ক্রীড়া ডেস্ক : আগের ম্যাচেই ইনিংস ব্যবধানে হার। ওভাল টেস্টেও প্রথম ইনিংস শেষে পিছিয়ে ছিল ভারত। এরপর যেন বদলে গেল পুরো দল। ব্যাটিং-বোলিংয়ে ঘুরে দাঁড়াল প্রবল দাপটে। ইংল্যান্ডকে রান তাড়ার রেকর্ড গড়ার চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে ৫০ বছর পর এই মাঠে জয়ের স্বাদ পেল সফরকারীরা। চতুর্থ টেস্টের শেষ দিনে যে রোমাঞ্চের অপেক্ষায় ছিল ক্রিকেট বিশ্ব, ইংল্যান্ডের ব্যাটিং ব্যর্থতায় তা দেখা হলো না। দুর্দান্ত বোলিংয়ের প্রদর্শনীতে ভারত ম্যাচটি জিতে নিল ১৫৭ রানে। দা ওভালে দলটির একমাত্র জয় এসেছিল ১৯৭১ সালে, ৪ উইকেটে। সেটাই ছিল ইংল্যান্ডের মাটিতে ভারতের প্রথম জয়। পাঁচ ম্যাচের সিরিজে এখন ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে বিরাট কোহলির দল। ইংল্যান্ডের মাটিতে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার কোনো সিরিজে দুটি টেস্ট জিতল ভারত। প্রথম জিতেছিল ১৯৮৬ সালে। ম্যাচের শুরুটা স্বস্তির ছিল না তাদের। প্রথম ইনিংসে গুটিয়ে যায় তারা ১৯১ রানে। ইংল্যান্ড জবাবে করে ২৯০ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৬৬ করে স্বাগতিকদের ৩৬৮ রানের লক্ষ্য দেয় ভারত। পঞ্চম দিনের তৃতীয় সেশনে জো রুটের দলকে তারা থামিয়ে দেয় ২১০ রানে।
দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে জনি বেয়ারস্টোকে বোল্ড করার পর জাসপ্রিত বুমরাহকে ঘিরে সতীর্থদের উল্লাস।দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে জনি বেয়ারস্টোকে বোল্ড করার পর জাসপ্রিত বুমরাহকে ঘিরে সতীর্থদের উল্লাস।৯৯ রানে পিছিয়ে থাকার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতকে ম্যাচের লাগাম এনে দেয়ার কারিগর ছিলেন রোহিত শর্মা। ১২৭ রানের ইনিংস খেলা ভারত ওপেনার জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। বল হাতে আলো ছড়িয়ে দলের জয়ে অবদান রাখেন জাসপ্রিত বুমরাহ, রবীন্দ্র জাদেজা, শার্দুল ঠাকুররা। তবে দুর্দান্ত বোলিংয়ে ২২ ওভারে কেবল ২৭ রান নিয়ে ২ উইকেট নেওয়া বুমরাহই শেষ ইনিংসের সেরা বোলার। চতুর্থ ইনিংসে ৩৬০ রান তাড়া করে কখনও না জেতা ইংল্যান্ডের সামনে এবার অবশ্য ছিল রেকর্ড গড়ার সুযোগ। শেষ দিন তারা শুরু করে বিনা উইকেটে ৭৭ রান নিয়ে। লক্ষ্য তখনও ২৯১ রান দূরে। কিন্তু রান তাড়ায় ভালো শুরু পাওয়া ইংল্যান্ড এদিন উইকেট হারিয়ে বসে প্রথমেই। আগের দিনের অপরাজিত ব্যাটসম্যান জো বার্নস ফিফটির পরের বলেই ফিরে যান। ভাঙে ১০০ রানের উদ্বোধনী জুটি। আরেক ওপেনার হাসিব হামিদের চতুর্থ ফিফটি আসে ১২৩ বলে। দাভিদ মালান ছিলেন সাবধানী। কিন্তু দুর্ভাগ্য সঙ্গী হয় তার। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান রান আউটে কাটা পড়ে দলকে ফেলে দেন চাপে।
রুট ও হামিদ প্রথম সেশনে আর বিপদে পড়তে দেননি দলকে। লাঞ্চ বিরতির পর ধস নামে ইংল্যান্ডের ইনিংসে। ১৯৩ বলে ৬৩ রান করে জাদেজার দারুণ ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে যান হামিদ। স্বাগতিকদের মেরুদ- ভেঙে দেন বুমরাহ। অসাধারণ এক স্পেলের পরপর দুই ওভারে এই পেসার বোল্ড করে দেন অলি পোপ ও কিপার-ব্যাটসম্যান জনি বেয়ারস্টোকে। প্রথম ইনিংসে ফিফটি করা পোপকে ২ রানে ফিরিয়ে ভারতীয় পেসারদের মধ্যে দ্রুততম একশ টেস্ট উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েন বুমরাহ। ২৫ ম্যাচে একশ উইকেট নিয়ে তার আগে এই কীর্তি ছিল কপিল দেবের। বুমরাহ এই মাইলফলকে পা রাখলেন ২৪ ম্যাচে। দলের বিপদে হাল ধরতে পারেননি মইন আলিও। জাদেজার স্পিনে শর্ট লেগে ধরা পড়েন শূন্য রানে। ৪৭ রান তুলতেই ইংল্যান্ড হারিয়ে ফেলে ৬ উইকেট। সেখানেই ম্যাচ হেলে পড়ে ভারতের দিকে। ক্রিস ওকসকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা চালান রুট। দেখেশুনে খেলতে থাকেন দুইজন। মনোযোগ দেন উইকেট ধরে রাখায়। কিন্তু রুটের লড়াই থেমে যায় শার্দুলের এক ডেলিভারিতে। অফ স্টাম্পের বাইরের বল তার ব্যাটের কানায় লেগে আঘাত করে স্টাম্পে। ৩ চারে ৩৬ রান করে ফেরেন ইংলিশ অধিনায়ক। ওকসও এরপর টিকেননি বেশিক্ষণ। চা বিরতির আগে তিনি ফিরে যান উমেশ যাদবের বলে শর্ট মিডউইকেটে ধরা পড়ে। বিরতির পর নতুন বলে বাকি দুই উইকেট দ্রুত তুলে নিয়ে ভারতকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন এই পেসার। সিরিজের পঞ্চম টেস্ট শুরু আগামী শুক্রবার, ম্যানচেস্টারে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
ভারত ১ম ইনিংস : ১৯১
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস : ২৯০
ভারত ২য় ইনিংস : ৪৬৬
ইংল্যান্ড ২য় ইনিংস : (লক্ষ্য ৩৬৮) (আগের দিন ৭৭/০) ৯২.২ ওভারে ২১০ (বার্নস ৫০, হামিদ ৬৩, মালান ৫, রুট ৩৬, পোপ ২, বেয়ারস্টো ০, মইন ০, ওকস ১৮, ওভারটন ১০, রবিনসন ১০*, অ্যান্ডারসন ২; উমেশ ১৮.২-২-৬০-৩, বুমরাহ ২২-৯-২৭-২, জাদেজা ৩০-১১-৫০-২, সিরাজ ১৪-০-৪৪-০, শার্দুল ৮-১-২২-২)।
ফল : ভারত ১৫৭ রানে জয়ী।
সিরিজ : ৫ ম্যাচের সিরিজে ভারত এগিয়ে ২-১ ব্যবধানে।
ম্যান অব দা ম্যাচ : রোহিত শর্মা
৫০ বছর পর ওভালে ভারতের জয়
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