খেলেছিলেন)। কানাডার বিরুদ্ধে ৪-০ গোলে জিতেছিল মরক্কো। পরবর্তীতে লোনে মাদ্রিদ থেকে বরুসিয়া ডর্টমুন্ডে চলে যান। কেন স্পেনের পরিবর্তে মরক্কোকে বেছে নেন হাকিমি? একটি সংবাদমাধ্যমে তাকাসা বলেছিলেন, “ও নিজেকে একইসঙ্গে মরোক্কান এবং স্প্যানিশ মনে করে। স্পেন ওকে যা সুযোগ দিয়েছে, সেজন্য নিজেকে ধন্য বলে মনে করে। ও মরক্কোকে বেছে নিয়েছে, কারণ ওর মা-বাবা মরোক্কান। ও প্রতি বছর মরক্কোয় যায়। তাছাড়া ও যখন খুব ছোটো, তখন থেকেই ওকে নিয়ে আমরা আগ্রহী ছিলাম।” স্পেনের লজ্জা: ফুটবল বিশ্বকাপে প্রথম দল হিসেবে চারবার পেনাল্টি শুটআউটে হারল স্পেন। অর্থাৎ সবথেকে বেশি সংখ্যক পেনাল্টি শুটআউটে হারের লজ্জার মুখে পড়ল ‘লা রোখা’। গতবার রাশিয়াতেও পেনাল্টিতে হেরে বিদায় নিয়েছিল স্পেন। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, গোল ডটকম, দ্য অ্যাথলেটিক, সিএনএন, এবিসি নিউজ, স্পোর্টিংনিউজ

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

স্পেনে জন্ম, নিষিদ্ধ করেছিল ফিফা, তার পানেকা কিকেই বিদায় সাবেক চ্যাম্পিয়নদের!

