ঢাকা ১১:৪৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫

৪ মাসে ৫ বিলিয়ন ডলার বিক্রি

  • আপডেট সময় : ১২:১২:৪৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ নভেম্বর ২০২২
  • ৭৮ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাজারের অস্থিরতা কমাতে বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করেই চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে এখন জ্বালানি তেল, সারসহ সরকারের অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকেই কেবল ডলার দেয়া হচ্ছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলো রিজার্ভ থেকে কোনো ডলার পাচ্ছে না। রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রিতে নতুন ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সব মিলিয়ে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম চার মাসেই (জুলাই-অক্টোবর) ৫০০ কোটি (৫ বিলিয়ন) ডলারের বেশি বিক্রি করা হয়েছে। এর ফলে রিজার্ভ আরও কমেছে। গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩৫ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার, যা এক বছর আগের চেয়ে প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলার কম। গত বছরের ২ নভেম্বর রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪৬ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলার। তার আগে ১২ আগস্ট অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছিল।

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় কমায় ব্যাংকগুলোর ডলার সংকট আরও বেড়েছে। ব্যবসায়ী-শিল্পদ্যোক্তাদের চাহিদা অনুযায়ী ঋণপত্র (এলসি) খুলতে পারছে না। শুধু যাদের রপ্তানি আয় আছে ও যারা বড় ব্যবসায়ী, ব্যাংক শুধু তাদের ঋণপত্রই খুলছে। অস্বাভাবিক আমদানি ব্যয়ের লাগাম টানতে গত জুলাইয়ে কয়েকটি পণ্য আমদানিতে শতভাগ মার্জিন আরোপ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ ছাড়া বিলাসপণ্য আমদানি কমাতে শতাধিক পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এরপরও ব্যাংক ঋণপত্র খুলছিল। তবে অক্টোবরে এসে ঋণপত্র খোলা একেবারেই কমিয়ে দিয়েছে।
আমদানি দায় কমাতে নানা উদ্যোগের পরও কাটছে না ডলার সংকট। এর মধ্যে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স কমছে। সেপ্টেম্বরের পর অক্টোবরেও অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই দুই সূচকে নেতিবাচক (নেগেটিভ) প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, এই সেপ্টেম্বরে গত বছরের সেপ্টেম্বরের চেয়ে রেমিট্যান্স কমেছিল প্রায় ১১ শতাংশ। আর অক্টোবরে কমেছে ৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ। অন্যদিকে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যে দেখা যায়, গত সেপ্টেম্বরে গত বছরের সেপ্টেম্বরের চেয়ে রপ্তানি আয় কমেছিল ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ। আর অক্টোবরে কমেছে আরও বেশি ৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ।

এদিকে এই সংকটের সময়েও সরকারি ঋণপত্রের দেনা মেটাতে কোনো ব্যাংক যেন ব্যর্থ না হয়, সে জন্য নিয়মিতভাবে ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত বৃহস্পতিবারও কয়েকটি ব্যাংকের কাছে বিক্রি করা হয়েছে ২ কোটি ডলারের মতো। এ নিয়ে চলতি অর্থবছরে বিক্রি ৫ বিলিয়ন বা ৫০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে, স্থানীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ এই টাকা বাজার থেকে তুলে নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অন্যদিকে চলতি ২০২২ পঞ্জিকা বছরের এ পর্যন্ত রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার। রপ্তানি আয় ও রেমট্যান্স হ্রাস এবং ধারাবাহিকভাবে ডলার বিক্রির ফলে দেশে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ কমেই চলেছে। বৃহস্পতিবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩৫ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার। আগামী সপ্তাহেই এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে (আকু) সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মেয়াদের দেড় বিলিয়ন ডলারের মতো আমদানি বিল পরিশোধ করতে হবে। তখন রিজার্ভ আরও কমে ৩৪ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসবে।
মুদ্রাবাজার স্বাভাবিক রাখতে গত ২০২১-২২ অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে ৭৬২ কোটি (৭.৬২ বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এর বিপরীতে বাজার থেকে ৭০ হাজার কোটি টাকার মতো তুলে নেয়া হয়। অথচ তার আগের অর্থবছরে (২০২০-২১) বাজারে ডলারের সরবরাহ বাড়ায় দর ধরে রাখতে রেকর্ড প্রায় ৮ বিলিয়ন (৮০০ কোটি) ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

৪ মাসে ৫ বিলিয়ন ডলার বিক্রি

আপডেট সময় : ১২:১২:৪৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ নভেম্বর ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাজারের অস্থিরতা কমাতে বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করেই চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে এখন জ্বালানি তেল, সারসহ সরকারের অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকেই কেবল ডলার দেয়া হচ্ছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলো রিজার্ভ থেকে কোনো ডলার পাচ্ছে না। রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রিতে নতুন ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সব মিলিয়ে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম চার মাসেই (জুলাই-অক্টোবর) ৫০০ কোটি (৫ বিলিয়ন) ডলারের বেশি বিক্রি করা হয়েছে। এর ফলে রিজার্ভ আরও কমেছে। গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩৫ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার, যা এক বছর আগের চেয়ে প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলার কম। গত বছরের ২ নভেম্বর রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪৬ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলার। তার আগে ১২ আগস্ট অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছিল।

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় কমায় ব্যাংকগুলোর ডলার সংকট আরও বেড়েছে। ব্যবসায়ী-শিল্পদ্যোক্তাদের চাহিদা অনুযায়ী ঋণপত্র (এলসি) খুলতে পারছে না। শুধু যাদের রপ্তানি আয় আছে ও যারা বড় ব্যবসায়ী, ব্যাংক শুধু তাদের ঋণপত্রই খুলছে। অস্বাভাবিক আমদানি ব্যয়ের লাগাম টানতে গত জুলাইয়ে কয়েকটি পণ্য আমদানিতে শতভাগ মার্জিন আরোপ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ ছাড়া বিলাসপণ্য আমদানি কমাতে শতাধিক পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এরপরও ব্যাংক ঋণপত্র খুলছিল। তবে অক্টোবরে এসে ঋণপত্র খোলা একেবারেই কমিয়ে দিয়েছে।
আমদানি দায় কমাতে নানা উদ্যোগের পরও কাটছে না ডলার সংকট। এর মধ্যে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স কমছে। সেপ্টেম্বরের পর অক্টোবরেও অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই দুই সূচকে নেতিবাচক (নেগেটিভ) প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, এই সেপ্টেম্বরে গত বছরের সেপ্টেম্বরের চেয়ে রেমিট্যান্স কমেছিল প্রায় ১১ শতাংশ। আর অক্টোবরে কমেছে ৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ। অন্যদিকে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যে দেখা যায়, গত সেপ্টেম্বরে গত বছরের সেপ্টেম্বরের চেয়ে রপ্তানি আয় কমেছিল ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ। আর অক্টোবরে কমেছে আরও বেশি ৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ।

এদিকে এই সংকটের সময়েও সরকারি ঋণপত্রের দেনা মেটাতে কোনো ব্যাংক যেন ব্যর্থ না হয়, সে জন্য নিয়মিতভাবে ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত বৃহস্পতিবারও কয়েকটি ব্যাংকের কাছে বিক্রি করা হয়েছে ২ কোটি ডলারের মতো। এ নিয়ে চলতি অর্থবছরে বিক্রি ৫ বিলিয়ন বা ৫০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে, স্থানীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ এই টাকা বাজার থেকে তুলে নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অন্যদিকে চলতি ২০২২ পঞ্জিকা বছরের এ পর্যন্ত রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার। রপ্তানি আয় ও রেমট্যান্স হ্রাস এবং ধারাবাহিকভাবে ডলার বিক্রির ফলে দেশে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ কমেই চলেছে। বৃহস্পতিবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩৫ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার। আগামী সপ্তাহেই এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে (আকু) সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মেয়াদের দেড় বিলিয়ন ডলারের মতো আমদানি বিল পরিশোধ করতে হবে। তখন রিজার্ভ আরও কমে ৩৪ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসবে।
মুদ্রাবাজার স্বাভাবিক রাখতে গত ২০২১-২২ অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে ৭৬২ কোটি (৭.৬২ বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এর বিপরীতে বাজার থেকে ৭০ হাজার কোটি টাকার মতো তুলে নেয়া হয়। অথচ তার আগের অর্থবছরে (২০২০-২১) বাজারে ডলারের সরবরাহ বাড়ায় দর ধরে রাখতে রেকর্ড প্রায় ৮ বিলিয়ন (৮০০ কোটি) ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।