ঢাকা ০৫:১৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫

ক্যানসারজয়ী সিয়াম এখন চিকিৎসকক্যানসারজয়ী সিয়াম এখন চিকিৎসকক্যানসারজয়ী সিয়াম এখন চিকিৎসক

  • আপডেট সময় : ০১:৫১:০৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ নভেম্বর ২০২২
  • ১১৭ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : ১৪ বছর বয়সে ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন আল মুসাব্বির সিয়াম। তখন তাঁর চিকিৎসার একটি বিশেষ ব্যবস্থাপনায় যুক্ত ছিলেন এ কে এম আমিরুল মোরশেদ। সিয়ামের বয়স এখন ২৭। তিনি এখন চিকিৎসক। আর আমিরুল মোরশেদ এখন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।
প্রায় ১২ বছর পর সম্প্রতি দুজনের দেখা হয়েছে। সিয়াম পরিচয় দিতেই তাঁকে চিনেতে পারেন শিশু ক্যানসারবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আমিরুল মোরশেদ। তিনি সিয়ামের সঙ্গে তাঁর একটি ছবি দিয়ে ফেসবুকে লিখেছেন, ক্যানসারজয়ী সিয়াম এখন চিকিৎসক। সিয়ামও তাঁর চিকিৎসকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। গত সোমবার তিনি মুঠোফোনে বলেন, ‘পরিচয় দিতেই স্যার আমাকে চিনতে পারেন। একজন চিকিৎসক বহু বছর পরও তাঁর রোগীকে চিনতে পেরেছেন, এটা আমার অনেক ভালো লেগেছে।’
মানিকগঞ্জের মুন্নু মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত সিয়াম। সেখানেই আমিরুল মোরশেদের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়। সিয়ামের যখন ব্লাড ক্যানসার ধরা পড়ে, তখন তিনি ছিলেন অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। শুরুতে তাঁকে ক্যানসার ধরা পড়ার কথা জানায়নি পরিবার। পর যখন তাঁকে জানানো হয়, তখন তিনি একটা বড় ধাক্কা খেয়েছিলেন। সিয়াম বলেন, এত অল্প বয়সে ব্লাড ক্যানসার হয়েছে, এই সত্য মেনে নেওয়া তাঁর জন্য অনেক কঠিন ছিল। তখন তিনি তাঁর জানাশোনার গ-ির অন্য কারও ক্যানসার হওয়ার কথা শোনেননি। তাই তাঁর মনে প্রশ্ন জেগেছিল, তিনিই কেন ক্যানসারে আক্রান্ত হলেন! ক্যানসার ধরা পড়ার পর চিকিৎসার পাশাপাশি পড়াশোনাটা চালিয়ে গেছেন সিয়াম। তাঁকে তাঁর পরিবারের সদস্য, চিকিৎসক ও শিক্ষকেরা সাহস দিয়েছেন। নানাভাবে সহায়তা করেছেন। সিয়ামের বাবা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. সেলিম। মা মঞ্জুমা হক, তিতুমীর কলেজের অধ্যাপক। ভাই আল মুহতাসিম। তিনি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছেন।
উন্নত চিকিৎসার জন্য একপর্যায়ে সিয়ামকে ভারতের চেন্নাইয়ে নেওয়া হয়েছিল। সেখানকার চিকিৎসকেরা সব দেখেশুনে বলেছিলেন, বাংলাদেশে তাঁর ঠিক চিকিৎসাই হচ্ছে। এইচএসসি পর্যন্ত সিয়ামের চিকিৎসা চলে। তাঁর চিকিৎসায় সাত থেকে আট লাখ টাকা খরচ হয়। সিয়াম বলেন, চিকিৎসার পুরো সময় তাঁদের অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হয়েছে। দীর্ঘ চিকিৎসা শেষে এখন তিনি ওষুধ ছাড়াই ভালো আছি। তাঁর ক্যানসারের লক্ষণ আর প্রকাশ পায়নি। এখন তাঁকে ‘রুটিন ফলোআপ’ করা ছাড়া আর কিছু করতে হয় না। মায়ের ইচ্ছে ছিল সিয়াম চিকিৎসক হবেন। কিশোর বয়সে ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার পর সিয়ামের মধ্যেও একই ভাবনা আসে। তিনি বলেন, ‘দেখলাম, চিকিৎসকেরা মানুষকে বাঁচতে সহায়তা করছেন। তাঁরা নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। তাই আমি চিকিৎসকই হতে চেয়েছিলাম।’
মানিকগঞ্জের কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন সিয়াম। তিনি বলেন, রোগী হিসেবে তাঁকে দীর্ঘদিন হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল। নিজে চিকিৎসক হওয়ার পর সেই দিনগুলোর কথা ভুলে যাননি। তিনি জানেন, রোগীরা কী চান, তাঁদের কীভাবে স্বস্তি দিতে হয়। পেশাগত জীবনে সেই চর্চাটাই করার চেষ্টা করে আসছেন। তিনি বিসিএসে (পরিবার-পরিকল্পনা) সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। পদায়ন হলে সেখানেও সেবাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবেন।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

