দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর আবারও মেট্রোরেল চলাচল শুরু হয়েছে গতকাল রোববার (২৫ আগস্ট) থেকে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত মেট্রোরেলের কাজীপাড়া ও মিরপুর ১০ স্টেশন দুটিতে মেট্রোরেল থামবে না এবং যাত্রী সেবা কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। এতে মিরপুরের কয়েকটি এলাকার বাসিন্দাদের অসুবিধা হলেও বিকল্প স্টেশন ব্যবহার করছেন তারা। সর্বপরি মেট্রোরেল চালু হয়েছে তাতেই খুশি যাত্রীরা। সরেজমিন সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত মেট্রোরেল স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, দীর্ঘ বিরতির পর চালু হওয়া মেট্রোরেলের প্রথম দিন সকালে যাত্রীর সংখ্যা তুলনামূলক কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে। কথা হয় যাত্রী মো. সৈকতের সঙ্গে। তিনি মিরপুর ১০ এর বাসিন্দা। আগে মিরপুর ১০ স্টেশন ব্যবহার করতেন। আজ বাসে করে ১১টায় এসে মেট্রোরেলে উঠেছেন। সৈকত বলেন, মেট্রোরেল বন্ধ থাকায় আগের অবস্থায় ফিরে যেতে হয়েছে। বাসে গাদাগাদি করে চড়া, জ্যাম ঠেলে দীর্ঘসময় জার্নি, আগের সব ধরনের অসুবিধাই ফেস করতে হয়েছে। তবে এখন মেট্রোরেল চালু হয়েছে, এটা আনন্দের।
আধা ঘণ্টার যাত্রা দেড় ঘণ্টা হয়ে গিয়েছিল জানিয়ে যাত্রী খালেদ মাহমুদ বলেন, মেট্রোরেল বন্ধ থাকায় প্রধান সমস্যা হয়েছিল চলাচলে সময় বেশি লাগতো। বাসা থেকে অফিসে যেতে অন্তত এক ঘণ্টা আগে বের হতাম। দুঃচিন্তায় ছিলাম, মেট্রোরেল যদি এক বছর বন্ধ থাকতো তাহলে কী অবস্থা হতো। যাই হোক এখন চালু হয়েছে, ভালো লাগছে।
আগারগাঁও স্টেশনের যাত্রী হোসনে আরা বলেন, নারীদের জন্য মেট্রোরেল ছিল একটি নিরাপদ ও ভরসার পরিবহন। সন্ধ্যার পর ফিরতে যতই দেরি হোক না কেন, কোনও টেনশন ছিল না। মেট্রোরেলে করে ঠিকই সহজে বাড়ি ফেরা যেতো। এটা অভ্যাসের মধ্যে চলে আসছিল। কিন্তু বন্ধ থাকায় অনেক ভোগান্তির মাঝে ছিলাম। বিশেষ করে রাস্তায় বাসও পাওয়া যেতো না তেমন। তখন সিএনজি, অটোরিকশা এসবে করেই চলাচল করতে হয়েছে। মেট্রোরেলের ব্যাকআপ সিস্টেম চালু রাখার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, সময় এসেছে সড়কের গণপরিবহনে পরিবর্তন আনার। মেট্রোরেলের মতো আধুনিক ও স্বস্তির যানে নিয়মিত চলাচলের পর বিকল্প হিসেবে বাস ব্যবহারে যাত্রীরা দাবি জানিয়েছেন সড়ক পরিবহনগুলোয় আমূল পরিবর্তন আনার। তারা বলেন, মেট্রোরেল যেভাবে মানুষের জীবনে দারুণ পরিবর্তন এনে দিয়েছে সেখানে বাসের কোনও উন্নতি না হওয়াটা দুঃখজনক। দ্রুত সময়ে বাস সেবাও আধুনিক করা হোক।
আগারগাঁও স্টেশনের যাত্রী সোমা আক্তার প্রিয়া বলেন, যারা নিয়মিত মেট্রোরেল ব্যবহার করতেন তারা বাস চলাচল অনেকটাই বন্ধ করে দিয়েছিলেন বলে আমি মনে করি। এখন বিকল্প হিসেবে বাস ব্যবহার করতে গিয়ে দেখি বাসের কোনও উন্নয়ন হয়নি, বরং ভোগান্তি আরও বেড়েছে। মেট্রোরেলের মতো এত চমৎকার পরিবহনে চড়ে অভ্যাসের পর তখন কী আর বাসে চড়ে কেউ স্বস্তি পাবে! যাত্রী মিজান মোহাম্মদ বলেন, মেট্রোরেল যেমন করা সম্ভব হয়েছে, আশা করি বাসেরও পরিবর্তন আসবে। এটা এখন আবশ্যকীয় হয়ে গেছে।
প্রসঙ্গত, গত ১৮ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনের অংশ হিসেবে ডাকা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি চলাকালে রাজধানীর মিরপুরের ১০ নম্বর গোলচত্বরে থাকা পুলিশ বক্সে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা। আগুনের কালো ধোঁয়া মেট্রোরেল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। জননিরাপত্তার স্বার্থে ওইদিন বিকাল সাড়ে ৫টায় মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরদিন ১৯ জুলাই শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে মেট্রোরেল বন্ধ ছিল। ওইদিন বিকালে দুর্বৃত্তদের হামলায় মেট্রোরেলের কাজীপাড়া ও মিরপুর ১০ নম্বর স্টেশনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এ কারণে মেট্রোরেল বন্ধ ছিল এতদিন। উদ্বোধন হওয়ার প্রায় ২ বছর ৭ মাসের মাথায় এসে এমন পরিস্থিতি পড়তে হয়েছে মেট্রোরেলকে।