করোনা টেস্টে জালিয়াতি ডা. সাবরিনাসহ ৮ আসামির ১১ বছর সাজা
নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনাভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে জে কে জি হেলথ কেয়ারের সিইও আরিফুল হক চৌধুরী ও চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরীসহ আট আসামিকে দ-বিধির পৃথক তিন ধারায় ১১ বছর করে কারাদ- দিয়েছেন আদালত।
গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালত এ আদেশ দেন।
ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লা আবু এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, মামলাটিতে প্রত্যেক আসামিকে দ-বিধির ৪০৩ ধারায় তিন বছর, ৪৬৬ ধারায় চার বছর ও ৪৭১ ধারায় চার বছর; সর্বমোট ১১ বছর কারাদ- দিয়েছেন আদালত। এসব দ- একটি শেষ হলে পরবর্তীটি কার্যকর হবে বলে আদেশে বলা হয়েছে। আলোচিত এই মামলায় রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টায় কারাগার থেকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয় আসামিদের। এরপর তাদের আদালতের হাজত খানায় রাখা হয়। এর আগে, গত ২৯ জুন ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালত উভয়পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য আজকের (১৯ জুলাই) দিন ধার্য করেন। মামলায় কারাদ-প্রাপ্ত অপর আসামিরা হলেন— আবু সাঈদ চৌধুরী, হিমু, তানজিলা, বিপুল, শফিকুল ইসলাম রোমিও ও জেবুন্নেসা। মামলাটিতে মোট ৪০ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। এর আগে, গত বছরের ২০ আগস্ট ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সরাফুজ্জামান আনছারীর আদালত এ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। গত বছরের আগস্টে ঢাকার চিফ ম্যাট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুলফিকার হায়াত মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) গ্রহণ করেন।
২০২০ সালের ৫ আগস্ট ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে ডা. সাবরিনা ও আরিফসহ আট জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন ডিবি পুলিশের পরিদর্শক লিয়াকত আলী। চার্জশিটে ডা. সাবরিনা ও আরিফকে ঘটনার মূলহোতা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অভিযোগপত্রে উল্লেখিত অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে হিমু, তানজিলা ও রোমিও দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
আলোচিত মামলা বলেই এই সাজা, আসামিপক্ষের আইনজীবী : করোনাভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে জে কে জি হেলথ কেয়ারের সিইও আরিফুল হক চৌধুরী ও চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরীসহ আট আসামির ১১ বছর করে কারাদ- দেওয়ার রায়ে ‘অসন্তোষ’ জানিয়েছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহমেদ। মঙ্গলবার রায় ঘোষণা পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, এই মামলায় যে তিনটি ধারায় আদালত সাজা দিয়েছেন, রাষ্ট্রপক্ষ কোনও ধারাই প্রমাণ করতে পারেন নাই। রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে যে কাগজপত্র দাখিল করেছেন তা শুধু ফটোকপি। এ মামলায় যারা ক্ষতিগ্রস্ত বাদী, তারাও আদালতে এসে তাদের বিরুদ্ধে কিছু বলেন নাই বলেও দাবি করেন তিনি। আসামিপক্ষের এই আইনজীবী আরও বলেন, ‘শুধু এই মামলাটি একটি আলোচিত-সমালোচিত মামলা বিধায় আসামিদের এই সাজা দেওয়া হয়েছে। তবে আমরা উচ্চ আদালতে যাবো, আপিল করবো।’
একদিন মানুষ জানবে আমি নির্দোষ, আদালতে সাবরিনা : করোনাভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষায় জালিয়াতির মামলায় দ-বিধির তিন ধারায় মোট ১১ বছরের কারাদ- হওয়ার পর আদালত থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ডা. সাবরিনা বলেছেন, ‘আমার আর কিছু বলার নেই। তবে এটাই জানি আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন। একদিন মানুষ জানবে- আমি নির্দোষ ছিলাম।’
রায় ঘোষণা শেষে আদালত থেকে বের করে নিয়ে যাওয়ার সময় আসামিদের মুখে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। আরেক আসামি শফিকুল ইসলাম রোমিওকে আদালত থেকে বের হওয়ার সময় বলেন, আমরা কারো সাথে প্রতারণা করি নাই। বরং আমরা প্রতারণার শিকার হয়েছি। সত্য একদিন বের হয়ে আসবে। রোমিওর পরেই জে কে জি হেলথ কেয়ারের চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনাকে আদালত থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় গণমাধ্যম কর্মীরা রায়ের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি স্বল্প কথায় জবাব দেন। এরপর পুলিশি কড়া নিরাপত্তা দিয়ে আদালতের হাজত খানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