ঢাকা ০৯:১৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫

৪০ বছর পর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্রেসিডেন্ট পদে লড়বে বাংলাদেশ

  • আপডেট সময় : ০৬:৩৯:২৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫
  • ৩৬ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ছাড়াও এই পদে প্রার্থী হয়েছেন জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের স্থায়ী প্রতিনিধি এবং সাইপ্রাসের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পার্মানেন্ট সেক্রেটারি

প্রত্যাশা ডেস্ক: প্রায় ৪০ বছর পর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এই মর্যাদাপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। তাকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই পদে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছে। খবর বাংলা ট্রিবিউনের।

২০২৬ সালের জুনে অনুষ্ঠেয় এই নির্বাচনের জন্য কূটনৈতিক কৌশল ও প্রচারণার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। নির্বাচিত হলে তৌহিদ হোসেন ২০২৬ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৭ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮১তম অধিবেশনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। এই পদে নির্বাচিত হলে তিনি দ্বিতীয় বাংলাদেশি হবেন, যিনি সাধারণ পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন। এর আগে ১৯৮০-এর দশকে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও জাতীয় সংসদের স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী এই পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা প্রচারণা শুরু করেছি। এটি বিভিন্ন পর্যায়ে পরিচালিত হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘জাতিসংঘে বাংলাদেশের সক্রিয় ভূমিকা, শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ এবং প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতার কারণে আমরা আশাবাদী, এই নির্বাচনে জয়ী হতে পারবো।’

সরকারের সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতা: এই নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নয়, বরং এটি পূর্ববর্তী সরকারের নেওয়া সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতা। ২০২০ সালে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতির পদে নির্বাচনের আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং ২০২৬ সালে এশিয়া-প্যাসিফিক গ্রুপ থেকে বাংলাদেশের প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি জাতিসংঘে জানানো হয়।
জাতিসংঘে মোট পাঁচটি আঞ্চলিক গ্রুপ রয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে প্রতিটি গ্রুপ থেকে সভাপতি নির্বাচিত হয়। বর্তমানে এই পদে রয়েছেন ক্যারিবিয়ান অঞ্চলভুক্ত একজন প্রতিনিধি।

তৌহিদ হোসেনের পরিচয়: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বিসিএস ১৯৮১ ব্যাচের কর্মকর্তা। ১৯৮২ সালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগদানের পর তিনি প্রশাসন, প্রটোকল ও ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। বিদেশে তিনি দিল্লি, কলকাতা ও দক্ষিণ আফ্রিকায় রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বে ছিলেন। রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী তৌহিদ হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে পড়াশোনা করেছেন।

প্রতিদ্বন্দ্বী তিনজন: বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ছাড়াও এই পদে প্রার্থী হয়েছেন জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের স্থায়ী প্রতিনিধি এবং সাইপ্রাসের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পার্মানেন্ট সেক্রেটারি। যদিও সাইপ্রাস ইউরোপের দেশ, তবে এটি এশিয়া-প্যাসিফিক গ্রুপের অংশ হিসেবেই গণ্য হয়। সাধারণত এই পদে কনসেনসাসের ভিত্তিতে প্রার্থী নির্বাচিত হয়ে থাকলেও এবার তিন জন প্রার্থী থাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা তীব্র হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব: ১৯৮০-এর দশকে যখন হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী এ পদে ছিলেন, তখন বছরের কয়েক মাস নিউ ইয়র্কে অবস্থান করেই দায়িত্ব পালন করেছিলেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে এই পদ এখন ফুল-টাইম দায়িত্বে পরিণত হয়েছে।

সাবেক একজন কূটনীতিক জানান, বর্তমানে কাজের পরিধি, জটিলতা ও আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনীতির প্রেক্ষাপটে এই দায়িত্ব অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তাই প্রেসিডেন্টকে বছরের পুরো সময় নিউ ইয়র্কে থাকতে হয়। তিনি আরো বলেন, ‘যদি বাংলাদেশি প্রার্থী নির্বাচিত হন, তাহলে জাতিসংঘে দেশের অবস্থান আরো জোরদার হবে এবং এটি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় কূটনৈতিক অর্জন হবে।’

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

সালমান রুশদির ওপর হামলাকারীর ২৫ বছরের কারাদণ্ড

৪০ বছর পর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্রেসিডেন্ট পদে লড়বে বাংলাদেশ

আপডেট সময় : ০৬:৩৯:২৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫

প্রত্যাশা ডেস্ক: প্রায় ৪০ বছর পর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এই মর্যাদাপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। তাকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই পদে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছে। খবর বাংলা ট্রিবিউনের।

২০২৬ সালের জুনে অনুষ্ঠেয় এই নির্বাচনের জন্য কূটনৈতিক কৌশল ও প্রচারণার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। নির্বাচিত হলে তৌহিদ হোসেন ২০২৬ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৭ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮১তম অধিবেশনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। এই পদে নির্বাচিত হলে তিনি দ্বিতীয় বাংলাদেশি হবেন, যিনি সাধারণ পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন। এর আগে ১৯৮০-এর দশকে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও জাতীয় সংসদের স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী এই পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা প্রচারণা শুরু করেছি। এটি বিভিন্ন পর্যায়ে পরিচালিত হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘জাতিসংঘে বাংলাদেশের সক্রিয় ভূমিকা, শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ এবং প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতার কারণে আমরা আশাবাদী, এই নির্বাচনে জয়ী হতে পারবো।’

সরকারের সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতা: এই নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নয়, বরং এটি পূর্ববর্তী সরকারের নেওয়া সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতা। ২০২০ সালে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতির পদে নির্বাচনের আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং ২০২৬ সালে এশিয়া-প্যাসিফিক গ্রুপ থেকে বাংলাদেশের প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি জাতিসংঘে জানানো হয়।
জাতিসংঘে মোট পাঁচটি আঞ্চলিক গ্রুপ রয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে প্রতিটি গ্রুপ থেকে সভাপতি নির্বাচিত হয়। বর্তমানে এই পদে রয়েছেন ক্যারিবিয়ান অঞ্চলভুক্ত একজন প্রতিনিধি।

তৌহিদ হোসেনের পরিচয়: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বিসিএস ১৯৮১ ব্যাচের কর্মকর্তা। ১৯৮২ সালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগদানের পর তিনি প্রশাসন, প্রটোকল ও ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। বিদেশে তিনি দিল্লি, কলকাতা ও দক্ষিণ আফ্রিকায় রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বে ছিলেন। রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী তৌহিদ হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে পড়াশোনা করেছেন।

প্রতিদ্বন্দ্বী তিনজন: বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ছাড়াও এই পদে প্রার্থী হয়েছেন জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের স্থায়ী প্রতিনিধি এবং সাইপ্রাসের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পার্মানেন্ট সেক্রেটারি। যদিও সাইপ্রাস ইউরোপের দেশ, তবে এটি এশিয়া-প্যাসিফিক গ্রুপের অংশ হিসেবেই গণ্য হয়। সাধারণত এই পদে কনসেনসাসের ভিত্তিতে প্রার্থী নির্বাচিত হয়ে থাকলেও এবার তিন জন প্রার্থী থাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা তীব্র হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব: ১৯৮০-এর দশকে যখন হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী এ পদে ছিলেন, তখন বছরের কয়েক মাস নিউ ইয়র্কে অবস্থান করেই দায়িত্ব পালন করেছিলেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে এই পদ এখন ফুল-টাইম দায়িত্বে পরিণত হয়েছে।

সাবেক একজন কূটনীতিক জানান, বর্তমানে কাজের পরিধি, জটিলতা ও আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনীতির প্রেক্ষাপটে এই দায়িত্ব অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তাই প্রেসিডেন্টকে বছরের পুরো সময় নিউ ইয়র্কে থাকতে হয়। তিনি আরো বলেন, ‘যদি বাংলাদেশি প্রার্থী নির্বাচিত হন, তাহলে জাতিসংঘে দেশের অবস্থান আরো জোরদার হবে এবং এটি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় কূটনৈতিক অর্জন হবে।’