ঢাকা ০৫:০৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫

‘২৫ বছর থাকি বড় মাছ খালি কাটাই হইছে, প্যাটোত জোটে না’

  • আপডেট সময় : ১১:১৬:৩৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ এপ্রিল ২০২২
  • ৭৯ বার পড়া হয়েছে

রংপুর প্রতিনিধি : রাবেয়া খাতুনের বয়স ৬৭ বছর। ৩০ বছর আগে স্বামী মহিরউদ্দিন মারা গেছেন। একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দিয়ে তাঁর সঙ্গেই থাকেন তিনি। অভাব-অনটনের সংসার। আছে দুঃখ-কষ্ট। নিজের ও মেয়ের সংসারে সাহায্য করতে বাজারে মাছ কেটে দেওয়ার কাজ শুরু করেন। সেখান থেকে আয় হলেও আক্ষেপ করে বললেন, ‘প্রত্যেক দিন এত বড় বড় মাছ কাটি দেও। কিন্তু কপালোত বড় মাছ খাওয়া জোটে না।’
রংপুর সিটি বাজারে যেখানে মাছ বিক্রি করা হয়, তার পাশে একটু উঁচু জায়গায় সকাল থেকেই মাছ কাটার কাজ শুরু হয় রাবেয়ার। তাঁর আদি বাড়ি নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার মাগুড়া গাড়াগ্রাম হলেও দীর্ঘদিন ধরে নগরের কুকুরুল এলাকায় আছেন। নিজের কোনো জমিজমা নেই। নেই বসতভিটা। থাকেন মেয়ের সংসারেই। স্বামী মহিরউদ্দিন দিনমজুর ছিলেন।
২৫ বছর থাকি এই জায়গাত বসিয়া মানুষের মাছ কাটি দেও। কত মানুষের যে মাছ কাটি দিছোও (দিয়েছেন), তার হিসাব নাই। এক বেলা মাছ কাটিয়া আয় হয় ২০০-৩০০ টাকা। সেই টাকা থাকি ৬০ টাকা মাছ কাটার জায়গা ভাড়া দেওয়া লাগে।
রাবেয়া খাতুন (৬৭)
বয়স ৬৭ হলেও শরীর এখনো ভালো আছে রাবেয়ার। তেমন কোনো অসুখও নেই। একটি প্রিন্টের শাড়ি পরে একমনে মাছ কাটার কাজ করেই চলেছেন। বাজার করতে আসা অনেকেই তাঁকে চেনেন। কথা বলতে গেলেই তাঁর সময় চলে যায়। এরপরও সবার সঙ্গে আধো আধো স্বরে কথা বলেন। দরদাম তেমন একটা করা লাগে না। কারণ সবাই জানেন, মাছ কাটায় কত টাকা দিতে হবে।
সম্প্রতি এক সকালে বাজারে মাছ কাটার সময় একটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলেন রাবেয়া। বলেন, ‘২৫ বছর থাকি এই জায়গাত বসিয়া মানুষের মাছ কাটি দেও। কত মানুষের যে মাছ কাটি দিছোও (দিয়েছেন), তার হিসাব নাই। এক বেলা মাছ কাটিয়া আয় হয় ২০০-৩০০ টাকা। সেই টাকা থাকি ৬০ টাকা মাছ কাটার জায়গা ভাড়া দেওয়া লাগে।’
রাবেয়া আরও বলেন, ‘কত বড় বড় মাছ কাটনো। নদীর মাছ কাটি দেনো। খালি চোখ দিয়া দেখা হইলো। মাগুর, শিং, শোল, বাছা, সরপুঁটি, তেলাপিয়া, ট্যাংরা, রুই, কাতলা মাছ। কিন্তু বড় মাছ খালি কাটাই হইছে। প্যাটোত জোটে না বড় মাছ।’
প্রকারভেদে মাছ কাটার একেক দর। তবে ছোট মাছ কাটতে সময় লাগে বেশি। দামও কম পাওয়া যায়। মাটির মধ্যে একটি কাঠের ওপর বসে দীর্ঘক্ষণ কষ্ট করে মাছ কাটাকাটি করতে করতে কোমর লেগে যায় রাবেয়ার। কিন্তু কোনো উপায় থাকে না। মাছ কেটে দেওয়ার তাগাদা থাকে। সামান্য টাকা পাওয়া যায়। তবে কেউ কেউ খুশি হয়ে কিছু টাকা বেশি দিলেও তা প্রতিদিন হয় না বলে জানান রাবেয়া খাতুন। আর কয়েক দিন পরে ঈদ। এই ঈদে নতুন শাড়ির আবদার করে বলেন, ‘একখান নতুন শাড়ি পাইলে ঈদের দিন পরনু হয়।’

