ঢাকা ০২:৩৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫

৬ দিনে রিজার্ভ কমলো আরও ৩০ কোটি ডলার

  • আপডেট সময় : ০১:৫৪:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩
  • ৭০ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ সংবাদদাতা : দিন যত যাচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ততই পতন হচ্ছে। গত ২০ সেপ্টেম্বর থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছয় দিনে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার নিট রিজার্ভ কমেছে ৩০ কোটি ডলার। গতকাল বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, নিট রিজার্ভ ৩০ কোটি ডলার কমে ২ হাজার ১১৫ কোটি ডলারে নেমেছে। ২০ সেপ্টেম্বর নিট রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ১৪৫ কোটি ডলার। এছাড়া মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত গ্রস রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৭০৫ কোটি ডলার। ২০ সেপ্টেম্বর গ্রস রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৭৩৩ কোটি ডলার। অর্থাৎ এই ছয় দিনে রিজার্ভ কমেছে ২৮ কোটি ডলার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে আসার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অব্যাহতভাবে কমছে। এছাড়া সা¤প্রতিক সময়ে বকেয়া ঋণ পরিশোধ ও আমদানি দেনা মেটানোর কারণে রিজার্ভ থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ডলার দিতে হচ্ছে। এতেও রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। এদিকে অব্যাহতভাবে কমছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। চলতি সেপ্টেম্বরের প্রথম ২২ দিনে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১০৫ কোটি ৪৯ লাখ ডলার। নিকট অতীতে কোনও মাসে এত কম রেমিট্যান্স প্রবাহ দেখা যায়নি। যদিও গত আড়াই বছরে ২৩ লাখ ৭০ হাজার ৬৫৮ জন বাংলাদেশি নতুন করে বিদেশের শ্রমবাজারে যুক্ত হয়েছেন। ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, মাসের শেষ আট দিনে সর্বোচ্চ ৪০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স আসতে পারে। সেটি হলে সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্সের পরিমাণ হতে পারে ১৪৫ কোটি ডলার। এটি হবে গত তিন বছরের মধ্যে এক মাসে সর্বনি¤œ রেমিট্যান্স প্রবাহ। দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়ার শুরুটা গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে। ওই সময় আন্তঃব্যাংক লেনদেনে ডলারের সর্বোচ্চ দর বেঁধে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে ব্যাংকগুলোয় বিশেষ পরিদর্শন চালায় বাংলাদেশ ব্যাংক। বেশি দামে ডলার বেচাকেনায় সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে দেশি-বিদেশি ছয়টি ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানকে অপসারণও করা হয়েছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এসব তৎপরতার মুখেই গত বছরের সেপ্টেম্বরে এক ধাক্কায় প্রায় ৫০ কোটি ডলার কমে যায়। ২০২২ সালের আগস্টে ২০৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স দেশে এলেও সেপ্টেম্বরে তা ১৫৩ কোটি ডলারে নেমে আসে। এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখনই ডলারের বিনিময় হার নিয়ে কঠোর হয়েছে, তখনই বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রবাহে বিপর্যয় দেখা গেছে। বর্তমানেও বেশি দামে ডলার বেচাকেনা ঠেকাতে দেশের ব্যাংকগুলোয় বিশেষ পরিদর্শন চালাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই মধ্যে ১০টি ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চলমান বিশেষ অভিযানের মধ্যেই রেমিট্যান্স প্রবাহ উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শুরু থেকেই দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৩৫৭ কোটি ২৬ লাখ ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ কম। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে ৪১৩ কোটি ৩২ লাখ ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছিল। ওই সময় রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি ছিল ১২ শতাংশেরও বেশি। এদিকে রেমিট্যান্স নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করে প্রবাসী আয় বাড়াতে বিশেষজ্ঞদের উদ্ভাবনী পরামর্শ চেয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সোনারগাঁও হোটেলে পিএফএম সামিট-২০২৩ এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, বর্তমানে অনেক লোক দেশের বাইরে যাচ্ছেন। তবে সেই অনুপাতে রেমিট্যান্স বাড়ছে না। তাই প্রবাসী আয় বাড়াতে কাঠামোগত সংস্কারের পথ খুঁজছে সরকার। এজন্য সংশ্লিষ্টদেরকে উদ্ভাবনী পরামর্শ নিয়ে এগিয়ে আসার আহŸান জানান অর্থমন্ত্রী। তার আশা, প্রবাসী আয় বাড়ানো গেলে অর্থনীতির চলমান সব সমস্যা সমাধান সম্ভব।

 

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

৬ দিনে রিজার্ভ কমলো আরও ৩০ কোটি ডলার

আপডেট সময় : ০১:৫৪:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩

বিশেষ সংবাদদাতা : দিন যত যাচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ততই পতন হচ্ছে। গত ২০ সেপ্টেম্বর থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছয় দিনে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার নিট রিজার্ভ কমেছে ৩০ কোটি ডলার। গতকাল বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, নিট রিজার্ভ ৩০ কোটি ডলার কমে ২ হাজার ১১৫ কোটি ডলারে নেমেছে। ২০ সেপ্টেম্বর নিট রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ১৪৫ কোটি ডলার। এছাড়া মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত গ্রস রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৭০৫ কোটি ডলার। ২০ সেপ্টেম্বর গ্রস রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৭৩৩ কোটি ডলার। অর্থাৎ এই ছয় দিনে রিজার্ভ কমেছে ২৮ কোটি ডলার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে আসার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অব্যাহতভাবে কমছে। এছাড়া সা¤প্রতিক সময়ে বকেয়া ঋণ পরিশোধ ও আমদানি দেনা মেটানোর কারণে রিজার্ভ থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ডলার দিতে হচ্ছে। এতেও রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। এদিকে অব্যাহতভাবে কমছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। চলতি সেপ্টেম্বরের প্রথম ২২ দিনে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১০৫ কোটি ৪৯ লাখ ডলার। নিকট অতীতে কোনও মাসে এত কম রেমিট্যান্স প্রবাহ দেখা যায়নি। যদিও গত আড়াই বছরে ২৩ লাখ ৭০ হাজার ৬৫৮ জন বাংলাদেশি নতুন করে বিদেশের শ্রমবাজারে যুক্ত হয়েছেন। ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, মাসের শেষ আট দিনে সর্বোচ্চ ৪০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স আসতে পারে। সেটি হলে সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্সের পরিমাণ হতে পারে ১৪৫ কোটি ডলার। এটি হবে গত তিন বছরের মধ্যে এক মাসে সর্বনি¤œ রেমিট্যান্স প্রবাহ। দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়ার শুরুটা গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে। ওই সময় আন্তঃব্যাংক লেনদেনে ডলারের সর্বোচ্চ দর বেঁধে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে ব্যাংকগুলোয় বিশেষ পরিদর্শন চালায় বাংলাদেশ ব্যাংক। বেশি দামে ডলার বেচাকেনায় সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে দেশি-বিদেশি ছয়টি ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানকে অপসারণও করা হয়েছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এসব তৎপরতার মুখেই গত বছরের সেপ্টেম্বরে এক ধাক্কায় প্রায় ৫০ কোটি ডলার কমে যায়। ২০২২ সালের আগস্টে ২০৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স দেশে এলেও সেপ্টেম্বরে তা ১৫৩ কোটি ডলারে নেমে আসে। এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখনই ডলারের বিনিময় হার নিয়ে কঠোর হয়েছে, তখনই বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রবাহে বিপর্যয় দেখা গেছে। বর্তমানেও বেশি দামে ডলার বেচাকেনা ঠেকাতে দেশের ব্যাংকগুলোয় বিশেষ পরিদর্শন চালাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই মধ্যে ১০টি ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চলমান বিশেষ অভিযানের মধ্যেই রেমিট্যান্স প্রবাহ উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শুরু থেকেই দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৩৫৭ কোটি ২৬ লাখ ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ কম। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে ৪১৩ কোটি ৩২ লাখ ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছিল। ওই সময় রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি ছিল ১২ শতাংশেরও বেশি। এদিকে রেমিট্যান্স নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করে প্রবাসী আয় বাড়াতে বিশেষজ্ঞদের উদ্ভাবনী পরামর্শ চেয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সোনারগাঁও হোটেলে পিএফএম সামিট-২০২৩ এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, বর্তমানে অনেক লোক দেশের বাইরে যাচ্ছেন। তবে সেই অনুপাতে রেমিট্যান্স বাড়ছে না। তাই প্রবাসী আয় বাড়াতে কাঠামোগত সংস্কারের পথ খুঁজছে সরকার। এজন্য সংশ্লিষ্টদেরকে উদ্ভাবনী পরামর্শ নিয়ে এগিয়ে আসার আহŸান জানান অর্থমন্ত্রী। তার আশা, প্রবাসী আয় বাড়ানো গেলে অর্থনীতির চলমান সব সমস্যা সমাধান সম্ভব।