ফরিদপুর প্রতিনিধি : আবারও নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, সংসদ ভেঙে দিয়ে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। আমাদের দাবি একটাই, শেখ হাসিনাকে সংসদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ ভেঙে দিতে হবে এবং নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
গতকাল শনিবার ফরিদপুরে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। দুপুর ১২টার দিকে ফরিদপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এ এফ এম কাইয়ুম জঙ্গির সভাপতিত্বে এ গণসমাবেশ শুরু হয়।
আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সমাবেশে যেতে পুলিশ বাধা দেয়। আওয়ামী লীগ নাকি গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেবে! ভূতের মুখে রাম নাম। তাদের গণতন্ত্র মানে গুম, খুন, মামলা, হামলা করা। তাদের এত ভয় কেন?’ তিনি বলেন, ‘ক্যাসিনো সম্রাট মুক্তি পান আর খালেদা জিয়াকে আটকে রাখা হয়। তারেক রহমানকে সাজিয়ে-গুছিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে রেখেছেন। দেশে আসতে দেওয়া হয় না।’
ফরিদপুরে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের তিন দিন আগে পরিবহন বন্ধের তীব্র সমালোচনা করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সমাবেশে আসার পথে বিএনপি নেতকাকর্মীদের ওপর হামলা-বাধার অভিযোগ করে তিনি আওয়ামী লীগের কাছে প্রশ্ন রাখেন ‘এত ভয় কেন?’ শহরের কোমরপুরের আব্দুল আজিজ ইনস্টিটিউশন মাঠে এই মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এটি বিএনপির ষষ্ঠ বিভাগীয় সমাবেশ।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ফরিদপুর মহানগর বিএনপির আহবায়ক এ এফ এম কাইয়ুম জঙ্গী। পরিচালনা করেন ফরিদপুর মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব গোলাম মোস্তফা মিরাজ এবং ফরিদপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এ কে এম কিবরিয়া স্বপন। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিএনপির সমাবেশে আসতে পথে-পথে পুলিশের বাধা। বরিশালে এবং ময়মনসিংহেও গাড়ি থেকে নামিয়ে নেতাকর্মীদের মারধর করা হয়েছে। এই হচ্ছে আওয়ামী লীগের গণতন্ত্র। এত ভয় কেন? কারণ, জনগণ থেকে তোমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছ। জনগণের সঙ্গে তোমাদের কোনো সম্পর্ক নেই।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই মুহূর্তে শেখ হাসিনার সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। সংসদ বিলুপ্ত করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। সেই সরকার নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবে। সেই কমিশন নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। তার মাধ্যমে পার্লামেন্ট তৈরি হবে।’
আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জোর করে কোনো দিন মানুষের সংগ্রামকে বন্ধ করা যাবে না। ফেরাউন পারেনি, নমরুদ পারেনি, মুসোলিনি পারেনি, আইয়ুব খান পারেনি, আপনারাও পারবেন না। ইতিহাস ভুলে যান কেন? ভুলে যাবেন না। একনায়কতন্ত্র করে জোর করে মানুষকে গুম করে খুন করে আপনার রেহাই পাবেন না।’
আর কোনো অন্যায়-অত্যাচার সহ্য করা হবে না হুঁশিয়ারি দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা রুখে দাঁড়াবো। তরুণদের জেগে উঠতে হবে। সমস্ত মানুষকে জেগে উঠতে হবে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যে ৩৫ লাখ মামলা রয়েছে তা প্রত্যাহার করতে হবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা এখানে সত্যিকার অর্থে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণ করতে চাই। নতুন আলোয় উদ্ভাসিত করতে চাই বাংলাদেশকে।’
‘আওয়ামী লীগ মনে করে দেশটা তাদের বাপের, তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি। সাধারণ মানুষকে তারা চাকরবাকর ভাবে। মনে করে যেমন খুশি তেমনভাবে ব্যবহার করা যাবে।’
গণসমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, মজিবুর রহমান সরোয়ার, সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়দ, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, মহিলা দলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক হেলেন জেরিন খান ও ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, দলীয় কর্মসূচিতে গুলি করে নেতাকর্মীদের হত্যার প্রতিবাদ এবং নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপক্ষে সরকারের দাবিতে বিএনপি বিভাগীয় (দলের সাংগঠনিক বিভাগ) পর্যায়ে সমাবেশ করছে। চট্টগ্রাম দিয়ে শুরু করা এই বিভাগীয় কর্মসূচি ইতোমধ্যে ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর ও বরিশালে সম্পন্ন করেছে দলটি। সবশেষ ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় সমাবেশ করবে দলটি।
দাবি একটাই, শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে গণসমাবেশে মির্জা ফখরুল
ট্যাগস :
দাবি একটাই
জনপ্রিয় সংবাদ

























