ঢাকা ০৬:৫৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫

বিচার ব্যবস্থায় বিদ্যমান অন্তরায়

  • আপডেট সময় : ১০:৪১:৪৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ নভেম্বর ২০২২
  • ১২৭ বার পড়া হয়েছে

ফারজানা কাশেমী : আমরা ধর্মীয় অনুভূতিতে প্রগাঢ় এক জাতি। যতটুকু ধর্ম পালনকারী তারচেয়ে বেশি ধর্মের প্রতি সহানুভূতিশীল। ধর্ম মানুষের মূল্যবোধ তৈরি করে যদিও তা আমাদের দৃষ্টিগোচর হচ্ছে প্রতিনিয়ত। মানুষের কর্মকা- বিশ্লেষণে তার প্রতি বিচারসুলভ আচরণ প্রদর্শন আমাদের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। ধর্ম পরায়ন এই আমরা ধর্মীয় অনুশাসনের পরিপন্থি কাজ প্রতিনিয়ত করছি। ধর্মে স্পষ্টত উল্লেখ আছে-কোন বিষয় পুরোপুরি না জেনে অযাচিত মন্তব্য করা পাপ সমতুল্য। কিন্তু এই নির্দেশনা আমরা স্বজ্ঞানে উপেক্ষা করতে পারদর্শী।
অপরাধ, অপরাধের প্রকৃতি ও অপরাধীর শাস্তি দেশের প্রচলিত আইন ও বিচার ব্যবস্থার আওতাধীন। উক্ত অপরাধের প্রয়োগ, বিস্তার রোধ ও অপরাধীর শাস্তি জনগণের দাবি। তাই জনগণের প্রশ্ন ও মতামত সর্বদা সর্বাপেক্ষা গুরুত্ববহ।
কিন্তু বিচারাধীন বিষয় নিয়ে মনগড়া বক্তব্য ও মন্তব্য অনভিপ্রেত বিষয় সাদৃশ্য। চায়ের কাপে ও গল্পের ছলে যে মন্তব্য প্রতিনিয়ত ছুড়ে দেয়া হয়, তা এক ধরনের ঢ়ৎড়ঢ়ধমধহফধ। যাতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির উদ্ভব হয়।
আদালতের রায়ে ফতোয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আপিল বিভাগ এই রায়ের কিছু অংশের পরিমার্জন সাধন করেছে। ক্ষেত্রবিশেষ ফতোয়া বৈধ। এ রায়ে স্পষ্টত উল্লেখ আছে- ঔঁফরপরধষ গধমরংঃৎধঃব বা ঔঁফমব ছাড়া বিচার করার সক্ষমতা সাধারণ ব্যক্তির নেই। যদিও গ্রাম্য আদালতের বিচারের এখতিয়ার আইনসম্মত। অতএব, বিচারসুলভ বাক্য চয়ন ও মন্তব্য পোষণ নিষ্প্রয়োজন।
আমরা খালি চোখে যা দেখি বা অনুমান করি, তা ভুল ধারণা দিতে পারে। বিচারের ধারাবাহিক স্তরের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীর অনুসন্ধান করা হয়। অনুসন্ধান, জবানবন্দি, চার্জশিট, অভিযোগ গঠন, নারাজি ইত্যাদি পদ্ধতির মাধ্যমে অপরাধের বিচার তথা প্রকৃত অপরাধী খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হয়।
বিচারাধীন বিষয় নিয়ে মন্তব্য অসমীচীন। প্রাসঙ্গিক বিষয় জানতে হলে বিচার প্রক্রিয়ায় শেষ স্তর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। পদ্ধতিগত জটিলতার জন্য অনেক সময় ত্রুটিপূর্ণ পরিস্থিতির অনুপ্রবেশ হয়।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিককালে প্রকাশিত হয় যে -হাজেরা নামের এক নারীকে ধর্ষণ ও তার ১৩ মাস বয়সী সন্তানকে হত্যার হুমকি দিয়ে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছিল। মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে বিষয়টি স্পষ্ট হয় যে, জবানবন্দি, চার্জশিট ও আদালত কর্তৃক গঠিত অভিযোগে গরমিল রয়েছে। অভাগী এই নারী বিনা অপরাধে কনডেম সেলে জীবনের ৫টি বছর কাটিয়েছেন।
তাই অপরাধের প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান ও অপরাধীর শাস্তির সমীপে দায়িত্ব পালনকারী ব্যক্তির ওপর আস্থা জ্ঞাপন করে অযাচিত মন্তব্য পরিহার করাই সুনাগরিকের গুণাবলি। অপরাধীর বৈবাহিক অবস্থা, চরিত্র বিশ্লেষণ বিচার প্রক্রিয়ায় অংশ হতে পারে না। অপরাধের অভিযোগ গঠনে অপরাধবিজ্ঞানী বা বিশ্লেষক-এর মতামত গুরুত্বপূর্ণ, সাধারণ মানুষের নয়।
সাধারণ ব্যক্তিবর্গ অপরাধী শনাক্তকরণের আড়ালে শুধু অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করে; যা প্রকৃত অপরাধকে আড়াল করে। ন্যায়বিচারের পথে অন্তরায় তৈরি হয়। কিছু ব্যক্তি বিচারের নামে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে; যা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকে হার মানায়। পৈশাচিক উন্মাদনায় বিচারের নামান্তরে সীমাহীন অত্যাচারে আজ মৃতপ্রায় অপরাধের শিকার নারী। অত্যাচারিত নারীর আহাজারি-‘আব্বাগো তোর আল্লাহ দোহাই ছাড়ি দে….. কিছুতেই শেষ রক্ষা হয় না নারীর। এই নারীর প্রাপ্তি বিবস্ত্র শরীরে অত্যাচার ও প্রযুক্তির আধুনিক কৌশলে ধারণ ও বিস্তার…. বিচারকারী নরপশুদলের এই জঘন্যতম কর্মযজ্ঞ যেন আমাদের অসহায়ত্বের নীরব দিনলিপি। এর শেষ কোথায়?
লেখক : আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট অব বাংলাদেশ

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

বিচার ব্যবস্থায় বিদ্যমান অন্তরায়

আপডেট সময় : ১০:৪১:৪৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ নভেম্বর ২০২২

ফারজানা কাশেমী : আমরা ধর্মীয় অনুভূতিতে প্রগাঢ় এক জাতি। যতটুকু ধর্ম পালনকারী তারচেয়ে বেশি ধর্মের প্রতি সহানুভূতিশীল। ধর্ম মানুষের মূল্যবোধ তৈরি করে যদিও তা আমাদের দৃষ্টিগোচর হচ্ছে প্রতিনিয়ত। মানুষের কর্মকা- বিশ্লেষণে তার প্রতি বিচারসুলভ আচরণ প্রদর্শন আমাদের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। ধর্ম পরায়ন এই আমরা ধর্মীয় অনুশাসনের পরিপন্থি কাজ প্রতিনিয়ত করছি। ধর্মে স্পষ্টত উল্লেখ আছে-কোন বিষয় পুরোপুরি না জেনে অযাচিত মন্তব্য করা পাপ সমতুল্য। কিন্তু এই নির্দেশনা আমরা স্বজ্ঞানে উপেক্ষা করতে পারদর্শী।
অপরাধ, অপরাধের প্রকৃতি ও অপরাধীর শাস্তি দেশের প্রচলিত আইন ও বিচার ব্যবস্থার আওতাধীন। উক্ত অপরাধের প্রয়োগ, বিস্তার রোধ ও অপরাধীর শাস্তি জনগণের দাবি। তাই জনগণের প্রশ্ন ও মতামত সর্বদা সর্বাপেক্ষা গুরুত্ববহ।
কিন্তু বিচারাধীন বিষয় নিয়ে মনগড়া বক্তব্য ও মন্তব্য অনভিপ্রেত বিষয় সাদৃশ্য। চায়ের কাপে ও গল্পের ছলে যে মন্তব্য প্রতিনিয়ত ছুড়ে দেয়া হয়, তা এক ধরনের ঢ়ৎড়ঢ়ধমধহফধ। যাতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির উদ্ভব হয়।
আদালতের রায়ে ফতোয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আপিল বিভাগ এই রায়ের কিছু অংশের পরিমার্জন সাধন করেছে। ক্ষেত্রবিশেষ ফতোয়া বৈধ। এ রায়ে স্পষ্টত উল্লেখ আছে- ঔঁফরপরধষ গধমরংঃৎধঃব বা ঔঁফমব ছাড়া বিচার করার সক্ষমতা সাধারণ ব্যক্তির নেই। যদিও গ্রাম্য আদালতের বিচারের এখতিয়ার আইনসম্মত। অতএব, বিচারসুলভ বাক্য চয়ন ও মন্তব্য পোষণ নিষ্প্রয়োজন।
আমরা খালি চোখে যা দেখি বা অনুমান করি, তা ভুল ধারণা দিতে পারে। বিচারের ধারাবাহিক স্তরের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীর অনুসন্ধান করা হয়। অনুসন্ধান, জবানবন্দি, চার্জশিট, অভিযোগ গঠন, নারাজি ইত্যাদি পদ্ধতির মাধ্যমে অপরাধের বিচার তথা প্রকৃত অপরাধী খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হয়।
বিচারাধীন বিষয় নিয়ে মন্তব্য অসমীচীন। প্রাসঙ্গিক বিষয় জানতে হলে বিচার প্রক্রিয়ায় শেষ স্তর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। পদ্ধতিগত জটিলতার জন্য অনেক সময় ত্রুটিপূর্ণ পরিস্থিতির অনুপ্রবেশ হয়।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিককালে প্রকাশিত হয় যে -হাজেরা নামের এক নারীকে ধর্ষণ ও তার ১৩ মাস বয়সী সন্তানকে হত্যার হুমকি দিয়ে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছিল। মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে বিষয়টি স্পষ্ট হয় যে, জবানবন্দি, চার্জশিট ও আদালত কর্তৃক গঠিত অভিযোগে গরমিল রয়েছে। অভাগী এই নারী বিনা অপরাধে কনডেম সেলে জীবনের ৫টি বছর কাটিয়েছেন।
তাই অপরাধের প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান ও অপরাধীর শাস্তির সমীপে দায়িত্ব পালনকারী ব্যক্তির ওপর আস্থা জ্ঞাপন করে অযাচিত মন্তব্য পরিহার করাই সুনাগরিকের গুণাবলি। অপরাধীর বৈবাহিক অবস্থা, চরিত্র বিশ্লেষণ বিচার প্রক্রিয়ায় অংশ হতে পারে না। অপরাধের অভিযোগ গঠনে অপরাধবিজ্ঞানী বা বিশ্লেষক-এর মতামত গুরুত্বপূর্ণ, সাধারণ মানুষের নয়।
সাধারণ ব্যক্তিবর্গ অপরাধী শনাক্তকরণের আড়ালে শুধু অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করে; যা প্রকৃত অপরাধকে আড়াল করে। ন্যায়বিচারের পথে অন্তরায় তৈরি হয়। কিছু ব্যক্তি বিচারের নামে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে; যা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকে হার মানায়। পৈশাচিক উন্মাদনায় বিচারের নামান্তরে সীমাহীন অত্যাচারে আজ মৃতপ্রায় অপরাধের শিকার নারী। অত্যাচারিত নারীর আহাজারি-‘আব্বাগো তোর আল্লাহ দোহাই ছাড়ি দে….. কিছুতেই শেষ রক্ষা হয় না নারীর। এই নারীর প্রাপ্তি বিবস্ত্র শরীরে অত্যাচার ও প্রযুক্তির আধুনিক কৌশলে ধারণ ও বিস্তার…. বিচারকারী নরপশুদলের এই জঘন্যতম কর্মযজ্ঞ যেন আমাদের অসহায়ত্বের নীরব দিনলিপি। এর শেষ কোথায়?
লেখক : আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট অব বাংলাদেশ