নিজস্ব প্রতিবেদক : মূল শহর থেকে দূরের মানুষের আধুনিক চিকিৎসা সেবা দিতে ২০০৬ সালে ঢাকার ধামরাই উপজেলা থেকে ২০ কিলোমিটার দূরের রোয়াইল ইউনিয়নে স্থাপন করা হয় ২০ শয্যার কৃষ্ণনগর হাসপাতাল। তবে এখন পর্যন্ত হাসপাতাল চালুই হয়নি। দীর্ঘদিন পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান যন্ত্রপাতি। হাসপাতালের মূল ভবন ও চিকিৎসকদের আবাসিক ভবনের দরজা-জানালা খুলে পড়ে যাচ্ছে। হাসপাতাল চালু না হওয়ার কারণ হিসেবে কর্মকর্তারা বলছেন, জনবল না থাকায়ই চালু করা যায়নি। তবে সম্প্রতি হাসপাতালের বহির্বিভাগে সপ্তাহে দু-এক দিন চিকিৎসক বসেন। সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও এলাকাবাসীর কাছে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাসপাতালের প্রধান ভবন, চিকিৎসকদের আবাসিক ভবন, গাড়ি রাখার গ্যারেজ ও পানির পাম্প রয়েছে। তবে তা দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থাকায় সেগুলো নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, মূল ফটক খোলা রয়েছে। ভবনের ভেতরে ময়লা জমে আছে। কিছু জানালা খুলে পড়েছে। কিছু জানালার কাঁচ ভেঙে গেছে। মর্গের ভবন ও গ্যারেজে লম্বা ঘাস জন্মেছে। সেখানে ভূতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে। পানির লাইনে জং ধরেছে। হাসপাতাল চালু না হওয়ায় জমিদাতা ও এলাকাবাসী হতাশা প্রকাশ করেন। তারা অবিলম্বে হাসপাতাল চালু করার দাবি জানান।
হাসপাতানের জমিদাতা আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘নামমাত্র দামে ৫৫ শতাংশ জমি হাসপাতালে দিয়েছি। ভবন হয়েছে। আধুনিক যন্ত্র এসেছে। শুধু সেবা চালু হয়নি।’ কৃষ্ণনগর এলাকার বাসিন্দা হাজী সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘যখন হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়, তখন আমরা সবাই এগিয়ে এসেছিলাম। জমি ঠিক করে কাজকর্মে সহযোগিতা করেছি। কিন্তু যে আশায় জমি দিলাম, ১৪-১৫ বছর পার হয়ে গেলো, হাসপাতাল আর চালু হলো না। সপ্তাহে দু’-এক দিন ডাক্তার আসেন, তা কবে আমরাও জানি না। এভাবে সব পড়ে আছে।’ আব্দুর রহমান নামে আরেক ব্যক্তি বলেন, ১৪-১৫ বছর হলো হাসপাতাল নির্মাণ হয়েছে। কিন্তু কোনো রোগী ভর্তি হতে পারে না। কেউ অসুস্থ হলে সেই আগের মতো ধামরাই, সাভার অথবা মানিকগঞ্জে নিয়ে যেতে হয়। জমি নিয়ে ভবন বানিয়ে মাদকাসক্তদের আড্ডার জায়গা বানানো হয়েছে। ধামরাইয়ের রোয়াইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজিম উদ্দিন খান বলেন, সরকারের অর্থে হাসপাতাল হয়েছে। তারা ওষুধ ও জনবল পাঠাবে। কিন্তু হাসপাতাল বন্ধ রয়েছে। এটি চালু থাকলে গরিব মানুষেরা সেবা পেতো। কিন্তু সেটা তো হয়নি। ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নূর রিফফাত আরা বলেন, ওই হাসপাতালের বরাদ্দ নেই। তবুও আমি সিভিল সার্জন স্যারের সঙ্গে কথা বলে কিছু ব্যবস্থা নিয়েছি। বহির্বিভাগ চালানো হচ্ছে। জঙ্গলও পরিষ্কার করা হয়েছে। একটা হাসপাতাল চালাতে হলে জনবলসহ কিছু সাপোর্টিভ বিষয় থাকতে হয়। সেগুলো না হলে হাসপাতাল চালু করা যাবে না। ঢাকা জেলার জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক এ. এস. এম নোমান পাটোয়ারী বলেন, ‘আগের সরকার এরকম অনেক হাসপাতাল করে গেছে। যেগুলো জনবলের অভাবে চালু হয়নি। একটা হাসপাতাল চালু করতে ডাক্তার-নার্স ছাড়াও কর্মকর্তা-কর্মচারী লাগে। স্বাস্থ্য বিভাগে নিয়োগ হচ্ছে না। ২০১০ সালে সবশেষ নিয়োগ হয়। ফলে এরকম হাসপাতালগুলো চালু করা যাচ্ছে না। তবুও আমরা চেষ্টা করছি।’
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