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

‘২৫ বছর থাকি বড় মাছ খালি কাটাই হইছে, প্যাটোত জোটে না’

আপডেট সময় : ১১:১৬:৩৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ এপ্রিল ২০২২

রংপুর প্রতিনিধি : রাবেয়া খাতুনের বয়স ৬৭ বছর। ৩০ বছর আগে স্বামী মহিরউদ্দিন মারা গেছেন। একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দিয়ে তাঁর সঙ্গেই থাকেন তিনি। অভাব-অনটনের সংসার। আছে দুঃখ-কষ্ট। নিজের ও মেয়ের সংসারে সাহায্য করতে বাজারে মাছ কেটে দেওয়ার কাজ শুরু করেন। সেখান থেকে আয় হলেও আক্ষেপ করে বললেন, ‘প্রত্যেক দিন এত বড় বড় মাছ কাটি দেও। কিন্তু কপালোত বড় মাছ খাওয়া জোটে না।’
রংপুর সিটি বাজারে যেখানে মাছ বিক্রি করা হয়, তার পাশে একটু উঁচু জায়গায় সকাল থেকেই মাছ কাটার কাজ শুরু হয় রাবেয়ার। তাঁর আদি বাড়ি নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার মাগুড়া গাড়াগ্রাম হলেও দীর্ঘদিন ধরে নগরের কুকুরুল এলাকায় আছেন। নিজের কোনো জমিজমা নেই। নেই বসতভিটা। থাকেন মেয়ের সংসারেই। স্বামী মহিরউদ্দিন দিনমজুর ছিলেন।
২৫ বছর থাকি এই জায়গাত বসিয়া মানুষের মাছ কাটি দেও। কত মানুষের যে মাছ কাটি দিছোও (দিয়েছেন), তার হিসাব নাই। এক বেলা মাছ কাটিয়া আয় হয় ২০০-৩০০ টাকা। সেই টাকা থাকি ৬০ টাকা মাছ কাটার জায়গা ভাড়া দেওয়া লাগে।
রাবেয়া খাতুন (৬৭)
বয়স ৬৭ হলেও শরীর এখনো ভালো আছে রাবেয়ার। তেমন কোনো অসুখও নেই। একটি প্রিন্টের শাড়ি পরে একমনে মাছ কাটার কাজ করেই চলেছেন। বাজার করতে আসা অনেকেই তাঁকে চেনেন। কথা বলতে গেলেই তাঁর সময় চলে যায়। এরপরও সবার সঙ্গে আধো আধো স্বরে কথা বলেন। দরদাম তেমন একটা করা লাগে না। কারণ সবাই জানেন, মাছ কাটায় কত টাকা দিতে হবে।
সম্প্রতি এক সকালে বাজারে মাছ কাটার সময় একটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলেন রাবেয়া। বলেন, ‘২৫ বছর থাকি এই জায়গাত বসিয়া মানুষের মাছ কাটি দেও। কত মানুষের যে মাছ কাটি দিছোও (দিয়েছেন), তার হিসাব নাই। এক বেলা মাছ কাটিয়া আয় হয় ২০০-৩০০ টাকা। সেই টাকা থাকি ৬০ টাকা মাছ কাটার জায়গা ভাড়া দেওয়া লাগে।’
রাবেয়া আরও বলেন, ‘কত বড় বড় মাছ কাটনো। নদীর মাছ কাটি দেনো। খালি চোখ দিয়া দেখা হইলো। মাগুর, শিং, শোল, বাছা, সরপুঁটি, তেলাপিয়া, ট্যাংরা, রুই, কাতলা মাছ। কিন্তু বড় মাছ খালি কাটাই হইছে। প্যাটোত জোটে না বড় মাছ।’
প্রকারভেদে মাছ কাটার একেক দর। তবে ছোট মাছ কাটতে সময় লাগে বেশি। দামও কম পাওয়া যায়। মাটির মধ্যে একটি কাঠের ওপর বসে দীর্ঘক্ষণ কষ্ট করে মাছ কাটাকাটি করতে করতে কোমর লেগে যায় রাবেয়ার। কিন্তু কোনো উপায় থাকে না। মাছ কেটে দেওয়ার তাগাদা থাকে। সামান্য টাকা পাওয়া যায়। তবে কেউ কেউ খুশি হয়ে কিছু টাকা বেশি দিলেও তা প্রতিদিন হয় না বলে জানান রাবেয়া খাতুন। আর কয়েক দিন পরে ঈদ। এই ঈদে নতুন শাড়ির আবদার করে বলেন, ‘একখান নতুন শাড়ি পাইলে ঈদের দিন পরনু হয়।’