বগুড়া প্রতিনিধি : অতি মুনাফা লোভীদের ভিড়ে মানবিকতার পরিচয় দিচ্ছেন বগুড়ার নজরুল ইসলাম কালু কসাই। বগুড়ার হাট-বাজারগুলোতে গরুর মাংসের কেজি ৭০০ থেকে ৭২০ টাকা। সেখানে তিনি কেজি প্রতি মাংস বিক্রি করছেন ৫৮০ টাকায়। সবাই যেন মাংস কিনতে পারেন- সে কারণেই তার এমন উদ্যোগ। দাম কম হওয়ায় শহরের সাতমাথা থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে গাবতলী উপজেলার নশিপুর ইউনিয়নের কদমতলী তিনমাথা সিএনজি স্ট্যান্ড এলাকায় তার দোকান থেকে মাংস নিতে ভিড় করছেন সাধারণ মানুষ।
কালু কসাই বলছেন, বর্তমান বাজার অনুযায়ী মাংসের দাম ৬০০ থেকে ৬২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করলেও কারো লোকসান হবে না। কালু কসাইয়ের দোকান ঘুরে দেখা গেছে সেখানে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। খুব সকাল থেকেই ক্রেতারা মাংস কিনতে জড়ো হয়েছেন সেখানে। দোকানে ৪টি গাছের গুঁড়িতে মাংস কাটা হচ্ছে, এরপরেও ক্রেতাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা মাংস পেতে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। ক্রেতাদের অধৈর্যপনা এবং দোকান ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা না থাকায় ক্রেতাদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কালু কসাই এবং তার ছেলে হোসাইন আল মাহমুদকে। মাংস কিনতে আসা বগুড়া শহরের ভাটকান্দি গ্রামের আমজাদ হোসেন বলেন, বকশীবাজারের চেয়ে কালু কসাইয়ের দোকানে মাংসের দাম কম- তাই তিনি মাংস সেখান থেকেই কেনেন। গত ক’দিন আগেও তিনি ৫৫০ টাকায় মাংস কিনে নিয়ে গেছেন। তবে আজকে এসে দেখছেন ৫৮০ টাকা।
সদর উপজেলার সাবগ্রাম থেকে নশিপুরে মাংস কিনতে গেছেন শাহ আলম হোসেন। তিনি বলেন, ফেসবুকে ৫৮০ টাকায় মাংস বিক্রির খবর জানতে পেরে তিনি মাংস কিনতে এসেছেন। আজকেই প্রথম এলেন তিনি। অনেক সকালে এসেছেন তিনি। ৭ কেজি মাংস কিনবেন। নশিপুর বালুপাড়া গ্রামের কোরবান আলী বলেন, দাম কম হওয়ায় বগুড়া জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে মাংস কিনতে এখানে ক্রেতারা ভিড় করছে। সিরাজগঞ্জ থেকেও অনেক ক্রেতা এসেছেন ইতোপূর্বে। বিষয়টি খুব ভালো লাগছে। কারণ, বাজারে মাংসের যা দাম তাতে গরিব মানুষদের সাধ্যের বাইরে চলে গেছে। কালু কসাই মাংসের দাম কম রাখায় গরিব মানুষ আধা কেজি হলেও মাংস কিনতে পারছে। কালু কসাইয়ের দোকানে সব সময়ই মাংসের দাম কম। যখন বাজারে ৬০০ টাকা কেজি ছিল, তখনও তিনি কেজিতে ৫০ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে কম রেখেছেন। কসাই নজরুল ইসলাম কালু জানান, ২৫ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি এই পেশার সঙ্গে জড়িত। গত ১ বছর হলো তিনি এই মোড়ে মাংস বিক্রি শুরু করেছেন। এর আগে তিনি বাগবাড়ী বাজারে মাংস বিক্রি করতেন। কিন্তু সেখানে টোল বাড়ানো নিয়ে দ্বন্দ্বে তিনি হাটে দোকান না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে এই মোড়ে দোকান দিয়ে বসেন। কসাই কালু জানান, হাট থেকে সরে আসার পরেই তিনি অল্প লাভে মাংস বিক্রি শুরু করেন। সে সময় হাটে মাংস বিক্রি হতো ৫৫০ টাকায় আর শহরে ৬০০ টাকায়। তখন তিনি ৫০০ টাকায় বিক্রি শুরু করেন। এই কথা এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে তার দোকানে ক্রেতা বাড়তে থাকে। দিনে এখন ৪/৫ গরু বিক্রি হয়। তার দোকান চারজন কর্মচারী রয়েছে- যাদের মজুরি বাদ দিয়ে গরুপ্রতি ৫০০ টাকা দিতে হয়। এছাড়া তার বড় ছেলে আবু হাসান মাঝেমধ্যে দোকানে এসে তার বাবাকে সহযোগিতা করেন।
তিনি আরো বলেন, যারা মাংস কিনে খাবে শুধু তাদের কাছেই তিনি মাংস বিক্রি করেন। কিন্তু কেউ কিনে নিয়ে ব্যবসা করবে, হোটেলে রান্না করে বিক্রি করবে তাদের কাছে তিনি বিক্রি করেন না। অন্যদের চেয়ে এত অল্প দামে বিক্রি করছেন কীভাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অন্যরা মাংস আলাদা করে বিক্রি করেন। কলিজা, ফুসফুস, মাথা, তেল এগুলোতো আলাদা করে বিক্রি করেন। সেগুলোর দাম তো মাংসের চেয়ে কম। আর আমি তো কলিজা, ফুসফুস, মাথা, তেল সব মিক্সিং করেই বিক্রি করি যে কারণে একটু কমে বিক্রি করতে পারছি। বর্তমান গরুর বাজার অনুযায়ী মাংসের কেজি কত টাকা হলে ব্যবসায়ীরা লাভে থাকবে- জানতে চাইলে কসাই কালু বলেন, দাম ৬০০ থেকে ৬২০ টাকা কেজি হলেই হবে। যেটা এখন বাজারে চলছে সেটা অতিরিক্ত বেশি। অতিরিক্ত মুনাফার লোভ করছে, তারা গরু প্রতি ৫ হাজার ১০ হাজার টাকা লাভ করতে চাচ্ছে। কিন্তু আমার এত লোভ নেই। আমি চাচ্ছি, সবাই মাংস খেতে পারুক। কর্মচারীদের বেতন দিয়ে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা লাভ হলেই যথেষ্ট। তিনি কম দামে মাংস বিক্রি করছেন- এতে তাদের সমিতি থেকে কোন চাপ আসছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সমিতি থেকে কোন চাপ নেই। তবে হাটের ইজারাদাররা চাপ সৃষ্টি করছে যে, আবার হাটে দোকান করতে হবে। কিন্তু আমি হাট প্রতি ৪ হাজার টাকা খাজনা দিয়ে দোকান করতে পারব না জানিয়ে দিয়েছি। গাবতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আফতাবুজ্জামান-আল-ইমরান বলেন, হাট এলাকার বাইরে কেউ কম লাভে মাংস বিক্রি করতে চাইলে তাকে বাধা দেওয়ার এখতিয়ার কোনো ইজারাদার বা অন্য ব্যবসায়ীদের নেই। নজরুল সততার সঙ্গে কম লাভে মাংস বিক্রি করলে উপজেলা প্রশাসন তাকে সব ধরনের সহযোগিতা দেবে।
৫৮০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি করে ভাইরাল
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