ক্যানসারজয়ী সিয়াম এখন চিকিৎসকক্যানসারজয়ী সিয়াম এখন চিকিৎসকক্যানসারজয়ী সিয়াম এখন চিকিৎসক

আপডেট সময় : ০১:৫১:০৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ নভেম্বর ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : ১৪ বছর বয়সে ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন আল মুসাব্বির সিয়াম। তখন তাঁর চিকিৎসার একটি বিশেষ ব্যবস্থাপনায় যুক্ত ছিলেন এ কে এম আমিরুল মোরশেদ। সিয়ামের বয়স এখন ২৭। তিনি এখন চিকিৎসক। আর আমিরুল মোরশেদ এখন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।
প্রায় ১২ বছর পর সম্প্রতি দুজনের দেখা হয়েছে। সিয়াম পরিচয় দিতেই তাঁকে চিনেতে পারেন শিশু ক্যানসারবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আমিরুল মোরশেদ। তিনি সিয়ামের সঙ্গে তাঁর একটি ছবি দিয়ে ফেসবুকে লিখেছেন, ক্যানসারজয়ী সিয়াম এখন চিকিৎসক। সিয়ামও তাঁর চিকিৎসকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। গত সোমবার তিনি মুঠোফোনে বলেন, ‘পরিচয় দিতেই স্যার আমাকে চিনতে পারেন। একজন চিকিৎসক বহু বছর পরও তাঁর রোগীকে চিনতে পেরেছেন, এটা আমার অনেক ভালো লেগেছে।’
মানিকগঞ্জের মুন্নু মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত সিয়াম। সেখানেই আমিরুল মোরশেদের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়। সিয়ামের যখন ব্লাড ক্যানসার ধরা পড়ে, তখন তিনি ছিলেন অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। শুরুতে তাঁকে ক্যানসার ধরা পড়ার কথা জানায়নি পরিবার। পর যখন তাঁকে জানানো হয়, তখন তিনি একটা বড় ধাক্কা খেয়েছিলেন। সিয়াম বলেন, এত অল্প বয়সে ব্লাড ক্যানসার হয়েছে, এই সত্য মেনে নেওয়া তাঁর জন্য অনেক কঠিন ছিল। তখন তিনি তাঁর জানাশোনার গ-ির অন্য কারও ক্যানসার হওয়ার কথা শোনেননি। তাই তাঁর মনে প্রশ্ন জেগেছিল, তিনিই কেন ক্যানসারে আক্রান্ত হলেন! ক্যানসার ধরা পড়ার পর চিকিৎসার পাশাপাশি পড়াশোনাটা চালিয়ে গেছেন সিয়াম। তাঁকে তাঁর পরিবারের সদস্য, চিকিৎসক ও শিক্ষকেরা সাহস দিয়েছেন। নানাভাবে সহায়তা করেছেন। সিয়ামের বাবা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. সেলিম। মা মঞ্জুমা হক, তিতুমীর কলেজের অধ্যাপক। ভাই আল মুহতাসিম। তিনি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছেন।
উন্নত চিকিৎসার জন্য একপর্যায়ে সিয়ামকে ভারতের চেন্নাইয়ে নেওয়া হয়েছিল। সেখানকার চিকিৎসকেরা সব দেখেশুনে বলেছিলেন, বাংলাদেশে তাঁর ঠিক চিকিৎসাই হচ্ছে। এইচএসসি পর্যন্ত সিয়ামের চিকিৎসা চলে। তাঁর চিকিৎসায় সাত থেকে আট লাখ টাকা খরচ হয়। সিয়াম বলেন, চিকিৎসার পুরো সময় তাঁদের অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হয়েছে। দীর্ঘ চিকিৎসা শেষে এখন তিনি ওষুধ ছাড়াই ভালো আছি। তাঁর ক্যানসারের লক্ষণ আর প্রকাশ পায়নি। এখন তাঁকে ‘রুটিন ফলোআপ’ করা ছাড়া আর কিছু করতে হয় না। মায়ের ইচ্ছে ছিল সিয়াম চিকিৎসক হবেন। কিশোর বয়সে ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার পর সিয়ামের মধ্যেও একই ভাবনা আসে। তিনি বলেন, ‘দেখলাম, চিকিৎসকেরা মানুষকে বাঁচতে সহায়তা করছেন। তাঁরা নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। তাই আমি চিকিৎসকই হতে চেয়েছিলাম।’
মানিকগঞ্জের কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন সিয়াম। তিনি বলেন, রোগী হিসেবে তাঁকে দীর্ঘদিন হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল। নিজে চিকিৎসক হওয়ার পর সেই দিনগুলোর কথা ভুলে যাননি। তিনি জানেন, রোগীরা কী চান, তাঁদের কীভাবে স্বস্তি দিতে হয়। পেশাগত জীবনে সেই চর্চাটাই করার চেষ্টা করে আসছেন। তিনি বিসিএসে (পরিবার-পরিকল্পনা) সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। পদায়ন হলে সেখানেও সেবাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবেন।