ঢাকা ০৬:৪৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫

৩৫০০ বছর পুরানো শহরের খোঁজ মিলল পেরুতে

  • আপডেট সময় : ০৯:০৪:৩৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ জুলাই ২০২৫
  • ১২ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক: পেরুর উত্তরাঞ্চলীয় বারানকা প্রদেশে সাড়ে তিন হাজার বছর পুরানো প্রাচীন এক শহর খুঁজে পাওয়ার দাবি করেছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা।

শহরটির নাম পেনিকো। গবেষকদের অনুমান, তখনকার সময়ে গুরুত্বপূর্ণ এক বাণিজ্যকেন্দ্র ছিল এটি, যা প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষদের সঙ্গে আন্দিজ পর্বতমালা ও অ্যামাজন নদী অববাহিকার মানুষের যোগাযোগের সেতু হিসেবে কাজ করত।
পেরুর লিমা শহর থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত এ স্থানটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ছয়শ মিটার বা এক হাজার নয়শ ৭০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত। ধারণা করা হচ্ছে, খ্রিস্টপূর্ব এক হাজার আটশ থেকে এক হাজার পাঁচশ সালের মধ্যে তৈরি হয়েছিল শহরটি। ওই সময় মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ায় প্রাচীন বিভিন্ন সভ্যতারও ক্রমাগত বিকাশ ঘটছিল।
গবেষকরা বলছেন, আমেরিকার প্রাচীনতম সভ্যতা ‘ক্যারল’ সম্পর্কে নতুন ধারণা দিয়েছে তাদের এই আবিষ্কার। এ সভ্যতা কীভাবে বিকাশ লাভ করেছিল বা এর পরিণতি কী হয়েছিল সে বিষয়টির ওপরও আলোকপাত করেছে এটি। গবেষকদের প্রকাশিত ড্রোন ফুটেজে দেখা গিয়েছে, শহরের মাঝখানে পাহাড়ি ঢালের ছাদে এক গোলাকার কাঠামো রয়েছে, যার আশপাশে পাথর ও কাদামাটি দিয়ে তৈরি ভবনের ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।

এ স্থানে আট বছর ধরে গবেষণা করেছেন গবেষকরা। গবেষণায় মোট ১৮টি কাঠামোর সন্ধান মিলেছে, যার মধ্যে রয়েছে ধর্মীয় উপাসনাস্থল বা মন্দির ও আবাসিক ভবন। এ স্থানে থাকা বিভিন্ন ভবনে গবেষকরা যেসব জিনিস খুঁজে পেয়েছেন তার মধ্যে রয়েছে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত জিনিসপত্র, মানুষ ও পশুর মাটির মূর্তি এবং পুঁতি ও শামুকের খোল দিয়ে তৈরি হার। পাঁচ হাজার বছর আগে পেরুর সুপে উপত্যকায় আমেরিকার প্রাচীনতম সভ্যতা হিসেবে স্বীকৃত ‘ক্যারল’ সভ্যতা গড়ে উঠেছিল, যার কাছেই পেনিকো শহরটি অবস্থিত। ক্যারল সভ্যতায় রয়েছে ৩২টি স্মৃতিস্তম্ভ, যার মধ্যে রয়েছে বিশাল পিরামিড আকৃতির কাঠামো, উন্নত সেচভিত্তিক কৃষি ব্যবস্থা ও নগরায়িত বসতি। গবেষকদের অনুমান, ভারত, মিশর, সুমেরীয় ও চীনের সমসাময়িক অন্যান্য প্রাচীন সভ্যতার সঙ্গে এই সভ্যতার কোনো সংযোগ ছিল না।
১৯৯০-এর দশকে ক্যারল সভ্যতার খনন কাজ পরিচালনা ও সম্প্রতি পেনিকো নিয়ে এ গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন ড. রুথ শ্যাডি। তিনি বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ধ্বংস হয়ে যাওয়া ক্যারল সভ্যতার পরিণতি বোঝার জন্য এ আবিষ্কারটি গুরুত্বপূর্ণ। ড. শ্যাডি বলেছেন, পেনিকো সম্প্রদায় এমন এক কৌশলগত স্থানে বাস করত, যা উপকূল, পাহাড়ি এলাকা ও বনাঞ্চলের মতো বিভিন্ন সমাজের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিময়ের ক্ষেত্রে ছিল উপযোগী।

গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ আবিষ্কার তুলে ধরে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের গবেষক ও প্রত্নতত্ত্ববিদ মার্কো মাচাকুয়াই বলেছেন, “পেনিকো কেবল আলাদা এক প্রাচীন শহরই নয়, বরং ক্যারল সভ্যতারই ধারাবাহিক রূপ এটি। আমেরিকার অনেক গুরুত্বপূর্ণ পুরাতাত্ত্বিক আবিষ্কারের কেন্দ্রস্থল পেরু। এর মধ্যে রয়েছে আন্দিজ পর্বতের ইনকা সভ্যতার দুর্গ ‘মাচু পিচু’ ও দক্ষিণ পেরুর নাজকা মরুভূমিতে খোদাই করা রহস্যময় ‘নাজকা’ রেখা।

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান ও পরিবারের ৫৭৬ কোটি টাকা ফ্রিজ

৩৫০০ বছর পুরানো শহরের খোঁজ মিলল পেরুতে

আপডেট সময় : ০৯:০৪:৩৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ জুলাই ২০২৫

প্রত্যাশা ডেস্ক: পেরুর উত্তরাঞ্চলীয় বারানকা প্রদেশে সাড়ে তিন হাজার বছর পুরানো প্রাচীন এক শহর খুঁজে পাওয়ার দাবি করেছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা।

শহরটির নাম পেনিকো। গবেষকদের অনুমান, তখনকার সময়ে গুরুত্বপূর্ণ এক বাণিজ্যকেন্দ্র ছিল এটি, যা প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষদের সঙ্গে আন্দিজ পর্বতমালা ও অ্যামাজন নদী অববাহিকার মানুষের যোগাযোগের সেতু হিসেবে কাজ করত।
পেরুর লিমা শহর থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত এ স্থানটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ছয়শ মিটার বা এক হাজার নয়শ ৭০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত। ধারণা করা হচ্ছে, খ্রিস্টপূর্ব এক হাজার আটশ থেকে এক হাজার পাঁচশ সালের মধ্যে তৈরি হয়েছিল শহরটি। ওই সময় মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ায় প্রাচীন বিভিন্ন সভ্যতারও ক্রমাগত বিকাশ ঘটছিল।
গবেষকরা বলছেন, আমেরিকার প্রাচীনতম সভ্যতা ‘ক্যারল’ সম্পর্কে নতুন ধারণা দিয়েছে তাদের এই আবিষ্কার। এ সভ্যতা কীভাবে বিকাশ লাভ করেছিল বা এর পরিণতি কী হয়েছিল সে বিষয়টির ওপরও আলোকপাত করেছে এটি। গবেষকদের প্রকাশিত ড্রোন ফুটেজে দেখা গিয়েছে, শহরের মাঝখানে পাহাড়ি ঢালের ছাদে এক গোলাকার কাঠামো রয়েছে, যার আশপাশে পাথর ও কাদামাটি দিয়ে তৈরি ভবনের ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।

এ স্থানে আট বছর ধরে গবেষণা করেছেন গবেষকরা। গবেষণায় মোট ১৮টি কাঠামোর সন্ধান মিলেছে, যার মধ্যে রয়েছে ধর্মীয় উপাসনাস্থল বা মন্দির ও আবাসিক ভবন। এ স্থানে থাকা বিভিন্ন ভবনে গবেষকরা যেসব জিনিস খুঁজে পেয়েছেন তার মধ্যে রয়েছে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত জিনিসপত্র, মানুষ ও পশুর মাটির মূর্তি এবং পুঁতি ও শামুকের খোল দিয়ে তৈরি হার। পাঁচ হাজার বছর আগে পেরুর সুপে উপত্যকায় আমেরিকার প্রাচীনতম সভ্যতা হিসেবে স্বীকৃত ‘ক্যারল’ সভ্যতা গড়ে উঠেছিল, যার কাছেই পেনিকো শহরটি অবস্থিত। ক্যারল সভ্যতায় রয়েছে ৩২টি স্মৃতিস্তম্ভ, যার মধ্যে রয়েছে বিশাল পিরামিড আকৃতির কাঠামো, উন্নত সেচভিত্তিক কৃষি ব্যবস্থা ও নগরায়িত বসতি। গবেষকদের অনুমান, ভারত, মিশর, সুমেরীয় ও চীনের সমসাময়িক অন্যান্য প্রাচীন সভ্যতার সঙ্গে এই সভ্যতার কোনো সংযোগ ছিল না।
১৯৯০-এর দশকে ক্যারল সভ্যতার খনন কাজ পরিচালনা ও সম্প্রতি পেনিকো নিয়ে এ গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন ড. রুথ শ্যাডি। তিনি বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ধ্বংস হয়ে যাওয়া ক্যারল সভ্যতার পরিণতি বোঝার জন্য এ আবিষ্কারটি গুরুত্বপূর্ণ। ড. শ্যাডি বলেছেন, পেনিকো সম্প্রদায় এমন এক কৌশলগত স্থানে বাস করত, যা উপকূল, পাহাড়ি এলাকা ও বনাঞ্চলের মতো বিভিন্ন সমাজের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিময়ের ক্ষেত্রে ছিল উপযোগী।

গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ আবিষ্কার তুলে ধরে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের গবেষক ও প্রত্নতত্ত্ববিদ মার্কো মাচাকুয়াই বলেছেন, “পেনিকো কেবল আলাদা এক প্রাচীন শহরই নয়, বরং ক্যারল সভ্যতারই ধারাবাহিক রূপ এটি। আমেরিকার অনেক গুরুত্বপূর্ণ পুরাতাত্ত্বিক আবিষ্কারের কেন্দ্রস্থল পেরু। এর মধ্যে রয়েছে আন্দিজ পর্বতের ইনকা সভ্যতার দুর্গ ‘মাচু পিচু’ ও দক্ষিণ পেরুর নাজকা মরুভূমিতে খোদাই করা রহস্যময় ‘নাজকা’ রেখা।