প্রত্যাশা ডেস্ক: ৪৩তম বিসিএসের প্রজ্ঞাপন থেকে বাদ পড়া চাকরিপ্রত্যাশীদের বিষয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, ‘কোনো চাকরিপ্রার্থী যদি নিজ যোগ্যতায় প্রিলিমিনারি, লিখিত ও ভাইভায় পাস করে সুপারিশপ্রাপ্ত হন এবং যদি পূর্বে কোনো অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ততা না থাকে, তাহলে তার বাবা, চাচা, মামা, নানার রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে কেন তাকে চাকরি থেকে বঞ্চিত করা হবে? আমি কী করব, সেটা কি আমার চাচা নির্ধারণ করতে পারে কিংবা আমার চাচা কী করবে, সেটা কি আমি নির্ধারণ করতে পারি?’
শনিবার (৪ জানুয়ারি) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্ট থেকে এ সংক্রান্ত একটি পোস্ট করেছেন সারজিস আলম।
ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘৪৩তম বিসিএসের পুনরায় ভ্যারিফিকেশন হয়েছে। ১৬৮ জনকে এই ধাপে বাদ দেওয়া হয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় ভ্যারিফিকেশন মিলে মোট বাদ পড়েছে ২৬৭ জন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখানো হয়েছে গোয়েন্দা সংস্থার নেগেটিভ রিপোর্ট। অর্থাৎ পলিটিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ড। কিন্তু এখানে অনেকগুলো প্রশ্ন আছে। আওয়ামী লীগের সময়ে আওয়ামী লীগ পরিবার ব্যতীত অন্যান্য পলিটিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসা যে কারও জন্য এই প্রথম শ্রেণির সরকারি ভালো চাকরি পাওয়া কঠিন বিষয় ছিল। একই ধরনের একটি চিত্র যদি এখন দেখা যায়, তাহলে পার্থক্যটা কোথায়?’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক এই সমন্বয়ক আরও লিখেছেন, ‘একটা সময় পরে সবাইকে ব্যক্তিগত জীবন গোছাতে হয়। ইভেন, আমার বাবার রাজনৈতিক মতাদর্শের সঙ্গে আমার চিন্তাভাবনার মিল না–ও থাকতে পারে। তাহলে পরিবারের কোনো একজন সদস্যের রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ডের কারণে অন্য একজন সদস্যকে বঞ্চিত করার অধিকার রাষ্ট্র পায় কি না? সবচেয়ে বাজে ব্যাপারটা এবার হয়েছে যে গোয়েন্দা সংস্থার অনেকে গিয়ে এবার ইউনিয়ন আর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি-সেক্রেটারির কাছে বিভিন্ন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত চাকরিপ্রার্থীদের পরিবারের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা জানতে চেয়েছে। তার মানে সারা জীবন অধ্যবসায় করা বিশ্ববিদ্যালয় গ্র্যাজুয়েট এক মেধাবী তরুণ প্রায় তিন বছর দিনরাত এক করে পড়াশোনা করার পর প্রিলি-রিটেন-ভাইভা পাস করে ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার পর কোনো এক ওয়ার্ড সভাপতি-সেক্রেটারির মতামতের কাছে জিম্মি হয়ে যাবে? সে তার কর্ম নির্ধারণ করবে? তাহলে এত আয়োজনের কী দরকার ছিল? এই ভ্যারিফিকেশন তো তাহলে প্রিলির আগে হওয়া উচিত। তাহলে তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলো নষ্ট হতো না। আর কোন যোগ্যতার ভিত্তিতে সে এই মতামত দেয়? স্থানীয়ভাবে এমনিতেই নেতিবাচক একটা পলিটিকস দেখা যায়, কে কাকে ল্যাং মেরে উঠতে পারে। যদি একজন চাকরিপ্রত্যাশী এমন স্থানীয় পলিটিকসের শিকার হয়, তাহলে সে দায় সরকার নেবে কি না?’
সারজিস লিখেছেন, ‘যারা বাদ পড়েছেন, তাদের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নতুন করে পুনর্বিবেচনার আবেদন করার সুযোগ দিয়েছে। কিন্তু এই ভ্যারিফিকেশন খেলা কেন? এখানে অনেকেই আছেন, যারা পূর্বের চাকরি ছেড়ে এসেছেন, অনেকের ছিল জীবনের শেষ চাকরির পরীক্ষা, অনেকের সামনের জীবন নির্ভর করছে এই চাকরির ওপর। সেখানে যদি এমন রিয়েলিটি সেট করা হয়, তবে যে প্রজন্ম আগামীর চাকরিপ্রার্থী, তারা আপনাদের ওপর আস্থা রাখতে পারবে না, দোদুল্যমান অবস্থায় না থেকে দেশ ছেড়ে চলে যাবে। অলরেডি এটা নিয়ে কথা শুরু হয়েছে। যেটা কখনোই কাম্য নয়। চাকরি হবে মেধার ভিত্তিতে। যে মতাদর্শেরই হোক না কেন, যদি পূর্বে ক্ষমতার অপব্যবহার, অন্যায়, অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ততা না থাকে, তাহলে নাগরিক হিসেবে সরকারি চাকরি পাওয়া তার সাংবিধানিক অধিকার। কোনো অহেতুক এক্সকিউজে যেটা ক্ষুণ্ন করা কখনোই ভালো বার্তা বহন করে না।’
৪৩তম বিসিএসে নিয়োগের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গত ১৫ অক্টোবরের প্রজ্ঞাপন বাতিল করে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করে গত ৩০ ডিসেম্বর। এতে বিভিন্ন ক্যাডারে বাদ পড়েন ১৬৮ প্রার্থী। এর আগে ১৫ অক্টোবরের প্রজ্ঞাপনে বিভিন্ন ক্যাডারে বাদ পড়েছিলেন ৯৯ জন। সব মিলিয়ে ৪৩তম বিসিএস থেকে বাদ পড়েন মোট ২৬৭ জন।
গত বৃহস্পতিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নিয়োগের জন্য অনুপযুক্ত ২২৭ জনের মধ্যে যে কেউ পুনর্বিবেচনার আবেদন করলে তা গ্রহণ করা হচ্ছে। পুনর্বিবেচনার আবেদন করার সুযোগ সবার জন্য উন্মুক্ত।