ঢাকা ১০:৪৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সারাদেশে ঘরবন্দি মানুষ

  • আপডেট সময় : ০৮:১৮:১৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩ জুলাই ২০২১
  • ৫৬ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : করোনা সংক্রমণ রোধে দেশে চলছে দ্বিতীয় দিনের ‘কঠোর বিধিনিষেধ।’ এর ওপর গতকাল শুক্রবার প্রায় সারাদিন বৃষ্টির কারণে দেশব্যাপী কার্যত ঘরবন্দি হয়ে পড়ে মানুষ। রাজধানী ঢাকাসহ এই প্রতিবেদনে দেশের গুরুত্বপূর্ণ জেলার খবর তুলে ধরা হয়েছে।
লকডাউনের সঙ্গে বৃষ্টিতে সকাল থেকেই ঘরবন্দি মানুষ। তাছাড়া সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় বিধিনিষেধের দ্বিতীয় দিনে রাজধানীর রাস্তাঘাট অনেকটাই ফাঁকা। বেশিরভাগ সড়কে রিকশাসহ অল্প কিছু যানবাহন চলছে। তবে ব্যতিক্রমও রয়েছে কোথাও কোথাও। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে।
এদিকে দ্বিতীয় দিনে রাজধানীতে কঠোর লকডাউন উপেক্ষা করে বিনা কারণে বাইরে বের হওয়ায় ৩২০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) আট বিভাগের বিভিন্ন থানা। ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে একই অপরাধে ২০৮ জনকে জরিমানা করা হয়েছে। শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত চলমান অভিযানের সর্বশেষ আপডেট জানিয়েছে ডিএমপি মিডিয়া বিভাগ।
লকডাউনের দ্বিতীয় দিন বৃষ্টি ও সাপ্তাহিক ছুটির কারণে রাজধানীর রাস্তাঘাট অনেকটাই ফাঁকা। দুই দিন আগেও যে রাজধানীতে চিরচেনা যানজট লেগে থাকতো এখন সেসব সড়ক নেই যানজট, মানুষের জটলা। এ যেন অন্যরকম এক ঢাকা। দিনদুপুরে সড়কগুলো প্রায় নিরিবিলি। চিরচেনা শহরটি হঠাৎ অচেনা হয়ে পড়েছে। সকালে মগবাজার, মিরপুর, শাহবাগ এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। অলগলিতে কিছু মানুষের আনাগোনা দেখা গেলেও প্রধান সড়কগুলো অনেকটাই ফাঁকা। নিত্যপণ্যের কিছু দোকানপাট ও কাঁচাবাজার খোলা থাকলেও ক্রেতার উপস্থিতি অনেকটাই কম। রাজধানীতে আগের দিনের মতই বিভিন্ন মোড়ে রয়েছে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর চেকপোস্ট। শুক্রবার দ্বিতীয় দিনেও মাঠে তৎপর রয়েছে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনী। তারা রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে টহল দিচ্ছে। গাড়ি থামিয়ে ও পথচারীদের দাঁড় করিয়ে বাইরে বের হওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করছেন।
রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা মোহাম্মদপুরে বেশিরভাগ রাস্তা ফাঁকা। সকাল থেকে বৃষ্টির কারণে এবং বৃহস্পতিবারে অকারণে ঘুরতে বের হওয়া অনেক ব্যক্তিকে আটকের ঘটনায় দোকানপাট শুক্রবার কিছু খোলা পাওয়া গেলেও লোকজনের উপস্থিতি কম দেখা গেছে।
সরকারি নির্দেশনা প্রতিপালনে শুক্রবারও সকাল থেকে একযোগে ডিএমপি’র ক্রাইম, ট্রাফিক ও গোয়েন্দা বিভাগ মাঠে কাজ করেছে। পাশাপাশি প্রত্যেকটি বিভাগেই ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে পরিচালনা করা হচ্ছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহনে তল্লাশি ও পথচারীদের বাইরে বের হওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করছে পুলিশ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. সাজ্জাদুর রহমান জানান, প্রথম দিনের মতো আজও অতিপ্রয়োজনীয় যানবাহন, রিকশা ও পণ্যবাহী গাড়ি ছাড়া সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। প্রয়োজন ছাড়া কাউকে রাস্তায় বের হতে দেখা যায়নি।
সাজ্জাদুর আরও জানান, সকাল ৬টা থেকে পুলিশ ঢাকা শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। পুলিশের তৎপরতায় আজ রাস্তায় তেমন লোকজন দেখা যাচ্ছে না বলেও জানান তিনি।
রমনা বিভাগের ডিসি আরও বলেন, প্রথমদিনের মতো রাজধানীতে সব ধরনের বিপনি বিতান, অলিগলির মার্কেট ও দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। শুধুমাত্র কাঁচাবাজার ভেতর থেকে খোলা জায়গায় বসানো হয়েছে।
কঠোর লকডাউনের প্রথম দিনে সর্বোচ্চ ১৪৩ জনের মৃত্যু ও ৮ সহস্রাধিক ব্যক্তির আক্রান্তের খবর দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এই তথ্যে জনমনে কিছুটা হলেও শঙ্কা বেড়েছে। সে কারণে শুক্রবার সকালে সড়কে লোকজন কম দেখা গেছে। এছাড়া সকাল থেকে বৃষ্টি হওয়ায় অনেকেই প্রয়োজন থাকলেও ঘর থেকে বের হননি। খোঁজ নিয়ে জানা আছে, রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজারে শুক্রবার সকালে লোকজনের উপস্থিতি ছিল কম। ছুটির দিন সকালে নগরবাসীর অনেকেই বাজার করে থাকেন। কিন্তু সকালে লাগাতার বৃষ্টি থাকায় অনেকেই ঘরের বাইরে বের হননি। লকডাউন বান্তবায়নে এবার সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সব অফিস সাত দিনের জন্য বন্ধ রয়েছে।
সড়ক ফাঁকা, মাস্ক ছাড়া বের হলেই জরিমানা : শুক্রবার লকডাউন কার্যকরে মাঠে ছিল পুলিশ, বিজিবির পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সদস্যরা। সকাল থেকে বিভিন্ন জেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বিজিবি ও র‌্যাব সদস্যদের টহল দিতে দেখা গেছে। এদিকে আজ সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় ও সকাল থেকে বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন এলাকার সড়কে সাধারণ মানুষের চলাচল ছিল অনেক কম। তবে বাজারে মানুষের কিছু ভিড়ও দেখা গেছে। অবশ্য প্রয়োজন ছাড়া ও মাস্ক না পরে ঘর থকে বের হয়ে অনেককেই শাস্তি পেতে হয়েছে। জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন অনুযায়ী, জেলা শহরগুলোতে জরুরি পণ্যবাহী যানবাহন ছাড়া সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। সড়কে রিকশা ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাও দেখা গেছে হাতেগোনা কয়েকটা। অ্যাম্বুলেন্স ও চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজে যানবাহন চলাচল করছে।
গাজীপুর: করোনাভাইরাস ঊর্ধ্বগতির সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে দেওয়া লকডাউনের দ্বিতীয়দিনে বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে সকাল থেকেই শিল্প নগরী গাজীপুরে তৎপর ছিলেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সড়কের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহনের ওপর চলছে নজরদারি। এছাড়া জেলার বিভিন্ন এলাকার অলিগলিতেও চলছে পুলিশের টহল। পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যদের পাশাপাশি গাজীপুরে মোতায়েন করা হয়েছে ছয় প্লাটুন সেনা ও বিজিবি সদস্য। সড়কে মানুষ ও যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে গাজীপুর জেলা ও মহানগরে ৫০টি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। দুপুরে গাজীপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) এস এম তরিকুল ইসলাম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ডিসি তরিকুল ইসলাম জানান, লকডাউনে সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসন, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ এবং জেলা পুলিশ ৫০টি পয়েন্টে কাজ করছেন। এরম মধ্যে জেলা প্রশাসন ১৮টি চেক পয়েন্টে এবং জেলা পুলিশ ও মেট্রোপলিটন আরও ৩২টি চেকপোস্টে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, তিন প্লাটুন সেনাসদস্য, তিন প্লাটুন বিজিবি ও পর্যাপ্ত সংখ্যক র‌্যাব ও পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। এসব পয়েন্টে লকডাউনে তারা অন-অনুমোদিত যানবাহন, দোকান-পাট খোলা নিয়ন্ত্রণ এবং অনুমোদিত গাড়ির চালক, যাত্রী বা শ্রমিকদের মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিতে কাজ করছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৮টি টিমে ১৮ জন ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানান ডিসি।
