নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএনপি থেকে বেরিয়ে আসা নেতাদের দল তৃণমূল বিএনপি দ্বাদশ জাতীয় সংসদে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এক্ষেত্রে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়েছে দলটি। গতকাল বৃহস্পতিবার নির্বাচন ভবনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে এমন কথা বলেন দলটির নেতারা। বৈঠকে সিইসির সঙ্গে অন্য নির্বাচন কমিশনার ও ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসন শমসের মবিন চৌধুরী, মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকার ও তৃণমূল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা নাজমুল হুদার মেয়ে ও দলটির নির্বাহী চেয়ারপারসন অন্তরা সেলিমা হুদাসহ ১৮ সদস্যের প্রতিনিধি দল উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের পর শমসের মোবিন চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, তারা ১২ দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য বলেছেন এবং ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের কাছে লিখিত দাবির কপি সরবরাহ করেন। এতে বলা হয়েছে, সংবিধানে নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া প্রদত্ত দায়িত্ব ও ক্ষমতা সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হবে। নির্বাচনের সময় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নির্বাচন কাজে নিয়োজিত যা নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে এরকম প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নির্বাচন কমিশনের হাতে থাকতে হবে। বিশেষ করে জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি), ওসি (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) বদলিসহ প্রয়োজনীয় যে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা থাকতে হবে। নির্বাচনকালীন প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের প্রতি সমান সুযোগ সৃষ্টি অর্থাৎ লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। যদি কোনো দল বা প্রার্থী ন্যায্য দাবি বা অভিযোগ করে দ্রুত সময়ে তা সমাধানের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সমাজের বড় একটি অংশ ভোট বিমুখ হয়ে পড়েছে। তারা ভোটদানে বিরত থাকছে। যা গণতন্ত্রের জন্য খুবই খারাপ দৃষ্টান্ত। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ভোট প্রত্যেক নাগরিকের পবিত্র দায়িত্ব। তাদের ভোটদানে উৎসাহিত করতে হবে এবং ভোটের গুরুত্ব বোঝাতে হবে, প্রয়োজনে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স, প্রিন্ট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম নিতে হবে। নির্বাচনের দিন প্রত্যেকটি কেন্দ্রে সিসি টিভির ব্যবস্থা করতে হবে। নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও জোরদার করতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা যেতে পারে, এতে জনগণের আস্থা অর্জিত হবে। এছাড়া ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি, প্রত্যেকটি কেন্দ্র যেন ঝুঁকিমুক্ত থাকে তার ব্যবস্থাকরণ, ভোটের ফলাফল প্রতিটি কেন্দ্রে কেন্দ্রে ঘোষণা, প্রিজাইডিং অফিসারের সই করা ফলাফল সিট প্রত্যেক প্রার্থীর প্রতিনিধির কাছে সরবরাহ, দেশি-বিদেশি মিডিয়াসহ প্রত্যেক প্রার্থী বা তার মনোনীত ব্যক্তির সামনে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা, বেশি বেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষক যেন আসে সেই ব্যবস্থা নেওয়া, নির্বাচনের কয়েকদিন আগে ও পরে কয়েকদিন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও প্রার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
কারও ছত্রছায়ায় নির্বাচন করছি না: শমসের মোবিন
কারও ছত্রছায়ায় আমরা নির্বাচন করছি না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি ছেড়ে আসা তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসন শমসের মোবিন চৌধুরী। গতকাল বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের কাছে এমন মন্তব্য করেন। শমসের মোবিন চৌধুরী বলেন, দল হিসেবে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সময় বলে দেবে ভবিষ্যতে কি হবে। এজন্য তৃনমূল বিএনপির পক্ষ থেকে আমাদের কিছু প্রস্তাব কমিশনে তুলে ধরেছি। তিনি বলেন, সুস্থ রাজনীতি হলে বাংলাদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। তবে তার জন্য প্রয়োজন একটি অবাধ সুষ্ঠু ও জনগণের অংশগ্রহণমূলক শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। সেই দায়িত্ব সম্পূর্ণ রূপে বর্তায় নির্বাচন কমিশনের ওপর। বাংলাদেশের জনগণ যাতে নির্বাচনমুখী হতে পারে। যাতে নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা রাখতে পারে। ফলাফল মেনে নিতে পারে। সেইভাবে একটা নির্বাচন বাংলাদেশের জনগণ দেখতে চায়। আগামী নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সব দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকাটা জরুরি। শমসের মোবিন চৌধুরী বলেন, নির্বাচন কমিশনকে জোড়ালোভাবে একটা প্রস্তাব দিয়েছি, সেটা হলো বুথে বুথে সিসিটিভি বসানো। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এটা সম্ভব নয়। কারণ ৪২ হাজার ভোটকেন্দ্রে বুথ হবে কয়েক লাখ। প্রতিটি ক্ষেত্রে সেটা বসানো সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলেন, আমরা নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুত। তবে এই মূহুর্তে আমরা কমিশনের প্রত্যাশা শুনলাম। আমরা নিজেরা পর্যবেক্ষণ করব, তারপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব। বিএনপির সাবেক এ নেতা বলেন, প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলকে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে বসা উচিত। তারা তাদের কথা তুলে ধরুক। আশা করছি, নির্বাচন কমিশন সেই ভূমিকা রাখতে পারবে। তিনি বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার সম্প্রতি বলেছেন, অতীতে ২০১৪ ও ১৮ নির্বাচনের কারণে বর্তমান কমিশনের ওপর বিশেষ চাপ সৃষ্টি হয়েছে। তারা একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দিতে পারবে। তৃনমূল বিএনপি কমপ্লিট মনিটরিং অফ ইলেকশন চায়, যেন জনপ্রশাসন সেইভাবে মনিটরিং করে। যেখানে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে, এজেন্টের ওপর আক্রমণ হচ্ছে সেসব অভিযোগ যদি তুলে ধরতে পারি, তারা যেন তাতক্ষনিকভাবে সেগুলো ব্যবস্থা নেয়।
সাবেক এই পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, এই নির্বাচন কমিশনের অধীনেই আগামী নির্বাচন হবে। সেটা নিয়ে কোনো বিতর্ক তৃণমূল বিএনপিতে নেই। সংবিধান যে ক্ষমতা দিয়েছে তা যেন অক্ষরে অক্ষরে পালন করে। তাহলে জনগণ মেনে নেবে। তিনি বলেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে নির্বাচন কমিশনের প্রতিটি পদক্ষেপ পর্যবেক্ষণ করব। তৃণমূল বিএনপি কবে নির্বাচনে অংশ নেবে সেই সিদ্ধান্ত অচিরেই জানতে পাবেন। রি নির্বাচন নিয়ে জনগণের মনে অনেক শঙ্কা। এই শঙ্কা দূর করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, নির্বাচন প্রতিহত করার ক্ষমতা সংবিধান জনগণকে দেয়নি। আপনি নিজেও অংশ নিতে পারবেন। সেই অধিকার আপনার আছে। কিন্তু আমাকে আপনি বাধা দিতে পারেন না। সে অধিকার জনগণ আপনাকে দেয় নাই। যারা প্রতিহত করবে তারা কিন্তু সংবিধান লঙ্ঘন করবে। দেশের আইন লঙ্ঘন করবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে বৈঠকে অন্য নির্বাচন কমিশনার ও ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। আর তৃণমূল বিএনপির অন্যদের মধ্যে মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকার, দলটির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার মেয়ে ও দলটির নির্বাহী চেয়ারপারসন অন্তরা সেলিমা হুদাসহ ১৮ সদস্যের প্রতিনিধি দল উপস্থিত ছিলেন।
























