প্রত্যাশা ডেস্ক : উপকূলীয় অঞ্চলের বিলুপ্তপ্রায় চিত্রা মাছের কৃত্রিম প্রজনন ও পোনা উৎপাদনে সফলতা এসেছে বলে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের লোনাপানি কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন।
অন্যান্য মাছের সঙ্গে চাষযোগ্য সুস্বাদু চিত্রা মাছের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে অ্যাকোরিয়ামে ব্যবহারের জন্যও।
কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও গবেষক দলের প্রধান লতিফুল ইসলাম বলেন, গবেষণার জন্য চার বছর আগে খুলনার শিবসা নদী ও সুন্দরবন সংলগ্ন খাল থেকে চিত্রা মাছের পোনা সংগ্রহ করেন তারা। পরে খুলনার পাইকগাছায় লোনাপানি কেন্দ্রের পুকুরে ভাসমান খাবারে অভ্যস্ত করার মাধ্যমে প্রজনন-সক্ষম মাছে পরিণত করা হয়।
স্বাদুপানির মাছের কৃত্রিম প্রজননের তুলনায় লোনাপানির মাছের কৃত্রিম প্রজনন কষ্টসাধ্য জানিয়ে তিনি বলেন, লোনাপানির মাছের প্রজননে পরিবেশসহ অনেকগুলো নিয়ামক বিবেচনায় নিতে হয় এবং রেনুর প্রাথমিক খাদ্য হিসেবে লাইভ ফিড প্রয়োজন হয় যা উৎপাদন কষ্টসাধ্য।
“প্রজনন-সক্ষম মাছ উৎপাদন, প্রজনন মৌসুম নির্ধারণ, প্রজননের জন্য উপযুক্ত লবণাক্ততা, উপযুক্ত হরমোন নির্বাচন ও ডোজসহ বিভিন্ন বিষয় নিরূপণের পরই এই বিলুপ্তপ্রায় মাছের পোনা উৎপাদনে সফলতা এসেছে।”
লতিফুল ইসলাম বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক গুরুত্বসম্পন্ন মাছের মধ্যে চিত্রা অন্যতম। একসময় এ মাছ সুন্দরবন ও উপকূলীয় এলাকার নদ-নদী, খাড়ি ও ঘেরে প্রচুর পাওয়া যেত। পরিবেশ বিপর্যয় ও সংরক্ষণের অভাবে মাছটি প্রায় হারিয়ে যায়। অঞ্চলভেদে মাছটি পায়রা, বিশতারা, বোথরাসহ একাধিক নামে পরিচিত। মাছটি দেখতে সুন্দর, খেতে সুস্বাদু। গবেষক দলের অন্যতম বিজ্ঞানী শাওন আহম্মেদ বলেন, চিত্রা মাছ দৈর্ঘ্যে সাধারণত ৩৫ সেন্টিমিটার আর সর্বোচ্চ ওজন দেড় কেজি হয়। একই বয়সী পুরুষ মাছ স্ত্রী মাছ অপেক্ষা আকারে ছোট হয়ে থাকে।
“নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে দ্বিতীয় বছরে কিছু মাছ প্রজনন-সক্ষম হয়। তৃতীয় বর্ষে প্রায় ৮০ শতাংশ মাছ প্রজনন-সক্ষম হয়। এ সময় পুরুষ মাছের সর্বনি¤œ ওজন ৮০ গ্রাম আর স্ত্রী মাছের সর্বনি¤œ ওজন ১৮০ গ্রাম হয়ে থাকে।”
গবেষক দলের আরেকজন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মিজানুর রহমান ওয়াসীম। তিনি বলেন, চিত্রা মাছ স্বভাবে সর্বভুক। এর প্রজনন মৌসুম এপ্রিল-জুলাই। পরিপক্ব মাছকে হ্যাচারিতে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে হরমোন প্রয়োগ করে প্রজননে উদ্দীপ্ত করা হয়। লোনাপানি কেন্দ্রের পুকুরে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে প্রজননের চেষ্টা চালানো হয়। কিন্তু এ বছর অতিখরায় মাছের পরিপক্বতা আসতে দেরি হয়। ধারাবাহিক চেষ্টার পর সফলতা পাওয়া গেছে। তাদের হ্যাচারিতে পাঁচ ব্যাচের পোনা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “প্রথম ব্যাচের পোনার বয়স এখন মাস খানেক। শেষ ব্যাচের রেনুর বয়স সপ্তাহ খানেক। রেনুগুলোকে প্রাথমিকভাবে সবুজ শৈবাল এবং রটিফার জাতীয় খাবার দিয়ে বড় করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে আর্টেমিয়া ও অন্যান্য রেডি ফিড দেওয়া হচ্ছে।”
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ইয়াহিয়া মাহমুদ বলেন, একসময় চিত্রা মাছ প্রচুর পাওয়া যেত। এখন আর তেমন দেখা যায় না।
“আমাদের বিজ্ঞানীরা নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে বিলুপ্তপ্রায় এ মাছের প্রজননে সফলতা অর্জন করেছেন। চিত্রা মাছের প্রজনন সাফল্য বাংলাদেশের মেরিকালচার তথা সুনীল অর্থনীতির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। সুস্বাদু এ মাছের কৃত্রিম প্রজননকৌশল উদ্ভাবিত হওয়ায় মাঠপর্যায়ে পোনা উৎপাদন, প্রাপ্যতা ও চাষের প্রসার ঘটবে এখন।” তিনি বলেন, চিত্রা মাছ সর্বভুক হওয়ায় উপকূলীয় ঘেরে অন্যান্য মাছের সঙ্গেও চাষ করা যাবে। তাছাড়া অ্যাকোরিয়ামে ব্যবহারের জন্যও এ মাছের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
খুলনায় বিলুপ্তপ্রায় বাহারি চিত্রা মাছের কৃত্রিম প্রজনন
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ























