ঢাকা ০৫:৪১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নিউমোনিয়ায় প্রতিদিন গড়ে ৬৮ শিশুর মৃত্যু

  • আপডেট সময় : ০১:৫৬:০৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ নভেম্বর ২০২২
  • ১০৮ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে শিশুদের জন্য অত্যন্ত জটিল সমস্যা নিউমোনিয়া। দেশে প্রতি হাজারে ৩৬১ জন শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়। আর পাঁচ বছরের কম বয়সে মারা যাওয়া শিশুদের প্রতি পাঁচজনে একজন নিউমোনিয়া বা ফুসফুসের সংক্রমণজনিত কারণে মারা যায়, যা দেশে মোট শিশু মৃত্যুর ১৮ শতাংশ। এছাড়া জন্মের পাঁচ বছর শেষ হওয়ার আগেই প্রতি হাজারে আটজন শিশু নিউমোনিয়ায় মারা যায়। এমনকি প্রতিরোধযোগ্য রোগটিতে বছরে ২৫ হাজার হিসাবে প্রতিদিন গড়ে ৬৮ জন শিশু মারা যাচ্ছে।
এমন প্রেক্ষাপটে নিউমোনিয়া সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে সারাবিশ্বের মতো দেশে গতকাল শনিবার (১২ নভেম্বর) পালিত হয়েছে বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস। এবছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘নিউমোনিয়া এফেক্টস এভরিওয়ান’ অর্থাৎ ‘নিউমোনিয়া সবাইকে আক্রান্ত করে।’
দেশে করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গুর প্রকোপ যখন জেঁকে বসছে। এমন পরিস্থিতিতে ঋতু পরিবর্তনজনিত কারণে শীতের শুরুতেই ঠান্ডাজনিত রোগ নিউমোনিয়ার প্রকোপ বাড়ছে। বিশেষ করে হাসপাতালগুলোতে নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুদের ভিড় বাড়ছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের বি-ব্লকের সাততলায় নিউমো রিসার্চ সেন্টারের ৭১২ নং নিউমোনিয়া বিশেষায়িত ওয়ার্ডের সবগুলো বিছানাই রোগীতে ভর্তি দেখা যায়। হাসপাতালটিতে ভর্তি এক বছরের শিশু তানিশা। তার মা সুমাইয়া বলেন, শীতের শুরুতেই গ্রামে বেশি ঠান্ডা পড়ছে। শিশুকে যতেœ রাখলেও ১০ দিন আগে ঠান্ডা, কাশি. জ্বর শুরু হয়। শাসকষ্ট হওয়ায় স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে সাতদিনে সাতটি ইনজেকশন ও দৈনিক একবার করে নেবুলাইজার দিয়েও পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছিল না। সে কারণে এখানে নিয়ে আসা। তিনদিন ধরে এখানে ভর্তি করা হয়েছে।
রাজধানী ঢাকায় এখনো শীত পুরোপুরি না এলেও গ্রামাঞ্চলে শীত পড়তে শুরু করেছে। এতে শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডাজনিত নানা সমস্যায়। গ্রাম থেকেই বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছে বলে জানান হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুই দশক ধরে বাংলাদেশের মতো মধ্যম ও স্বল্প আয়ের দেশে শিশুমৃত্যুর প্রথম কারণ নিউমোনিয়া। শীত ছাড়াও অন্য সময়ে বায়ুদূষণের কারণে শহরের বাসিন্দা ও দরিদ্রদের মধ্যে নিউমোনিয়া আক্রান্তের হার তুলনামূলক বেশি। তবে শহর ও গ্রাম উভয় জায়গায় বেশি মারা যাচ্ছে অক্সিজেনের অভাবে।
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর, বি)-এর সহযোগী বিজ্ঞানী ডা. আহমেদ এহসানুর রহমান বলেন, হাইপক্সেমিয়ায় (রক্তে অক্সিজেনের স্বল্পতা) আক্রান্ত যেকোনো রোগীর জন্য চিকিৎসা হিসাবে অক্সিজেন থেরাপি প্রয়োজন। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে শারীরে হাইপক্সেমিয়া ঘটতে পারে। শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত নবজাতক থেকে শুরু করে নিউমোনিয়া, ম্যালেরিয়া, সেপসিস এবং যক্ষ্মা আক্রান্ত শিশু, প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি), হৃদরোগ এবং হাঁপানিসহ আরও অনেক ক্ষেত্রে হতে পারে। এনেস্থেশিয়াসহ প্রায় সব ধরনের বড় অস্ত্রোপচারকালে অজ্ঞান করার সময়ও মেডিকেল অক্সিজেন অপরিহার্য। তিনি বলেন, সারাবিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ৭ কোটি ৩০ লাখ মানুষ নিউমোনিয়াজনিত সমস্যা হাইপোক্সিমিয়ায় আক্রান্ত হয়। যার মধ্যে ৩ কোটি ২ লাখই শিশু। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের অবকাঠামো অনুযায়ী, মাধ্যমিক স্তরের স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্রে নিউমোনিয়ার সমস্যা নিয়ে আসা শিশুর প্রায় ৪২ শতাংশই হাইপোক্সিমিয়ায় ভোগে। তাই জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালে পর্যাপ্ত অক্সিজেনের ব্যবস্থা করলে নিউমোনিয়ায় মৃত্যু কমবে।
বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মুনতা তাবাসসুম বলেন, দেশে নিউমোনিয়া রোগী বেশি। শিশুদের মধ্যে রোগটি আরও বেশি। এবার শীত শুরুর আগেই রোগীর চাপ বাড়ছে। এখানে প্রতিদিন যত রোগী ভর্তি হচ্ছে তার প্রায় ৫০ শতাংশই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। তবে ঢাকার বাইরে থেকে রোগী বেশি আসছে। শিশুদের রক্তে অক্সিজেন স্যাচুরেশনের মাত্রা দেখে তিন ধাপে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছ।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরাও একই ধরনের তথ্য জানিয়ে বলেন, ডেঙ্গু নিয়ে বেশি আলোচনা হলেও নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগীর চাপ বাড়ছে। জরুরি বিভাগে আসা ৫০ শতাংশই নিউনোমিয়া নিয়ে আসছে। প্রত্যেক ওয়ার্ডের অর্ধেক বিছানায় নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছে। হাসপাতালের এপিডিওমোলজিস্ট মাহফুজুর রহমান মামুন বলেন, গত বছর ২ হাজার ২২৭ জন শিশু নিউমোনিয়া নিয়ে ভর্তি হলেও এবার বুধবার (৯ নভেম্বর) পর্যন্ত ২ হাজার ৪৩৪ শিশু ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত বছরের অক্টোবরে ২৩৩ জন ভর্তি ছিল। এ বছরের অক্টোবরে ৩০৮ জন ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে। চলতি নভেম্বরের প্রথম ৯ দিনে ৮৪ জন শিশু নিউনোমোনিয়া নিয়ে ভর্তি হয়েছে।
শিশু বিশেজ্ঞরা বলছেন, শিশুর শ্বাসকষ্ট, জ্বর-কাঁশি, শ্বাসের সময় বুক ভেতরের দিকে দেবে যাওয়া ইত্যাদি নিউমোনিয়ার লক্ষণ। শীতকালে এ রোগের প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কা থাকে। তাই মায়েদের আরও বেশি সচেতন হতে হবে। লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। অপুষ্টির কারণে যেসব শিশুর রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়েছে, যেসব শিশু উচ্চমাত্রার বায়ুদূষণ ও অনিরাপদ পানি পান করছে- তারা অনেক বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে শিশুকে জন্মের পর ছয় মাস শুধু মায়ের বুকের দুধ এবং পরে অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে। পাশাপাশি সময়মতো টিকা দিলে ঝুঁকি কমে।
চিকিৎসাবিজ্ঞান নিয়ে আন্তর্জাতিক গবেষণা পত্রিকা দ্য ল্যানসেটের ২০২৪ সালের মেডিকেল অক্সিজেন নিরাপত্তাবিষয়ক গ্লোবাল হেলথ কমিশনে সহ-সভাপতিত্ব করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এতে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে (আইসিডিডিআর,বি)। এতে কমিশনারদের একজন হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন আইসিডিডিআর,বি’র সিনিয়র ডিরেক্টর (এমসিএইচডি) ডা. শামস এল আরেফিন।
আইসিডিডিআর,বি’র পক্ষ থেকে ডা. আহমেদ এহসানুর রহমান বলেন, এই কমিশন হাইপক্সেমিয়ার ওপর দৃষ্টিপাত করবে বলে আশা করা হচ্ছে। অর্থাৎ কীভাবে অক্সিজেন অ্যাকসেসকে সংজ্ঞায়িত এবং পরিমাপ করতে হবে, কোন অক্সিজেন দ্রবণ কোন কোন পরিস্থিতিতে সবচেয়ে ভালো কাজ করে তা নিয়ে কাজ করবে। এছাড়া কীভাবে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সদিচ্ছা জাগরণের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আনা সম্ভব তা নিয়েও কাজ করা হবে। তিনি বলেন, এই কমিশন স্বাস্থ্যসেবার সব স্তরে যেমন- বাড়ি থেকে হাসপাতাল পর্যন্ত, নবজাতক থেকে বৃদ্ধ, যেসব শারীরিক সমস্যায় হাইপক্সেমিয়ার ঝুঁকি রয়েছে এবং যে উপায়ে অক্সিজেনের অ্যাকসেস বৃদ্ধির মাধ্যমে স্বাস্থ্যব্যবস্থা আরও শক্তিশালী হবে, তার সবকিছু নিয়েই কাজ করবে।
এদিকে নিউমোনিয়া দিবস উপলক্ষে সব হাসপাতালের রেসপিরেটরি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতাল ও লাং ফাউন্ডেশন সচেতনতামূলক বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এদিন সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে চিকিৎসক, নার্স ও রোগীদের নিয়ে র্যালি, আলোচনা সভা ও সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি পালন করা হবে।

নিউমোনিয়ায় প্রতিদিন গড়ে ৬৮ শিশুর মৃত্যু
নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে শিশুদের জন্য অত্যন্ত জটিল সমস্যা নিউমোনিয়া। দেশে প্রতি হাজারে ৩৬১ জন শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়। আর পাঁচ বছরের কম বয়সে মারা যাওয়া শিশুদের প্রতি পাঁচজনে একজন নিউমোনিয়া বা ফুসফুসের সংক্রমণজনিত কারণে মারা যায়, যা দেশে মোট শিশু মৃত্যুর ১৮ শতাংশ। এছাড়া জন্মের পাঁচ বছর শেষ হওয়ার আগেই প্রতি হাজারে আটজন শিশু নিউমোনিয়ায় মারা যায়। এমনকি প্রতিরোধযোগ্য রোগটিতে বছরে ২৫ হাজার হিসাবে প্রতিদিন গড়ে ৬৮ জন শিশু মারা যাচ্ছে।
এমন প্রেক্ষাপটে নিউমোনিয়া সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে সারাবিশ্বের মতো দেশে গতকাল শনিবার (১২ নভেম্বর) পালিত হয়েছে বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস। এবছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘নিউমোনিয়া এফেক্টস এভরিওয়ান’ অর্থাৎ ‘নিউমোনিয়া সবাইকে আক্রান্ত করে।’
দেশে করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গুর প্রকোপ যখন জেঁকে বসছে। এমন পরিস্থিতিতে ঋতু পরিবর্তনজনিত কারণে শীতের শুরুতেই ঠান্ডাজনিত রোগ নিউমোনিয়ার প্রকোপ বাড়ছে। বিশেষ করে হাসপাতালগুলোতে নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুদের ভিড় বাড়ছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের বি-ব্লকের সাততলায় নিউমো রিসার্চ সেন্টারের ৭১২ নং নিউমোনিয়া বিশেষায়িত ওয়ার্ডের সবগুলো বিছানাই রোগীতে ভর্তি দেখা যায়। হাসপাতালটিতে ভর্তি এক বছরের শিশু তানিশা। তার মা সুমাইয়া বলেন, শীতের শুরুতেই গ্রামে বেশি ঠান্ডা পড়ছে। শিশুকে যতেœ রাখলেও ১০ দিন আগে ঠান্ডা, কাশি. জ্বর শুরু হয়। শাসকষ্ট হওয়ায় স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে সাতদিনে সাতটি ইনজেকশন ও দৈনিক একবার করে নেবুলাইজার দিয়েও পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছিল না। সে কারণে এখানে নিয়ে আসা। তিনদিন ধরে এখানে ভর্তি করা হয়েছে।
রাজধানী ঢাকায় এখনো শীত পুরোপুরি না এলেও গ্রামাঞ্চলে শীত পড়তে শুরু করেছে। এতে শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডাজনিত নানা সমস্যায়। গ্রাম থেকেই বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছে বলে জানান হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুই দশক ধরে বাংলাদেশের মতো মধ্যম ও স্বল্প আয়ের দেশে শিশুমৃত্যুর প্রথম কারণ নিউমোনিয়া। শীত ছাড়াও অন্য সময়ে বায়ুদূষণের কারণে শহরের বাসিন্দা ও দরিদ্রদের মধ্যে নিউমোনিয়া আক্রান্তের হার তুলনামূলক বেশি। তবে শহর ও গ্রাম উভয় জায়গায় বেশি মারা যাচ্ছে অক্সিজেনের অভাবে।
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর, বি)-এর সহযোগী বিজ্ঞানী ডা. আহমেদ এহসানুর রহমান বলেন, হাইপক্সেমিয়ায় (রক্তে অক্সিজেনের স্বল্পতা) আক্রান্ত যেকোনো রোগীর জন্য চিকিৎসা হিসাবে অক্সিজেন থেরাপি প্রয়োজন। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে শারীরে হাইপক্সেমিয়া ঘটতে পারে। শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত নবজাতক থেকে শুরু করে নিউমোনিয়া, ম্যালেরিয়া, সেপসিস এবং যক্ষ্মা আক্রান্ত শিশু, প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি), হৃদরোগ এবং হাঁপানিসহ আরও অনেক ক্ষেত্রে হতে পারে। এনেস্থেশিয়াসহ প্রায় সব ধরনের বড় অস্ত্রোপচারকালে অজ্ঞান করার সময়ও মেডিকেল অক্সিজেন অপরিহার্য। তিনি বলেন, সারাবিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ৭ কোটি ৩০ লাখ মানুষ নিউমোনিয়াজনিত সমস্যা হাইপোক্সিমিয়ায় আক্রান্ত হয়। যার মধ্যে ৩ কোটি ২ লাখই শিশু। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের অবকাঠামো অনুযায়ী, মাধ্যমিক স্তরের স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্রে নিউমোনিয়ার সমস্যা নিয়ে আসা শিশুর প্রায় ৪২ শতাংশই হাইপোক্সিমিয়ায় ভোগে। তাই জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালে পর্যাপ্ত অক্সিজেনের ব্যবস্থা করলে নিউমোনিয়ায় মৃত্যু কমবে।
বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মুনতা তাবাসসুম বলেন, দেশে নিউমোনিয়া রোগী বেশি। শিশুদের মধ্যে রোগটি আরও বেশি। এবার শীত শুরুর আগেই রোগীর চাপ বাড়ছে। এখানে প্রতিদিন যত রোগী ভর্তি হচ্ছে তার প্রায় ৫০ শতাংশই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। তবে ঢাকার বাইরে থেকে রোগী বেশি আসছে। শিশুদের রক্তে অক্সিজেন স্যাচুরেশনের মাত্রা দেখে তিন ধাপে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছ।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরাও একই ধরনের তথ্য জানিয়ে বলেন, ডেঙ্গু নিয়ে বেশি আলোচনা হলেও নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগীর চাপ বাড়ছে। জরুরি বিভাগে আসা ৫০ শতাংশই নিউনোমিয়া নিয়ে আসছে। প্রত্যেক ওয়ার্ডের অর্ধেক বিছানায় নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছে। হাসপাতালের এপিডিওমোলজিস্ট মাহফুজুর রহমান মামুন বলেন, গত বছর ২ হাজার ২২৭ জন শিশু নিউমোনিয়া নিয়ে ভর্তি হলেও এবার বুধবার (৯ নভেম্বর) পর্যন্ত ২ হাজার ৪৩৪ শিশু ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত বছরের অক্টোবরে ২৩৩ জন ভর্তি ছিল। এ বছরের অক্টোবরে ৩০৮ জন ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে। চলতি নভেম্বরের প্রথম ৯ দিনে ৮৪ জন শিশু নিউনোমোনিয়া নিয়ে ভর্তি হয়েছে।
শিশু বিশেজ্ঞরা বলছেন, শিশুর শ্বাসকষ্ট, জ্বর-কাঁশি, শ্বাসের সময় বুক ভেতরের দিকে দেবে যাওয়া ইত্যাদি নিউমোনিয়ার লক্ষণ। শীতকালে এ রোগের প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কা থাকে। তাই মায়েদের আরও বেশি সচেতন হতে হবে। লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। অপুষ্টির কারণে যেসব শিশুর রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়েছে, যেসব শিশু উচ্চমাত্রার বায়ুদূষণ ও অনিরাপদ পানি পান করছে- তারা অনেক বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে শিশুকে জন্মের পর ছয় মাস শুধু মায়ের বুকের দুধ এবং পরে অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে। পাশাপাশি সময়মতো টিকা দিলে ঝুঁকি কমে।
চিকিৎসাবিজ্ঞান নিয়ে আন্তর্জাতিক গবেষণা পত্রিকা দ্য ল্যানসেটের ২০২৪ সালের মেডিকেল অক্সিজেন নিরাপত্তাবিষয়ক গ্লোবাল হেলথ কমিশনে সহ-সভাপতিত্ব করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এতে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে (আইসিডিডিআর,বি)। এতে কমিশনারদের একজন হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন আইসিডিডিআর,বি’র সিনিয়র ডিরেক্টর (এমসিএইচডি) ডা. শামস এল আরেফিন।
আইসিডিডিআর,বি’র পক্ষ থেকে ডা. আহমেদ এহসানুর রহমান বলেন, এই কমিশন হাইপক্সেমিয়ার ওপর দৃষ্টিপাত করবে বলে আশা করা হচ্ছে। অর্থাৎ কীভাবে অক্সিজেন অ্যাকসেসকে সংজ্ঞায়িত এবং পরিমাপ করতে হবে, কোন অক্সিজেন দ্রবণ কোন কোন পরিস্থিতিতে সবচেয়ে ভালো কাজ করে তা নিয়ে কাজ করবে। এছাড়া কীভাবে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সদিচ্ছা জাগরণের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আনা সম্ভব তা নিয়েও কাজ করা হবে। তিনি বলেন, এই কমিশন স্বাস্থ্যসেবার সব স্তরে যেমন- বাড়ি থেকে হাসপাতাল পর্যন্ত, নবজাতক থেকে বৃদ্ধ, যেসব শারীরিক সমস্যায় হাইপক্সেমিয়ার ঝুঁকি রয়েছে এবং যে উপায়ে অক্সিজেনের অ্যাকসেস বৃদ্ধির মাধ্যমে স্বাস্থ্যব্যবস্থা আরও শক্তিশালী হবে, তার সবকিছু নিয়েই কাজ করবে।
এদিকে নিউমোনিয়া দিবস উপলক্ষে সব হাসপাতালের রেসপিরেটরি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতাল ও লাং ফাউন্ডেশন সচেতনতামূলক বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এদিন সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে চিকিৎসক, নার্স ও রোগীদের নিয়ে র্যালি, আলোচনা সভা ও সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি পালন করা হবে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

নিউমোনিয়ায় প্রতিদিন গড়ে ৬৮ শিশুর মৃত্যু

আপডেট সময় : ০১:৫৬:০৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ নভেম্বর ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে শিশুদের জন্য অত্যন্ত জটিল সমস্যা নিউমোনিয়া। দেশে প্রতি হাজারে ৩৬১ জন শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়। আর পাঁচ বছরের কম বয়সে মারা যাওয়া শিশুদের প্রতি পাঁচজনে একজন নিউমোনিয়া বা ফুসফুসের সংক্রমণজনিত কারণে মারা যায়, যা দেশে মোট শিশু মৃত্যুর ১৮ শতাংশ। এছাড়া জন্মের পাঁচ বছর শেষ হওয়ার আগেই প্রতি হাজারে আটজন শিশু নিউমোনিয়ায় মারা যায়। এমনকি প্রতিরোধযোগ্য রোগটিতে বছরে ২৫ হাজার হিসাবে প্রতিদিন গড়ে ৬৮ জন শিশু মারা যাচ্ছে।
এমন প্রেক্ষাপটে নিউমোনিয়া সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে সারাবিশ্বের মতো দেশে গতকাল শনিবার (১২ নভেম্বর) পালিত হয়েছে বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস। এবছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘নিউমোনিয়া এফেক্টস এভরিওয়ান’ অর্থাৎ ‘নিউমোনিয়া সবাইকে আক্রান্ত করে।’
দেশে করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গুর প্রকোপ যখন জেঁকে বসছে। এমন পরিস্থিতিতে ঋতু পরিবর্তনজনিত কারণে শীতের শুরুতেই ঠান্ডাজনিত রোগ নিউমোনিয়ার প্রকোপ বাড়ছে। বিশেষ করে হাসপাতালগুলোতে নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুদের ভিড় বাড়ছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের বি-ব্লকের সাততলায় নিউমো রিসার্চ সেন্টারের ৭১২ নং নিউমোনিয়া বিশেষায়িত ওয়ার্ডের সবগুলো বিছানাই রোগীতে ভর্তি দেখা যায়। হাসপাতালটিতে ভর্তি এক বছরের শিশু তানিশা। তার মা সুমাইয়া বলেন, শীতের শুরুতেই গ্রামে বেশি ঠান্ডা পড়ছে। শিশুকে যতেœ রাখলেও ১০ দিন আগে ঠান্ডা, কাশি. জ্বর শুরু হয়। শাসকষ্ট হওয়ায় স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে সাতদিনে সাতটি ইনজেকশন ও দৈনিক একবার করে নেবুলাইজার দিয়েও পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছিল না। সে কারণে এখানে নিয়ে আসা। তিনদিন ধরে এখানে ভর্তি করা হয়েছে।
রাজধানী ঢাকায় এখনো শীত পুরোপুরি না এলেও গ্রামাঞ্চলে শীত পড়তে শুরু করেছে। এতে শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডাজনিত নানা সমস্যায়। গ্রাম থেকেই বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছে বলে জানান হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুই দশক ধরে বাংলাদেশের মতো মধ্যম ও স্বল্প আয়ের দেশে শিশুমৃত্যুর প্রথম কারণ নিউমোনিয়া। শীত ছাড়াও অন্য সময়ে বায়ুদূষণের কারণে শহরের বাসিন্দা ও দরিদ্রদের মধ্যে নিউমোনিয়া আক্রান্তের হার তুলনামূলক বেশি। তবে শহর ও গ্রাম উভয় জায়গায় বেশি মারা যাচ্ছে অক্সিজেনের অভাবে।
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর, বি)-এর সহযোগী বিজ্ঞানী ডা. আহমেদ এহসানুর রহমান বলেন, হাইপক্সেমিয়ায় (রক্তে অক্সিজেনের স্বল্পতা) আক্রান্ত যেকোনো রোগীর জন্য চিকিৎসা হিসাবে অক্সিজেন থেরাপি প্রয়োজন। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে শারীরে হাইপক্সেমিয়া ঘটতে পারে। শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত নবজাতক থেকে শুরু করে নিউমোনিয়া, ম্যালেরিয়া, সেপসিস এবং যক্ষ্মা আক্রান্ত শিশু, প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি), হৃদরোগ এবং হাঁপানিসহ আরও অনেক ক্ষেত্রে হতে পারে। এনেস্থেশিয়াসহ প্রায় সব ধরনের বড় অস্ত্রোপচারকালে অজ্ঞান করার সময়ও মেডিকেল অক্সিজেন অপরিহার্য। তিনি বলেন, সারাবিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ৭ কোটি ৩০ লাখ মানুষ নিউমোনিয়াজনিত সমস্যা হাইপোক্সিমিয়ায় আক্রান্ত হয়। যার মধ্যে ৩ কোটি ২ লাখই শিশু। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের অবকাঠামো অনুযায়ী, মাধ্যমিক স্তরের স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্রে নিউমোনিয়ার সমস্যা নিয়ে আসা শিশুর প্রায় ৪২ শতাংশই হাইপোক্সিমিয়ায় ভোগে। তাই জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালে পর্যাপ্ত অক্সিজেনের ব্যবস্থা করলে নিউমোনিয়ায় মৃত্যু কমবে।
বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মুনতা তাবাসসুম বলেন, দেশে নিউমোনিয়া রোগী বেশি। শিশুদের মধ্যে রোগটি আরও বেশি। এবার শীত শুরুর আগেই রোগীর চাপ বাড়ছে। এখানে প্রতিদিন যত রোগী ভর্তি হচ্ছে তার প্রায় ৫০ শতাংশই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। তবে ঢাকার বাইরে থেকে রোগী বেশি আসছে। শিশুদের রক্তে অক্সিজেন স্যাচুরেশনের মাত্রা দেখে তিন ধাপে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছ।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরাও একই ধরনের তথ্য জানিয়ে বলেন, ডেঙ্গু নিয়ে বেশি আলোচনা হলেও নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগীর চাপ বাড়ছে। জরুরি বিভাগে আসা ৫০ শতাংশই নিউনোমিয়া নিয়ে আসছে। প্রত্যেক ওয়ার্ডের অর্ধেক বিছানায় নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছে। হাসপাতালের এপিডিওমোলজিস্ট মাহফুজুর রহমান মামুন বলেন, গত বছর ২ হাজার ২২৭ জন শিশু নিউমোনিয়া নিয়ে ভর্তি হলেও এবার বুধবার (৯ নভেম্বর) পর্যন্ত ২ হাজার ৪৩৪ শিশু ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত বছরের অক্টোবরে ২৩৩ জন ভর্তি ছিল। এ বছরের অক্টোবরে ৩০৮ জন ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে। চলতি নভেম্বরের প্রথম ৯ দিনে ৮৪ জন শিশু নিউনোমোনিয়া নিয়ে ভর্তি হয়েছে।
শিশু বিশেজ্ঞরা বলছেন, শিশুর শ্বাসকষ্ট, জ্বর-কাঁশি, শ্বাসের সময় বুক ভেতরের দিকে দেবে যাওয়া ইত্যাদি নিউমোনিয়ার লক্ষণ। শীতকালে এ রোগের প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কা থাকে। তাই মায়েদের আরও বেশি সচেতন হতে হবে। লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। অপুষ্টির কারণে যেসব শিশুর রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়েছে, যেসব শিশু উচ্চমাত্রার বায়ুদূষণ ও অনিরাপদ পানি পান করছে- তারা অনেক বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে শিশুকে জন্মের পর ছয় মাস শুধু মায়ের বুকের দুধ এবং পরে অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে। পাশাপাশি সময়মতো টিকা দিলে ঝুঁকি কমে।
চিকিৎসাবিজ্ঞান নিয়ে আন্তর্জাতিক গবেষণা পত্রিকা দ্য ল্যানসেটের ২০২৪ সালের মেডিকেল অক্সিজেন নিরাপত্তাবিষয়ক গ্লোবাল হেলথ কমিশনে সহ-সভাপতিত্ব করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এতে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে (আইসিডিডিআর,বি)। এতে কমিশনারদের একজন হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন আইসিডিডিআর,বি’র সিনিয়র ডিরেক্টর (এমসিএইচডি) ডা. শামস এল আরেফিন।
আইসিডিডিআর,বি’র পক্ষ থেকে ডা. আহমেদ এহসানুর রহমান বলেন, এই কমিশন হাইপক্সেমিয়ার ওপর দৃষ্টিপাত করবে বলে আশা করা হচ্ছে। অর্থাৎ কীভাবে অক্সিজেন অ্যাকসেসকে সংজ্ঞায়িত এবং পরিমাপ করতে হবে, কোন অক্সিজেন দ্রবণ কোন কোন পরিস্থিতিতে সবচেয়ে ভালো কাজ করে তা নিয়ে কাজ করবে। এছাড়া কীভাবে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সদিচ্ছা জাগরণের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আনা সম্ভব তা নিয়েও কাজ করা হবে। তিনি বলেন, এই কমিশন স্বাস্থ্যসেবার সব স্তরে যেমন- বাড়ি থেকে হাসপাতাল পর্যন্ত, নবজাতক থেকে বৃদ্ধ, যেসব শারীরিক সমস্যায় হাইপক্সেমিয়ার ঝুঁকি রয়েছে এবং যে উপায়ে অক্সিজেনের অ্যাকসেস বৃদ্ধির মাধ্যমে স্বাস্থ্যব্যবস্থা আরও শক্তিশালী হবে, তার সবকিছু নিয়েই কাজ করবে।
এদিকে নিউমোনিয়া দিবস উপলক্ষে সব হাসপাতালের রেসপিরেটরি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতাল ও লাং ফাউন্ডেশন সচেতনতামূলক বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এদিন সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে চিকিৎসক, নার্স ও রোগীদের নিয়ে র্যালি, আলোচনা সভা ও সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি পালন করা হবে।

নিউমোনিয়ায় প্রতিদিন গড়ে ৬৮ শিশুর মৃত্যু
নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে শিশুদের জন্য অত্যন্ত জটিল সমস্যা নিউমোনিয়া। দেশে প্রতি হাজারে ৩৬১ জন শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়। আর পাঁচ বছরের কম বয়সে মারা যাওয়া শিশুদের প্রতি পাঁচজনে একজন নিউমোনিয়া বা ফুসফুসের সংক্রমণজনিত কারণে মারা যায়, যা দেশে মোট শিশু মৃত্যুর ১৮ শতাংশ। এছাড়া জন্মের পাঁচ বছর শেষ হওয়ার আগেই প্রতি হাজারে আটজন শিশু নিউমোনিয়ায় মারা যায়। এমনকি প্রতিরোধযোগ্য রোগটিতে বছরে ২৫ হাজার হিসাবে প্রতিদিন গড়ে ৬৮ জন শিশু মারা যাচ্ছে।
এমন প্রেক্ষাপটে নিউমোনিয়া সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে সারাবিশ্বের মতো দেশে গতকাল শনিবার (১২ নভেম্বর) পালিত হয়েছে বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস। এবছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘নিউমোনিয়া এফেক্টস এভরিওয়ান’ অর্থাৎ ‘নিউমোনিয়া সবাইকে আক্রান্ত করে।’
দেশে করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গুর প্রকোপ যখন জেঁকে বসছে। এমন পরিস্থিতিতে ঋতু পরিবর্তনজনিত কারণে শীতের শুরুতেই ঠান্ডাজনিত রোগ নিউমোনিয়ার প্রকোপ বাড়ছে। বিশেষ করে হাসপাতালগুলোতে নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুদের ভিড় বাড়ছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের বি-ব্লকের সাততলায় নিউমো রিসার্চ সেন্টারের ৭১২ নং নিউমোনিয়া বিশেষায়িত ওয়ার্ডের সবগুলো বিছানাই রোগীতে ভর্তি দেখা যায়। হাসপাতালটিতে ভর্তি এক বছরের শিশু তানিশা। তার মা সুমাইয়া বলেন, শীতের শুরুতেই গ্রামে বেশি ঠান্ডা পড়ছে। শিশুকে যতেœ রাখলেও ১০ দিন আগে ঠান্ডা, কাশি. জ্বর শুরু হয়। শাসকষ্ট হওয়ায় স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে সাতদিনে সাতটি ইনজেকশন ও দৈনিক একবার করে নেবুলাইজার দিয়েও পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছিল না। সে কারণে এখানে নিয়ে আসা। তিনদিন ধরে এখানে ভর্তি করা হয়েছে।
রাজধানী ঢাকায় এখনো শীত পুরোপুরি না এলেও গ্রামাঞ্চলে শীত পড়তে শুরু করেছে। এতে শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডাজনিত নানা সমস্যায়। গ্রাম থেকেই বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছে বলে জানান হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুই দশক ধরে বাংলাদেশের মতো মধ্যম ও স্বল্প আয়ের দেশে শিশুমৃত্যুর প্রথম কারণ নিউমোনিয়া। শীত ছাড়াও অন্য সময়ে বায়ুদূষণের কারণে শহরের বাসিন্দা ও দরিদ্রদের মধ্যে নিউমোনিয়া আক্রান্তের হার তুলনামূলক বেশি। তবে শহর ও গ্রাম উভয় জায়গায় বেশি মারা যাচ্ছে অক্সিজেনের অভাবে।
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর, বি)-এর সহযোগী বিজ্ঞানী ডা. আহমেদ এহসানুর রহমান বলেন, হাইপক্সেমিয়ায় (রক্তে অক্সিজেনের স্বল্পতা) আক্রান্ত যেকোনো রোগীর জন্য চিকিৎসা হিসাবে অক্সিজেন থেরাপি প্রয়োজন। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে শারীরে হাইপক্সেমিয়া ঘটতে পারে। শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত নবজাতক থেকে শুরু করে নিউমোনিয়া, ম্যালেরিয়া, সেপসিস এবং যক্ষ্মা আক্রান্ত শিশু, প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি), হৃদরোগ এবং হাঁপানিসহ আরও অনেক ক্ষেত্রে হতে পারে। এনেস্থেশিয়াসহ প্রায় সব ধরনের বড় অস্ত্রোপচারকালে অজ্ঞান করার সময়ও মেডিকেল অক্সিজেন অপরিহার্য। তিনি বলেন, সারাবিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ৭ কোটি ৩০ লাখ মানুষ নিউমোনিয়াজনিত সমস্যা হাইপোক্সিমিয়ায় আক্রান্ত হয়। যার মধ্যে ৩ কোটি ২ লাখই শিশু। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের অবকাঠামো অনুযায়ী, মাধ্যমিক স্তরের স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্রে নিউমোনিয়ার সমস্যা নিয়ে আসা শিশুর প্রায় ৪২ শতাংশই হাইপোক্সিমিয়ায় ভোগে। তাই জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালে পর্যাপ্ত অক্সিজেনের ব্যবস্থা করলে নিউমোনিয়ায় মৃত্যু কমবে।
বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মুনতা তাবাসসুম বলেন, দেশে নিউমোনিয়া রোগী বেশি। শিশুদের মধ্যে রোগটি আরও বেশি। এবার শীত শুরুর আগেই রোগীর চাপ বাড়ছে। এখানে প্রতিদিন যত রোগী ভর্তি হচ্ছে তার প্রায় ৫০ শতাংশই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। তবে ঢাকার বাইরে থেকে রোগী বেশি আসছে। শিশুদের রক্তে অক্সিজেন স্যাচুরেশনের মাত্রা দেখে তিন ধাপে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছ।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরাও একই ধরনের তথ্য জানিয়ে বলেন, ডেঙ্গু নিয়ে বেশি আলোচনা হলেও নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগীর চাপ বাড়ছে। জরুরি বিভাগে আসা ৫০ শতাংশই নিউনোমিয়া নিয়ে আসছে। প্রত্যেক ওয়ার্ডের অর্ধেক বিছানায় নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছে। হাসপাতালের এপিডিওমোলজিস্ট মাহফুজুর রহমান মামুন বলেন, গত বছর ২ হাজার ২২৭ জন শিশু নিউমোনিয়া নিয়ে ভর্তি হলেও এবার বুধবার (৯ নভেম্বর) পর্যন্ত ২ হাজার ৪৩৪ শিশু ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত বছরের অক্টোবরে ২৩৩ জন ভর্তি ছিল। এ বছরের অক্টোবরে ৩০৮ জন ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে। চলতি নভেম্বরের প্রথম ৯ দিনে ৮৪ জন শিশু নিউনোমোনিয়া নিয়ে ভর্তি হয়েছে।
শিশু বিশেজ্ঞরা বলছেন, শিশুর শ্বাসকষ্ট, জ্বর-কাঁশি, শ্বাসের সময় বুক ভেতরের দিকে দেবে যাওয়া ইত্যাদি নিউমোনিয়ার লক্ষণ। শীতকালে এ রোগের প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কা থাকে। তাই মায়েদের আরও বেশি সচেতন হতে হবে। লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। অপুষ্টির কারণে যেসব শিশুর রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়েছে, যেসব শিশু উচ্চমাত্রার বায়ুদূষণ ও অনিরাপদ পানি পান করছে- তারা অনেক বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে শিশুকে জন্মের পর ছয় মাস শুধু মায়ের বুকের দুধ এবং পরে অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে। পাশাপাশি সময়মতো টিকা দিলে ঝুঁকি কমে।
চিকিৎসাবিজ্ঞান নিয়ে আন্তর্জাতিক গবেষণা পত্রিকা দ্য ল্যানসেটের ২০২৪ সালের মেডিকেল অক্সিজেন নিরাপত্তাবিষয়ক গ্লোবাল হেলথ কমিশনে সহ-সভাপতিত্ব করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এতে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে (আইসিডিডিআর,বি)। এতে কমিশনারদের একজন হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন আইসিডিডিআর,বি’র সিনিয়র ডিরেক্টর (এমসিএইচডি) ডা. শামস এল আরেফিন।
আইসিডিডিআর,বি’র পক্ষ থেকে ডা. আহমেদ এহসানুর রহমান বলেন, এই কমিশন হাইপক্সেমিয়ার ওপর দৃষ্টিপাত করবে বলে আশা করা হচ্ছে। অর্থাৎ কীভাবে অক্সিজেন অ্যাকসেসকে সংজ্ঞায়িত এবং পরিমাপ করতে হবে, কোন অক্সিজেন দ্রবণ কোন কোন পরিস্থিতিতে সবচেয়ে ভালো কাজ করে তা নিয়ে কাজ করবে। এছাড়া কীভাবে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সদিচ্ছা জাগরণের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আনা সম্ভব তা নিয়েও কাজ করা হবে। তিনি বলেন, এই কমিশন স্বাস্থ্যসেবার সব স্তরে যেমন- বাড়ি থেকে হাসপাতাল পর্যন্ত, নবজাতক থেকে বৃদ্ধ, যেসব শারীরিক সমস্যায় হাইপক্সেমিয়ার ঝুঁকি রয়েছে এবং যে উপায়ে অক্সিজেনের অ্যাকসেস বৃদ্ধির মাধ্যমে স্বাস্থ্যব্যবস্থা আরও শক্তিশালী হবে, তার সবকিছু নিয়েই কাজ করবে।
এদিকে নিউমোনিয়া দিবস উপলক্ষে সব হাসপাতালের রেসপিরেটরি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতাল ও লাং ফাউন্ডেশন সচেতনতামূলক বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এদিন সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে চিকিৎসক, নার্স ও রোগীদের নিয়ে র্যালি, আলোচনা সভা ও সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি পালন করা হবে।