আপডেট সময় : ০১:২২:৪৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২২

ক্রীড়া ডেস্ক : এবারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে আলোচিত খেলোয়াড়দের মধ্যে অন্যতম আশরাফ হাকিমি। যিনি আফ্রিকার দেশ মরক্কোর হয়ে খেলছেন কাতার বিশ্বকাপে। মাঠের পারফরম্যান্সের চেয়ে আশরাফ হাকিমি বিশ্বজুড়ে ফুটবলপ্রেমীদের মন কেড়েছেন উদযাপন দিয়ে। কারণ, জয়ের পর তার উদযাপন একেবারেই ভিন্ন। খেলা শেষ হলেই তিনি ছুঁটে যান গ্যালারিতে। সেখানে মাকে চুমু দিয়ে উদযাপন করেন জয়। আর তার এই উদযাপন নজর কেড়েছে দর্শকদের। বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হচ্ছেন তিনি। তবে শুধু উদযাপনই নয়, তাকে এবার বিশ্ব চিনল আরও গভীর থেকে। চিনবেই না কেন, তার ‘পানেক কিকেই’ তো বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেল সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন স্পেন। অথচ এই স্পেনেই জন্মেছিলেন আশরাফ হাকিমি। মঙ্গলবার বিশ্বকাপের ‘রাউন্ড অব ১৬’-এ নির্ধারিত সময় স্পেন ও মরক্কোর খেলার ফল গোলশূন্য ছিল। অতিরিক্ত সময়ও কোনো গোল হয়নি। পেনাল্টি শুটআউটে একটি গোলও করতে পারেনি স্পেন। অন্যদিকে, মরক্কোর চতুর্থ শটে ‘পানেকা কিক’ মেরে নিজ দলকে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে তোলেন হাকিমি। মরক্কোর হয়ে খেললেও আদতে স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে জন্মগ্রহণ করেন আশরাফ হাকিমি। তবে মরক্কোর জনসংখ্যার একটা বড় অংশ স্পেনে বাস করেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আপাতত প্রায় ৯০,০০০ মরোক্কান স্পেনে বসবাস করেন। স্পেনে কর্মরত মরোক্কান ফুটবল ফেডারেশনের স্কাউট রাবি তাসাকা বলেছিলেন, “আমি ওকে ২০১০ সালে আবিষ্কার করেছিলাম। ওর সঙ্গে নিয়মিত কথা বলতাম। ওকে দেখার জন্য মাদ্রিদে এসেছিলেন ফেডারেশনের টেকনিকাল ডিরেক্টর। আমার পরিকল্পনার বিষয়ে ওকে জানিয়েছিলাম, যা অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক ছিল। আমার মনে হয়, (কোন দেশের হয়ে খেলবে), তা নিয়ে ওর মনে কোনো সংশয় ছিল।” স্প্যানিশ সংবাদপত্র মার্কার প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাদ্রিদের গেটাফেতে ছেলেবেলা কাটিয়েছিলেন হাকিমি। ছয় বছর থেকে স্থানীয় ক্লাব কোলোনিয়া ওফিগেভির হয়ে খেলতেন। তারপর রিয়াল মাদ্রিদের অ্যাকাডেমিতে যোগ দিয়েছিলেন। সেই সময় তার বয়স ছিল সাত। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, যখন রিয়ালের অ্যাকাডেমিতে খেলার চিঠি এসেছিল, তখন প্রাথমিকভাবে বিশ্বাস করেননি হাকিমি। একেবারে ছেলেবেলায় রিয়ালের অ্যাকাডেমিতে পা রাখার থেকেই ফুটবল বিশেষজ্ঞদের নজর কাড়তে থাকেন হাকিমি। মাদ্রিদের প্রাক্তন কোচ জিনেদিন জিদানের সঙ্গে বিশেষ যোগও ছিল তার। জিদানের ছেলের সঙ্গে রিয়ালের যুব দলে খেলতেন হাকিমি। তার উপর নজর ছিল জিদানেরও। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, লোনে আলাভেজে যাওয়ার সুযোগ ছিল হাকিমির। সেক্ষেত্রে নিয়মিত প্রথম একাদশে খেলার সুযোগ মিলত। তবে জিদান তাকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে কমপক্ষে ২০টি ম্যাচে খেলাবেন। কিন্তু ২০১৬ সালে ধাক্কা খেয়েছিলেন হাকিমি। কম বয়স্ক বিদেশি খেলোয়াড়কে রিয়াল মাদ্রিদ বেআইনিভাবে সই করিয়েছে কি না, সেই সংক্রান্ত তদন্তের অংশ হিসেবে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে হাকিমিকে নিষিদ্ধ করেছিল ফিফা। যিনি ততদিনে প্রাক-মৌসুম সফরে মাদ্রিদের প্রথম দলের হয়ে অভিষেক করে ফেলেছিলেন। সেই সময় হাকিমির পাশে দাঁড়িয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। হাকিমি যে স্পেনে জন্মেছেন, সেই সংক্রান্ত প্রমাণও পেশ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে হাকিমির উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে যায়। বিষয়টি নিয়ে একটি সংবাদমাধ্যমে তাসাকা বলেছিলেন, “আমার মনে হয়, কোথায় কোন বালক জন্মেছে, সেটা দেখার পরিবর্তে শুধুমাত্র অভিবাসীদের তালিকা থেকে উদ্ভট নাম দেখছিল ফিফা। ওরা মরোক্কান নাম দেখেছিল এবং বিনা দোষে ওকে শাস্তি দিয়েছিল। মাদ্রিদের হাসপাতালে যে ও জন্মগ্রহণ করেছে, মাদ্রিদে পড়াশোনা করেছে এবং সেখানেই বড় হয়ে উঠেছে, তা দেখানোর জন্য সমস্ত নথি পেশ করেছিল রিয়াল মাদ্রিদ ও ওর পরিবার।” পরবর্তীতে সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছিল ফিফা। তারপর ২০১৬ সালের অক্টোবরে মরক্কোর সিনিয়র দলের হয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিষেক হয় হাকিমির (জুনিয়র পর্যায়েও মরক্কোর হয়ে খেলেছিলেন)। কানাডার বিরুদ্ধে ৪-০ গোলে জিতেছিল মরক্কো। পরবর্তীতে লোনে মাদ্রিদ থেকে বরুসিয়া ডর্টমুন্ডে চলে যান। কেন স্পেনের পরিবর্তে মরক্কোকে বেছে নেন হাকিমি? একটি সংবাদমাধ্যমে তাকাসা বলেছিলেন, “ও নিজেকে একইসঙ্গে মরোক্কান এবং স্প্যানিশ মনে করে। স্পেন ওকে যা সুযোগ দিয়েছে, সেজন্য নিজেকে ধন্য বলে মনে করে। ও মরক্কোকে বেছে নিয়েছে, কারণ ওর মা-বাবা মরোক্কান। ও প্রতি বছর মরক্কোয় যায়। তাছাড়া ও যখন খুব ছোটো, তখন থেকেই ওকে নিয়ে আমরা আগ্রহী ছিলাম।” স্পেনের লজ্জা: ফুটবল বিশ্বকাপে প্রথম দল হিসেবে চারবার পেনাল্টি শুটআউটে হারল স্পেন। অর্থাৎ সবথেকে বেশি সংখ্যক পেনাল্টি শুটআউটে হারের লজ্জার মুখে পড়ল ‘লা রোখা’। গতবার রাশিয়াতেও পেনাল্টিতে হেরে বিদায় নিয়েছিল স্পেন। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, গোল ডটকম, দ্য অ্যাথলেটিক, সিএনএন, এবিসি নিউজ, স্পোর্টিংনিউজ