নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার আওতাধীন শতভাগ বিদেশি মালিকানাধীন একটি প্রতিষ্ঠান রপ্তানির আড়ালে দিনের পর দিন বন্ড সুবিধায় ৪২২ কোটি টাকার বেশি শুল্ক-কর ফাঁকি দিয়েছে। কোরিয়ান নাগরিকদের মালিকানাধীন কোম্পানি নর্থপোল (বিডি) লিমিটেড শুধু ফাঁকিই দেয়নি, বরং প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে মালিকরা দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন। তাই ফাঁকি দেওয়া ওই টাকা আর আদায়ের সুযোগ নেই বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বকেয়া শুল্ক-কর আদায়ে এনবিআরের চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেট থেকে দফায় দফায় দাবিনামা কিংবা চিঠি দেওয়া হলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। এমনকি প্রতিষ্ঠানের শিল্প প্লটের ভাড়া, বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস বিল পরিশোধ করা হয়নি। ফলে প্রতিষ্ঠানটির রেখে যাওয়া মেশিনসহ অন্য মালামাল বিক্রি করেও শুল্ক-করের ওই টাকা আদায় করা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন এনবিআর সংশ্লিষ্টরা। এনবিআরের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইপিজেডের আওতাধীন একটি প্রতিষ্ঠান সাধারণত শতভাগ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান হয়ে থাকে। কোরিয়ান ওই প্রতিষ্ঠান বন্ড কমিশনারেটের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে দিনের পর দিন শুল্ক-কর ফাঁকি দিয়ে আসছিল। প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে মালিকরা যখন পালিয়ে গেল তখন আইনি পদক্ষেপে নেওয়া হয়েছে কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তিনি আরও বলেন, রপ্তানি উৎসাহিত করতে বন্ড লাইসেন্সের আওতায় কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক-কর মওকুফ করা হয়। শর্ত হলো চূড়ান্ত পণ্য রপ্তানি করবে। সেক্ষেত্রে কোনো জামানত থাকে না, ইচ্ছেমতো আমদানি-রপ্তানি করতে পারে। কিন্তু আমদানি রেকর্ড থাকলেও তাদের রপ্তানির রেকর্ড পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ রপ্তানির আড়ালে এখানে অর্থও পাচার হয়েছে। অন্যদিকে শুল্ককর পরিশোধ না করেই প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে আটজন কোরিয়ান মালিক পালিয়ে গেছেন। এখন প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব নেই, তাহলে কীভাবে শুল্ককর আদায় হবে? তবে বকেয়া রাজস্ব আদায়ে জারি করা দাবিনামা, বিচারাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে মালিকদের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে। একইসঙ্গে কাস্টমসের কোনো কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কি না সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। চিঠিসহ এনবিআরের বিভিন্ন নথিপত্র সূত্রে জানা যায়, সিইপিজেডের শতভাগ দক্ষিণ কোরিয়ার বিনিয়োগকারীদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান নর্থপোল (বিডি) লিমিটেড। ‘এ’ ক্যাটাগরির রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ২০০০ সালে বন্ড লাইসেন্স পায় প্রতিষ্ঠানটি। তারা বন্ড সুবিধায় কাঁচামাল আমদানি করে পণ্য রপ্তানি করত। কিন্তু কয়েক বছর ধরে প্রতিষ্ঠানের আমদানি-রপ্তানি বন্ধ। প্রতিষ্ঠান কখনো নিরীক্ষাও করা হয়নি। যদিও এনবিআরের আদেশ অনুযায়ী, বন্ডেড প্রতিষ্ঠানকে প্রতি বছর নিরীক্ষা সম্পন্ন করতে হয়। নিরীক্ষা না করলে বা শর্ত ভঙ্গ করলে লাইসেন্স স্থগিত করার বিধান রয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি নিরীক্ষা না করলেও লাইসেন্স স্থগিত করা হয়নি। প্রতিষ্ঠানটির নিরীক্ষা না হওয়ার পেছনে ওই সময়ের বন্ড কর্মকর্তাদের দুর্বলতা ছিল বলে মনে করেন একাধিক কাস্টমস কর্মকর্তা।