ঢাকা ০৪:৪০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লোককথা : বরিশালের উজিরপুর থেকে সংগৃহীত

  • আপডেট সময় : ০৬:০৫:৫৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১ নভেম্বর ২০২৪
  • ৯৮ বার পড়া হয়েছে

মোরশেদুল আমিন শাহীন

 

লোকসংস্কৃতি শব্দটি লোক এবং জ্ঞান বা আচারের মিশ্রণ। ১৮৪৬ সালে ইংরেজ উইলিয়াম থমস প্রথম শব্দটি ব্যবহার করেন। যিনি শব্দটিকে সমসাময়িক পরিভাষার প্রতিস্থাপন হিসেবে ‘জনপ্রিয় প্রাচীন নিদর্শন’ বা ‘জনপ্রিয় সাহিত্য’ বোঝাতে ব্যবহার করেছিলেন। শব্দটির দ্বিতীয় অংশ প্রাচীন ইংরেজি লোর বা ‘নির্দেশনা’ থেকে এসেছে। এটি একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর জ্ঞান এবং ঐতিহ্য যা প্রায়ই মৌখিকভাবে নিজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখে।

সময়ের সাথে সাথে লোককথা ও লোকসংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণায়ও বিভিন্নতা তৈরি হয়েছে। একই লোককথা এলাকাভেদে ও বলার ভঙ্গি, বাচনভঙ্গিতে এসেছে পরিবর্তন। তাই এক লোককথা ৫ কিলোমিটার দূরের মানুষের কাছে একটু ভিন্ন রকমভাবে প্রচলিত হতে দেখা যায়।

বর্ণিত লোককথাটির অন্তর্নিহিত তাৎপর্য অত্যন্ত গভীর। মানুষকে তার দৈনন্দিন জীবনের সব কাজেই পরিবেশ-পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনায় এনে চলতে হয়।
লোককথাটি সংগ্রহ করেছেন মোরশেদুল আমিন শাহীন।

১.
‘গোন বুইজ্যা নাও বায়
হ্যারে কয় নাইয়াডি
আসর বুইজ্যা গান গায়
হ্যারে কয় গাইয়াডি।
মোন বুইজ্যা কতা কয়
হ্যারে কয় মাইয়াডি।’ (হস্তিশুন্ড)
২.
‘গোন বুইজ্যা নাও বায়
হ্যারে কয় নাইয়া
আসর বুইজ্যা গান গায়
হ্যারে কয় গাইয়া।
মোন বুইজ্যা কতা কয়
হ্যারে কয় মাইয়া।’ (মশাং)

শব্দার্থ : গোন=নদী-খালে জোয়ার-ভাটার একটি অবস্থা/যেমন দক্ষিণে নৌকা বেয়ে যেতে হলে সেদিকে পানি নামলে/চলছে বৈঠা বাইতে কষ্ট কম হয়। বুইজ্যা=বুঝে, নাও= নৌকা, বায়= বাওয়া, হ্যারে=তারে, নাইয়া/নাইয়াডি= নৌকা বায় যিনি, আসর= গানের আসর, গাইয়া/গাইয়াডি=যিনি গান করেন, মোন=মন, কতা=কথা।

প্রেক্ষাপট: এক কথায় বললে বলতে হয়-পরিস্থিতি ও পরিবেশ বুঝে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত সবার। যিনি নৌকা চালান সেই মাঝিকে অবশ্যই নদী-খালের পানি গোন বুঝে নৌকা চালানো উচিত। উজানে নৌকা চালাতে গেলে সময়-শ্রম দুটোই বেশি ব্যয় হয়।
এখানে একটা কথা ভাবতে হবে-এই লোককথার কথাগুলো বর্তমানকালের নয়। এটা কমপক্ষে (বর্তমান ২০২৪ সাল) ৩০০ বা ৪০০ বা তারও বেশি বছর আগের সময়ের কথা। তখন কোনো ইনজিনের নৌকা বা জলযান ছিল না। মানুষ নিজের শারীরিক শক্তি ব্যয় করে বাদাম টানিয়ে/বৈঠা-লগি দিয়ে জলযান চালাতেন এই বরিশাল অঞ্চলে। তৎকালে গ্রামে-গঞ্জে জারি-সারি, ভাটিয়ালি, পুথি গানের আসর বসতো। এরকম আসর কোথায়, দর্শক কারা তা অনুধাবন করেই গান পরিবেশন করা উচিত শিল্পীর। পূজা মণ্ডপে গিয়ে শিল্পী যদি ইসলামি গান করে তাহলে কী হতে পারে বলুন।
মানুষের মন বুঝে কথা বলা উচিত সবাইকেই। মেয়েরা তার বাবা-মা বা স্বামীর মন বুঝেই কথা বললে সংসারে কোনো ঝামেলা বাধে না। সাংসারিক পরিবেশ থাকে মধুময়।

সংগ্রহকারী : মোরশেদুল আমিন শাহীন
সংগ্রহস্থান: হস্তিশুন্ড, বামরাইল, উজিরপুর, বরিশাল
সংগ্রহকাল: ২০২৪ সাল
মোবাইল :০১৬১৩-৮৮৮৪০০

