ঢাকা ১১:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫

৩৫ দিন দৌড়ে অস্ট্রেলিয়ার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে

  • আপডেট সময় : ০৭:০০:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫
  • ২ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক: যুক্তরাজ্যের দৌড়বিদ উইলিয়াম গুডজ মাত্র ৩৫ দিন দৌড়ে অস্ট্রেলিয়ার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে গেছেন বলে দাবি করেছেন।

উইলিয়ামের বয়স ৩১ বছর। ১৫ এপ্রিল তিনি পার্থের কোটসলো সৈকত থেকে দৌড় শুরু করেন। গতকাল সোমবার বিকেলে অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের ঐতিহ্যবাহী বন্ডি সৈকতে পৌঁছে তিনি তাঁর দৌড় শেষ করেন। এই ৩৫ দিনে তিনি ৩ হাজার ৮০০ কিলোমিটার পথ দৌড়েছেন।

উইলিয়ামের দল বলেছে, তিনি প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দৌড়াতেন, যা প্রায় দুটি পুরো ম্যারাথন ও একটি হাফ ম্যারাথনের সমান। উইলিয়াম ইংল্যান্ডের বেডফোর্ডশায়ারের বাসিন্দা। ২০১৮ সালে ক্যানসারে মা আমান্ডার মৃত্যুর পর ম্যারাথন দৌড়ানো শুরু করেন তিনি। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ায় ম্যারাথন দৌড়ে তিনি তহবিল সংগ্রহ করেন। ক্যানসার নিয়ে কাজ করে এমন দাতব্য প্রতিষ্ঠানে ওই অর্থ দান করেন তিনি।

উইলিয়াম দাবি করেছেন, এবার ৩৫ দিনে আড়াআড়িভাবে অস্ট্রেলিয়ার এক মাথা থেকে আরেক মাথা দৌড়ে তিনি বিশ্ব রেকর্ড গড়েছেন। অবশ্য গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষ এখনো তাঁর দাবি যাচাই-বাছাই করে তাঁকে স্বীকৃতি দেয়নি।

গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে বর্তমানে এই রেকর্ডের মালিক ক্রিস টার্নবুল। তিনি ২০২৩ সালে ৩৯ দিনের কিছু বেশি সময়ে আড়াআড়িভাবে অস্ট্রেলিয়ার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে দৌড়েছিলেন।

এর আগের বছর অস্ট্রেলিয়ার ইলেকট্রিশিয়ান নেড ব্রকম্যান একই পথ ৪৭ দিনে দৌড়ে অতিক্রম করেছিলেন। তিনি দাতব্য কাজের জন্য তহবিল সংগ্রহ করতে দৌড়েছিলেন এবং বড় অঙ্কের অর্থ সংগ্রহ করেছিলেন।

নিজের দৌড় শেষ করার ২৪ ঘণ্টা পর উইলিয়াম বিবিসিকে বলেন, ‘আমি এখন পর্যন্ত যা কিছু করেছি, তার মধ্যে সবচেয়ে কঠিন কাজ ছিল এটা।’ এই দৌড়ের সময় পথে উইলিয়ামকে ধুলাঝড়ের মধ্যে পড়তে হয়েছে, তাঁর পায়ের আঙুলের বেশ কয়েকটি নখ উপড়ে গেছে, কয়েকবার আহতও হয়েছেন। তাঁর পায়ের পাতার চামড়া ও কোষে ক্ষয় ও সংক্রমণ হয়েছিল, হাড়ে প্রচণ্ড যন্ত্রণা হয়েছিল। এসব কারণে দৃষ্টিবিভ্রমেও আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। উইলিয়াম বিবিসিকে বলেন, বিশেষ করে প্রথম ৯ দিন ছিল খুবই কঠিন। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সবকিছু ছিল দারুণ চ্যালেঞ্জিং। তবে শেষ পর্যন্ত দৌড় শেষ করতে পারার কারণে নিজেকে তাঁর আত্মবিশ্বাসে পরিপূর্ণ একজন মানুষ মনে হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের এই নাগরিক।
উইলিয়াম বলেন, পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া থেকে পূর্ব–দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত বিশাল নাল্লাবর মরুভূমি তাঁর জন্য খুবই কঠিন ও কঠোর ছিল। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো, দৌড় শেষ হওয়ার পর উইলিয়াম বলেছেন, তিনি এখন ‘বেশ স্বস্তি’ অনুভব করছেন। ফিনিশ লাইন অতিক্রম করার ঠিক পরেই এই দৌড়বিদ তাঁর প্রয়াত মায়ের স্মৃতিতে একটি ফুলের তোড়া রেখে আসেন বিখ্যাত বন্ডি সমুদ্র উপকূলে। মায়ের কথা বলতে গিয়ে গার্ডিয়ান অস্ট্রেলিয়াকে উইলিয়াম বলেন, ‘তিনি ছিলেন আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। তিনি আমার সবকিছুর জন্য গর্বিত হতেন, আবার চিন্তিতও থাকতেন।’

এই দৌড়বিদ বলেন, তাঁর মা যে সাহসিকতার সঙ্গে ক্যানসারের সঙ্গে লড়েছিলেন, সেই স্মৃতি ছিল তাঁর দৌড়ের পথে এক অনুপ্রেরণা, যা তাঁকে নিজের কষ্টকে ছাপিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।

সিডনি হেরাল্ডকে উইলিয়াম বলেন, ‘সবচেয়ে কঠিন মুহূর্তগুলোতে আমি পেছনে ফিরে তাকাই। ভাবি তিনি কেমন ছিলেন, কীভাবে পরিস্থিতি সামলেছেন, কীভাবে আমাকে সব সময় সমর্থন করেছেন।’ যুক্তরাজ্যের এই তরুণ বলেন, ‘আমার প্রায়ই মনে হয়, তিনি এখনো আমার সঙ্গে আছেন।’ টানা দৌড়ের সময় অস্ট্রেলিয়ার প্রায় সব বিখ্যাত প্রাণীই দেখেছেন উইলিয়াম, যদিও বেশির ভাগই মৃত অবস্থায় রাস্তার পাশে পড়ে ছিল। দেশটির অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও অনুভব করেছেন তিনি।

উইলিয়ামের গতি ও হৃৎস্পন্দনের তথ্য নিয়ে অবশ্য কিছু দৌড়বিদ প্রশ্ন তুলেছেন, এগুলোর নির্ভুলতা নিয়ে সন্দেহ করছেন। তবে উইলিয়ামের এজেন্ট গত সপ্তাহে কানাডিয়ার রানিং ম্যাগাজিনকে বলেন, তিনি তাঁর রেকর্ডের সত্যতা বজায় রাখছেন, তিনি প্রতিটি ধাপ নিজেই হাঁটছেন। উইলিয়াম আরো দাবি করেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে সবচেয়ে দ্রুত দৌড়ে পার হয়ে যুক্তরাজ্যের পুরুষ হিসেবে রেকর্ড গড়েছেন। লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে নিউইয়র্কে পৌঁছাতে তাঁর সময় লেগেছিল ৫৫ দিন।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

৩৫ দিন দৌড়ে অস্ট্রেলিয়ার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে

আপডেট সময় : ০৭:০০:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫

প্রত্যাশা ডেস্ক: যুক্তরাজ্যের দৌড়বিদ উইলিয়াম গুডজ মাত্র ৩৫ দিন দৌড়ে অস্ট্রেলিয়ার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে গেছেন বলে দাবি করেছেন।

উইলিয়ামের বয়স ৩১ বছর। ১৫ এপ্রিল তিনি পার্থের কোটসলো সৈকত থেকে দৌড় শুরু করেন। গতকাল সোমবার বিকেলে অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের ঐতিহ্যবাহী বন্ডি সৈকতে পৌঁছে তিনি তাঁর দৌড় শেষ করেন। এই ৩৫ দিনে তিনি ৩ হাজার ৮০০ কিলোমিটার পথ দৌড়েছেন।

উইলিয়ামের দল বলেছে, তিনি প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দৌড়াতেন, যা প্রায় দুটি পুরো ম্যারাথন ও একটি হাফ ম্যারাথনের সমান। উইলিয়াম ইংল্যান্ডের বেডফোর্ডশায়ারের বাসিন্দা। ২০১৮ সালে ক্যানসারে মা আমান্ডার মৃত্যুর পর ম্যারাথন দৌড়ানো শুরু করেন তিনি। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ায় ম্যারাথন দৌড়ে তিনি তহবিল সংগ্রহ করেন। ক্যানসার নিয়ে কাজ করে এমন দাতব্য প্রতিষ্ঠানে ওই অর্থ দান করেন তিনি।

উইলিয়াম দাবি করেছেন, এবার ৩৫ দিনে আড়াআড়িভাবে অস্ট্রেলিয়ার এক মাথা থেকে আরেক মাথা দৌড়ে তিনি বিশ্ব রেকর্ড গড়েছেন। অবশ্য গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষ এখনো তাঁর দাবি যাচাই-বাছাই করে তাঁকে স্বীকৃতি দেয়নি।

গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে বর্তমানে এই রেকর্ডের মালিক ক্রিস টার্নবুল। তিনি ২০২৩ সালে ৩৯ দিনের কিছু বেশি সময়ে আড়াআড়িভাবে অস্ট্রেলিয়ার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে দৌড়েছিলেন।

এর আগের বছর অস্ট্রেলিয়ার ইলেকট্রিশিয়ান নেড ব্রকম্যান একই পথ ৪৭ দিনে দৌড়ে অতিক্রম করেছিলেন। তিনি দাতব্য কাজের জন্য তহবিল সংগ্রহ করতে দৌড়েছিলেন এবং বড় অঙ্কের অর্থ সংগ্রহ করেছিলেন।

নিজের দৌড় শেষ করার ২৪ ঘণ্টা পর উইলিয়াম বিবিসিকে বলেন, ‘আমি এখন পর্যন্ত যা কিছু করেছি, তার মধ্যে সবচেয়ে কঠিন কাজ ছিল এটা।’ এই দৌড়ের সময় পথে উইলিয়ামকে ধুলাঝড়ের মধ্যে পড়তে হয়েছে, তাঁর পায়ের আঙুলের বেশ কয়েকটি নখ উপড়ে গেছে, কয়েকবার আহতও হয়েছেন। তাঁর পায়ের পাতার চামড়া ও কোষে ক্ষয় ও সংক্রমণ হয়েছিল, হাড়ে প্রচণ্ড যন্ত্রণা হয়েছিল। এসব কারণে দৃষ্টিবিভ্রমেও আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। উইলিয়াম বিবিসিকে বলেন, বিশেষ করে প্রথম ৯ দিন ছিল খুবই কঠিন। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সবকিছু ছিল দারুণ চ্যালেঞ্জিং। তবে শেষ পর্যন্ত দৌড় শেষ করতে পারার কারণে নিজেকে তাঁর আত্মবিশ্বাসে পরিপূর্ণ একজন মানুষ মনে হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের এই নাগরিক।
উইলিয়াম বলেন, পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া থেকে পূর্ব–দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত বিশাল নাল্লাবর মরুভূমি তাঁর জন্য খুবই কঠিন ও কঠোর ছিল। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো, দৌড় শেষ হওয়ার পর উইলিয়াম বলেছেন, তিনি এখন ‘বেশ স্বস্তি’ অনুভব করছেন। ফিনিশ লাইন অতিক্রম করার ঠিক পরেই এই দৌড়বিদ তাঁর প্রয়াত মায়ের স্মৃতিতে একটি ফুলের তোড়া রেখে আসেন বিখ্যাত বন্ডি সমুদ্র উপকূলে। মায়ের কথা বলতে গিয়ে গার্ডিয়ান অস্ট্রেলিয়াকে উইলিয়াম বলেন, ‘তিনি ছিলেন আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। তিনি আমার সবকিছুর জন্য গর্বিত হতেন, আবার চিন্তিতও থাকতেন।’

এই দৌড়বিদ বলেন, তাঁর মা যে সাহসিকতার সঙ্গে ক্যানসারের সঙ্গে লড়েছিলেন, সেই স্মৃতি ছিল তাঁর দৌড়ের পথে এক অনুপ্রেরণা, যা তাঁকে নিজের কষ্টকে ছাপিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।

সিডনি হেরাল্ডকে উইলিয়াম বলেন, ‘সবচেয়ে কঠিন মুহূর্তগুলোতে আমি পেছনে ফিরে তাকাই। ভাবি তিনি কেমন ছিলেন, কীভাবে পরিস্থিতি সামলেছেন, কীভাবে আমাকে সব সময় সমর্থন করেছেন।’ যুক্তরাজ্যের এই তরুণ বলেন, ‘আমার প্রায়ই মনে হয়, তিনি এখনো আমার সঙ্গে আছেন।’ টানা দৌড়ের সময় অস্ট্রেলিয়ার প্রায় সব বিখ্যাত প্রাণীই দেখেছেন উইলিয়াম, যদিও বেশির ভাগই মৃত অবস্থায় রাস্তার পাশে পড়ে ছিল। দেশটির অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও অনুভব করেছেন তিনি।

উইলিয়ামের গতি ও হৃৎস্পন্দনের তথ্য নিয়ে অবশ্য কিছু দৌড়বিদ প্রশ্ন তুলেছেন, এগুলোর নির্ভুলতা নিয়ে সন্দেহ করছেন। তবে উইলিয়ামের এজেন্ট গত সপ্তাহে কানাডিয়ার রানিং ম্যাগাজিনকে বলেন, তিনি তাঁর রেকর্ডের সত্যতা বজায় রাখছেন, তিনি প্রতিটি ধাপ নিজেই হাঁটছেন। উইলিয়াম আরো দাবি করেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে সবচেয়ে দ্রুত দৌড়ে পার হয়ে যুক্তরাজ্যের পুরুষ হিসেবে রেকর্ড গড়েছেন। লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে নিউইয়র্কে পৌঁছাতে তাঁর সময় লেগেছিল ৫৫ দিন।