আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মহামারী মোকাবেলার কাজে ব্যর্থতার কারণে ‘ভয়াবহ সংকট’ সৃষ্টি হওয়ায় এবং তা উত্তর কোরিয়া ও এর জনগণের নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেওয়ায় ক্ষমতাসীন দলের ঊর্ধ্বতন নেতাদের কঠোর ভাষায় তিরস্কার করেছেন দেশটির শীর্ষ নেতা কিম জং উন।
গতকাল বুধবার এক প্রতিবেদনে দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা কেসিএনএন এ কথা জানিয়েছে। তবে ‘কী ঘটেছে’ এবং ‘ভয়াবহ’ ওই সংকট কীভাবে দেশটির জনগণকে ঝুঁকিতে ফেলেছে প্রতিবেদনে সে সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
উত্তর কোরিয়া এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের দেশে কোনো কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেনি। ওয়ার্কার্স পার্টিশাসিত দেশটিতে এতদিনেও করোনাভাইরাস ছোবল হানেনি, এমন দাবি মানতে নারাজ দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা।
অবশ্য বিশ্বজুড়ে মহামারী বিস্তারের শুরুর দিকেই উত্তর কোরিয়া তাদের সীমান্ত বন্ধ, অভ্যন্তরীণ যাতায়াতে নানান বিধিনিষেধ আরোপসহ ভাইরাস প্রতিরোধে কঠোর সব ব্যবস্থা নিয়েছিল।
কেসিএনএ জানিয়েছে, মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থাপনা কার্যকরে দলের কিছু নেতার ব্যর্থতাসহ দায়িত্বে অবহেলা নিয়ে আলোচনা করতে ক্ষমতাসীন ওয়ার্কার্স পার্টি অব কোরিয়ার পলিটব্যুরোর বৈঠক ডাকেন কিম।
“দলের নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের অবহেলার কথা উল্লেখ করেছেন তিনি। ওই অবহেলার কারণে রাষ্ট্র ও জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি হয়েছে, যা মারাত্মক পরিণতি ঘটাতে পারে,” বলা হয়েছে প্রতিবেদনে। বৈঠকে পলিটব্যুরোর বেশ কয়েকজন সদস্য, কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক সম্পাদক এবং রাষ্ট্রীয় কিছু সংস্থার কর্মকর্তার পদে রদবদল আনা হয়েছে; তবে এ রদবদল মহামারী মোকাবেলার কাজে অবহেলার সঙ্গে সম্পর্কিত কিনা, তা জানায়নি কেসিএনএ।
উত্তর কোরিয়ার বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রকল্পে কাজ করা হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের কি বি পার্ক জানান, উত্তর কোরিয়া শুরু থেকেই করোনাভাইরাস থেকে জনগণকে রক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছিল। দেশটির সবচেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কয়েকজনই তাদের মহামারী মোকাবেলা সংক্রান্ত সব সিদ্ধান্ত নিতেন।
“উত্তর কোরিয়ার কৌশলের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে ভাইরাস যেন কোনো অবস্থাতেই দেশে না ঢোকে; পাশাপাশি তারা তাদের চিকিৎসা সক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করা এবং ভ্যাকসিন যোগাড়ের দিকেও মনোযোগ দেয়,” বলেছেন তিনি।
সরকারের বিস্তৃত কর্মকৌশল এবং বড় ধরনের জমায়েত করতে না দেওয়ার ফলে দেশটিতে সম্ভবত বড় ধরনের কোনো প্রাদুর্ভাব দেখা যায়নি বলেই ইঙ্গিত মিলেছে, বলছেন পার্ক।
“তবে এই সাফল্যের জন্য এর অর্থনীতিকে চড়া মূল্য দিতে হয়েছে; জনসংখ্যার সবচেয়ে দরিদ্র অংশের ঝুঁকি আরও বেড়েছে,” বলেছেন তিনি।
তিন বছর আগে পক্ষত্যাগ করে দক্ষিণ কোরিয়ায় যাওয়া এক ব্যক্তি কোভিড-১৯ এর উপসর্গ নিয়ে সুরক্ষিত সীমান্ত অতিক্রম করে দেশে ফেরার পর গত বছর উত্তর কোরিয়া জরুরি অবস্থা জারি করে এবং তাদের সীমান্তবর্তী শহর কায়েসংয়ে লকডাউন দেয়।
শনাক্তকরণ পরীক্ষার প্রাপ্ত ফলে ওই ব্যক্তির দেহে ভাইরাসের উপস্থিতি আছে কি নেই, সে বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি বলে পরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছিল।
মহামারী মোকাবেলার কাজে ‘ব্যর্থতা’, দলের নেতাদের তিরস্কার করলেন কিম
ট্যাগস :
মহামারী মোকাবেলার কাজে ‘ব্যর্থতা’
জনপ্রিয় সংবাদ