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

লোককথা : বরিশালের উজিরপুর থেকে সংগৃহীত

আপডেট সময় : ০৬:০৫:৫৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১ নভেম্বর ২০২৪

মোরশেদুল আমিন শাহীন

 

লোকসংস্কৃতি শব্দটি লোক এবং জ্ঞান বা আচারের মিশ্রণ। ১৮৪৬ সালে ইংরেজ উইলিয়াম থমস প্রথম শব্দটি ব্যবহার করেন। যিনি শব্দটিকে সমসাময়িক পরিভাষার প্রতিস্থাপন হিসেবে ‘জনপ্রিয় প্রাচীন নিদর্শন’ বা ‘জনপ্রিয় সাহিত্য’ বোঝাতে ব্যবহার করেছিলেন। শব্দটির দ্বিতীয় অংশ প্রাচীন ইংরেজি লোর বা ‘নির্দেশনা’ থেকে এসেছে। এটি একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর জ্ঞান এবং ঐতিহ্য যা প্রায়ই মৌখিকভাবে নিজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখে।

সময়ের সাথে সাথে লোককথা ও লোকসংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণায়ও বিভিন্নতা তৈরি হয়েছে। একই লোককথা এলাকাভেদে ও বলার ভঙ্গি, বাচনভঙ্গিতে এসেছে পরিবর্তন। তাই এক লোককথা ৫ কিলোমিটার দূরের মানুষের কাছে একটু ভিন্ন রকমভাবে প্রচলিত হতে দেখা যায়।

বর্ণিত লোককথাটির অন্তর্নিহিত তাৎপর্য অত্যন্ত গভীর। মানুষকে তার দৈনন্দিন জীবনের সব কাজেই পরিবেশ-পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনায় এনে চলতে হয়।
লোককথাটি সংগ্রহ করেছেন মোরশেদুল আমিন শাহীন।

১.
‘গোন বুইজ্যা নাও বায়
হ্যারে কয় নাইয়াডি
আসর বুইজ্যা গান গায়
হ্যারে কয় গাইয়াডি।
মোন বুইজ্যা কতা কয়
হ্যারে কয় মাইয়াডি।’ (হস্তিশুন্ড)
২.
‘গোন বুইজ্যা নাও বায়
হ্যারে কয় নাইয়া
আসর বুইজ্যা গান গায়
হ্যারে কয় গাইয়া।
মোন বুইজ্যা কতা কয়
হ্যারে কয় মাইয়া।’ (মশাং)

শব্দার্থ : গোন=নদী-খালে জোয়ার-ভাটার একটি অবস্থা/যেমন দক্ষিণে নৌকা বেয়ে যেতে হলে সেদিকে পানি নামলে/চলছে বৈঠা বাইতে কষ্ট কম হয়। বুইজ্যা=বুঝে, নাও= নৌকা, বায়= বাওয়া, হ্যারে=তারে, নাইয়া/নাইয়াডি= নৌকা বায় যিনি, আসর= গানের আসর, গাইয়া/গাইয়াডি=যিনি গান করেন, মোন=মন, কতা=কথা।

প্রেক্ষাপট: এক কথায় বললে বলতে হয়-পরিস্থিতি ও পরিবেশ বুঝে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত সবার। যিনি নৌকা চালান সেই মাঝিকে অবশ্যই নদী-খালের পানি গোন বুঝে নৌকা চালানো উচিত। উজানে নৌকা চালাতে গেলে সময়-শ্রম দুটোই বেশি ব্যয় হয়।
এখানে একটা কথা ভাবতে হবে-এই লোককথার কথাগুলো বর্তমানকালের নয়। এটা কমপক্ষে (বর্তমান ২০২৪ সাল) ৩০০ বা ৪০০ বা তারও বেশি বছর আগের সময়ের কথা। তখন কোনো ইনজিনের নৌকা বা জলযান ছিল না। মানুষ নিজের শারীরিক শক্তি ব্যয় করে বাদাম টানিয়ে/বৈঠা-লগি দিয়ে জলযান চালাতেন এই বরিশাল অঞ্চলে। তৎকালে গ্রামে-গঞ্জে জারি-সারি, ভাটিয়ালি, পুথি গানের আসর বসতো। এরকম আসর কোথায়, দর্শক কারা তা অনুধাবন করেই গান পরিবেশন করা উচিত শিল্পীর। পূজা মণ্ডপে গিয়ে শিল্পী যদি ইসলামি গান করে তাহলে কী হতে পারে বলুন।
মানুষের মন বুঝে কথা বলা উচিত সবাইকেই। মেয়েরা তার বাবা-মা বা স্বামীর মন বুঝেই কথা বললে সংসারে কোনো ঝামেলা বাধে না। সাংসারিক পরিবেশ থাকে মধুময়।

সংগ্রহকারী : মোরশেদুল আমিন শাহীন
সংগ্রহস্থান: হস্তিশুন্ড, বামরাইল, উজিরপুর, বরিশাল
সংগ্রহকাল: ২০২৪ সাল
মোবাইল :০১৬১৩-৮৮৮৪০০

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