এদিকে, সাত দিনের কঠোর বিধিনিষেধের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার গণপরিবহন বন্ধ থাকায় পায়ে হেঁটে এবং রিকশায় যাতায়াত করেছে বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় কর্মস্থলে যেতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাদের। পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থায় শ্রমিক আনা-নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হলেও অনেকেই সেটি মানছেন না।
অন্যদিকে আগের লকডাউনগুলোতে সড়কে সিএনজি, অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচল করতে দেখা গেলেও এবার গাজীপুরের সড়ক-মহাসড়কে দেখা যায়নি এসব যানবাহন। ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও রিকশা বন্ধ থাকায় সড়কে রিকশার পরিমাণ ছিল কম।
সরেজমিনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী বাজার, গাজীপুরা, বড়বাড়ি এলাকায় দেখা যায় পুলিশের কঠোর নজরদারি। ঢাকা থেকে গাজীপুরে প্রবেশ করতেই টঙ্গী বাজার এলাকায় গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। সড়কের অপর পাশে ঢাকামুখী রাস্তায়ও বসানো হয়েছে টঙ্গী পূর্ব থানা পুলিশের চেকপোস্ট।
টঙ্গীর বিসিক এলাকার বিভিন্ন পোশাক কারখানা ঘুরে দেখা যায়, স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানায় যোগ দিচ্ছেন শ্রমিকরা। কারখানায় ঢুকতে শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করে কারখানায় প্রবেশ করানো হচ্ছে। তবে ছোট ছোট কারখানাগুলোতে এসব স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) উপ-কমিশনার (অপরাধ-দক্ষিণ) মোহাম্মদ ইলতুৎ মিশ জানান, লকডাউনে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। পণ্যবাহী গাড়ি ছাড়া অন্য কোনও গাড়ি চলতে দেওয়া হচ্ছে না। বিভিন্ন অলিগলিতে পুলিশের টহল টিম নজরদারি করছে। জরুরি প্রয়োজনে যারা ঘর থেকে বের হচ্ছে তাদেরকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য সতর্ক করে দেওয়া হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জ: লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে নারায়ণগঞ্জে জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে রয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে নগরীর চাষাঢ়াসহ অন্যান্য চেকপোস্টগুলোতে সকাল থেকে ব্যাপক তৎপরতা দেখা গেছে। পণ্যবাহী ও জরুরি সেবার কাজে নিয়োজিত যানবাহন ছাড়া লকডাউনের আওতায় নিষিদ্ধ কোনও যানবাহন চলাচল করতে দিচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এছাড়া মাস্ক ব্যবহার ছাড়া কিংবা বিনা প্রয়োজনে মানুষ ঘরের বাইরে বের হলেও চেকপোস্টগুলোতে জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে হচ্ছে। অনেকে জরিমানাও গুনছেন। জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ ও আনসার ব্যাটালিয়ানসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন চেকপোস্টে দায়িত্ব পালনসহ টহল অব্যাহত রেখেছে।
একই চিত্র দেখা গেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে। সকাল থেকে মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি কঠোর দায়িত্ব পালন করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে ছয়টি চেকপোষ্ট বসিয়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। জরুরি প্রয়জনে বা অন্য যেকোনও কারণে রাস্তায় বের হলেই পড়তে হচ্ছে জেরার মুখে। যৌক্তিক কারণ দেখাতে না পারলে আটকে দেওয়া হচ্ছে, মামলা ও জরিমানার মুখেও পড়তে হচ্ছে।
এদিকে মাস্ক ছাড়া বাইরে বের হওয়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালত সকাল থেকে এ পর্যন্ত ২০টি মামলা করেছে। যে কারণে সাধারণ মানুষের চলাচল একবারেই সীমিত এবং নগরী অনেকটাই ফাঁকা রয়েছে। এছাড়া শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় অধিকাংশ পোশাক কারখানা ও সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রয়েছে। দোকানপাট, মার্কেট ও বিপণিকেন্দ্রগুলো বন্ধ রাখার পাশাপাশি বাস, ট্রেন ও লঞ্চসহ সব ধরনের গণপরিবহন চলাচলও বন্ধ আছে।
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হাসান বিন আলী জানান, জেলা প্রশাসনের নির্দেশে সকাল থেকেই লকডাউন শতভাগ বাস্তবায়নের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে রয়েছে। বিনা কারণে বা মাস্ক ছাড়া কেউ রাস্তায় বের হলে বা ভ্রাম্যমাণ আদালতের নজরে আসলেই জরিমানা করা হচ্ছে। তিনি সবাইকে আগামী ছয়দিন বাড়িতে থাকার আহবান জানিয়ে বলেন, ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট যাতে ছড়িয়ে না পড়ে এবং আক্রান্তের সংখ্যা যাতে না বাড়ে এ জন্য সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
চট্টগ্রাম: করোনা সংক্রমণরোধে দেওয়া লকডাউনের দ্বিতীয় দিন মাঠে তৎপর রয়েছেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। সকাল থেকে পাঁচলাইশ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাঈমা ইসলাম। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, অন্য সময়ের তুলনায় এবার লকডাউন নির্দেশনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নগরবাসীকে অনেক বেশি সচেতন দেখা যাচ্ছে। সকাল থেকে এই পর্যন্ত পাঁচলাইশ থানার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাসা থেকে বের হচ্ছেন না। সড়কে কয়েকটি সিএনজি, প্রাইভেটকার চলছে। তবে এদের প্রত্যেকেই সুনির্দিষ্ট প্রয়োজনে বের হয়েছেন। দোকান-পাটও খুব একটা খোলা নেই। সাধারণ মানুষ যারা বের হচ্ছেন তারা মাস্ক পরেই বের হচ্ছেন। এরপরও যারা নির্দেশনা মানছেন না জরিমানা করা হচ্ছে। সকাল থেকে ৭-৮জনকে জরিমানা করার তথ্য জানান তিনি।
এদিকে নগরীর নতুন ব্রিজ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এনামুল হাসান। তিনি বলেন, সড়কে তেমন যানবাহন নেই। অনেকে নানা অজুহাতে মোটরসাইকেল নিয়ে বের হচ্ছেন। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। সন্তোষজনক উত্তর না দিতে পারলে তাদেরকে জরিমানা করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ৯টি মোটরসাইকেলকে জরিমানা করা হয়েছে। মিথ্যা কথা বলে ভাড়ায় ট্রাক চালানোর দায়ে একটি ট্রাক টো করা হয়েছে। এছাড়া মাস্ক পরিধান না করায় তিন জনকে জরিমানা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
খুলশি আর বায়েজিদ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গালিব চৌধুরী। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, সকালে কর্ণফুলী কমপ্লেক্স পরিদর্শনে যাই। সেখানে গিয়ে দেখেছি মানুষ সচেতন। প্রায় সবাই মাস্ক পরিধান করছেন। কিন্তু বায়েজিদ বোস্তামির বাংলাবাজার এলাকায় গিয়ে দেখি লোকজন সচেতন না। বস্তি এলাকা হওয়ায় এখানে মানুষজনের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রবণতা কম। অনেকেই মাস্ক ছাড়াই ঘরের বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। মাস্ক না পরায় সকাল থেকে আট জনকে জরিমানা করা হয়েছে।
খুলনা: করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে খুলনায় সেনা টহল চলছে। শুক্রবার সকাল থেকে সেনাবাহিনীর দুটি টিম নগরীতে টহল শুরু করে। প্রশাসনও ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এমন তৎপরতায় নগরীর সড়ক জনশূন্য হয়ে পড়েছে। উৎসুক জনতাও এখন আর সড়কে বের হচ্ছেন না। তবে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ ও জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়া কিছু লোককে সড়কে দেখা গেছে। মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকার নিয়েও লোকজন বের হচ্ছেন। সড়কে রিকশার আধিক্য দেখা গেছে। তবে আশানুরূপ তারা যাত্রী না পেয়ে তারা হতাশ।
খুলনা জেলা প্রশাসক মো মনিরুজ্জামান তালুকদার বলেন, খুলনায় ১০ প্লাটুন সেনা সদস্য টহলে রয়েছে। তারা মহানগরীসহ প্রতিটি উপজেলায় টহল দিচ্ছে। পাশাপাশি ১ প্লাটুন বিজিবিও মহানগরীতে টহলে রয়েছে। পুলিশসহ অন্য বাহিনীর সদস্যরাও কার্যকর দায়িত্ব পালন করছেন। রিকশাচালক কেরামত আলী বলেন, সকালে ৪০ টাকা ভাড়ায় একজন যাত্রী নিয়ে খুলনা থেকে দৌলতপুর যাই। কিন্তু ফিরতে হয়েছে খালি রিকশা নিয়ে। রিকশা চালক হাসমত আলী বলেন, লকডাউনের মধ্যে এখন রিকশা চালাতে পুলিশ বাঁধা দিচ্ছে না। তবে যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। লকডাউনে প্রশাসন শক্ত হওয়ার কারণে মানুষ বের হচ্ছে না। আর যাত্রী না পেলে রিকশা নিয়ে শুধু শুধু ঘুরতে হচ্ছে। জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়া টুটপারার হাসিনা বেগম বলেন, মেয়ের শরীর হঠাৎ খারাপ করছে। তাই মেডিক্যালে যাওয়ার জন্য বের হতে হয়েছে।
রাজশাহী: কঠোর লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে (শুক্রবার) রাজশাহী শহর ছিল ফাঁকা। তবে ছুটির দিনে নগরীর সাহেব বাজার ও মাস্টারপাড়ার কাঁচাবাজারে ক্রেতাদের ভিড় ছিল। ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মুখে মাস্ক থাকলেও সামাজিক দূরুত্ব মানার কোনও চেষ্টা ছিল না। এদিকে নগরীতে মাস্ক না পরার কারণে পথচারীদের আটক ও জরিমানা করা হচ্ছে। এছাড়াও দিনে নগরীর রাস্তাঘাট ছিল সুনশান। মোড়গুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও গণমাধ্যমকর্মী ছাড়া সাধারণ মানুষের উপস্থিতি কম বললেই চলে। তবে অপ্রয়োজনে বাইরে আসা ঠেকাতে রাজশাহী জেলা প্রশাসনের চারটি ভ্রাম্যমাণ টিম নগরীতে জরিমানা করছে। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সরকারি-বেসরকারি জরুরি সেবা প্রতিষ্ঠানের গাড়ি, পণ্যবাহী বাহন ছাড়া হাতে গোনা কিছু রিকশা চলতে দেখা গেছে। নগরীর প্রায় প্রতিটি মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়েছে পুলিশ। চেকপোস্টে পুলিশসহ আনসার মোতায়েন করা হয়েছে। সেখানে চলাচলকারী রিকশা ও হেঁটে চলা মানুষদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জরুরি প্রয়োজনে বের হয়েছেন প্রমাণে ব্যর্থ হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতেও দেখা গেছে। আর সকালের দিকে নগরীতে সেনাবাহিনী ও বিজিবির টহল দেখা গেছে। কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে পুলিশের পাশাপাশি দুই প্লাটুন সেনাবাহিনী ও চার প্লাটুন বিজিবি মাঠে টহলে রয়েছেন বলে জানা গেছে। রাজশাহী অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শরিফুল হক জানান, লকডাউনে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। নাটোর কাদিরাবাদ ক্যান্টনমেন্ট থেকে সোনাবাহিনী এসে রাজশাহীতে লকডাউনের দায়িত্বপালন করছেন। জেলা প্রশাসনের প্রায় ১০ টি ভ্রাম্যমাণ টিম মাঠে কাজ করছে। নির্দেশনা অমান্য করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাজ করছেন। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ও অংশগ্রহণে সুন্দরভাবে রাজশাহীতে লকডাউন পালিত হচ্ছে।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, লকডাউন সফল করতে পুলিশ চেষ্টা করছে। যাতে করে কেউ অপ্রয়োজনে বের না হতে পারে। আর বের হলে তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। প্রয়োজনে আটক করে রাখা হচ্ছে।
ময়মনসিংহ: করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে জেলায় দ্বিতীয় দিনের মতো কঠোর লকডাউন চলছে। সকাল থেকেই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্র্যাটদের নেতৃত্বে স্বশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা মহানগরীর মোড়ে মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়ে যানচালক ও অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষকে লকডাউন পালনে বাধ্য করছেন। যারা মানছেন না তাদেরকে জমিরানা করতেও দেখা গেছে। বিশেষ করে মাস্ক ছাড়া বের হলে আইনি ব্যবস্থার মধ্যে পড়ছেন নগরীর বাসিন্দারা। লকডাউনের কারণে গণপরিবহণ বন্ধ আছে। নগরীতে পণ্যবাহী ট্রাক ও ছোট যান চলতে দেখা গেছে। দোকানপাট বন্ধ ছিল, তবে কাঁচাবাজার, ওষুধ ও খাবারের দোকানপাট খোলা দেখা গেছে।
জেলা প্রশাসক মো. এনামুল হক জানান, লকডাউন সফল করতে জেলায় পুলিশের ১৬টি, র‌্যাবের দুটি, সেনাবাহিনীর ১০টি , বিজিবির চারটি, এপিবিএনের দুটি টিম কাজ করছে। প্রতিটি টিমের সঙ্গে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্র্যাট দায়িত্ব পালন করছেন। আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে জরিমানা করা হচ্ছে। এ ধরনের তৎপরতা অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
রংপুর: কঠোর লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে বিভাগীয় নগরী রংপুরে সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও শপিংমল বন্ধ রয়েছে। সড়কে সকাল থেকে কিছু রিকশা চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে মোটরসাইকেল আটকে চলাচলের কারণ সন্তোষজনক না হলে আরোহীদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সকাল থেকে সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও বিজিবি নগরীতে টহল দিয়েছে। নগরীর ১২টি স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে পুলিশ বিভিন্ন অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলকে ফিরিয়ে দিতেও দেখা গেছে। তবে কাঁচাবাজারে ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে। এদের অনেককেই স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মানতে দেখা যায়নি। সড়কে মাস্ক ছাড়া বের হয়ে শাস্তির মুখে পড়তে হচ্ছে নাগরিকদের। রংপুর মেট্রোপলিটান পুলিশের কোতোয়ালি থানার ওসি আব্দুর রশিদ জানান, এবার লকডাউনে কোনও ছাড় নয়। অকারণে বের হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
সিলেট: সিলেটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারিতে লকডাউনের দ্বিতীয় দিন চলছে। সকাল থেকে সিলেট মহানগরীসহ উপজেলাগুলোতে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের তত্ত্বাবধানে টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশের একাধিক টিম। একইসঙ্গে সিলেটের প্রবেশদ্বারগুলোতে পুলিশের চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এসময় পুলিশ মানুষ ও লকডাউনে বের হওয়া গাড়ি দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিতরা। সদুত্তর দিলে গন্তব্যে যেতে পারছেন, অন্যথায় আইনানুগ ব্যবস্থার নেওয়ার পাশাপাশি তাদের ঘরে ফিরিয়ে দিতে দেখা গেছে। এছাড়া মাস্ক ছাড়া কাউকে সড়কে পেলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এদিকে সকালে সিলেটের সড়কে লোকজন একেবারেই কম দেখা গেছে। লকডাউনের পাশাপাশি বৃষ্টির কারণে অনেকেই প্রয়োজন থাকলেও ঘর থেকে বের হননি।
সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার আশরাফ উল্যাহ তাহের বলেন, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক দল লকডাউন বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। টহল পুলিশের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়ে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। একইসঙ্গে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের তত্ত্বাবধানে মাঠে কাজ করে যাচ্ছে একাধিক টিম। কেউ লকডাউন না মেনে ঘরের বাইরে এলে তার বিরুদ্ধে নেওয়া হচ্ছে জরিমানার পাশাপাশি আইনি ব্যবস্থা।
তিনি আরও বলেন, জনগুরুত্বপূর্ণ কিছু পরিবহন ছাড়া আর কোনও যানবাহন চলতে দেওয়া হচ্ছে না। এতে রাস্তাঘাটে কমেছে মানুষের আনাগোনা, অনেকটাই ফাঁকা অবস্থা। প্রয়োজন ছাড়া কোনও যানবাহন বা ব্যক্তিকে এক জায়াগা থেকে অন্য জায়গায় চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে না। মহানগর পুলিশের আওতাধীন ছয়টি থানা, তদন্ত কেন্দ্র ও ফাঁড়ি পুলিশকে লকডাউনের যথাযথ দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেওয়া আছে।
জানা গেছে, সিলেটের প্রশাসনের উদ্যোগে যথাযথভাবে লকডাউন পালন ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ নিশ্চিতে বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী সিলেট মহানগর ও সব উপজেলায় ৩৩ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট একযোগে মোবাইলকোর্ট পরিচালনা করেন। মোবাইলকোর্ট পরিচালনাকালে ১৭২টি মামলা ও দুই লাখ ৬০০ টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া লকডাউনে বিধিনিষেধ অমান্য করায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সিলেট মহানগর পুলিশ নগরীর বিভিন্ন স্থানে এবং সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর উপস্থিতিতে সর্বমোট ২৫ জনকে ১১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এসময় পুলিশের অভিযানে ৯টি সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ৩০টি মোটরসাইকেল, দুটি প্রাইভেট কার ও অন্যান্য সাতটি মামলাসহ সর্বমোট ৪৮টি মামলা করা হয়। সিএনজিচালিত অটোরিকশা ১৮টি, মোটরসাইকেল ৫৯টি, প্রাইভেট কার তিনটি, অন্যান্য ২৪টিসহ মোট ১০৪টি গাড়ি আটক করেছে পুলিশ।
বরিশাল: সকাল থেকে কঠোরভাবে লকডাউন বাস্তবায়নে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় লকডাউন ভিযান চালায় জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এর মধ্যে নগরীর চকবাজার, নতুনবাজার, নথুল্লবাদ, কাশিপুর, আমতলার মোড়, বাংলাবাজার, রুপাতলী এলাকায় ম্যাজিস্ট্রেট মুশফিকুর রহমান ও জাভেদ হোসেন চৌধুরী অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় তারা বেশ কয়েকজনের অর্থদ- করেন। লকডাউনের কারণে ওষুধ, খাবারের দোকান ও কাচাবাজার ছাড়া অন্যসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ দেখা গেছে। মানুষজন পায়ে হেঁটে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় চলাচল করছে। এদের অনেকের মুখে ছিল না মাস্ক, আবার অনেকেই থুতনির নিচে মাস্ক নিয়ে ঘুরাফেরা করছিলেন।
পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান জানান, লকডাউন বাস্তবায়নে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন তারা। নগরীর ২০টি স্পটে চেকপোস্ট বসিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এছাড়া মানুষকে সচেতন করতে চলছে মাইকিং। জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন হায়দার জানিয়েছেন, লকডাউন বাস্তবায়নে ২০ জন ম্যাজিস্ট্রেট বিভিন্ন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ নগরবাসীকে সচেতন করতে কাজ করছেন।
মুন্সীগঞ্জ: এদিকে লকডাউন ও বৃষ্টির কারণে দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের শিমুলিয়া ঘাট একদম ফাঁকা ছিল। ঘাটে কোনও যাত্রী নেই। যানবাহনও বেশ কম। শুক্রবার (২ জুলাই) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত একই অবস্থা দেখা গেছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) শিমুলিয়া ঘাটের উপমহাব্যবস্থাপক (এজিএম) শফিকুল ইসলাম জানান, লকডাউনের কারণে ঘাটে কোনও যাত্রী নেই। অল্প কিছু পণ্যবাহী যান আছে। ফেরি চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। মাওয়া নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সিরাজুল কবীর জানান, ঘাট একদম ফাঁকা। ফেরিগুলোকে বরং যানের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। কিছু পণ্যবাহী ট্রাক ছাড়া সব যান রানিং আছে।
এদিকে, লকডাউন কঠোরভাবে বাস্তবায়নে বৃহস্পতিবার থেকেই মুন্সীগঞ্জের সড়কে টহল দিচ্ছেন সেনাবাহিনী, বিজিবি ও র‌্যাব সদস্যারা। এছাড়া, পুলিশের চেকপোস্ট বসানো হয়েছে মহাসড়কসহ বিভিন্ন সড়কে। বিপণিবিতানসহ সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। তবে, জরুরি পণ্যের দোকানপাট খোলা আছে। মুন্সীগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. নোমান হোসেন বলেন, লকডাউন বাস্তবায়নে তিন প্লাটুন সেনাবাহিনী, দুই প্লাটুন বিজিবি ও এক প্লাটুন র‌্যাব সদস্য সড়কে টহল দিচ্ছে। এছাড়া, পুলিশের চেকপোস্টও রয়েছে। বিধিনিষেধ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে ভ্রাম্যমাণ আদালতও কাজ করছে বলে জানান তিনি।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মহান বিজয়ের মাস শুরু

সারাদেশে ঘরবন্দি মানুষ

আপডেট সময় : ০৮:১৮:১৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩ জুলাই ২০২১

প্রত্যাশা ডেস্ক : করোনা সংক্রমণ রোধে দেশে চলছে দ্বিতীয় দিনের ‘কঠোর বিধিনিষেধ।’ এর ওপর গতকাল শুক্রবার প্রায় সারাদিন বৃষ্টির কারণে দেশব্যাপী কার্যত ঘরবন্দি হয়ে পড়ে মানুষ। রাজধানী ঢাকাসহ এই প্রতিবেদনে দেশের গুরুত্বপূর্ণ জেলার খবর তুলে ধরা হয়েছে।
লকডাউনের সঙ্গে বৃষ্টিতে সকাল থেকেই ঘরবন্দি মানুষ। তাছাড়া সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় বিধিনিষেধের দ্বিতীয় দিনে রাজধানীর রাস্তাঘাট অনেকটাই ফাঁকা। বেশিরভাগ সড়কে রিকশাসহ অল্প কিছু যানবাহন চলছে। তবে ব্যতিক্রমও রয়েছে কোথাও কোথাও। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে।
এদিকে দ্বিতীয় দিনে রাজধানীতে কঠোর লকডাউন উপেক্ষা করে বিনা কারণে বাইরে বের হওয়ায় ৩২০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) আট বিভাগের বিভিন্ন থানা। ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে একই অপরাধে ২০৮ জনকে জরিমানা করা হয়েছে। শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত চলমান অভিযানের সর্বশেষ আপডেট জানিয়েছে ডিএমপি মিডিয়া বিভাগ।
লকডাউনের দ্বিতীয় দিন বৃষ্টি ও সাপ্তাহিক ছুটির কারণে রাজধানীর রাস্তাঘাট অনেকটাই ফাঁকা। দুই দিন আগেও যে রাজধানীতে চিরচেনা যানজট লেগে থাকতো এখন সেসব সড়ক নেই যানজট, মানুষের জটলা। এ যেন অন্যরকম এক ঢাকা। দিনদুপুরে সড়কগুলো প্রায় নিরিবিলি। চিরচেনা শহরটি হঠাৎ অচেনা হয়ে পড়েছে। সকালে মগবাজার, মিরপুর, শাহবাগ এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। অলগলিতে কিছু মানুষের আনাগোনা দেখা গেলেও প্রধান সড়কগুলো অনেকটাই ফাঁকা। নিত্যপণ্যের কিছু দোকানপাট ও কাঁচাবাজার খোলা থাকলেও ক্রেতার উপস্থিতি অনেকটাই কম। রাজধানীতে আগের দিনের মতই বিভিন্ন মোড়ে রয়েছে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর চেকপোস্ট। শুক্রবার দ্বিতীয় দিনেও মাঠে তৎপর রয়েছে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনী। তারা রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে টহল দিচ্ছে। গাড়ি থামিয়ে ও পথচারীদের দাঁড় করিয়ে বাইরে বের হওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করছেন।
রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা মোহাম্মদপুরে বেশিরভাগ রাস্তা ফাঁকা। সকাল থেকে বৃষ্টির কারণে এবং বৃহস্পতিবারে অকারণে ঘুরতে বের হওয়া অনেক ব্যক্তিকে আটকের ঘটনায় দোকানপাট শুক্রবার কিছু খোলা পাওয়া গেলেও লোকজনের উপস্থিতি কম দেখা গেছে।
সরকারি নির্দেশনা প্রতিপালনে শুক্রবারও সকাল থেকে একযোগে ডিএমপি’র ক্রাইম, ট্রাফিক ও গোয়েন্দা বিভাগ মাঠে কাজ করেছে। পাশাপাশি প্রত্যেকটি বিভাগেই ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে পরিচালনা করা হচ্ছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহনে তল্লাশি ও পথচারীদের বাইরে বের হওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করছে পুলিশ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. সাজ্জাদুর রহমান জানান, প্রথম দিনের মতো আজও অতিপ্রয়োজনীয় যানবাহন, রিকশা ও পণ্যবাহী গাড়ি ছাড়া সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। প্রয়োজন ছাড়া কাউকে রাস্তায় বের হতে দেখা যায়নি।
সাজ্জাদুর আরও জানান, সকাল ৬টা থেকে পুলিশ ঢাকা শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। পুলিশের তৎপরতায় আজ রাস্তায় তেমন লোকজন দেখা যাচ্ছে না বলেও জানান তিনি।
রমনা বিভাগের ডিসি আরও বলেন, প্রথমদিনের মতো রাজধানীতে সব ধরনের বিপনি বিতান, অলিগলির মার্কেট ও দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। শুধুমাত্র কাঁচাবাজার ভেতর থেকে খোলা জায়গায় বসানো হয়েছে।
কঠোর লকডাউনের প্রথম দিনে সর্বোচ্চ ১৪৩ জনের মৃত্যু ও ৮ সহস্রাধিক ব্যক্তির আক্রান্তের খবর দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এই তথ্যে জনমনে কিছুটা হলেও শঙ্কা বেড়েছে। সে কারণে শুক্রবার সকালে সড়কে লোকজন কম দেখা গেছে। এছাড়া সকাল থেকে বৃষ্টি হওয়ায় অনেকেই প্রয়োজন থাকলেও ঘর থেকে বের হননি। খোঁজ নিয়ে জানা আছে, রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজারে শুক্রবার সকালে লোকজনের উপস্থিতি ছিল কম। ছুটির দিন সকালে নগরবাসীর অনেকেই বাজার করে থাকেন। কিন্তু সকালে লাগাতার বৃষ্টি থাকায় অনেকেই ঘরের বাইরে বের হননি। লকডাউন বান্তবায়নে এবার সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সব অফিস সাত দিনের জন্য বন্ধ রয়েছে।
সড়ক ফাঁকা, মাস্ক ছাড়া বের হলেই জরিমানা : শুক্রবার লকডাউন কার্যকরে মাঠে ছিল পুলিশ, বিজিবির পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সদস্যরা। সকাল থেকে বিভিন্ন জেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বিজিবি ও র‌্যাব সদস্যদের টহল দিতে দেখা গেছে। এদিকে আজ সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় ও সকাল থেকে বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন এলাকার সড়কে সাধারণ মানুষের চলাচল ছিল অনেক কম। তবে বাজারে মানুষের কিছু ভিড়ও দেখা গেছে। অবশ্য প্রয়োজন ছাড়া ও মাস্ক না পরে ঘর থকে বের হয়ে অনেককেই শাস্তি পেতে হয়েছে। জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন অনুযায়ী, জেলা শহরগুলোতে জরুরি পণ্যবাহী যানবাহন ছাড়া সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। সড়কে রিকশা ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাও দেখা গেছে হাতেগোনা কয়েকটা। অ্যাম্বুলেন্স ও চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজে যানবাহন চলাচল করছে।
গাজীপুর: করোনাভাইরাস ঊর্ধ্বগতির সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে দেওয়া লকডাউনের দ্বিতীয়দিনে বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে সকাল থেকেই শিল্প নগরী গাজীপুরে তৎপর ছিলেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সড়কের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহনের ওপর চলছে নজরদারি। এছাড়া জেলার বিভিন্ন এলাকার অলিগলিতেও চলছে পুলিশের টহল। পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যদের পাশাপাশি গাজীপুরে মোতায়েন করা হয়েছে ছয় প্লাটুন সেনা ও বিজিবি সদস্য। সড়কে মানুষ ও যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে গাজীপুর জেলা ও মহানগরে ৫০টি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। দুপুরে গাজীপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) এস এম তরিকুল ইসলাম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ডিসি তরিকুল ইসলাম জানান, লকডাউনে সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসন, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ এবং জেলা পুলিশ ৫০টি পয়েন্টে কাজ করছেন। এরম মধ্যে জেলা প্রশাসন ১৮টি চেক পয়েন্টে এবং জেলা পুলিশ ও মেট্রোপলিটন আরও ৩২টি চেকপোস্টে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, তিন প্লাটুন সেনাসদস্য, তিন প্লাটুন বিজিবি ও পর্যাপ্ত সংখ্যক র‌্যাব ও পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। এসব পয়েন্টে লকডাউনে তারা অন-অনুমোদিত যানবাহন, দোকান-পাট খোলা নিয়ন্ত্রণ এবং অনুমোদিত গাড়ির চালক, যাত্রী বা শ্রমিকদের মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিতে কাজ করছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৮টি টিমে ১৮ জন ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানান ডিসি।
এদিকে, সাত দিনের কঠোর বিধিনিষেধের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার গণপরিবহন বন্ধ থাকায় পায়ে হেঁটে এবং রিকশায় যাতায়াত করেছে বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় কর্মস্থলে যেতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাদের। পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থায় শ্রমিক আনা-নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হলেও অনেকেই সেটি মানছেন না।
অন্যদিকে আগের লকডাউনগুলোতে সড়কে সিএনজি, অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচল করতে দেখা গেলেও এবার গাজীপুরের সড়ক-মহাসড়কে দেখা যায়নি এসব যানবাহন। ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও রিকশা বন্ধ থাকায় সড়কে রিকশার পরিমাণ ছিল কম।
সরেজমিনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী বাজার, গাজীপুরা, বড়বাড়ি এলাকায় দেখা যায় পুলিশের কঠোর নজরদারি। ঢাকা থেকে গাজীপুরে প্রবেশ করতেই টঙ্গী বাজার এলাকায় গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। সড়কের অপর পাশে ঢাকামুখী রাস্তায়ও বসানো হয়েছে টঙ্গী পূর্ব থানা পুলিশের চেকপোস্ট।
টঙ্গীর বিসিক এলাকার বিভিন্ন পোশাক কারখানা ঘুরে দেখা যায়, স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানায় যোগ দিচ্ছেন শ্রমিকরা। কারখানায় ঢুকতে শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করে কারখানায় প্রবেশ করানো হচ্ছে। তবে ছোট ছোট কারখানাগুলোতে এসব স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) উপ-কমিশনার (অপরাধ-দক্ষিণ) মোহাম্মদ ইলতুৎ মিশ জানান, লকডাউনে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। পণ্যবাহী গাড়ি ছাড়া অন্য কোনও গাড়ি চলতে দেওয়া হচ্ছে না। বিভিন্ন অলিগলিতে পুলিশের টহল টিম নজরদারি করছে। জরুরি প্রয়োজনে যারা ঘর থেকে বের হচ্ছে তাদেরকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য সতর্ক করে দেওয়া হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জ: লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে নারায়ণগঞ্জে জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে রয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে নগরীর চাষাঢ়াসহ অন্যান্য চেকপোস্টগুলোতে সকাল থেকে ব্যাপক তৎপরতা দেখা গেছে। পণ্যবাহী ও জরুরি সেবার কাজে নিয়োজিত যানবাহন ছাড়া লকডাউনের আওতায় নিষিদ্ধ কোনও যানবাহন চলাচল করতে দিচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এছাড়া মাস্ক ব্যবহার ছাড়া কিংবা বিনা প্রয়োজনে মানুষ ঘরের বাইরে বের হলেও চেকপোস্টগুলোতে জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে হচ্ছে। অনেকে জরিমানাও গুনছেন। জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ ও আনসার ব্যাটালিয়ানসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন চেকপোস্টে দায়িত্ব পালনসহ টহল অব্যাহত রেখেছে।
একই চিত্র দেখা গেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে। সকাল থেকে মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি কঠোর দায়িত্ব পালন করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে ছয়টি চেকপোষ্ট বসিয়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। জরুরি প্রয়জনে বা অন্য যেকোনও কারণে রাস্তায় বের হলেই পড়তে হচ্ছে জেরার মুখে। যৌক্তিক কারণ দেখাতে না পারলে আটকে দেওয়া হচ্ছে, মামলা ও জরিমানার মুখেও পড়তে হচ্ছে।
এদিকে মাস্ক ছাড়া বাইরে বের হওয়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালত সকাল থেকে এ পর্যন্ত ২০টি মামলা করেছে। যে কারণে সাধারণ মানুষের চলাচল একবারেই সীমিত এবং নগরী অনেকটাই ফাঁকা রয়েছে। এছাড়া শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় অধিকাংশ পোশাক কারখানা ও সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রয়েছে। দোকানপাট, মার্কেট ও বিপণিকেন্দ্রগুলো বন্ধ রাখার পাশাপাশি বাস, ট্রেন ও লঞ্চসহ সব ধরনের গণপরিবহন চলাচলও বন্ধ আছে।
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হাসান বিন আলী জানান, জেলা প্রশাসনের নির্দেশে সকাল থেকেই লকডাউন শতভাগ বাস্তবায়নের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে রয়েছে। বিনা কারণে বা মাস্ক ছাড়া কেউ রাস্তায় বের হলে বা ভ্রাম্যমাণ আদালতের নজরে আসলেই জরিমানা করা হচ্ছে। তিনি সবাইকে আগামী ছয়দিন বাড়িতে থাকার আহবান জানিয়ে বলেন, ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট যাতে ছড়িয়ে না পড়ে এবং আক্রান্তের সংখ্যা যাতে না বাড়ে এ জন্য সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
চট্টগ্রাম: করোনা সংক্রমণরোধে দেওয়া লকডাউনের দ্বিতীয় দিন মাঠে তৎপর রয়েছেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। সকাল থেকে পাঁচলাইশ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাঈমা ইসলাম। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, অন্য সময়ের তুলনায় এবার লকডাউন নির্দেশনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নগরবাসীকে অনেক বেশি সচেতন দেখা যাচ্ছে। সকাল থেকে এই পর্যন্ত পাঁচলাইশ থানার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাসা থেকে বের হচ্ছেন না। সড়কে কয়েকটি সিএনজি, প্রাইভেটকার চলছে। তবে এদের প্রত্যেকেই সুনির্দিষ্ট প্রয়োজনে বের হয়েছেন। দোকান-পাটও খুব একটা খোলা নেই। সাধারণ মানুষ যারা বের হচ্ছেন তারা মাস্ক পরেই বের হচ্ছেন। এরপরও যারা নির্দেশনা মানছেন না জরিমানা করা হচ্ছে। সকাল থেকে ৭-৮জনকে জরিমানা করার তথ্য জানান তিনি।
এদিকে নগরীর নতুন ব্রিজ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এনামুল হাসান। তিনি বলেন, সড়কে তেমন যানবাহন নেই। অনেকে নানা অজুহাতে মোটরসাইকেল নিয়ে বের হচ্ছেন। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। সন্তোষজনক উত্তর না দিতে পারলে তাদেরকে জরিমানা করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ৯টি মোটরসাইকেলকে জরিমানা করা হয়েছে। মিথ্যা কথা বলে ভাড়ায় ট্রাক চালানোর দায়ে একটি ট্রাক টো করা হয়েছে। এছাড়া মাস্ক পরিধান না করায় তিন জনকে জরিমানা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
খুলশি আর বায়েজিদ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গালিব চৌধুরী। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, সকালে কর্ণফুলী কমপ্লেক্স পরিদর্শনে যাই। সেখানে গিয়ে দেখেছি মানুষ সচেতন। প্রায় সবাই মাস্ক পরিধান করছেন। কিন্তু বায়েজিদ বোস্তামির বাংলাবাজার এলাকায় গিয়ে দেখি লোকজন সচেতন না। বস্তি এলাকা হওয়ায় এখানে মানুষজনের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রবণতা কম। অনেকেই মাস্ক ছাড়াই ঘরের বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। মাস্ক না পরায় সকাল থেকে আট জনকে জরিমানা করা হয়েছে।
খুলনা: করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে খুলনায় সেনা টহল চলছে। শুক্রবার সকাল থেকে সেনাবাহিনীর দুটি টিম নগরীতে টহল শুরু করে। প্রশাসনও ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এমন তৎপরতায় নগরীর সড়ক জনশূন্য হয়ে পড়েছে। উৎসুক জনতাও এখন আর সড়কে বের হচ্ছেন না। তবে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ ও জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়া কিছু লোককে সড়কে দেখা গেছে। মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকার নিয়েও লোকজন বের হচ্ছেন। সড়কে রিকশার আধিক্য দেখা গেছে। তবে আশানুরূপ তারা যাত্রী না পেয়ে তারা হতাশ।
খুলনা জেলা প্রশাসক মো মনিরুজ্জামান তালুকদার বলেন, খুলনায় ১০ প্লাটুন সেনা সদস্য টহলে রয়েছে। তারা মহানগরীসহ প্রতিটি উপজেলায় টহল দিচ্ছে। পাশাপাশি ১ প্লাটুন বিজিবিও মহানগরীতে টহলে রয়েছে। পুলিশসহ অন্য বাহিনীর সদস্যরাও কার্যকর দায়িত্ব পালন করছেন। রিকশাচালক কেরামত আলী বলেন, সকালে ৪০ টাকা ভাড়ায় একজন যাত্রী নিয়ে খুলনা থেকে দৌলতপুর যাই। কিন্তু ফিরতে হয়েছে খালি রিকশা নিয়ে। রিকশা চালক হাসমত আলী বলেন, লকডাউনের মধ্যে এখন রিকশা চালাতে পুলিশ বাঁধা দিচ্ছে না। তবে যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। লকডাউনে প্রশাসন শক্ত হওয়ার কারণে মানুষ বের হচ্ছে না। আর যাত্রী না পেলে রিকশা নিয়ে শুধু শুধু ঘুরতে হচ্ছে। জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়া টুটপারার হাসিনা বেগম বলেন, মেয়ের শরীর হঠাৎ খারাপ করছে। তাই মেডিক্যালে যাওয়ার জন্য বের হতে হয়েছে।
রাজশাহী: কঠোর লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে (শুক্রবার) রাজশাহী শহর ছিল ফাঁকা। তবে ছুটির দিনে নগরীর সাহেব বাজার ও মাস্টারপাড়ার কাঁচাবাজারে ক্রেতাদের ভিড় ছিল। ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মুখে মাস্ক থাকলেও সামাজিক দূরুত্ব মানার কোনও চেষ্টা ছিল না। এদিকে নগরীতে মাস্ক না পরার কারণে পথচারীদের আটক ও জরিমানা করা হচ্ছে। এছাড়াও দিনে নগরীর রাস্তাঘাট ছিল সুনশান। মোড়গুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও গণমাধ্যমকর্মী ছাড়া সাধারণ মানুষের উপস্থিতি কম বললেই চলে। তবে অপ্রয়োজনে বাইরে আসা ঠেকাতে রাজশাহী জেলা প্রশাসনের চারটি ভ্রাম্যমাণ টিম নগরীতে জরিমানা করছে। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সরকারি-বেসরকারি জরুরি সেবা প্রতিষ্ঠানের গাড়ি, পণ্যবাহী বাহন ছাড়া হাতে গোনা কিছু রিকশা চলতে দেখা গেছে। নগরীর প্রায় প্রতিটি মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়েছে পুলিশ। চেকপোস্টে পুলিশসহ আনসার মোতায়েন করা হয়েছে। সেখানে চলাচলকারী রিকশা ও হেঁটে চলা মানুষদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জরুরি প্রয়োজনে বের হয়েছেন প্রমাণে ব্যর্থ হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতেও দেখা গেছে। আর সকালের দিকে নগরীতে সেনাবাহিনী ও বিজিবির টহল দেখা গেছে। কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে পুলিশের পাশাপাশি দুই প্লাটুন সেনাবাহিনী ও চার প্লাটুন বিজিবি মাঠে টহলে রয়েছেন বলে জানা গেছে। রাজশাহী অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শরিফুল হক জানান, লকডাউনে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। নাটোর কাদিরাবাদ ক্যান্টনমেন্ট থেকে সোনাবাহিনী এসে রাজশাহীতে লকডাউনের দায়িত্বপালন করছেন। জেলা প্রশাসনের প্রায় ১০ টি ভ্রাম্যমাণ টিম মাঠে কাজ করছে। নির্দেশনা অমান্য করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাজ করছেন। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ও অংশগ্রহণে সুন্দরভাবে রাজশাহীতে লকডাউন পালিত হচ্ছে।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, লকডাউন সফল করতে পুলিশ চেষ্টা করছে। যাতে করে কেউ অপ্রয়োজনে বের না হতে পারে। আর বের হলে তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। প্রয়োজনে আটক করে রাখা হচ্ছে।
ময়মনসিংহ: করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে জেলায় দ্বিতীয় দিনের মতো কঠোর লকডাউন চলছে। সকাল থেকেই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্র্যাটদের নেতৃত্বে স্বশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা মহানগরীর মোড়ে মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়ে যানচালক ও অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষকে লকডাউন পালনে বাধ্য করছেন। যারা মানছেন না তাদেরকে জমিরানা করতেও দেখা গেছে। বিশেষ করে মাস্ক ছাড়া বের হলে আইনি ব্যবস্থার মধ্যে পড়ছেন নগরীর বাসিন্দারা। লকডাউনের কারণে গণপরিবহণ বন্ধ আছে। নগরীতে পণ্যবাহী ট্রাক ও ছোট যান চলতে দেখা গেছে। দোকানপাট বন্ধ ছিল, তবে কাঁচাবাজার, ওষুধ ও খাবারের দোকানপাট খোলা দেখা গেছে।
জেলা প্রশাসক মো. এনামুল হক জানান, লকডাউন সফল করতে জেলায় পুলিশের ১৬টি, র‌্যাবের দুটি, সেনাবাহিনীর ১০টি , বিজিবির চারটি, এপিবিএনের দুটি টিম কাজ করছে। প্রতিটি টিমের সঙ্গে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্র্যাট দায়িত্ব পালন করছেন। আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে জরিমানা করা হচ্ছে। এ ধরনের তৎপরতা অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
রংপুর: কঠোর লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে বিভাগীয় নগরী রংপুরে সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও শপিংমল বন্ধ রয়েছে। সড়কে সকাল থেকে কিছু রিকশা চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে মোটরসাইকেল আটকে চলাচলের কারণ সন্তোষজনক না হলে আরোহীদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সকাল থেকে সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও বিজিবি নগরীতে টহল দিয়েছে। নগরীর ১২টি স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে পুলিশ বিভিন্ন অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলকে ফিরিয়ে দিতেও দেখা গেছে। তবে কাঁচাবাজারে ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে। এদের অনেককেই স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মানতে দেখা যায়নি। সড়কে মাস্ক ছাড়া বের হয়ে শাস্তির মুখে পড়তে হচ্ছে নাগরিকদের। রংপুর মেট্রোপলিটান পুলিশের কোতোয়ালি থানার ওসি আব্দুর রশিদ জানান, এবার লকডাউনে কোনও ছাড় নয়। অকারণে বের হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
সিলেট: সিলেটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারিতে লকডাউনের দ্বিতীয় দিন চলছে। সকাল থেকে সিলেট মহানগরীসহ উপজেলাগুলোতে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের তত্ত্বাবধানে টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশের একাধিক টিম। একইসঙ্গে সিলেটের প্রবেশদ্বারগুলোতে পুলিশের চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এসময় পুলিশ মানুষ ও লকডাউনে বের হওয়া গাড়ি দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিতরা। সদুত্তর দিলে গন্তব্যে যেতে পারছেন, অন্যথায় আইনানুগ ব্যবস্থার নেওয়ার পাশাপাশি তাদের ঘরে ফিরিয়ে দিতে দেখা গেছে। এছাড়া মাস্ক ছাড়া কাউকে সড়কে পেলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এদিকে সকালে সিলেটের সড়কে লোকজন একেবারেই কম দেখা গেছে। লকডাউনের পাশাপাশি বৃষ্টির কারণে অনেকেই প্রয়োজন থাকলেও ঘর থেকে বের হননি।
সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার আশরাফ উল্যাহ তাহের বলেন, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক দল লকডাউন বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। টহল পুলিশের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়ে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। একইসঙ্গে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের তত্ত্বাবধানে মাঠে কাজ করে যাচ্ছে একাধিক টিম। কেউ লকডাউন না মেনে ঘরের বাইরে এলে তার বিরুদ্ধে নেওয়া হচ্ছে জরিমানার পাশাপাশি আইনি ব্যবস্থা।
তিনি আরও বলেন, জনগুরুত্বপূর্ণ কিছু পরিবহন ছাড়া আর কোনও যানবাহন চলতে দেওয়া হচ্ছে না। এতে রাস্তাঘাটে কমেছে মানুষের আনাগোনা, অনেকটাই ফাঁকা অবস্থা। প্রয়োজন ছাড়া কোনও যানবাহন বা ব্যক্তিকে এক জায়াগা থেকে অন্য জায়গায় চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে না। মহানগর পুলিশের আওতাধীন ছয়টি থানা, তদন্ত কেন্দ্র ও ফাঁড়ি পুলিশকে লকডাউনের যথাযথ দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেওয়া আছে।
জানা গেছে, সিলেটের প্রশাসনের উদ্যোগে যথাযথভাবে লকডাউন পালন ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ নিশ্চিতে বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী সিলেট মহানগর ও সব উপজেলায় ৩৩ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট একযোগে মোবাইলকোর্ট পরিচালনা করেন। মোবাইলকোর্ট পরিচালনাকালে ১৭২টি মামলা ও দুই লাখ ৬০০ টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া লকডাউনে বিধিনিষেধ অমান্য করায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সিলেট মহানগর পুলিশ নগরীর বিভিন্ন স্থানে এবং সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর উপস্থিতিতে সর্বমোট ২৫ জনকে ১১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এসময় পুলিশের অভিযানে ৯টি সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ৩০টি মোটরসাইকেল, দুটি প্রাইভেট কার ও অন্যান্য সাতটি মামলাসহ সর্বমোট ৪৮টি মামলা করা হয়। সিএনজিচালিত অটোরিকশা ১৮টি, মোটরসাইকেল ৫৯টি, প্রাইভেট কার তিনটি, অন্যান্য ২৪টিসহ মোট ১০৪টি গাড়ি আটক করেছে পুলিশ।
বরিশাল: সকাল থেকে কঠোরভাবে লকডাউন বাস্তবায়নে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় লকডাউন ভিযান চালায় জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এর মধ্যে নগরীর চকবাজার, নতুনবাজার, নথুল্লবাদ, কাশিপুর, আমতলার মোড়, বাংলাবাজার, রুপাতলী এলাকায় ম্যাজিস্ট্রেট মুশফিকুর রহমান ও জাভেদ হোসেন চৌধুরী অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় তারা বেশ কয়েকজনের অর্থদ- করেন। লকডাউনের কারণে ওষুধ, খাবারের দোকান ও কাচাবাজার ছাড়া অন্যসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ দেখা গেছে। মানুষজন পায়ে হেঁটে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় চলাচল করছে। এদের অনেকের মুখে ছিল না মাস্ক, আবার অনেকেই থুতনির নিচে মাস্ক নিয়ে ঘুরাফেরা করছিলেন।
পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান জানান, লকডাউন বাস্তবায়নে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন তারা। নগরীর ২০টি স্পটে চেকপোস্ট বসিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এছাড়া মানুষকে সচেতন করতে চলছে মাইকিং। জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন হায়দার জানিয়েছেন, লকডাউন বাস্তবায়নে ২০ জন ম্যাজিস্ট্রেট বিভিন্ন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ নগরবাসীকে সচেতন করতে কাজ করছেন।
মুন্সীগঞ্জ: এদিকে লকডাউন ও বৃষ্টির কারণে দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের শিমুলিয়া ঘাট একদম ফাঁকা ছিল। ঘাটে কোনও যাত্রী নেই। যানবাহনও বেশ কম। শুক্রবার (২ জুলাই) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত একই অবস্থা দেখা গেছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) শিমুলিয়া ঘাটের উপমহাব্যবস্থাপক (এজিএম) শফিকুল ইসলাম জানান, লকডাউনের কারণে ঘাটে কোনও যাত্রী নেই। অল্প কিছু পণ্যবাহী যান আছে। ফেরি চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। মাওয়া নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সিরাজুল কবীর জানান, ঘাট একদম ফাঁকা। ফেরিগুলোকে বরং যানের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। কিছু পণ্যবাহী ট্রাক ছাড়া সব যান রানিং আছে।
এদিকে, লকডাউন কঠোরভাবে বাস্তবায়নে বৃহস্পতিবার থেকেই মুন্সীগঞ্জের সড়কে টহল দিচ্ছেন সেনাবাহিনী, বিজিবি ও র‌্যাব সদস্যারা। এছাড়া, পুলিশের চেকপোস্ট বসানো হয়েছে মহাসড়কসহ বিভিন্ন সড়কে। বিপণিবিতানসহ সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। তবে, জরুরি পণ্যের দোকানপাট খোলা আছে। মুন্সীগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. নোমান হোসেন বলেন, লকডাউন বাস্তবায়নে তিন প্লাটুন সেনাবাহিনী, দুই প্লাটুন বিজিবি ও এক প্লাটুন র‌্যাব সদস্য সড়কে টহল দিচ্ছে। এছাড়া, পুলিশের চেকপোস্টও রয়েছে। বিধিনিষেধ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে ভ্রাম্যমাণ আদালতও কাজ করছে বলে জানান তিনি।