ঢাকা ১১:৩৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
ফিরে দেখা-২০২৪-----------------------

‘৩৬ জুলাই’-এর ঐতিহাসিক বছর

  • আপডেট সময় : ০৫:১৪:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪
  • ৮৪ বার পড়া হয়েছে

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গড়ায় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে। আন্দোলনে রক্তপাত শুরু হওয়ার ২০ দিনের মধ্যেই লাশ আর রক্তের বোঝা মাথায় নিয়ে পতন হয় দেড় দশকের আওয়ামী লীগ সরকারের।

প্রত্যাশা ডেস্ক: সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে বছরের ঠিক মাঝামাঝি সময়ে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, শেষমেশ তা গড়েছে সরকার উৎখাতের ইতিহাস।

৩৬ দিনের সেই আন্দোলনে ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালাতে বাধ্য হন সাড়ে ১৫ বছর দোর্দণ্ড প্রতাপে দেশ চালিয়ে আসা শেখ হাসিনা।

শুরুতে এই আন্দোলনের কেন্দ্র ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পরে তা দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।

এর মধ্যে তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, কোটার বিষয়টি সমাধান হবে আদালতে।

এক প্রশ্নে তিনি বলেছিলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি পুতিরা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতি পুতিরা (চাকরি) পাবে?

সেই রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার, রাজাকার’ স্লোগান উঠলে পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে উঠে।

আন্দোলন দমাতে আলোচনার কোন পথে না গিয়ে সরাসরি ‘গুলি’, ডিবি অফিসে ধরে এনে নির্যাতনের মতো পথগুলো বেছে নেয় তৎকালীন সরকার। একদিকে রক্ত ঝরতে থাকে রাজপথে, মৃত্যু আর আহতের ভিড় বাড়তে থাকে হাসপাতালগুলোতে। সেই সঙ্গে বড় হতে থাকে আন্দোলনের জমায়েতও।

সরকারের তরফে জবাব ছিল- গুলি, টিয়ারশেল আর লাঠি; এককথায় কেবলই বলপ্রয়োগ। প্রথমে ফেইসবুক, পরে ইন্টারনেট বন্ধ করে পরিস্থিতি সামাল দিতে চায় সরকার। তাতে হিতে বিপরীত হয়।

আন্দোলনে রক্তপাত শুরু হওয়ার ২০ দিনের মধ্যেই লাশ আর রক্তের বোঝা মাথায় নিয়ে পতন হয় দেড় দশকের আওয়ামী লীগ সরকারের। পালাতে বাধ্য হন শেখ হাসিনা আর তার অমাত্যরা।

শেখ হাসিনার পতনের দিন ৫ আগস্ট দেশের ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু গণভবনের পাশাপাশি সারাদেশের থানা, বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলা ও লুটপাট চালানো হয়। তিন দিন সরকারবিহীন ছিল বাংলাদেশ। ৮ আগস্ট মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার।

এর পরবর্তী মাসখানেক ছিল নানা বিশৃঙ্খলায় ভরা। রাতভর ডাকাত আতঙ্ক, পাড়ায়-মহল্লায় বাসিন্দাদের পাহারা, নানা পক্ষের দাবি-দাওয়া আদায়ের আন্দোলন-বিক্ষোভের চাপে একরকম অচল হয়ে পড়ে প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড।

গণঅভ্যুত্থান সংক্রান্ত বিশেষ সেলের খসড়া তালিকা অনুযায়ী, আন্দোলনে ৮৫৮ জন নিহত এবং সাড়ে ১১ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন।
কোটা সংস্কার পর্ব: দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা ছিল। তবে এর হার ও ধরন বিভিন্ন সময়ে পরিবর্তিত হয়েছে।

২০১৮ সাল পর্যন্ত ৫৬ শতাংশ পদে কোটার ভিত্তিতে নিয়োগের সুযোগ ছিল। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি-নাতনিদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ, জেলাভিত্তিক ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের জন্য ১ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত ছিল।

ওই বছর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে বড় ধরনের বিক্ষোভের মুখে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা বাতিল করা হয়। তবে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে কোটা ব্যবস্থা আগের মতই বহাল রেখে জারি করা পরিপত্র।

ওই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন।

গত ৫ জুন সেই আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয় হাই কোর্ট।

ওইদিনই রায় প্রত্যাখান করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ দেখান শিক্ষার্থীরা। এরপর ৯ জুন হাই কোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।

ওই সময়ের ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ৫ জুন পরবর্তী ৬১ দিনের মধ্যে প্রথম ৪০ দিন দেশের নানা জায়গায় আন্দোলন হলেও জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে শিক্ষার্থীদের মিছিলে ছাত্রলীগের হামলা, পুলিশের এলোপাতাড়ি গুলিতে আন্দোলন সহিংস হয়ে ওঠে; শুরু হয় জ্বালাও-পোড়াও।

১ জুলাই: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক আন্দোলন শুরু হয়। বিক্ষোভ হয় ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, জগন্নাথ, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

৭ জুলাই: সারাদেশে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করা হয়। ব্যাপক বিক্ষোভ-অবরোধে অচল হয়ে যায় রাজধানী। পরের দিনও ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়।

৯ জুলাই: সারাদেশে সড়ক ও রেলপথের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সকাল-সন্ধ্যা ব্লকেড অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। কোটা বহাল রেখে দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিলে আইনজীবীর মাধ্যমে পক্ষভুক্ত হন দুই শিক্ষার্থী।

১০ জুলাই: কোটা পুনর্বহাল করে হাই কোর্টের আদেশের ওপর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা, ৭ আগস্ট পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ।

সংবাদ সম্মেলন এবং অতঃপর ১৪ জুলাই: কোটা পুনর্বহালের নির্দেশ দিয়ে হাই কোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ। ওইদিন গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্তব্য ক্ষোভ আরও উসকে দেয়। এক প্রশ্নে তিনি বলেছিলেন, “মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি পুতিরা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতি পুতিরা (চাকরি) পাবে?”

তিনি সাফ জানিয়ে দেন, কোটার সমাধান দেবে আদালত, অশান্তি হলে আইন চলবে নিজের গতিতে।

ওইদিন গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে মিছিল বের হয়। ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার, রাজাকার’ স্লোগান উঠলে পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে ওঠে।

১৫ জুলাই: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগসহ সরকার সমর্থকরা। নিরীহ ছাত্রীদের ওপর লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলার ছবি আর ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে, ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় সাধারণ মানুষ। দেয়ালে দেয়ালে স্বৈরাচারবিরোধী স্লোগান দিয়ে গ্রাফিতি আঁকা শুরু হয়।

১৬ জুলাই: আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল দায়ের। সড়ক অবরোধ, সারাদেশে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটে এবং ছয়জনের প্রাণহানি হয়।

তাদের মধ্যে একজন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আবু সাঈদ প্রাণ হারান ‘পুলিশের গুলিতে’। দুই হাত প্রসারিত করে রাখা আবু সাঈদকে গুলি করার ঘটনা ভিডিওটি মানুষের মনে ক্ষোভ সঞ্চার করে।

পরে সারাদেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ এবং কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের হল বন্ধের ঘোষণা আসে। ওই রাতেই ঢাকাসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে ছাত্রলীগ নেতাদের বের করে দিয়ে কক্ষ ভাঙচুর করা হয়।

১৭ জুলাই: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গায়েবানা জানাজা করতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়।

সেদিন বিক্ষোভের কেন্দ্র ছিল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী; উচ্চ আদালতের রায় আসা পর্যন্ত ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান তিনি।

রাতে যাত্রাবাড়ী এলাকায় সংঘাতের সূত্রপাত হয়, পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি ছোঁড়ে; নিহত হন এক সাংবাদিকসহ কয়েকজন। যাত্রাবাড়ীতে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের টোলপ্লাজা জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। ওই রাতেই বন্ধ করে দেওয়া হয় ফেইসবুক।

১৮ জুলাই: আন্দোলনে সহিংসতা অব্যাহত। মেরুল বাড্ডায় পুলিশ অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে, পরে হেলিকপ্টারে উদ্ধার করা হয়। বিটিভি ভবনে অগ্নিসংযোগ করা হয়। সেতু ভবন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ চলে।

পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে শিক্ষার্থীসহ কয়েকজন হতাহত হন। ৫৬ শতাংশের পরিবর্তে ২০ শতাংশ কোটার প্রস্তাব আওয়ামী লীগের।

আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে সরকার রাজি বলে জানান আইনমন্ত্রী। আলোচনার প্রস্তাব নাকচ করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। রাত ৯টা থেকে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়।

১৯ জুলাই: ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সংঘর্ষ, পরিস্থিতি থমথমে। মেট্রোরেল স্টেশন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজা, মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গ্রেপ্তার। ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকায় সর্বক্ষেত্রে স্থবিরতা। রাত ১২টা থেকে কারফিউ জারি। সারা দেশে সংঘর্ষে অন্তত ৫৬ জন নিহত হন।

প্রধানমন্ত্রীর ‘প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া’, দুই মন্ত্রীর পদত্যাগসহ ৯ দফা দাবি দিয়ে শাটডাউন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় তিন মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসেন আন্দোলনকারীদের তিন নেতা। সেখানে ৮ দফা দাবি তুলে ধরেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং সহসমন্বয়ক হাসিব আল ইসলাম।

বৈঠকে সরকারের তরফে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এবং তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত উপস্থিত ছিলেন।

২০ জুলাই: কারফিউয়ের মধ্যেও ঢাকা, সাভার, গাজীপুর, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘাত চলে। বহু বিক্ষোভকারী হতাহত হন।

আইনমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী ও তথ্য প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে কোটা সংস্কার আন্দোলনের তিন সমন্বয়কারীর বৈঠক হয় এদিন। আন্দোলনকারীরা আট দফা দাবি পেশ করেন। এই বৈঠক নিয়ে সমন্বয়কদের মধ্যে মতভেদের খবর আসে। সহিংসতায় ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে অন্তত ২৬ জন নিহত হন।

২১ জুলাই: আপিল বিভাগের শুনানির পর কোটা পুনর্বহাল নিয়ে হাই কোর্টের রায় বাতিল করা হয়। মেধা ৯৩ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৫ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটা ১ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গ কোটা ১ শতাংশ করার আদেশ দেয় সর্বোচ্চ আদালত। তবে সরকার চাইলে বদলানোর সুযোগ রাখা হয়।

রায়ের পরও পরিস্থিতি শান্ত না হওয়ায় কারফিউ অব্যাহত থাকে, সাধারণ ছুটির আওতায় স্বায়ত্তশাসিত, সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক-সহ আর্থিক প্রতিষ্ঠান, পোশাক কারখানাসহ সব কলকারখানা বন্ধ রাখা হয়।

২২ জুলাই: কমপ্লিট শাটডাউন ৪৮ ঘণ্টার জন্য স্থগিতের ঘোষণা দেন কোটা আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। এই সময়ের মধ্যে তারা চার দফা দাবির বাস্তবায়ন দেখার জন্য সরকারকে আলটিমেটাম দেন।

সাধারণ ছুটির মেয়াদ মঙ্গলবার পর্যন্ত বাড়ানোর ঘোষণা আসে। কারফিউও বাড়ানো হয় এদিন।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সহিংসতায় চার দিনে অন্তত ১৩১ জনের নিহত হওয়ার খবর আসে সংবাদমাধ্যমে। পাঁচ শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের খবর আসে।

২৩ জুলাই: রাতে অগ্রাধিকার বিবেচনা করে সীমিত পরিসরে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবা ফেরে। পরদিন রাতে সারা দেশে বাসাবাড়িতেও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবা সচল হয়।

২৪ জুলাই: নির্বাহী আদেশে তিনদিন সাধারণ ছুটির পর অফিস খোলে। কারফিউ শিথিলের সময় বাড়ানোয় বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত অফিস কার্যক্রম চলে।

২৬ জুলাই: আহতদের দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং ধ্বংসযজ্ঞ দেখতে বাংলাদেশ টেলিভিশনে যান শেখ হাসিনা। মেট্রোরেল স্টেশন, বিটিভি ভবনে ধ্বংসযজ্ঞ দেখে তার কান্না মানুষ ভালোভাবে নেয়নি।

পুলিশের গুলিতে শত শত মানুষের হতাহত হওয়া নিয়ে দুঃখ প্রকাশ না করে শেখ হাসিনা ওখানে গিয়ে কেঁদেছেন, তার এই ভূমিকাকে ‘নাটক’ আখ্যা দেন অনেকে। কান্নারত শেখ হাসিনার ছবি দিয়ে বানানো মিম ছড়িয়ে পড়ে, যার ক্যাপশন ছিল ‘নাটক কম কর পিও’।

ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের মজুমদারকে হেফাজতে নেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল বলেন, তাদের আটক করা হয়নি। নিরাপত্তার জন্য হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

২৭ জুলাই: প্রধানমন্ত্রী আহতদের দেখতে যাননি- এমন সমালোচনার মুখে আহতদের দেখতে পঙ্গু হাসপাতালে যান শেখ হাসিনা। বিএনপি, জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে সহিংসতার অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতি পঙ্গু করতে এই ধ্বংসযজ্ঞ।

২৮ জুলাই: কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থী আবু সাঈদসহ নিহতদের একটি অংশের পরিবারের সঙ্গে গণভবনে সাক্ষাৎ করেন শেখ হাসিনা। পরে জানা যায়, চাপের মুখে তাদের গণভবনে নিয়ে আসা হয়। আহত পুলিশ সদস্যদের দেখতে রাজারবাগের পুলিশ হাসপাতালেও যান সরকারপ্রধান।

আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় ১৪৭ মৃত্যুর তথ্য দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল। যদিও তখনকার সংবাদমাধ্যমের হিসাবে সংখ্যাটি দুই শতাধিক। ১০ দিন পর মোবাইল ইন্টারনেট ফেরে।

২৯ জুলাই: জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়ে ঐকমত্য হয় ১৪ দলীয় জোটের বৈঠকে। সেখানে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি ঘিরে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ হয়।

৩০ জুলাই: কোটা আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় নিহতদের স্মরণে সারা দেশে শোক পালন করা হয়। সেই কর্মসূচি প্রত্যাখ্যান করে ফেইসবুক প্রোফাইল লাল করার এবং চোখে কালো কাপড় বেঁধে ছবি পোস্ট করার আহ্বান জানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

৩১ জুলাই: আন্দোলনে হত্যার বিচার দাবিতে ‘মার্চ ফর জাস্টিসি’ কর্মসূচি পালিত হজয়। এ কর্মসূচি ঘিরে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘাত হয়। সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে বিক্ষোভ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পদযাত্রা ঘিরে ধস্তাধস্তি হয়।

সুষ্ঠু তদন্তে আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতা চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তথ্যানুসন্ধান দল পাঠানোর আগ্রহ দেখায় জাতিসংঘও।

১ আগস্ট: ডিবি কার্যালয় থেকে মুক্তি পান বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ৬ সমন্বয়ক। নিহতদের স্মরণে ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ শিরোনামে কর্মসূচি পালন করা হয়। এর মধ্যেও কুমিল্লা, নারায়াণগঞ্জ ও বরিশালে সংঘাত আর রক্তপাত হয়।

কোটা আন্দোলনের মধ্যে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের’ অভিযোগ এনে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্র শিবির এবং সব অঙ্গ সংগঠনকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে আওয়ামী লীগ সরকার।

২ আগস্ট: গণমিছিলে হামলা সংঘর্ষ হয়, পুলিশসহ ২ জন নিহতের খবর পাওয়া যায়।

৩ আগস্ট: আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আলোচনার প্রস্তাব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তাদের জন্য গণভবনের দরজা খোলা। সেই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেন আন্দোলনকারীরা। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বিশাল জমায়েত থেকে সরকার পতনের এক দফা দাবি আসে।

ঢাকার পরিবেশ অনেকটা শান্তিপূর্ণ থাকলেও অন্তত ১১ জেলায় হামলা, ভাঙচুর ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। অন্তত একজনের প্রাণহানি হয়।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল বলেন, প্রধানমন্ত্রী চাইলে পদত্যাগ করবেন তিনি। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন আর ‘অরাজনৈতিক নেই’। হামলা হলে আত্মরক্ষায় তার ‘জবাব’ দেওয়া হবে।

৪ আগস্ট: অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিনে মাঠে নামার ঘোষণা দেয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সারাদেশে ব্যাপক সংঘাতে শতাধিক মানুষের প্রাণহানি হয়। নিহতদের মধ্যে অন্তত ১৪ জন পুলিশ সদস্য এবং আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের ১৯ নেতাকর্মী ছিলেন।

শাহবাগে ব্যাপক জমায়েতের মধ্যে পরদিন ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবক সকলকে নিরাপদে ঘরে ফিরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় জঙ্গি হামলা হচ্ছে। জঙ্গি হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

‘৩৬ জুলাই’: শেখ হাসিনার পতনের আগের দিনও চোটপাট দেখিয়ে গেছে আওয়ামী লীগ। দলটির নিচের পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা ঘুণাক্ষরেও ধারণা পাননি যে তাদের পতন আসন্ন।

৫ আগস্ট সকালেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মাঠে নেমে পুলিশের সঙ্গে মিলে বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভকারী ওপর হামলা ও গুলি চালায়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বানে সেদিন ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে যোগ দিতে ঢাকামুখী হন হাজার হাজার ছাত্র-জনতা। সকাল ১০টার পর থেকেই উত্তরা দিয়ে ঢাকায় ঢুকতে শুরু করে সহস্র মানুষ।

দুপুর নাগাদ শেখ হাসিনার পতনের কথা শোনা যায়। পদত্যাগ করে সামরিক উড়োজাহাজে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। দেশ পরিচালনায় অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হবে বলে জানান সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
ঢাকার পথে পথে সেদিন আনন্দ মিছিল চলে। জনতা গণভবনের দখল নেয়, সেখানে চলে লুটপাট। বিভিন্ন থানায় হামলা হয়, আক্রান্ত হয় বঙ্গবন্ধু ভবন, আওয়ামী লীগ কার্যালয় এবং বহু নেতার বাড়ি।

পথে পথে মানুষের উচ্ছ্বাস, আনন্দ মিছিল ছিল ঢাকা জুড়ে। সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। পরে তিনি জাতির উদ্দেশে ভাষণে জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যত দ্রুত সম্ভব গঠন করা হবে।
ছাত্ররা বলেছিল, জুলাই মাসেই শেখ হাসিনাকে বিতাড়িত করবে তারা। ৩১ জুলাইয়ের পর থেকে তারা নতুন হিসাব শুরু করে; সেই হিসাবে ৫ আগস্ট ছিল তাদের হিসাবে ‘৩৬ জুলাই’। সৌজন্যে: বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ডিসেম্বর ধরেই নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি

ফিরে দেখা-২০২৪-----------------------

‘৩৬ জুলাই’-এর ঐতিহাসিক বছর

আপডেট সময় : ০৫:১৪:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

প্রত্যাশা ডেস্ক: সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে বছরের ঠিক মাঝামাঝি সময়ে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, শেষমেশ তা গড়েছে সরকার উৎখাতের ইতিহাস।

৩৬ দিনের সেই আন্দোলনে ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালাতে বাধ্য হন সাড়ে ১৫ বছর দোর্দণ্ড প্রতাপে দেশ চালিয়ে আসা শেখ হাসিনা।

শুরুতে এই আন্দোলনের কেন্দ্র ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পরে তা দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।

এর মধ্যে তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, কোটার বিষয়টি সমাধান হবে আদালতে।

এক প্রশ্নে তিনি বলেছিলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি পুতিরা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতি পুতিরা (চাকরি) পাবে?

সেই রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার, রাজাকার’ স্লোগান উঠলে পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে উঠে।

আন্দোলন দমাতে আলোচনার কোন পথে না গিয়ে সরাসরি ‘গুলি’, ডিবি অফিসে ধরে এনে নির্যাতনের মতো পথগুলো বেছে নেয় তৎকালীন সরকার। একদিকে রক্ত ঝরতে থাকে রাজপথে, মৃত্যু আর আহতের ভিড় বাড়তে থাকে হাসপাতালগুলোতে। সেই সঙ্গে বড় হতে থাকে আন্দোলনের জমায়েতও।

সরকারের তরফে জবাব ছিল- গুলি, টিয়ারশেল আর লাঠি; এককথায় কেবলই বলপ্রয়োগ। প্রথমে ফেইসবুক, পরে ইন্টারনেট বন্ধ করে পরিস্থিতি সামাল দিতে চায় সরকার। তাতে হিতে বিপরীত হয়।

আন্দোলনে রক্তপাত শুরু হওয়ার ২০ দিনের মধ্যেই লাশ আর রক্তের বোঝা মাথায় নিয়ে পতন হয় দেড় দশকের আওয়ামী লীগ সরকারের। পালাতে বাধ্য হন শেখ হাসিনা আর তার অমাত্যরা।

শেখ হাসিনার পতনের দিন ৫ আগস্ট দেশের ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু গণভবনের পাশাপাশি সারাদেশের থানা, বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলা ও লুটপাট চালানো হয়। তিন দিন সরকারবিহীন ছিল বাংলাদেশ। ৮ আগস্ট মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার।

এর পরবর্তী মাসখানেক ছিল নানা বিশৃঙ্খলায় ভরা। রাতভর ডাকাত আতঙ্ক, পাড়ায়-মহল্লায় বাসিন্দাদের পাহারা, নানা পক্ষের দাবি-দাওয়া আদায়ের আন্দোলন-বিক্ষোভের চাপে একরকম অচল হয়ে পড়ে প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড।

গণঅভ্যুত্থান সংক্রান্ত বিশেষ সেলের খসড়া তালিকা অনুযায়ী, আন্দোলনে ৮৫৮ জন নিহত এবং সাড়ে ১১ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন।
কোটা সংস্কার পর্ব: দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা ছিল। তবে এর হার ও ধরন বিভিন্ন সময়ে পরিবর্তিত হয়েছে।

২০১৮ সাল পর্যন্ত ৫৬ শতাংশ পদে কোটার ভিত্তিতে নিয়োগের সুযোগ ছিল। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি-নাতনিদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ, জেলাভিত্তিক ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের জন্য ১ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত ছিল।

ওই বছর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে বড় ধরনের বিক্ষোভের মুখে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা বাতিল করা হয়। তবে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে কোটা ব্যবস্থা আগের মতই বহাল রেখে জারি করা পরিপত্র।

ওই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন।

গত ৫ জুন সেই আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয় হাই কোর্ট।

ওইদিনই রায় প্রত্যাখান করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ দেখান শিক্ষার্থীরা। এরপর ৯ জুন হাই কোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।

ওই সময়ের ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ৫ জুন পরবর্তী ৬১ দিনের মধ্যে প্রথম ৪০ দিন দেশের নানা জায়গায় আন্দোলন হলেও জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে শিক্ষার্থীদের মিছিলে ছাত্রলীগের হামলা, পুলিশের এলোপাতাড়ি গুলিতে আন্দোলন সহিংস হয়ে ওঠে; শুরু হয় জ্বালাও-পোড়াও।

১ জুলাই: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক আন্দোলন শুরু হয়। বিক্ষোভ হয় ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, জগন্নাথ, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

৭ জুলাই: সারাদেশে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করা হয়। ব্যাপক বিক্ষোভ-অবরোধে অচল হয়ে যায় রাজধানী। পরের দিনও ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়।

৯ জুলাই: সারাদেশে সড়ক ও রেলপথের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সকাল-সন্ধ্যা ব্লকেড অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। কোটা বহাল রেখে দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিলে আইনজীবীর মাধ্যমে পক্ষভুক্ত হন দুই শিক্ষার্থী।

১০ জুলাই: কোটা পুনর্বহাল করে হাই কোর্টের আদেশের ওপর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা, ৭ আগস্ট পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ।

সংবাদ সম্মেলন এবং অতঃপর ১৪ জুলাই: কোটা পুনর্বহালের নির্দেশ দিয়ে হাই কোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ। ওইদিন গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্তব্য ক্ষোভ আরও উসকে দেয়। এক প্রশ্নে তিনি বলেছিলেন, “মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি পুতিরা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতি পুতিরা (চাকরি) পাবে?”

তিনি সাফ জানিয়ে দেন, কোটার সমাধান দেবে আদালত, অশান্তি হলে আইন চলবে নিজের গতিতে।

ওইদিন গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে মিছিল বের হয়। ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার, রাজাকার’ স্লোগান উঠলে পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে ওঠে।

১৫ জুলাই: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগসহ সরকার সমর্থকরা। নিরীহ ছাত্রীদের ওপর লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলার ছবি আর ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে, ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় সাধারণ মানুষ। দেয়ালে দেয়ালে স্বৈরাচারবিরোধী স্লোগান দিয়ে গ্রাফিতি আঁকা শুরু হয়।

১৬ জুলাই: আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল দায়ের। সড়ক অবরোধ, সারাদেশে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটে এবং ছয়জনের প্রাণহানি হয়।

তাদের মধ্যে একজন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আবু সাঈদ প্রাণ হারান ‘পুলিশের গুলিতে’। দুই হাত প্রসারিত করে রাখা আবু সাঈদকে গুলি করার ঘটনা ভিডিওটি মানুষের মনে ক্ষোভ সঞ্চার করে।

পরে সারাদেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ এবং কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের হল বন্ধের ঘোষণা আসে। ওই রাতেই ঢাকাসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে ছাত্রলীগ নেতাদের বের করে দিয়ে কক্ষ ভাঙচুর করা হয়।

১৭ জুলাই: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গায়েবানা জানাজা করতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়।

সেদিন বিক্ষোভের কেন্দ্র ছিল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী; উচ্চ আদালতের রায় আসা পর্যন্ত ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান তিনি।

রাতে যাত্রাবাড়ী এলাকায় সংঘাতের সূত্রপাত হয়, পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি ছোঁড়ে; নিহত হন এক সাংবাদিকসহ কয়েকজন। যাত্রাবাড়ীতে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের টোলপ্লাজা জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। ওই রাতেই বন্ধ করে দেওয়া হয় ফেইসবুক।

১৮ জুলাই: আন্দোলনে সহিংসতা অব্যাহত। মেরুল বাড্ডায় পুলিশ অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে, পরে হেলিকপ্টারে উদ্ধার করা হয়। বিটিভি ভবনে অগ্নিসংযোগ করা হয়। সেতু ভবন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ চলে।

পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে শিক্ষার্থীসহ কয়েকজন হতাহত হন। ৫৬ শতাংশের পরিবর্তে ২০ শতাংশ কোটার প্রস্তাব আওয়ামী লীগের।

আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে সরকার রাজি বলে জানান আইনমন্ত্রী। আলোচনার প্রস্তাব নাকচ করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। রাত ৯টা থেকে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়।

১৯ জুলাই: ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সংঘর্ষ, পরিস্থিতি থমথমে। মেট্রোরেল স্টেশন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজা, মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গ্রেপ্তার। ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকায় সর্বক্ষেত্রে স্থবিরতা। রাত ১২টা থেকে কারফিউ জারি। সারা দেশে সংঘর্ষে অন্তত ৫৬ জন নিহত হন।

প্রধানমন্ত্রীর ‘প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া’, দুই মন্ত্রীর পদত্যাগসহ ৯ দফা দাবি দিয়ে শাটডাউন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় তিন মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসেন আন্দোলনকারীদের তিন নেতা। সেখানে ৮ দফা দাবি তুলে ধরেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং সহসমন্বয়ক হাসিব আল ইসলাম।

বৈঠকে সরকারের তরফে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এবং তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত উপস্থিত ছিলেন।

২০ জুলাই: কারফিউয়ের মধ্যেও ঢাকা, সাভার, গাজীপুর, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘাত চলে। বহু বিক্ষোভকারী হতাহত হন।

আইনমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী ও তথ্য প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে কোটা সংস্কার আন্দোলনের তিন সমন্বয়কারীর বৈঠক হয় এদিন। আন্দোলনকারীরা আট দফা দাবি পেশ করেন। এই বৈঠক নিয়ে সমন্বয়কদের মধ্যে মতভেদের খবর আসে। সহিংসতায় ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে অন্তত ২৬ জন নিহত হন।

২১ জুলাই: আপিল বিভাগের শুনানির পর কোটা পুনর্বহাল নিয়ে হাই কোর্টের রায় বাতিল করা হয়। মেধা ৯৩ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৫ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটা ১ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গ কোটা ১ শতাংশ করার আদেশ দেয় সর্বোচ্চ আদালত। তবে সরকার চাইলে বদলানোর সুযোগ রাখা হয়।

রায়ের পরও পরিস্থিতি শান্ত না হওয়ায় কারফিউ অব্যাহত থাকে, সাধারণ ছুটির আওতায় স্বায়ত্তশাসিত, সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক-সহ আর্থিক প্রতিষ্ঠান, পোশাক কারখানাসহ সব কলকারখানা বন্ধ রাখা হয়।

২২ জুলাই: কমপ্লিট শাটডাউন ৪৮ ঘণ্টার জন্য স্থগিতের ঘোষণা দেন কোটা আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। এই সময়ের মধ্যে তারা চার দফা দাবির বাস্তবায়ন দেখার জন্য সরকারকে আলটিমেটাম দেন।

সাধারণ ছুটির মেয়াদ মঙ্গলবার পর্যন্ত বাড়ানোর ঘোষণা আসে। কারফিউও বাড়ানো হয় এদিন।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সহিংসতায় চার দিনে অন্তত ১৩১ জনের নিহত হওয়ার খবর আসে সংবাদমাধ্যমে। পাঁচ শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের খবর আসে।

২৩ জুলাই: রাতে অগ্রাধিকার বিবেচনা করে সীমিত পরিসরে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবা ফেরে। পরদিন রাতে সারা দেশে বাসাবাড়িতেও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবা সচল হয়।

২৪ জুলাই: নির্বাহী আদেশে তিনদিন সাধারণ ছুটির পর অফিস খোলে। কারফিউ শিথিলের সময় বাড়ানোয় বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত অফিস কার্যক্রম চলে।

২৬ জুলাই: আহতদের দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং ধ্বংসযজ্ঞ দেখতে বাংলাদেশ টেলিভিশনে যান শেখ হাসিনা। মেট্রোরেল স্টেশন, বিটিভি ভবনে ধ্বংসযজ্ঞ দেখে তার কান্না মানুষ ভালোভাবে নেয়নি।

পুলিশের গুলিতে শত শত মানুষের হতাহত হওয়া নিয়ে দুঃখ প্রকাশ না করে শেখ হাসিনা ওখানে গিয়ে কেঁদেছেন, তার এই ভূমিকাকে ‘নাটক’ আখ্যা দেন অনেকে। কান্নারত শেখ হাসিনার ছবি দিয়ে বানানো মিম ছড়িয়ে পড়ে, যার ক্যাপশন ছিল ‘নাটক কম কর পিও’।

ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের মজুমদারকে হেফাজতে নেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল বলেন, তাদের আটক করা হয়নি। নিরাপত্তার জন্য হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

২৭ জুলাই: প্রধানমন্ত্রী আহতদের দেখতে যাননি- এমন সমালোচনার মুখে আহতদের দেখতে পঙ্গু হাসপাতালে যান শেখ হাসিনা। বিএনপি, জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে সহিংসতার অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতি পঙ্গু করতে এই ধ্বংসযজ্ঞ।

২৮ জুলাই: কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থী আবু সাঈদসহ নিহতদের একটি অংশের পরিবারের সঙ্গে গণভবনে সাক্ষাৎ করেন শেখ হাসিনা। পরে জানা যায়, চাপের মুখে তাদের গণভবনে নিয়ে আসা হয়। আহত পুলিশ সদস্যদের দেখতে রাজারবাগের পুলিশ হাসপাতালেও যান সরকারপ্রধান।

আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় ১৪৭ মৃত্যুর তথ্য দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল। যদিও তখনকার সংবাদমাধ্যমের হিসাবে সংখ্যাটি দুই শতাধিক। ১০ দিন পর মোবাইল ইন্টারনেট ফেরে।

২৯ জুলাই: জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়ে ঐকমত্য হয় ১৪ দলীয় জোটের বৈঠকে। সেখানে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি ঘিরে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ হয়।

৩০ জুলাই: কোটা আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় নিহতদের স্মরণে সারা দেশে শোক পালন করা হয়। সেই কর্মসূচি প্রত্যাখ্যান করে ফেইসবুক প্রোফাইল লাল করার এবং চোখে কালো কাপড় বেঁধে ছবি পোস্ট করার আহ্বান জানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

৩১ জুলাই: আন্দোলনে হত্যার বিচার দাবিতে ‘মার্চ ফর জাস্টিসি’ কর্মসূচি পালিত হজয়। এ কর্মসূচি ঘিরে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘাত হয়। সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে বিক্ষোভ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পদযাত্রা ঘিরে ধস্তাধস্তি হয়।

সুষ্ঠু তদন্তে আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতা চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তথ্যানুসন্ধান দল পাঠানোর আগ্রহ দেখায় জাতিসংঘও।

১ আগস্ট: ডিবি কার্যালয় থেকে মুক্তি পান বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ৬ সমন্বয়ক। নিহতদের স্মরণে ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ শিরোনামে কর্মসূচি পালন করা হয়। এর মধ্যেও কুমিল্লা, নারায়াণগঞ্জ ও বরিশালে সংঘাত আর রক্তপাত হয়।

কোটা আন্দোলনের মধ্যে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের’ অভিযোগ এনে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্র শিবির এবং সব অঙ্গ সংগঠনকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে আওয়ামী লীগ সরকার।

২ আগস্ট: গণমিছিলে হামলা সংঘর্ষ হয়, পুলিশসহ ২ জন নিহতের খবর পাওয়া যায়।

৩ আগস্ট: আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আলোচনার প্রস্তাব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তাদের জন্য গণভবনের দরজা খোলা। সেই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেন আন্দোলনকারীরা। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বিশাল জমায়েত থেকে সরকার পতনের এক দফা দাবি আসে।

ঢাকার পরিবেশ অনেকটা শান্তিপূর্ণ থাকলেও অন্তত ১১ জেলায় হামলা, ভাঙচুর ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। অন্তত একজনের প্রাণহানি হয়।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল বলেন, প্রধানমন্ত্রী চাইলে পদত্যাগ করবেন তিনি। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন আর ‘অরাজনৈতিক নেই’। হামলা হলে আত্মরক্ষায় তার ‘জবাব’ দেওয়া হবে।

৪ আগস্ট: অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিনে মাঠে নামার ঘোষণা দেয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সারাদেশে ব্যাপক সংঘাতে শতাধিক মানুষের প্রাণহানি হয়। নিহতদের মধ্যে অন্তত ১৪ জন পুলিশ সদস্য এবং আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের ১৯ নেতাকর্মী ছিলেন।

শাহবাগে ব্যাপক জমায়েতের মধ্যে পরদিন ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবক সকলকে নিরাপদে ঘরে ফিরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় জঙ্গি হামলা হচ্ছে। জঙ্গি হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

‘৩৬ জুলাই’: শেখ হাসিনার পতনের আগের দিনও চোটপাট দেখিয়ে গেছে আওয়ামী লীগ। দলটির নিচের পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা ঘুণাক্ষরেও ধারণা পাননি যে তাদের পতন আসন্ন।

৫ আগস্ট সকালেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মাঠে নেমে পুলিশের সঙ্গে মিলে বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভকারী ওপর হামলা ও গুলি চালায়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বানে সেদিন ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে যোগ দিতে ঢাকামুখী হন হাজার হাজার ছাত্র-জনতা। সকাল ১০টার পর থেকেই উত্তরা দিয়ে ঢাকায় ঢুকতে শুরু করে সহস্র মানুষ।

দুপুর নাগাদ শেখ হাসিনার পতনের কথা শোনা যায়। পদত্যাগ করে সামরিক উড়োজাহাজে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। দেশ পরিচালনায় অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হবে বলে জানান সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
ঢাকার পথে পথে সেদিন আনন্দ মিছিল চলে। জনতা গণভবনের দখল নেয়, সেখানে চলে লুটপাট। বিভিন্ন থানায় হামলা হয়, আক্রান্ত হয় বঙ্গবন্ধু ভবন, আওয়ামী লীগ কার্যালয় এবং বহু নেতার বাড়ি।

পথে পথে মানুষের উচ্ছ্বাস, আনন্দ মিছিল ছিল ঢাকা জুড়ে। সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। পরে তিনি জাতির উদ্দেশে ভাষণে জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যত দ্রুত সম্ভব গঠন করা হবে।
ছাত্ররা বলেছিল, জুলাই মাসেই শেখ হাসিনাকে বিতাড়িত করবে তারা। ৩১ জুলাইয়ের পর থেকে তারা নতুন হিসাব শুরু করে; সেই হিসাবে ৫ আগস্ট ছিল তাদের হিসাবে ‘৩৬ জুলাই’। সৌজন্যে: বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম।