ঢাকা ০২:২৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫

৪০ দেশের বিভিন্ন কোম্পানির সফটওয়্যার তৈরি করেছেন শরিফ

  • আপডেট সময় : ১২:১৭:৩৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ অগাস্ট ২০২১
  • ৮৮ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : ফারুক হাসান শান শরিফ, জন্ম বাগেরহাট জেলার মোংলা উপজেলার মিঠাখালীর খোনকারেরবেড় গ্রামে। শরিফ ২০০৬ সালে বাগেরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ২০০৮ সালে ঢাকা সিটি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে ২০১৬ সালে এমআইএস-এ এমএসসি শেষ করেন।
ছোটবেলা থেকেই শরিফ অন্য রকমের। যেখানে অধিকাংশ ছেলেরা বাহিরে ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করে, সেখানে শরিফ ঘরে বসে উদ্ভাবনী চিন্তা-ভাবনা করত। প্রযুক্তি বিষয়ে কোনো কিছু তৈরি করতে ভালো লাগতো তার। ঘণ্টার পর ঘণ্টা একা একা বসে নতুন কিছু সৃষ্টির চেষ্টা করতো।
ছোটবেলার অভ্যাসটা এখনো রয়ে গেছে শরিফের। পার্থক্য তখন শরিফ খেলনা তৈরি করার চেষ্টা করতো আর এখন সে সফটওয়্যার তৈরি করেন। এ পর্যন্ত শরিফ ৪০টি দেশের কোম্পানির জন্য অনেক সফটওয়্যার তৈরি করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য ডবডড়ৎশ, অঁঃড়উবংশ, ঠরৎঃঁধষ জবধষরঃু অৎপযরঃবপঃঁৎধষ, এড়ষফরধ, ঝগঝডঙজউঝ, চঈঠঊজঝঅখ ঝঞটউওঙঝ খখঈ.-এ সফটওয়্যারগুলো তৈরি করে শরিফ অনেক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেছের।
শুরুটা সহজ ছিল না শরিফের। তিনি ঢাকায় পড়ালেখা করেছেন। ২০১৭ সালের শেষের দিকে মাস্টার্স শেষ করার পর পরিবারের অমতে একা একা ঢাকায় চলে আসেন শরিফ। এ অবস্থায় ঢাকাতে এসে টিকে থাকা তার জন্য কষ্টকর ছিল। বাসা ভাড়া ও নিজের খরচ চালানো কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে।
কী করা যায়! ভাবতে ভাবতে শরিফ সিদ্ধান্ত নেন, যেহেতু ছোটবেলা থেকেই কম্পিউটার নিয়ে আগ্রহ তাই এটা দিয়েই কিছু একটা করবো। চাকরির প্রতি তার বরাবরই আগ্রহ কম। তার কাছে স্বপ্নের মূল্য অনেক বেশি। তাই তিনি নিজে কিছু করার চেষ্টা করেন। নিজের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য অনলাইন ও ইউটিউব থেকে পাইথন প্রোগ্রামিং শিখে ফেলেন শরিফ।
শরিফ বলেন, এত কষ্ট করে প্রোগ্রামিং শেখার পর খেয়াল করলাম যে, সব সেক্টরে কাজ করা সম্ভব নয়, কারণ প্রোগ্রামিং অনেক বড় একটা জগত। তাই একটা সেক্টরে ফোকাস করলাম। তা হলো রোবটিক প্রসেস অটোমেশন (আরপিএ)। যেহেতু কোনো কিছু অটোমেট করতে আমার ভালো লাগে তাই অল্প সময়ে এ এই বিষয়ে পারদর্শী হয়ে গেলাম।
এরপর শরিফ আপওয়ার্কে একাউন্ট খুলে কাজের জন্য আবেদন করেন। আবেদন করার প্রায় এক সপ্তাহের মধ্যে প্রথম কাজ পেয়ে যান তিনি। আমেরিকার এক কোম্পানির ডাটা মাইনিং এর কাজ। কাজটি শরিফ সফলভাবে সম্পন্ন করেন। এতে তার গ্রাহক খুশি হয়ে কাজ শেষে তাকে ফাইভ স্টার রেটিং দেন এবং সাথে লিখেন ‘ংযধৎরভ মবঃং রঃ ফড়হব’। এরপর শরিফ আপওয়ার্কে নিয়মিত কাজ করে যান। এর পাশাপাশি শরিফ লাডিজিটা (ষধফরমরঃধ) নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর মাধ্যমেই বিভিন্ন অটোমেশন ও বিভিন্ন ওয়েবসাইটের সার্ভিস দেন। এমন অনেক রাত আছে যখন শরিফ না ঘুমিয়ে প্রোগ্রামিং করেছেন, ক্লায়েন্টের সাথে মিটিং করেছেন।
শরিফ জাগো নিউজকে বলেন, এরপর আমাকে আর পিছনে তাকাতে হয়নি। আমার নিজস্ব ওয়েবসাইট ও বিভিন্ন মার্কেটপ্লেস থেকে আমি আমার দক্ষতা দিয়ে ৩ বছরে কমপক্ষে ৩৩ লাখ টাকার কাজ করি। বর্তমানে আমার ৪০টা দেশে ক্লায়েন্ট আছে। আমি মূলত এখন বিভিন্ন অটোমেশন সফটওয়্যার তৈরি করি, যা মানুষের সাহায্য ছাড়া অটোমেটিক্যালি বিভিন্ন প্রসেস সম্পন্ন করে। আমার সফটওয়্যারগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে একদিকে যেমন হিউমান ইন্টারভেনশন প্রয়োজন হয় না তেমনি সময় এবং টাকা দুটোই বাঁচে।
শরিফ আরও বলেন, যদিও আমার ৪০টা দেশে ক্লায়েন্ট আছে কিন্তু দুঃখের বিষয় বাংলাদেশে আমার তেমন কোনো ক্লায়েন্ট নেই। বাংলাদেশের মানুষ এখনও জচঅ প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে তেমন কিছু জানে না। উন্নত দেশে বিলিয়ন ডলার সেফ হচ্ছে জচঅ ব্যবহার করে। অটোমেশন যে ব্যাবসার পরিধি বাড়াতে পারে, প্রোডাক্টিভিটি বাড়াতে পারে এবং এক্সপেন্স কমতে পারে এ সম্পর্কে এখনো দেশের মানুষ অবগত নন। আমি স্বপ্ন দেখি শিগগিরই দেশের মানুষ রোবটিক প্রসেস অটোমেশন-এর গুরুত্ব বুঝতে পারবে এবং ব্যাবসার পরিধি বাড়াতে তা ব্যবহার করবে।
দেশের তৃণমূল পর্যায় রোবটিক প্রসেস অটোমেশন-এর মাধ্যমে বিভিন্ন সেবা প্রদানের লক্ষ্যে বর্তমানে কাজ করে যাচ্ছেন শরিফ। রোবটিক প্রসেস অটোমেশনে কাজ করার পাশাপাশি তিনি ড্যাফোডিল ইনস্টিটিউট অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজিতে পার্টটাইম লেকচারার হিসেবে আছেন। অবসর সময়ে শরিফ কবিতা লেখেন।
দেশের তরুণ সমাজকে শরিফ বলতে চান শুধু চাকরির আশায় বসে না থেকে নিজে থেকে কিছু করার চেষ্টা করতে। শরিফ স্বপ্ন দেখেন দেশের বেকার তরুণদের বিনামূল্যে জচঅ শেখাবে, যাতে তারা অটোমেশন-এর মাধ্যম দেশে বিসনেস সেক্টরে খরচ কমিয়ে প্রোডাক্টিভিটি বাড়িয়ে দেশের উন্নতি করতে পারে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

৪০ দেশের বিভিন্ন কোম্পানির সফটওয়্যার তৈরি করেছেন শরিফ

আপডেট সময় : ১২:১৭:৩৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ অগাস্ট ২০২১

প্রত্যাশা ডেস্ক : ফারুক হাসান শান শরিফ, জন্ম বাগেরহাট জেলার মোংলা উপজেলার মিঠাখালীর খোনকারেরবেড় গ্রামে। শরিফ ২০০৬ সালে বাগেরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ২০০৮ সালে ঢাকা সিটি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে ২০১৬ সালে এমআইএস-এ এমএসসি শেষ করেন।
ছোটবেলা থেকেই শরিফ অন্য রকমের। যেখানে অধিকাংশ ছেলেরা বাহিরে ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করে, সেখানে শরিফ ঘরে বসে উদ্ভাবনী চিন্তা-ভাবনা করত। প্রযুক্তি বিষয়ে কোনো কিছু তৈরি করতে ভালো লাগতো তার। ঘণ্টার পর ঘণ্টা একা একা বসে নতুন কিছু সৃষ্টির চেষ্টা করতো।
ছোটবেলার অভ্যাসটা এখনো রয়ে গেছে শরিফের। পার্থক্য তখন শরিফ খেলনা তৈরি করার চেষ্টা করতো আর এখন সে সফটওয়্যার তৈরি করেন। এ পর্যন্ত শরিফ ৪০টি দেশের কোম্পানির জন্য অনেক সফটওয়্যার তৈরি করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য ডবডড়ৎশ, অঁঃড়উবংশ, ঠরৎঃঁধষ জবধষরঃু অৎপযরঃবপঃঁৎধষ, এড়ষফরধ, ঝগঝডঙজউঝ, চঈঠঊজঝঅখ ঝঞটউওঙঝ খখঈ.-এ সফটওয়্যারগুলো তৈরি করে শরিফ অনেক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেছের।
শুরুটা সহজ ছিল না শরিফের। তিনি ঢাকায় পড়ালেখা করেছেন। ২০১৭ সালের শেষের দিকে মাস্টার্স শেষ করার পর পরিবারের অমতে একা একা ঢাকায় চলে আসেন শরিফ। এ অবস্থায় ঢাকাতে এসে টিকে থাকা তার জন্য কষ্টকর ছিল। বাসা ভাড়া ও নিজের খরচ চালানো কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে।
কী করা যায়! ভাবতে ভাবতে শরিফ সিদ্ধান্ত নেন, যেহেতু ছোটবেলা থেকেই কম্পিউটার নিয়ে আগ্রহ তাই এটা দিয়েই কিছু একটা করবো। চাকরির প্রতি তার বরাবরই আগ্রহ কম। তার কাছে স্বপ্নের মূল্য অনেক বেশি। তাই তিনি নিজে কিছু করার চেষ্টা করেন। নিজের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য অনলাইন ও ইউটিউব থেকে পাইথন প্রোগ্রামিং শিখে ফেলেন শরিফ।
শরিফ বলেন, এত কষ্ট করে প্রোগ্রামিং শেখার পর খেয়াল করলাম যে, সব সেক্টরে কাজ করা সম্ভব নয়, কারণ প্রোগ্রামিং অনেক বড় একটা জগত। তাই একটা সেক্টরে ফোকাস করলাম। তা হলো রোবটিক প্রসেস অটোমেশন (আরপিএ)। যেহেতু কোনো কিছু অটোমেট করতে আমার ভালো লাগে তাই অল্প সময়ে এ এই বিষয়ে পারদর্শী হয়ে গেলাম।
এরপর শরিফ আপওয়ার্কে একাউন্ট খুলে কাজের জন্য আবেদন করেন। আবেদন করার প্রায় এক সপ্তাহের মধ্যে প্রথম কাজ পেয়ে যান তিনি। আমেরিকার এক কোম্পানির ডাটা মাইনিং এর কাজ। কাজটি শরিফ সফলভাবে সম্পন্ন করেন। এতে তার গ্রাহক খুশি হয়ে কাজ শেষে তাকে ফাইভ স্টার রেটিং দেন এবং সাথে লিখেন ‘ংযধৎরভ মবঃং রঃ ফড়হব’। এরপর শরিফ আপওয়ার্কে নিয়মিত কাজ করে যান। এর পাশাপাশি শরিফ লাডিজিটা (ষধফরমরঃধ) নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর মাধ্যমেই বিভিন্ন অটোমেশন ও বিভিন্ন ওয়েবসাইটের সার্ভিস দেন। এমন অনেক রাত আছে যখন শরিফ না ঘুমিয়ে প্রোগ্রামিং করেছেন, ক্লায়েন্টের সাথে মিটিং করেছেন।
শরিফ জাগো নিউজকে বলেন, এরপর আমাকে আর পিছনে তাকাতে হয়নি। আমার নিজস্ব ওয়েবসাইট ও বিভিন্ন মার্কেটপ্লেস থেকে আমি আমার দক্ষতা দিয়ে ৩ বছরে কমপক্ষে ৩৩ লাখ টাকার কাজ করি। বর্তমানে আমার ৪০টা দেশে ক্লায়েন্ট আছে। আমি মূলত এখন বিভিন্ন অটোমেশন সফটওয়্যার তৈরি করি, যা মানুষের সাহায্য ছাড়া অটোমেটিক্যালি বিভিন্ন প্রসেস সম্পন্ন করে। আমার সফটওয়্যারগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে একদিকে যেমন হিউমান ইন্টারভেনশন প্রয়োজন হয় না তেমনি সময় এবং টাকা দুটোই বাঁচে।
শরিফ আরও বলেন, যদিও আমার ৪০টা দেশে ক্লায়েন্ট আছে কিন্তু দুঃখের বিষয় বাংলাদেশে আমার তেমন কোনো ক্লায়েন্ট নেই। বাংলাদেশের মানুষ এখনও জচঅ প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে তেমন কিছু জানে না। উন্নত দেশে বিলিয়ন ডলার সেফ হচ্ছে জচঅ ব্যবহার করে। অটোমেশন যে ব্যাবসার পরিধি বাড়াতে পারে, প্রোডাক্টিভিটি বাড়াতে পারে এবং এক্সপেন্স কমতে পারে এ সম্পর্কে এখনো দেশের মানুষ অবগত নন। আমি স্বপ্ন দেখি শিগগিরই দেশের মানুষ রোবটিক প্রসেস অটোমেশন-এর গুরুত্ব বুঝতে পারবে এবং ব্যাবসার পরিধি বাড়াতে তা ব্যবহার করবে।
দেশের তৃণমূল পর্যায় রোবটিক প্রসেস অটোমেশন-এর মাধ্যমে বিভিন্ন সেবা প্রদানের লক্ষ্যে বর্তমানে কাজ করে যাচ্ছেন শরিফ। রোবটিক প্রসেস অটোমেশনে কাজ করার পাশাপাশি তিনি ড্যাফোডিল ইনস্টিটিউট অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজিতে পার্টটাইম লেকচারার হিসেবে আছেন। অবসর সময়ে শরিফ কবিতা লেখেন।
দেশের তরুণ সমাজকে শরিফ বলতে চান শুধু চাকরির আশায় বসে না থেকে নিজে থেকে কিছু করার চেষ্টা করতে। শরিফ স্বপ্ন দেখেন দেশের বেকার তরুণদের বিনামূল্যে জচঅ শেখাবে, যাতে তারা অটোমেশন-এর মাধ্যম দেশে বিসনেস সেক্টরে খরচ কমিয়ে প্রোডাক্টিভিটি বাড়িয়ে দেশের উন্নতি করতে পারে।