ঢাকা ১২:০০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫

বাল্যবিয়ে ঠেকিয়ে দেয়া শিরিন এখন ৩৬ নারীর স্বপ্নদ্রষ্টা

  • আপডেট সময় : ১১:৪৫:২৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২২
  • ৯৮ বার পড়া হয়েছে

নীলফামারী প্রতিনিধি : ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় নিজের বাল্যবিয়ে ঠেকিয়ে দেন। এখানেই শেষ নয়, এ পর্যন্ত ২৯৪টি বাল্যবিয়ে বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি। নারীদের স্বাবলম্বী করতে গড়ে তুলেছেন স্যানিটারি ন্যাপকিন কারখানা। হয়েছেন ৩৬ নারীর বেঁচের থাকার অনুপ্রেরণা। বলছি নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার শিমুলবাড়ির মঈনুল ইসলামের মেয়ে শিরিন আক্তার আশার কথা।
২০১১ সালে সবে প্রাথমিকের গ-ি পেরিয়ে মাধ্যমিকে পা রেখেছিলেন আশা। ঠিক তখন তার বিয়ে ঠিক করে পরিবার। তবে পড়াশোনার তীব্র ইচ্ছা ছিল আশার। এজন্য নিজেই তার বিয়ে ঠেকিয়ে দেন। বিয়ে বন্ধ করায় ছিটকে পড়েছিলেন পরিবার থেকে। এ সময় ১০ টাকা বেতনে টিউশনি করিয়ে চালিয়েছেন নিজের পড়াশোনা আশা। পাশাপাশি বাল্যবিয়ে রোধে নারীদের অধিকার আদায়ের জন্য গড়ে তুলেছেন ‘আসমানী যুব নারী ফাউন্ডেশন’ নামের একটি সংগঠন। হয়েছেন একজন সফল উদ্যোক্তা। এখন পর্যন্ত ২৯৪টি বাল্যবিয়ে বন্ধ করেছেন। কোনো নারী যাতে নির্যাতিত বা পরিবারের বোঝা না হন সেজন্য গড়ে তুলেছেন আসমানী স্যানিটারি ন্যাপকিন নামের একটি কারখানা। কারখানাটিতে কাজ করছেন ৩৬ জন নারী। এসব কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৯ সালে ‘জয়িতা’ অ্যাওয়ার্ড পান শিরিন। এরপর প্রেরণামূলক নারী খেতাব, জাতীয় পর্যায়ে গ্রামীণ নারী উদ্যোক্তা অ্যাওয়ার্ড, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গ্লোবাল নারী উদ্যোক্তা অ্যাওয়ার্ড ও সর্বশেষ জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড-২০২১ পান তিনি। মেয়েদের সুরক্ষা ও অধিকার নিয়ে কাজ করায় ২০১৪ সালে স্পেনের পার্লামেন্টে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন শিরিন ।
শিরিন বর্তমানে নীলফামারীর মশিউর রহমান ডিগ্রি কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষে অধ্যয়নরত। আসমানী স্যানিটারি ন্যাপকিন কারখানার মেশিন অপারেটর গীতা। শিরিনের সাহায্যে বাল্যবিয়ে থেকে রক্ষা পেয়ে এখন কারখানাটিতে কাজ করছেন। এখান থেকে উপার্জিত আয় দিয়ে নিজের পড়াশোনা ও পরিবারকে সহযোগিতা করছেন গীতা। চন্দনা রানী বলেন, ‘সেদিন যদি আপু আমার বিয়ে না আটকাতো তাহলে হয়তো আমার জীবনের সব আলো সেখানেই নিভে যেতো। এখন আপুর এখানে কাজ করছি, নিজের পড়াশোনা চালাচ্ছি।’
কারখানাটিতে মার্কেটিং বিভাগে কাজ করেন রশনা রানী। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘অর্থের অভাবে আমার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বাবা-মা বিয়ের কথা বলতেন। পরে আমি শিরিন আপুর কথা শুনি। এখানে এসে আপুকে সব বলি। তখন শিরিন আপু আমার পরিবারকে বোঝান আর আমার সাহস জোগান। এখন আমি কাজ করার পাশাপাশি পড়াশোনা করছি।’
সুরভী নামের আরেকজন বলেন, ‘শিরিন আপুর সাহায্যে এখানে আমাদের অনেকের জীবন পাল্টে গেছে। এখন আপুর মতো আমরাও স্বপ্ন দেখি নারীদের নিয়ে কাজ করার।’
এ বিষয়ে শিরিন আক্তার আশা বলেন, ‘২০১৪ সালে যখন স্পেনে গেলাম তখন সেখানকার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নারীর কর্মসংস্থান নিয়ে কাজ করি। এখন পর্যন্ত আমার কারখানায় ৩৬ জন নারী কাজ করছে। স্বপ্ন আছে এই কারখানায় একদিন ৩৬ হাজার নারী কাজ করবে এবং আসমানী সারাদেশে একটি ব্র্যান্ড হবে।’ নীলফামারী যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দিলগীর আলম বলেন, আমাদের থেকে নিবন্ধন নেওয়ার আগে থেকেই শিরিন কাজগুলো করতেন। এছাড়া কম দামে ভালোমানের প্রোডাক্ট দিতে পারছেন, এটা বড় বিষয়ে। সেখানে অনেক নারীর কর্মসংস্থান রয়েছে। তিনি যদি কোনো সাহায্য চান আমরা সাধ্যমতো তার পাশে দাঁড়াবো।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

