নিজস্ব প্রতিবেদক : ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় দেওয়া রায় নিয়ে বড়োসড়ো প্রশ্ন তুলেছেন ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ। তারেক রহমানসহ সব আসামি খালাস পাওয়ায় তার প্রশ্ন, ‘তাহলে এই জঘণ্য আক্রমণ এবং হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী কে?’
সোমবার (২ ডিসেম্বর) দুপুর ১টার দিকে বিবিসি বাংলার একটি প্রতিবেদনের স্ক্রিন শট নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে শেয়ার করে এই প্রশ্ন তুলেছেন সোহেল তাজ। প্রতিবেদনের শিরোনাম, ‘২১ শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত সব আসামি খালাস, বিচারিক আদালতের রায় অবৈধ: হাইকোর্ট।’ স্ক্রিন শটটি শেয়ার করে ক্যাপশনে তাজউদ্দিনপুত্রের প্রশ্ন, ‘তাহলে এই জঘন্য আক্রমণ এবং হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী কে?’ তিনি লিখেছেন, ‘হতভাগা একটা দেশ বাংলাদেশ- যেই দেশে বিচার ব্যবস্থার উপর জনগণের আস্থা থাকে না, সেই দেশ কোনোদিন উন্নতি করতে পারবে না। কারণ একটি সমৃদ্ধশালী দেশ গড়তে লাগে সুশাসন, আর সুশাসন কায়েমের পূর্বশর্ত হচ্ছে ন্যায়বিচার এবং আইনের শাসন।’
‘কিন্তু যুগ যুগ ধরে বাংলাদেশের রাজনীতির কালচার সব কিছু ধ্বংস করে দিয়েছে ও একেক দল/গোষ্ঠী একেকবার ক্ষমতায় আসে, আর তাদের মত করে বিচারব্যবস্থাকে ম্যানিপুলেট করে। সাধারণ মানুষ দিশেহারা/অসহায়- জানে না কোনটা সত্য আর কোনটা বানোয়াট।’
সবশেষে বিঃ দ্রঃ দিয়ে সোহেল তাজের ফের প্রশ্ন, ‘কে দায়ী?’ তিনি লেখেন, ‘বিএনপি সরকারের সময় জজ মিয়া কাহিনি, আবার ১/১১ সরকারের সময় শাইখ আব্দুর রহমান এবং আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তারেক রহমান।’ অর্থাৎ, সবশেষে সোহেল তাজ যেটা বুঝিয়েছেন তা হলো, বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনাকে জজ মিয়া কাহিনি বলে উড়িয়ে দিয়েছে, ১/১১’র সরকার দায় চাপিয়েছে শাইখ আব্দুর রহমানের উপর। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের চোখে ঘটনার মাস্টারমাইন্ড তারেক রহমান।
প্রসঙ্গত, বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা হয়। এতে ২৪ জন নিহত ও প্রায় ৩০০ জন আহত হন। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা ওই হামলায় অল্পের জন্য রক্ষা পান। এই ঘটনার পর মামলা দায়ের করা হয়। ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এই মামলার (হত্যা ও বিস্ফোরক মামলা) রায় দেন। রায়ে বিএনপির সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন আদালত।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম ও শেখ আবদুস সালাম ২০২১ সালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে ১৮ জন পলাতক এবং ৩১ জন কারাগারে আছেন। রায়ের পর ২০১৮ সালেই হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স আসে। পাশাপাশি দণ্ডিত কারাবন্দিরা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আপিল (জেল আপিল) দায়ের করেন। গত ৩১ অক্টোবর বহুল আলোচিত এ মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি শুরু হয়। এ মামলায় বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বকে সম্পৃক্ত করা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে বারবার দাবি করে আসছিল দলটি। অবশেষে রোববার বহুল আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার ডেথ রেফারেন্স, আপিল ও জেল আপিলের রায়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ সব আসামিকে খালাস দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে এ মামলায় বিচারিক আদালতের দেওয়া রায় বাতিল করেন উচ্চ আদালত।
রোববার বেলা পৌনে ১২টার দিকে বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, ২১ আগস্ট কে গ্রেনেড সরবরাহ করেছে তা অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেননি কোনো তদন্ত কর্মকর্তা। এছাড়া কে গ্রেনেড মেরেছে তাও বলেননি কোনো সাক্ষী। আলোচিত এই রায়ের এক দিন পরই নিজের অভিব্যক্তি জানিয়ে পোস্ট দিলেন সোহেল তাজ।