নিজস্ব প্রতিবেদক : বাসে শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়ার দাবি নিয়ে পরিবহন মালিকদের সঙ্গে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের দ্বিতীয় দিনের বৈঠকেও কোনো সমাধান আসেনি।
গতকাল শনিবার ঢাকার বনানীতে বিআরটিএ কার্যালয়ে দুই ঘণ্টার এ বৈঠকে পরিবহন মালিকরা উল্টো ভর্তুকি দাবি করে বলছেন, ঢাকার বাস মালিকদের বেশিরভাগই ‘গরিব’। টাস্কফোর্স গঠন করে তাদের জন্য ভর্তুকি নির্ধারণ করা হোক। আর এসব বিষয়ে ফয়সালা করতে সময় লাগবে জানিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকতে আহ্বান জানিয়েছে বিআরটিএ।
বৈঠক শেষে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, “২৫ নভেম্বরের বৈঠকের ধারাবাহিকতায় আজ এ বৈঠকহল। পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা অনেকগুলো প্রস্তাব দিয়েছেন। ঢাকা শহরে কত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কত শিক্ষার্থী, ইত্যাদি তথ্য তারা চেয়েছেন।
“হাফ ভাড়া নেওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের আলাদা কোনো পরিচয়পত্র দেওয়া হবে কিনা, সে বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে। পুরো বিষয়টি সুরাহা করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিআরটিএ এবং পরিবহন সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব এসেছে।”
অন্যদিকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির নেতা খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, “ঢাকায় নগর পরিবহনের যে বাসগুলো চলে, তার মালিকদের ৮০ শতাংশই গরিব। একটা বা দুটো বাস চালিয়ে তাদের সংসার চলে। তাদের বাচ্চারাও স্কুল কলেজে যায়। “এ কারণে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের প্রস্তাব হচ্ছে, বাস মালিকদের ক্ষতিপূরণ বা ভর্তুকির বিষয়টি নির্ধারণ করেই হাফ ভাড়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কোন তহবিল থেকে এই ভর্তুকি আসবে সেটিও নির্ধারণ করতে হবে।”
৯ দফা দাবি পূরণে মঙ্গলবার পর্যন্ত সময় দিলো শিক্ষার্থীরা : সড়ককে নিরাপদ করতে নয় দফা দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি পূরণে আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে। গতকাল শনিবার টানা তৃতীয় দিনের মত রাস্তা আটকে বিক্ষোভ দেখিয়ে তারা সড়ক ছেড়েছে আজ রোববার আবার ফিরে আসার ঘোষণা দিয়ে। আগের ঘোষণা অনুযায়ী শনিবার বেলা ১২টার দিকে রাজধানীর আসাদগেইট ও ধানম-ি ২৭ নম্বর এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া উত্তরা হাউজ বিল্ডিং এলাকাতেও বেলা ১১টার দিকে বিক্ষোভ দেখায় একদল শিক্ষার্থী। তাদের পরে বুঝিয়ে সরিয়ে দেয় পুলিশ।
ধানম-ি ২৭ নম্বর মোড়ে সড়ক অবরোধ করা শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ চালিয়ে যায় বেলা আড়াইটা পর্যন্ত। বিক্ষোভ শেষ করে তারা হ্যান্ডমাইকে তাদের নয় দফা দাবি পড়ে শোনায়। আন্দোলনকারীদের একজন প্রতিনিধি পরে মাইকে বলেন, এই নয় দফা দাবি আদায়ে গত বৃহস্পতিবার সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কার্যালয়ে বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন তারা। বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ তাদের কাছে এক সপ্তাহ সময় চেয়েছিল। কিন্তু শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার পর্যন্ত সময় দেবে জানিয়ে আন্দোলনকারীদের ওই প্রতিনিধি বলেন, এই সময়ের মধ্যে তাদের দাবি পূরণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা না হলে ওই দিন দুপুরে রাজধানীর সব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে তারা বিআরটিএ কার্যালয় ঘেরাও করবে। তার আগে রবি ও সোমবার বিক্ষোভ চলবে এবং সড়কে গাড়ির ফিটনেস ও লাইসেন্স পরীক্ষা চলবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয় আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে।
২০১৮ সালে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের নজিরবিহীন আন্দোলনে যে নয় দফা দাবি ছিল, সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা বাস্তবায়ন করেনি জানিয়ে শিক্ষার্থীদের ওই প্রতিনিধি বলেন, এবার দাবি আদায় না হলে মঙ্গলবার তারা নতুন কর্মসূচি দেবেন।
ডিজেলের দাম ২৩ শতাংশ বাড়ানোর পর পরিবহন মালিকদের চাপে সরকার বাসের ভাড়া ২৭ শতাংশ বাড়ায়। এর পর থেকেই বাসে অর্ধেক ভাড়া দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন করে আসছে শিক্ষার্থীরা।
গত বুধবার সড়কে সিটি করপোরেশনের গাড়ির ধাক্কায় নটর ডেম কলেজের এক শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর সেই আন্দোলন আরও গতি পায়। বৃহস্পতিবার পথে পথে তাদের বিক্ষোভ-অবরোধে রাজধানী ঢাকা কার্যত অচল হয়ে পড়ে। সেদিন দাবি পূরণের জন্য শনিবার পর্যন্ত সময় দিয়ে রাস্তা ছাড়ে আন্দোলনকারীরা। এরপর শুক্রবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, ১ ডিসেম্বর থেকেই বিআরটিসির বাসে শিক্ষার্থীদের জন্য ‘হাফ’ ভাড়া চালু হবে।
বেসরকারি বাসেও একই নিয়ম চালুর জন্য শনিবার বেলা ১১টার পর পরিবহন মালিক এবং শ্রমিক ফেডারেশনের নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআরটিএ। তবে কোনো সিদ্ধান্তে তারা আসতে পারেননি।
৯ দফা দাবি পূরণে মঙ্গলবার পর্যন্ত সময় দিলো শিক্ষার্থীরা
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