ঢাকা ০২:০৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫

৩১০ টাকায় শুরু করে লাখপতি তানজিলা

  • আপডেট সময় : ১১:৫৭:০১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • ৮৫ বার পড়া হয়েছে

নারী শিশু প্রতিবেদন : তানজিলা আক্তার। শিল্প, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের শহর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জন্ম ও বেড়ে উঠা। পরিবারের ছোট মেয়ে হলেও শ্বশুরবাড়িতে বড় বউ তিনি। শিক্ষাজীবনে শেষ করেছেন প্রাণীবিজ্ঞানে মাস্টার্স। বর্তমানে তিনি একজন ই-কমার্স উদ্যোক্তা।
৩১০ টাকা পুঁজিতে উদ্যোগ শুরু করেছিলেন তানজিলা, যা এখন প্রায় লক্ষাধিক টাকায় দাঁড়িয়েছে। অনলাইনে ব্যবসার শুরুটা ছিলো হাতে বানানো গয়না দিয়ে। এছাড়াও তার ফেসবুক পেজ ‘ফড়িং মেলা-ভড়ৎরহম সবষধ’-এর সিগনেচার বা মূল পণ্য মাটির জিনিস ছিল। দেশীয় কাপড় (শাড়ি, পাঞ্জাবি) ও নিজের করা ব্লক বাটিকের পণ্য নিয়েও ব্যবসা করছেন তানজিলা।
নিজের ব্যবসার গল্প বলতে গিয়ে তানজিলা বলেন, ‘ব্যবসার শুরুটা তেমন সহজ ছিল না। কেননা প্রাণীবিজ্ঞানের ছাত্রী হওয়াতে ব্যবসা নিয়ে তেমন কিছু জানতাম না। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে ব্যবসা নির্ভর ফেসবুক গ্রুপ উইতে (উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম) যুক্ত হই। উইতে অন্যদের লেখা দেখে ২০২০ এর মার্চে আমার উদ্যোগ শুরু করি। করোনাকালে দেশের অবস্থা যখন খারাপ, ঠিক তখনই উদ্যোগের শুরু।’
বিসিএস ক্যাডার হওয়ার ইচ্ছে ছিল জানিয়ে তানজিলা বলেন, ‘পড়াশোনায় সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কিন্তু উদ্যোগ শুরু করার পর মনে হলো আমি চাকরি করব না। আমার জন্য যেন অনেকের কর্মসংস্থান হয় সেই কাজটায় করব। উইতে তখন দেশীয় পণ্য নিয়ে ব্যবসা শুরু করি। এরপর উই’র বিভিন্ন ওয়ার্কশপ বিশেষ করে মাস্টারক্লাশ সিরিজগুলোতে উপস্থিত থেকে ধীরে ধীরে শিখতে পারি ই-কমার্স ব্যবসার খুঁটিনাটি।’
‘এছাড়াও আমি ক্রাফটিং পছন্দ করতাম। সবাই বলতো, এত সুন্দর কাজ পারো; চাইলে এ নিয়ে উদ্যোক্তা হতে পারো। এভাবেই নিজের শখের কাজকে ব্যবসায় রূপান্তর করি। গয়না নিয়ে শুরু হলেও আমার সিগনেচার পণ্য মাটির তৈরি আসবাবপত্র। মাটির এমন পণ্য আমাদের দেশীয় ঐতিহ্য হওয়াই এর প্রতি আমার মূল ফোকাস ছিল বেশি। মাটির জিনিস নিয়ে ব্যবসা শুরুর করার দুই মাস পরই লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করতে পারি। আমার উদ্যোগের মাটির পণ্য দেশের বাইরেও (সুইজারল্যান্ড ও নিউইয়র্ক)-এ পাঠিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘ব্যবসার শুরুর দিকে নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হলেও পরিবারের ভূমিকা-সাপোর্ট ছিল অনেক বেশি। তবে আমি আমার কোন বন্ধুদের সাপোর্ট পাইনি। ব্যবসায় যাবতীয় সহযোগিতা করেছে আমার স্বামী। ওর সাপোর্ট না পেলে হয়ত এতদূর আসতে পারতাম না। তাছাড়া বাবার বাড়ি আর শ্বশুরবাড়ির দিক দিয়ে তেমন বাধা ছিলো না। পারিবারিক সাপোর্ট খুব বেশি না হলেও যতটুকু পেয়েছি তা দিয়ে আমি আমার গন্তব্যে যেতে পারব ইনশাআল্লাহ।’
তানজিলার উদ্যোগ আগে শুধু নিজেকে ঘিরেই ছিলো। কিন্তু বর্তমানে ব্যবসাকে শুধু নিজের মাঝেই সীমাবদ্ধ রাখতে চান না তিনি। দেশের অনেক পিছিয়ে পড়া নারী রয়েছে, যাদের তানজিলা হস্তশিল্প প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। বাটিক এবং গয়না বানানোর প্রশিক্ষণ দিয়ে দেশের কিছু নারীদের স্বাবলম্বী হতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানও রাখছেন তিনি। হস্তশিল্প প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নারীদের স্বাবলম্বী করা তার স্বপ্ন পূরণের একটি অংশ। এছাড়াও নিজের উদ্যোগের পণ্য দেশের গ-িতে পেরিয়ে বিশ্বে বিচরণ করার স্বপ্ন দেখেন তানজিলা। এর জন্যই প্রতিনিয়ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তিনি।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

৩১০ টাকায় শুরু করে লাখপতি তানজিলা

আপডেট সময় : ১১:৫৭:০১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২২

নারী শিশু প্রতিবেদন : তানজিলা আক্তার। শিল্প, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের শহর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জন্ম ও বেড়ে উঠা। পরিবারের ছোট মেয়ে হলেও শ্বশুরবাড়িতে বড় বউ তিনি। শিক্ষাজীবনে শেষ করেছেন প্রাণীবিজ্ঞানে মাস্টার্স। বর্তমানে তিনি একজন ই-কমার্স উদ্যোক্তা।
৩১০ টাকা পুঁজিতে উদ্যোগ শুরু করেছিলেন তানজিলা, যা এখন প্রায় লক্ষাধিক টাকায় দাঁড়িয়েছে। অনলাইনে ব্যবসার শুরুটা ছিলো হাতে বানানো গয়না দিয়ে। এছাড়াও তার ফেসবুক পেজ ‘ফড়িং মেলা-ভড়ৎরহম সবষধ’-এর সিগনেচার বা মূল পণ্য মাটির জিনিস ছিল। দেশীয় কাপড় (শাড়ি, পাঞ্জাবি) ও নিজের করা ব্লক বাটিকের পণ্য নিয়েও ব্যবসা করছেন তানজিলা।
নিজের ব্যবসার গল্প বলতে গিয়ে তানজিলা বলেন, ‘ব্যবসার শুরুটা তেমন সহজ ছিল না। কেননা প্রাণীবিজ্ঞানের ছাত্রী হওয়াতে ব্যবসা নিয়ে তেমন কিছু জানতাম না। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে ব্যবসা নির্ভর ফেসবুক গ্রুপ উইতে (উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম) যুক্ত হই। উইতে অন্যদের লেখা দেখে ২০২০ এর মার্চে আমার উদ্যোগ শুরু করি। করোনাকালে দেশের অবস্থা যখন খারাপ, ঠিক তখনই উদ্যোগের শুরু।’
বিসিএস ক্যাডার হওয়ার ইচ্ছে ছিল জানিয়ে তানজিলা বলেন, ‘পড়াশোনায় সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কিন্তু উদ্যোগ শুরু করার পর মনে হলো আমি চাকরি করব না। আমার জন্য যেন অনেকের কর্মসংস্থান হয় সেই কাজটায় করব। উইতে তখন দেশীয় পণ্য নিয়ে ব্যবসা শুরু করি। এরপর উই’র বিভিন্ন ওয়ার্কশপ বিশেষ করে মাস্টারক্লাশ সিরিজগুলোতে উপস্থিত থেকে ধীরে ধীরে শিখতে পারি ই-কমার্স ব্যবসার খুঁটিনাটি।’
‘এছাড়াও আমি ক্রাফটিং পছন্দ করতাম। সবাই বলতো, এত সুন্দর কাজ পারো; চাইলে এ নিয়ে উদ্যোক্তা হতে পারো। এভাবেই নিজের শখের কাজকে ব্যবসায় রূপান্তর করি। গয়না নিয়ে শুরু হলেও আমার সিগনেচার পণ্য মাটির তৈরি আসবাবপত্র। মাটির এমন পণ্য আমাদের দেশীয় ঐতিহ্য হওয়াই এর প্রতি আমার মূল ফোকাস ছিল বেশি। মাটির জিনিস নিয়ে ব্যবসা শুরুর করার দুই মাস পরই লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করতে পারি। আমার উদ্যোগের মাটির পণ্য দেশের বাইরেও (সুইজারল্যান্ড ও নিউইয়র্ক)-এ পাঠিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘ব্যবসার শুরুর দিকে নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হলেও পরিবারের ভূমিকা-সাপোর্ট ছিল অনেক বেশি। তবে আমি আমার কোন বন্ধুদের সাপোর্ট পাইনি। ব্যবসায় যাবতীয় সহযোগিতা করেছে আমার স্বামী। ওর সাপোর্ট না পেলে হয়ত এতদূর আসতে পারতাম না। তাছাড়া বাবার বাড়ি আর শ্বশুরবাড়ির দিক দিয়ে তেমন বাধা ছিলো না। পারিবারিক সাপোর্ট খুব বেশি না হলেও যতটুকু পেয়েছি তা দিয়ে আমি আমার গন্তব্যে যেতে পারব ইনশাআল্লাহ।’
তানজিলার উদ্যোগ আগে শুধু নিজেকে ঘিরেই ছিলো। কিন্তু বর্তমানে ব্যবসাকে শুধু নিজের মাঝেই সীমাবদ্ধ রাখতে চান না তিনি। দেশের অনেক পিছিয়ে পড়া নারী রয়েছে, যাদের তানজিলা হস্তশিল্প প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। বাটিক এবং গয়না বানানোর প্রশিক্ষণ দিয়ে দেশের কিছু নারীদের স্বাবলম্বী হতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানও রাখছেন তিনি। হস্তশিল্প প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নারীদের স্বাবলম্বী করা তার স্বপ্ন পূরণের একটি অংশ। এছাড়াও নিজের উদ্যোগের পণ্য দেশের গ-িতে পেরিয়ে বিশ্বে বিচরণ করার স্বপ্ন দেখেন তানজিলা। এর জন্যই প্রতিনিয়ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তিনি।