ঢাকা ০১:২২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৪ মার্চ ২০২৫

২৪ লাখ শিশুর প্রাণ বাঁচানো জেমস হ্যারিসনের মৃত্যু

  • আপডেট সময় : ০৫:৩৮:২২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ মার্চ ২০২৫
  • ৭ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক: যার রক্তরসে বেঁচে গেছে ২৪ লাখ শিশুর প্রাণ, অস্ট্রেলিয়ার সেই জেমস হ্যারিসন আর নেই। তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।

তার পরিবার সোমবার (৩ মার্চ) জানিয়েছে, অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের একটি নার্সিং হোমে ঘুমন্ত অবস্থায় গত ১৭ ফেব্রুয়ারি তার মৃত্যু হয়।

বিবিসি লিখেছে, অস্ট্রেলিয়ায় ‘গাল্ডেন আর্ম’ হিসেবে পরিচিত হ্যারিসনের রক্তে বিরল অ্যান্টিবডি ছিল। যেসব গর্ভবতীর রক্তে তাদের অনাগত শিশুদের সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থাকে, সেই সব মায়েদের ওষুধ তৈরিতে ‘অ্যান্টি-ডি’ ব্যবহৃত হয়।

হ্যারিসনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অস্ট্রেলিয়ান রেড ক্রস ব্লাড সার্ভিস বলেছে, ১৪ বছর বয়সে বুকে বড় ধরনের অস্ত্রোপচারের সময় রক্ত নেওয়ার পর তিনি রক্তদাতা হওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন। তিনি ১৮ বছর বয়সে রক্তরস (প্লাজমা) দান শুরু করেছিলেন, যা অব্যাহত রেখেছিলেন ৮১ বছর বয়স পর্যন্ত। দুই সপ্তাহ অন্তর তিনি রক্ত দিতেন।

বিবিসি লিখেছে, হ্যারিসন রক্তের প্লাজমা দানের বিশ্ব রেকর্ড গড়েছিলেন ২০০৫ সালে। যুক্তরাষ্ট্রের এক ব্যক্তি ২০২২ সালে তাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ওই রেকর্ড ধরে রেখেছিলেন ওই অস্ট্রেলিয়ান।

হ্যারিসনের মেয়ে ট্রেসি মেলোশিপ বলেন, কোনো খরচ বা কষ্ট ছাড়াই বিপুল সংখ্যক মানুষের জীবন বাঁচাতে পেরে বাবা গর্ববোধ করতেন। তিনি সবসময় বলতেন, রক্তদানে কোনো কষ্ট নেই এবং কারো জীবন বাঁচালে একদিন আপনিও তেমন সহায়তা পেতে পারেন।

মেলোশিপ এবং হ্যারিসনের দুই দৌহিত্রও অ্যান্টি-ডি টিকা গ্রহণ করেছেন। আমাদের মত অনেক পরিবারের কথা শুনে জেমস খুশি হয়েছিল, তার দয়ার কারণে ওইসব পরিবার টিকেছিল।

বিবিসি লিখেছে, অ্যান্টি-ডি টিকা অনাগত শিশুকে রক্তের একটি প্রাণঘাতী রোগ থেকে রক্ষা করে, যা ভ্রুণ বা নবজাতকের হিমোলাইটিক ডিজিজ বা এইচডিএফএন নামে পরিচিত। গর্ভাবস্থায় যখন মায়ের লাল রক্তকণিকার সঙ্গে অনাগতের অসামঞ্জস্যতা দেখা দেয়, তখন এই পরিস্থিতি ঘটে।

মায়ের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা তখন শিশুর রক্তকোষকে হুমকি হিসেবে দেখে এবং তাদের আক্রমণের জন্য অ্যান্টিবডি তৈরি করে। তাতে শিশুর মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে, মারাত্মক রক্তস্বল্পতা, হার্ট ফেইলিওর, এমনকি মৃত্যুর কারণ হতে পারে।

গত শতাব্দীর ষাটের দশকের মাঝামাঝিতে অ্যান্টি-ডি টিকা আসার আগে এইচডিএফএন নির্ণয় হওয়া প্রতি দুটি শিশুর মধ্যে একটি মারা যাচ্ছিল।

হ্যারিসনের রক্ত কীভাবে অ্যান্টি-ডি সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে তা স্পষ্ট নয়, তবে কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, ১৪ বছর বয়সে তার বিপুল রক্তগ্রহণের সঙ্গে সেটির যোগ থাকতে পারে। লাইফব্লাড নামে পরিচিত অস্ট্রেলিয়ান রেড ক্রস ব্লাড সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, অস্ট্রেলিয়ায় দুইশর কম অ্যান্টি-ডি দাতা রয়েছেন। তবে তারা প্রতি বছর আনুমানিক ৪৫ হাজার মা ও তাদের শিশুদের সহায়তা করেন।

ল্যাবে অ্যান্টি-ডি অ্যান্টিবডি তৈরির জন্য অস্ট্রেলিয়ার ওয়াল্টার অ্যান্ড এলিজা হল ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল রিসার্চের সঙ্গে কাজ করছে লাইফব্লাড। এ কাজে তারা হ্যারিসন এবং অন্য দাতাদের রক্ত ও প্রতিরোধক কোষের প্রতিলিপি তৈরি করছে।

গবেষকরা আশা করছেন, ল্যাবে তৈরি অ্যান্টি-ডি একদিন বিশ্বজুড়ে গর্ভবতী নারীদের কাজে দিতে পারে।

লাইফব্লাডের গবেষণা পরিচালক ডেভিড আরভিং বলেন, একটি নতুন থেরাপি তৈরির চেষ্টা হচ্ছে, যা দীর্ঘদিন ধরেই আমাদের অধরা হয়ে আছে।

তিনি বলেন, এ কাজে নিয়মিত অনুদান দেবে- এমন দাতার অভাব রয়েছে; যারা পর্যাপ্ত গুণমান ও পরিমাণে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে সক্ষম।

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

২৪ লাখ শিশুর প্রাণ বাঁচানো জেমস হ্যারিসনের মৃত্যু

আপডেট সময় : ০৫:৩৮:২২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ মার্চ ২০২৫

প্রত্যাশা ডেস্ক: যার রক্তরসে বেঁচে গেছে ২৪ লাখ শিশুর প্রাণ, অস্ট্রেলিয়ার সেই জেমস হ্যারিসন আর নেই। তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।

তার পরিবার সোমবার (৩ মার্চ) জানিয়েছে, অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের একটি নার্সিং হোমে ঘুমন্ত অবস্থায় গত ১৭ ফেব্রুয়ারি তার মৃত্যু হয়।

বিবিসি লিখেছে, অস্ট্রেলিয়ায় ‘গাল্ডেন আর্ম’ হিসেবে পরিচিত হ্যারিসনের রক্তে বিরল অ্যান্টিবডি ছিল। যেসব গর্ভবতীর রক্তে তাদের অনাগত শিশুদের সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থাকে, সেই সব মায়েদের ওষুধ তৈরিতে ‘অ্যান্টি-ডি’ ব্যবহৃত হয়।

হ্যারিসনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অস্ট্রেলিয়ান রেড ক্রস ব্লাড সার্ভিস বলেছে, ১৪ বছর বয়সে বুকে বড় ধরনের অস্ত্রোপচারের সময় রক্ত নেওয়ার পর তিনি রক্তদাতা হওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন। তিনি ১৮ বছর বয়সে রক্তরস (প্লাজমা) দান শুরু করেছিলেন, যা অব্যাহত রেখেছিলেন ৮১ বছর বয়স পর্যন্ত। দুই সপ্তাহ অন্তর তিনি রক্ত দিতেন।

বিবিসি লিখেছে, হ্যারিসন রক্তের প্লাজমা দানের বিশ্ব রেকর্ড গড়েছিলেন ২০০৫ সালে। যুক্তরাষ্ট্রের এক ব্যক্তি ২০২২ সালে তাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ওই রেকর্ড ধরে রেখেছিলেন ওই অস্ট্রেলিয়ান।

হ্যারিসনের মেয়ে ট্রেসি মেলোশিপ বলেন, কোনো খরচ বা কষ্ট ছাড়াই বিপুল সংখ্যক মানুষের জীবন বাঁচাতে পেরে বাবা গর্ববোধ করতেন। তিনি সবসময় বলতেন, রক্তদানে কোনো কষ্ট নেই এবং কারো জীবন বাঁচালে একদিন আপনিও তেমন সহায়তা পেতে পারেন।

মেলোশিপ এবং হ্যারিসনের দুই দৌহিত্রও অ্যান্টি-ডি টিকা গ্রহণ করেছেন। আমাদের মত অনেক পরিবারের কথা শুনে জেমস খুশি হয়েছিল, তার দয়ার কারণে ওইসব পরিবার টিকেছিল।

বিবিসি লিখেছে, অ্যান্টি-ডি টিকা অনাগত শিশুকে রক্তের একটি প্রাণঘাতী রোগ থেকে রক্ষা করে, যা ভ্রুণ বা নবজাতকের হিমোলাইটিক ডিজিজ বা এইচডিএফএন নামে পরিচিত। গর্ভাবস্থায় যখন মায়ের লাল রক্তকণিকার সঙ্গে অনাগতের অসামঞ্জস্যতা দেখা দেয়, তখন এই পরিস্থিতি ঘটে।

মায়ের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা তখন শিশুর রক্তকোষকে হুমকি হিসেবে দেখে এবং তাদের আক্রমণের জন্য অ্যান্টিবডি তৈরি করে। তাতে শিশুর মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে, মারাত্মক রক্তস্বল্পতা, হার্ট ফেইলিওর, এমনকি মৃত্যুর কারণ হতে পারে।

গত শতাব্দীর ষাটের দশকের মাঝামাঝিতে অ্যান্টি-ডি টিকা আসার আগে এইচডিএফএন নির্ণয় হওয়া প্রতি দুটি শিশুর মধ্যে একটি মারা যাচ্ছিল।

হ্যারিসনের রক্ত কীভাবে অ্যান্টি-ডি সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে তা স্পষ্ট নয়, তবে কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, ১৪ বছর বয়সে তার বিপুল রক্তগ্রহণের সঙ্গে সেটির যোগ থাকতে পারে। লাইফব্লাড নামে পরিচিত অস্ট্রেলিয়ান রেড ক্রস ব্লাড সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, অস্ট্রেলিয়ায় দুইশর কম অ্যান্টি-ডি দাতা রয়েছেন। তবে তারা প্রতি বছর আনুমানিক ৪৫ হাজার মা ও তাদের শিশুদের সহায়তা করেন।

ল্যাবে অ্যান্টি-ডি অ্যান্টিবডি তৈরির জন্য অস্ট্রেলিয়ার ওয়াল্টার অ্যান্ড এলিজা হল ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল রিসার্চের সঙ্গে কাজ করছে লাইফব্লাড। এ কাজে তারা হ্যারিসন এবং অন্য দাতাদের রক্ত ও প্রতিরোধক কোষের প্রতিলিপি তৈরি করছে।

গবেষকরা আশা করছেন, ল্যাবে তৈরি অ্যান্টি-ডি একদিন বিশ্বজুড়ে গর্ভবতী নারীদের কাজে দিতে পারে।

লাইফব্লাডের গবেষণা পরিচালক ডেভিড আরভিং বলেন, একটি নতুন থেরাপি তৈরির চেষ্টা হচ্ছে, যা দীর্ঘদিন ধরেই আমাদের অধরা হয়ে আছে।

তিনি বলেন, এ কাজে নিয়মিত অনুদান দেবে- এমন দাতার অভাব রয়েছে; যারা পর্যাপ্ত গুণমান ও পরিমাণে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে সক্ষম।