ঢাকা ০২:২৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫

৮০ শতাংশের ওপরে কার্যকর, ডেঙ্গুর ভ্যাকসিন প্রয়োগে গুরুত্বারোপ

  • আপডেট সময় : ০৬:২২:৪৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ জুলাই ২০২৩
  • ৬৭ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক:দেশে চলমান ডেঙ্গুর প্রকোপ মোকাবিলায় মশা নিধনের পাশাপাশি ডেঙ্গুর ভ্যাকসিন প্রয়োগে মনোনিবেশ এবং এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নীতিনির্ধারকদের তাগিদ দিয়েছেন ভাইরোলজিস্টরা। তারা বলছেন, বর্তমান বিশ্বে দুটি ডেঙ্গু ভ্যাকসিন রয়েছে। যেগুলো ইতোমধ্যে বিশ্বের প্রায় ২০টির মতো দেশে অনুমোদন পেয়েছে। ভ্যাকসিনগুলোর ডেঙ্গু প্রতিরোধ সক্ষমতা ৮০ শতাংশের ওপরে এবং ৯০ শতাংশ ভ্যাকসিনপ্রাপ্ত ব্যক্তি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলেও হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।
গতকাল বুধবার বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে সোসাইটি ফর মেডিকেল ভাইরোলজিস্টস আয়োজিত ‘ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ এবং আমাদের করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তারা এই তাগিদ দেন। অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সী। এসময় তিনি ডেঙ্গু রোগের সাম্প্রতিক চিত্র তুলে ধরেন। একইসঙ্গে তিনি ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে, জনসচেতনতা ও মশক নিধনের পাশাপাশি এই রোগের বিস্তার রোধে সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি ডেঙ্গু ভ্যাকসিন ও বিশ্বব্যাপী এর প্রয়োগ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন। সাইফ উল্লাহ মুন্সী বলেন, বর্তমানে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি কর্তৃক প্রস্তাবিত দুটি ডেঙ্গু ভ্যাকসিন আছে যেগুলো ইতোমধ্যে বিশ্বের প্রায় ২০টির মতো দেশে অনুমোদন পেয়েছে। বাংলাদেশে এই ভ্যাকসিনগুলোর প্রয়োগের বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য নীতিনির্ধারকদেরকে এগিয়ে আসতে হবে। সোসাইটি ফর মেডিকেল ভাইরোলজিস্টের সহ-সভাপতি এবং রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন বলেন, সম্প্রতি ডেঙ্গু রোগীর হার বৃদ্ধি ও রোগীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ার একটি কারণ হতে পারে অতীতের তুলনায় ঘন ঘন নতুন ডেঙ্গু সেরোটাইপের পুনরাবির্ভাব হওয়া। এ কারণে দ্বিতীয়বার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় এবং মারাত্মক শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে। তিনি বলেন, বর্তমানে সিজনাল ফ্লু রোগীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। কাজেই জনগণের উদ্দেশ্যে পরামর্শ হচ্ছে যে কোনো ধরনের জ্বর হলে অবহেলা না করা এবং দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান এবং প্রতিষ্ঠানটির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম তার বক্তব্যে সম্প্রতি করোনা অভিমারির অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যতের যে কোনো ভাইরাসঘটিত অতিমারি মোকাবেলা করতে একটি জাতীয় ভাইরোলজি ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। এসময় সংগঠনটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. কাজী জুলফিকার মামুন বলেন, ২০০০ সালে ডেঙ্গু জ্বর ঢাকায় ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে। মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনা এবং কিছু আকস্মিক মৃত্যু সাধারণ জনগণের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। ডেঙ্গু জ্বর বলতে অনেকেই নিশ্চিত মৃত্যু মনে করতে থাকেন। তিনি বলেন, ডেঙ্গুতে জ্বর সাধারণত ৫ থেকে ৬ দিন থাকে এবং তারপর জ্বর সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়। জ্বর কমে গেলে বা ভালো হয়ে গেলে অনেক মনে করেন, রোগ সম্পূর্ণ ভালো হয়ে গেছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, ডেঙ্গু জ্বরে মারাত্মক সমস্যা হওয়ার সময় আসলে এটাই। এ সময় রক্তে প্লাটিলেট সংখ্যা কমে যায় এবং রক্তক্ষরণসহ নানা রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। জ্বর কমে যাওয়ার পরবর্তী কিছুদিনকে তাই বলা হয় ‘ক্রিটিক্যাল পিরিয়ড’। এ সময়টিতে সবার সচেতন থাকা এবং ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। এসময় রক্তের সিবিসি এবং প্লাটিলেট পরীক্ষা করা যথেষ্ট। ডা. জুলফিকার মামুন আরও বলেন, আমাদের ডেঙ্গু রোগ নির্ণয় করার ক্ষেত্রে ডেঙ্গু এনএস-১ এন্টিজেন এবং ডেঙ্গু অ্যান্টিবডি পরীক্ষার ফলাফল সতর্কতার সঙ্গে বিশ্লেষণ করতে হবে। তাই এই রোগটির বিস্তার প্রতিরোধে একদিকে যেমন জনসচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন ঠিক তেমনিভাবে রোগের উপসর্গ বুঝে ঠিক সময়টিতে ডেঙ্গু শনাক্তকরণ পরীক্ষাটি করা উচিত। যেন সংক্রমিত রোগীকে দ্রুত শনাক্ত করে চিকিৎসার আওতায় আনা যায়।

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

প্রধান উপদেষ্টা হতাশ-ক্ষুব্ধ, ‘পদত্যাগ’ নিয়ে আলোচনা

৮০ শতাংশের ওপরে কার্যকর, ডেঙ্গুর ভ্যাকসিন প্রয়োগে গুরুত্বারোপ

আপডেট সময় : ০৬:২২:৪৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ জুলাই ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক:দেশে চলমান ডেঙ্গুর প্রকোপ মোকাবিলায় মশা নিধনের পাশাপাশি ডেঙ্গুর ভ্যাকসিন প্রয়োগে মনোনিবেশ এবং এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নীতিনির্ধারকদের তাগিদ দিয়েছেন ভাইরোলজিস্টরা। তারা বলছেন, বর্তমান বিশ্বে দুটি ডেঙ্গু ভ্যাকসিন রয়েছে। যেগুলো ইতোমধ্যে বিশ্বের প্রায় ২০টির মতো দেশে অনুমোদন পেয়েছে। ভ্যাকসিনগুলোর ডেঙ্গু প্রতিরোধ সক্ষমতা ৮০ শতাংশের ওপরে এবং ৯০ শতাংশ ভ্যাকসিনপ্রাপ্ত ব্যক্তি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলেও হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।
গতকাল বুধবার বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে সোসাইটি ফর মেডিকেল ভাইরোলজিস্টস আয়োজিত ‘ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ এবং আমাদের করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তারা এই তাগিদ দেন। অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সী। এসময় তিনি ডেঙ্গু রোগের সাম্প্রতিক চিত্র তুলে ধরেন। একইসঙ্গে তিনি ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে, জনসচেতনতা ও মশক নিধনের পাশাপাশি এই রোগের বিস্তার রোধে সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি ডেঙ্গু ভ্যাকসিন ও বিশ্বব্যাপী এর প্রয়োগ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন। সাইফ উল্লাহ মুন্সী বলেন, বর্তমানে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি কর্তৃক প্রস্তাবিত দুটি ডেঙ্গু ভ্যাকসিন আছে যেগুলো ইতোমধ্যে বিশ্বের প্রায় ২০টির মতো দেশে অনুমোদন পেয়েছে। বাংলাদেশে এই ভ্যাকসিনগুলোর প্রয়োগের বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য নীতিনির্ধারকদেরকে এগিয়ে আসতে হবে। সোসাইটি ফর মেডিকেল ভাইরোলজিস্টের সহ-সভাপতি এবং রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন বলেন, সম্প্রতি ডেঙ্গু রোগীর হার বৃদ্ধি ও রোগীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ার একটি কারণ হতে পারে অতীতের তুলনায় ঘন ঘন নতুন ডেঙ্গু সেরোটাইপের পুনরাবির্ভাব হওয়া। এ কারণে দ্বিতীয়বার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় এবং মারাত্মক শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে। তিনি বলেন, বর্তমানে সিজনাল ফ্লু রোগীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। কাজেই জনগণের উদ্দেশ্যে পরামর্শ হচ্ছে যে কোনো ধরনের জ্বর হলে অবহেলা না করা এবং দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান এবং প্রতিষ্ঠানটির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম তার বক্তব্যে সম্প্রতি করোনা অভিমারির অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যতের যে কোনো ভাইরাসঘটিত অতিমারি মোকাবেলা করতে একটি জাতীয় ভাইরোলজি ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। এসময় সংগঠনটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. কাজী জুলফিকার মামুন বলেন, ২০০০ সালে ডেঙ্গু জ্বর ঢাকায় ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে। মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনা এবং কিছু আকস্মিক মৃত্যু সাধারণ জনগণের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। ডেঙ্গু জ্বর বলতে অনেকেই নিশ্চিত মৃত্যু মনে করতে থাকেন। তিনি বলেন, ডেঙ্গুতে জ্বর সাধারণত ৫ থেকে ৬ দিন থাকে এবং তারপর জ্বর সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়। জ্বর কমে গেলে বা ভালো হয়ে গেলে অনেক মনে করেন, রোগ সম্পূর্ণ ভালো হয়ে গেছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, ডেঙ্গু জ্বরে মারাত্মক সমস্যা হওয়ার সময় আসলে এটাই। এ সময় রক্তে প্লাটিলেট সংখ্যা কমে যায় এবং রক্তক্ষরণসহ নানা রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। জ্বর কমে যাওয়ার পরবর্তী কিছুদিনকে তাই বলা হয় ‘ক্রিটিক্যাল পিরিয়ড’। এ সময়টিতে সবার সচেতন থাকা এবং ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। এসময় রক্তের সিবিসি এবং প্লাটিলেট পরীক্ষা করা যথেষ্ট। ডা. জুলফিকার মামুন আরও বলেন, আমাদের ডেঙ্গু রোগ নির্ণয় করার ক্ষেত্রে ডেঙ্গু এনএস-১ এন্টিজেন এবং ডেঙ্গু অ্যান্টিবডি পরীক্ষার ফলাফল সতর্কতার সঙ্গে বিশ্লেষণ করতে হবে। তাই এই রোগটির বিস্তার প্রতিরোধে একদিকে যেমন জনসচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন ঠিক তেমনিভাবে রোগের উপসর্গ বুঝে ঠিক সময়টিতে ডেঙ্গু শনাক্তকরণ পরীক্ষাটি করা উচিত। যেন সংক্রমিত রোগীকে দ্রুত শনাক্ত করে চিকিৎসার আওতায় আনা যায়।