প্রধান উপদেষ্টা হতাশ-ক্ষুব্ধ, ‘পদত্যাগ’ নিয়ে আলোচনা

বাল্যবিয়ে ঠেকিয়ে দেয়া শিরিন এখন ৩৬ নারীর স্বপ্নদ্রষ্টা

আপডেট সময় : ১১:৪৫:২৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২২

নীলফামারী প্রতিনিধি : ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় নিজের বাল্যবিয়ে ঠেকিয়ে দেন। এখানেই শেষ নয়, এ পর্যন্ত ২৯৪টি বাল্যবিয়ে বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি। নারীদের স্বাবলম্বী করতে গড়ে তুলেছেন স্যানিটারি ন্যাপকিন কারখানা। হয়েছেন ৩৬ নারীর বেঁচের থাকার অনুপ্রেরণা। বলছি নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার শিমুলবাড়ির মঈনুল ইসলামের মেয়ে শিরিন আক্তার আশার কথা।
২০১১ সালে সবে প্রাথমিকের গ-ি পেরিয়ে মাধ্যমিকে পা রেখেছিলেন আশা। ঠিক তখন তার বিয়ে ঠিক করে পরিবার। তবে পড়াশোনার তীব্র ইচ্ছা ছিল আশার। এজন্য নিজেই তার বিয়ে ঠেকিয়ে দেন। বিয়ে বন্ধ করায় ছিটকে পড়েছিলেন পরিবার থেকে। এ সময় ১০ টাকা বেতনে টিউশনি করিয়ে চালিয়েছেন নিজের পড়াশোনা আশা। পাশাপাশি বাল্যবিয়ে রোধে নারীদের অধিকার আদায়ের জন্য গড়ে তুলেছেন ‘আসমানী যুব নারী ফাউন্ডেশন’ নামের একটি সংগঠন। হয়েছেন একজন সফল উদ্যোক্তা। এখন পর্যন্ত ২৯৪টি বাল্যবিয়ে বন্ধ করেছেন। কোনো নারী যাতে নির্যাতিত বা পরিবারের বোঝা না হন সেজন্য গড়ে তুলেছেন আসমানী স্যানিটারি ন্যাপকিন নামের একটি কারখানা। কারখানাটিতে কাজ করছেন ৩৬ জন নারী। এসব কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৯ সালে ‘জয়িতা’ অ্যাওয়ার্ড পান শিরিন। এরপর প্রেরণামূলক নারী খেতাব, জাতীয় পর্যায়ে গ্রামীণ নারী উদ্যোক্তা অ্যাওয়ার্ড, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গ্লোবাল নারী উদ্যোক্তা অ্যাওয়ার্ড ও সর্বশেষ জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড-২০২১ পান তিনি। মেয়েদের সুরক্ষা ও অধিকার নিয়ে কাজ করায় ২০১৪ সালে স্পেনের পার্লামেন্টে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন শিরিন ।
শিরিন বর্তমানে নীলফামারীর মশিউর রহমান ডিগ্রি কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষে অধ্যয়নরত। আসমানী স্যানিটারি ন্যাপকিন কারখানার মেশিন অপারেটর গীতা। শিরিনের সাহায্যে বাল্যবিয়ে থেকে রক্ষা পেয়ে এখন কারখানাটিতে কাজ করছেন। এখান থেকে উপার্জিত আয় দিয়ে নিজের পড়াশোনা ও পরিবারকে সহযোগিতা করছেন গীতা। চন্দনা রানী বলেন, ‘সেদিন যদি আপু আমার বিয়ে না আটকাতো তাহলে হয়তো আমার জীবনের সব আলো সেখানেই নিভে যেতো। এখন আপুর এখানে কাজ করছি, নিজের পড়াশোনা চালাচ্ছি।’
কারখানাটিতে মার্কেটিং বিভাগে কাজ করেন রশনা রানী। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘অর্থের অভাবে আমার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বাবা-মা বিয়ের কথা বলতেন। পরে আমি শিরিন আপুর কথা শুনি। এখানে এসে আপুকে সব বলি। তখন শিরিন আপু আমার পরিবারকে বোঝান আর আমার সাহস জোগান। এখন আমি কাজ করার পাশাপাশি পড়াশোনা করছি।’
সুরভী নামের আরেকজন বলেন, ‘শিরিন আপুর সাহায্যে এখানে আমাদের অনেকের জীবন পাল্টে গেছে। এখন আপুর মতো আমরাও স্বপ্ন দেখি নারীদের নিয়ে কাজ করার।’
এ বিষয়ে শিরিন আক্তার আশা বলেন, ‘২০১৪ সালে যখন স্পেনে গেলাম তখন সেখানকার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নারীর কর্মসংস্থান নিয়ে কাজ করি। এখন পর্যন্ত আমার কারখানায় ৩৬ জন নারী কাজ করছে। স্বপ্ন আছে এই কারখানায় একদিন ৩৬ হাজার নারী কাজ করবে এবং আসমানী সারাদেশে একটি ব্র্যান্ড হবে।’ নীলফামারী যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দিলগীর আলম বলেন, আমাদের থেকে নিবন্ধন নেওয়ার আগে থেকেই শিরিন কাজগুলো করতেন। এছাড়া কম দামে ভালোমানের প্রোডাক্ট দিতে পারছেন, এটা বড় বিষয়ে। সেখানে অনেক নারীর কর্মসংস্থান রয়েছে। তিনি যদি কোনো সাহায্য চান আমরা সাধ্যমতো তার পাশে দাঁড়াবো।