ঢাকা ০৫:৪৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫

মগবাজার বিস্ফোরণ : রাসেলও বাঁচল না, মৃত্যু বেড়ে ১১

  • আপডেট সময় : ১২:৪৩:৪৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ জুলাই ২০২১
  • ১৫৩ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনিস্টিউটে চিকিৎসাধীন ২১ বছরের তরুণ মো. রাসেলকেও বাঁচানো গেল না। মগবাজারে ভয়াবহ বিস্ফোরণে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হল ১১ জন।
ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর উপজেলার বরুয়াল গ্রামের কৃষক জসিম উদ্দিনের ছেলে রাসেল মগবাজারের বিস্ফোরণে ধসে পড়া রাখি নীড়ের নিচতলায় বেঙ্গল মিটের বিক্রয়কেন্দ্রে কাজ করতেন।
বার্ন ইনস্টিউটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে তার মৃত্যু হয় বলে জানান হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক পার্থ শঙ্কর পাল। এর আগে বৃহস্পতিবার ভোরে মারা যান ৩৫ বছর বয়সী ভ্যানচালক নুরুন্নবী। গত বুধবার সকালে মারা যান ২৫ বছর বয়সী ইমরান হোসেন, যিনি বেঙ্গল মিটে রাসেলের সহকর্মী ছিলেন। পার্থ শঙ্কর পাল জানান, এই তিনজনেরই শরীরের ৯০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল মগবাজারের ওই বিস্ফোরণে।
রাসেলের পরিবার ঠাকুরগাঁওয়ে থাকে। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। ঢাকায় চাচা মানারুল হকের কাছে থেকে লেখাপড়া করে তিনি বেঙ্গল মিটের বিক্রয়কেন্দ্রে চাকরি নিয়েছিলেন।
মানারুল হক দুদিন আগে হাসপাতালে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “আমিই লালনপালন করছি। ছেলেটা আর বাঁচবে না ভাবলে কিছু ভালো লাগতেছে না। সহ্য করা মুশকিল।” সকালে মারা যাওয়া নুরুন্নবী রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার হাবাজপুর গ্রামের ইসলাম ম-লের ছেলে। ঢাকায় এলিফ্যান্ট রোডের বাটা সিগন্যাল এলাকার একটি মেসে তিনি থাকতেন। আবদুল্লাহ নামের ছয় বছরের একটি ছেলে রয়েছে তার। নুরুন্নবীর স্ত্রী পপি বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ভ্যান চালিয়ে বাড্ডা থেকে ফেরার পথেই মগবাজারে বিস্ফোরণের মধ্যে পড়েন তার স্বামী।
গত রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বিস্ফোরণের বিকট শব্দে মগবাজার ওয়্যারলেস গেইট এলাকা কেঁপে ওঠে। তাতে আউটার সার্কুলার রোডের ৭৯ নম্বর হোল্ডিংয়ের তিনতলা রাখি নীড়ের ধসে পড়ার দশা হয়।
বিস্ফোরণের ধাক্কায় রাস্তার উল্টো দিকে আড়ং, বিশাল সেন্টার, নজরুল শিক্ষালয়, রাশমনো হাসনপাতালসহ আশপাশের ডজনখানেক ভবনের কাচ ভেঙে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় রাস্তায় থাকা তিনটি বাস ও যাত্রীরা। ওই ঘটনায় আহত হন চার শতাধিক, তাদের বেশিরভাগই সে সময় রাস্তায় বা আশপাশের ভবনে ছিলেন। তাদের অধিকাংশই বিস্ফোরণের ধাক্কায় ছিটকে যাওয়া কাচে আহত হন। ফায়ার সার্ভিস বলেছে, তিনতলা ওই ভবনে গ্যাস জমে বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে তারা ধারণা করছে। তবে কেন, কীভাবে ওই বিস্ফোরণ ঘটল, সে বিষয়ে নিশ্চিতভাবে কিছু কেউ বলেননি।

বিস্ফোরণের পর সেই রাতেই মোট সাতজনের মৃত্যুর কথা জানানো হয় পুলিশের পক্ষ থেকে। পরদিন তাদের লাশ হস্তান্তর করা হয় পরিবারের কাছে। সেই সাতজন হলেন- কলেজ শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমান (২৬), প্রাইভেটকারচালক স্বপন (৩৯), বাসচালক আবুল কাশেম মোল্লা (৪৫), বেসরকারি চাকরিজীবী রুহুল আমিন (৩০), ভবনের নিচতলায় থাকা শরমা হাউজের পাচক ওসমান গনি তুষার (৩৫), সেখানে খেতে যাওয়া জান্নাত বেগম (২৩) এবং তার নয় মাসের মেয়ে সোবহানা। বিস্ফোরণের পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন আংশিক ধসে পড়া রাখি নীড়ের তত্ত্বাবধায়ক হারুন অর রশিদ হাওলাদার। মঙ্গলবার ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে তার লাশ উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। ডা. পার্থ জানান, মগবাজারের ঘটনায় আহতদের মধ্যে আবুল কালাম কালু ও জাফর আহমেদ নামে দুজন এখনও হাসপাতালের সাধারণ ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

মগবাজার বিস্ফোরণ : রাসেলও বাঁচল না, মৃত্যু বেড়ে ১১

আপডেট সময় : ১২:৪৩:৪৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ জুলাই ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনিস্টিউটে চিকিৎসাধীন ২১ বছরের তরুণ মো. রাসেলকেও বাঁচানো গেল না। মগবাজারে ভয়াবহ বিস্ফোরণে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হল ১১ জন।
ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর উপজেলার বরুয়াল গ্রামের কৃষক জসিম উদ্দিনের ছেলে রাসেল মগবাজারের বিস্ফোরণে ধসে পড়া রাখি নীড়ের নিচতলায় বেঙ্গল মিটের বিক্রয়কেন্দ্রে কাজ করতেন।
বার্ন ইনস্টিউটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে তার মৃত্যু হয় বলে জানান হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক পার্থ শঙ্কর পাল। এর আগে বৃহস্পতিবার ভোরে মারা যান ৩৫ বছর বয়সী ভ্যানচালক নুরুন্নবী। গত বুধবার সকালে মারা যান ২৫ বছর বয়সী ইমরান হোসেন, যিনি বেঙ্গল মিটে রাসেলের সহকর্মী ছিলেন। পার্থ শঙ্কর পাল জানান, এই তিনজনেরই শরীরের ৯০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল মগবাজারের ওই বিস্ফোরণে।
রাসেলের পরিবার ঠাকুরগাঁওয়ে থাকে। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। ঢাকায় চাচা মানারুল হকের কাছে থেকে লেখাপড়া করে তিনি বেঙ্গল মিটের বিক্রয়কেন্দ্রে চাকরি নিয়েছিলেন।
মানারুল হক দুদিন আগে হাসপাতালে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “আমিই লালনপালন করছি। ছেলেটা আর বাঁচবে না ভাবলে কিছু ভালো লাগতেছে না। সহ্য করা মুশকিল।” সকালে মারা যাওয়া নুরুন্নবী রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার হাবাজপুর গ্রামের ইসলাম ম-লের ছেলে। ঢাকায় এলিফ্যান্ট রোডের বাটা সিগন্যাল এলাকার একটি মেসে তিনি থাকতেন। আবদুল্লাহ নামের ছয় বছরের একটি ছেলে রয়েছে তার। নুরুন্নবীর স্ত্রী পপি বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ভ্যান চালিয়ে বাড্ডা থেকে ফেরার পথেই মগবাজারে বিস্ফোরণের মধ্যে পড়েন তার স্বামী।
গত রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বিস্ফোরণের বিকট শব্দে মগবাজার ওয়্যারলেস গেইট এলাকা কেঁপে ওঠে। তাতে আউটার সার্কুলার রোডের ৭৯ নম্বর হোল্ডিংয়ের তিনতলা রাখি নীড়ের ধসে পড়ার দশা হয়।
বিস্ফোরণের ধাক্কায় রাস্তার উল্টো দিকে আড়ং, বিশাল সেন্টার, নজরুল শিক্ষালয়, রাশমনো হাসনপাতালসহ আশপাশের ডজনখানেক ভবনের কাচ ভেঙে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় রাস্তায় থাকা তিনটি বাস ও যাত্রীরা। ওই ঘটনায় আহত হন চার শতাধিক, তাদের বেশিরভাগই সে সময় রাস্তায় বা আশপাশের ভবনে ছিলেন। তাদের অধিকাংশই বিস্ফোরণের ধাক্কায় ছিটকে যাওয়া কাচে আহত হন। ফায়ার সার্ভিস বলেছে, তিনতলা ওই ভবনে গ্যাস জমে বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে তারা ধারণা করছে। তবে কেন, কীভাবে ওই বিস্ফোরণ ঘটল, সে বিষয়ে নিশ্চিতভাবে কিছু কেউ বলেননি।

বিস্ফোরণের পর সেই রাতেই মোট সাতজনের মৃত্যুর কথা জানানো হয় পুলিশের পক্ষ থেকে। পরদিন তাদের লাশ হস্তান্তর করা হয় পরিবারের কাছে। সেই সাতজন হলেন- কলেজ শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমান (২৬), প্রাইভেটকারচালক স্বপন (৩৯), বাসচালক আবুল কাশেম মোল্লা (৪৫), বেসরকারি চাকরিজীবী রুহুল আমিন (৩০), ভবনের নিচতলায় থাকা শরমা হাউজের পাচক ওসমান গনি তুষার (৩৫), সেখানে খেতে যাওয়া জান্নাত বেগম (২৩) এবং তার নয় মাসের মেয়ে সোবহানা। বিস্ফোরণের পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন আংশিক ধসে পড়া রাখি নীড়ের তত্ত্বাবধায়ক হারুন অর রশিদ হাওলাদার। মঙ্গলবার ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে তার লাশ উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। ডা. পার্থ জানান, মগবাজারের ঘটনায় আহতদের মধ্যে আবুল কালাম কালু ও জাফর আহমেদ নামে দুজন এখনও হাসপাতালের সাধারণ ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন।