ঢাকা ০৪:৪৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১০ অগাস্ট ২০২৫

৩০ বছর ধরে জঙ্গলে বসবাস

  • আপডেট সময় : ০৯:০২:৪৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • ৯৮ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্র সিঙ্গাপুর বিশ্বের সবচেয়ে বেশি নগরীর দেশ হিসেবেও পরিচিত। দেশটিতে আকাশছোঁয়া অট্টালিকা আর বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টের কোনো অভাব নেই। কিন্তু এই বিলাসবহুল দেশটিতেই কেউ বছরের পর বছর জঙ্গলে বাস করছেন এমন খবরে নিশ্চয়ই অবাক হবেন?
কিন্তু অবাক হলেও সত্যি যে, বিশ্বের অন্যতম ধনী এই দেশটিতে প্রায় তিন দশক ধরে অস্থায়ী আশ্রয় গড়ে তুলেছেন তিনি। ওই ব্যক্তি ৩০ বছর ধরে জঙ্গলে বাস করছেন। তবে এই জীবনটাই তিনি বেশ উপভোগ করছেন। ওহ গো সেং নামের ওই ব্যক্তির সঙ্গে দেখা হওয়ার পর প্রথমেই আপনি তার উজ্জ্বল চোখে আকৃষ্ট হবেন।
তার বয়স এখন ৭৯ বছর। কিন্তু তার বয়সের অনেক মানুষের চেয়েই তাকে কম বয়স্ক মনে হয়। চলতি মাসের শুরুতে সিঙ্গাপুরের জঙ্গলে ওহের বসবাসের ঘটনা ভাইরাল হয়ে যায়। এই ঘটনায় অনেকেই অবাক হয়ে যান।
অনেকেই প্রশ্ন তোলেন যে, তাকে কেনো আরও সহায়তা দেওয়া হলো না। অনেকেই কৌতূহল প্রকাশ করেছেন যে, তিনি ৩০ বছর ধরে সবার অলক্ষ্যে এমন জীবনযাপন কিভাবে করতে পেরেছেন?
গত বছরের বড় দিনের উৎসবে কর্মকর্তাদের কাছে ধরা পড়েন ওহ। কোনো লাইসেন্স ছাড়াই তিনি শাক-সবজি বিক্রি করছিলেন। নিজের বাগানে হওয়া শাক-সবজি এবং মরিচ বিক্রি করছিলেন তিনি। আগে বিভিন্ন বাজারে ফুল বিক্রি করতেন তিনি। কিন্তু করোনা মহামারিতে সেই কাজ হারান।
কর্মকর্তারা তার জিনিসপত্র জব্দ করেন। সে সময় ভিভিয়ান প্যান নামের এক দাতব্য কর্মী তাদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি পুরো ঘটনা দেখেন। ভিভিয়ান জানান, এই ঘটনা দেখে কর্মকর্তাদের ওপর তার খুব রাগ হয় এবং ওহোর জন্য মায়া জন্মায়। তিনি চাননি যে, ওহো সেদিন খালি হাতে ফিরুক।
তিনি বলেন, আমি এটাও বুঝতে পারছিলাম যে এটা আইন। সে কারণেই কেউ এভাবে রাস্তায় কিছু বিক্রি করতে পারবেন না। তখন তিনি ওই ঘটনা ভিডিও করে ফেসবুকে পোস্ট করেন। মুহূর্তেই ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে যায়। ওহোর দুর্দশার বিষয়টি স্থানীয় এক সাংসদের নজরে আসে।
পরবর্তীতে ওই সাংসদ জানতে পারেন যে, ওহোর জীবনে আরও অনেক অজানা বিষয় আছে। তিনি দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে একাকী জঙ্গলে বসবাস করছেন। কিন্তু বহু বছর আগে সুনগেই তেনগাহ গ্রামে পরিবারের সঙ্গেই থাকতেন ওহ।
১৯৮০ সালে সেখানে উঁচু উঁচু ভবন নির্মাণের কারণে অনেক কিছুই বদলে যায়। সে সময় সেখানকার বেশিরভাগ মানুষকেই নতুন বাড়ি দিয়েছিল সরকার। কিন্তু নিজের থাকার জন্য কোনো ব্যবস্থাই করতে পারেননি ওহ।
তবে তার ভাই ঠিকই সরকারি একটি ফ্ল্যাট নিতে পেরেছিলেন। ওহকে সেখানে থাকতে বলেছিলেন তার ভাই। কিন্তু তিনি তার ভাইয়ের পরিবারে চাপ বাড়াতে চাননি।
তাদের পুরোনো বাড়ি যেখানে ছিল তার কাছেই একটি জঙ্গলের দিকে চলে যান তিনি। সেখানেই বাঁশ এবং কাঠ দিয়ে অস্থায়ী আশ্রয় গড়ে তুলে রাত কাটাতে শুরু করেন তিনি। তার ওই অস্থায়ী ঘরের কাছেই বাগানে চাষাবাদ করে নিজের খাবার জোগাড় করেন তিনি।
এভাবে থাকতে তার খুব একটা সমস্যা হয় না। এমনকি একাকিত্বও তার কাছে কখনো সমস্যা মনে হয়নি। কারণ তিনি তার বাগানে শাক-সবজি চাষাবাদেই ব্যস্ত থাকেন। তবে জঙ্গলে থাকার সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে ইঁদুর। তাকেও মাঝে মাঝে ইঁদুরের জন্য বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হয়। তিনি যে শুধু সেখানেই থাকেন তা নয়। বরং, মাঝে মাঝে কোনো কাজ খুঁজে পেলে সেগুলোও তিনি করেছেন।
তার এক স্বজন জানিয়েছে, তিনি কোথায় থাকেন এ কথা জানতে চাইলে সব সময়ই বলতেন, বাগানে বাস করেন।
সিঙ্গাপুরে আশ্রয়হীন মানুষ খুব একটা দেখা যায় না।
বর্তমানে চালক হিসেবে কাজ করছেন ওহ। বিদেশি কর্মীদের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যান। আর এর ফাঁকেই নিজের বাগানের কাজও করছেন।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

৩০ বছর ধরে জঙ্গলে বসবাস

আপডেট সময় : ০৯:০২:৪৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২২

প্রত্যাশা ডেস্ক : দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্র সিঙ্গাপুর বিশ্বের সবচেয়ে বেশি নগরীর দেশ হিসেবেও পরিচিত। দেশটিতে আকাশছোঁয়া অট্টালিকা আর বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টের কোনো অভাব নেই। কিন্তু এই বিলাসবহুল দেশটিতেই কেউ বছরের পর বছর জঙ্গলে বাস করছেন এমন খবরে নিশ্চয়ই অবাক হবেন?
কিন্তু অবাক হলেও সত্যি যে, বিশ্বের অন্যতম ধনী এই দেশটিতে প্রায় তিন দশক ধরে অস্থায়ী আশ্রয় গড়ে তুলেছেন তিনি। ওই ব্যক্তি ৩০ বছর ধরে জঙ্গলে বাস করছেন। তবে এই জীবনটাই তিনি বেশ উপভোগ করছেন। ওহ গো সেং নামের ওই ব্যক্তির সঙ্গে দেখা হওয়ার পর প্রথমেই আপনি তার উজ্জ্বল চোখে আকৃষ্ট হবেন।
তার বয়স এখন ৭৯ বছর। কিন্তু তার বয়সের অনেক মানুষের চেয়েই তাকে কম বয়স্ক মনে হয়। চলতি মাসের শুরুতে সিঙ্গাপুরের জঙ্গলে ওহের বসবাসের ঘটনা ভাইরাল হয়ে যায়। এই ঘটনায় অনেকেই অবাক হয়ে যান।
অনেকেই প্রশ্ন তোলেন যে, তাকে কেনো আরও সহায়তা দেওয়া হলো না। অনেকেই কৌতূহল প্রকাশ করেছেন যে, তিনি ৩০ বছর ধরে সবার অলক্ষ্যে এমন জীবনযাপন কিভাবে করতে পেরেছেন?
গত বছরের বড় দিনের উৎসবে কর্মকর্তাদের কাছে ধরা পড়েন ওহ। কোনো লাইসেন্স ছাড়াই তিনি শাক-সবজি বিক্রি করছিলেন। নিজের বাগানে হওয়া শাক-সবজি এবং মরিচ বিক্রি করছিলেন তিনি। আগে বিভিন্ন বাজারে ফুল বিক্রি করতেন তিনি। কিন্তু করোনা মহামারিতে সেই কাজ হারান।
কর্মকর্তারা তার জিনিসপত্র জব্দ করেন। সে সময় ভিভিয়ান প্যান নামের এক দাতব্য কর্মী তাদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি পুরো ঘটনা দেখেন। ভিভিয়ান জানান, এই ঘটনা দেখে কর্মকর্তাদের ওপর তার খুব রাগ হয় এবং ওহোর জন্য মায়া জন্মায়। তিনি চাননি যে, ওহো সেদিন খালি হাতে ফিরুক।
তিনি বলেন, আমি এটাও বুঝতে পারছিলাম যে এটা আইন। সে কারণেই কেউ এভাবে রাস্তায় কিছু বিক্রি করতে পারবেন না। তখন তিনি ওই ঘটনা ভিডিও করে ফেসবুকে পোস্ট করেন। মুহূর্তেই ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে যায়। ওহোর দুর্দশার বিষয়টি স্থানীয় এক সাংসদের নজরে আসে।
পরবর্তীতে ওই সাংসদ জানতে পারেন যে, ওহোর জীবনে আরও অনেক অজানা বিষয় আছে। তিনি দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে একাকী জঙ্গলে বসবাস করছেন। কিন্তু বহু বছর আগে সুনগেই তেনগাহ গ্রামে পরিবারের সঙ্গেই থাকতেন ওহ।
১৯৮০ সালে সেখানে উঁচু উঁচু ভবন নির্মাণের কারণে অনেক কিছুই বদলে যায়। সে সময় সেখানকার বেশিরভাগ মানুষকেই নতুন বাড়ি দিয়েছিল সরকার। কিন্তু নিজের থাকার জন্য কোনো ব্যবস্থাই করতে পারেননি ওহ।
তবে তার ভাই ঠিকই সরকারি একটি ফ্ল্যাট নিতে পেরেছিলেন। ওহকে সেখানে থাকতে বলেছিলেন তার ভাই। কিন্তু তিনি তার ভাইয়ের পরিবারে চাপ বাড়াতে চাননি।
তাদের পুরোনো বাড়ি যেখানে ছিল তার কাছেই একটি জঙ্গলের দিকে চলে যান তিনি। সেখানেই বাঁশ এবং কাঠ দিয়ে অস্থায়ী আশ্রয় গড়ে তুলে রাত কাটাতে শুরু করেন তিনি। তার ওই অস্থায়ী ঘরের কাছেই বাগানে চাষাবাদ করে নিজের খাবার জোগাড় করেন তিনি।
এভাবে থাকতে তার খুব একটা সমস্যা হয় না। এমনকি একাকিত্বও তার কাছে কখনো সমস্যা মনে হয়নি। কারণ তিনি তার বাগানে শাক-সবজি চাষাবাদেই ব্যস্ত থাকেন। তবে জঙ্গলে থাকার সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে ইঁদুর। তাকেও মাঝে মাঝে ইঁদুরের জন্য বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হয়। তিনি যে শুধু সেখানেই থাকেন তা নয়। বরং, মাঝে মাঝে কোনো কাজ খুঁজে পেলে সেগুলোও তিনি করেছেন।
তার এক স্বজন জানিয়েছে, তিনি কোথায় থাকেন এ কথা জানতে চাইলে সব সময়ই বলতেন, বাগানে বাস করেন।
সিঙ্গাপুরে আশ্রয়হীন মানুষ খুব একটা দেখা যায় না।
বর্তমানে চালক হিসেবে কাজ করছেন ওহ। বিদেশি কর্মীদের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যান। আর এর ফাঁকেই নিজের বাগানের কাজও করছেন।