বিশ্বজুড়ে নারী-পুরুষের আয়বৈষম্য স্পষ্ট। তা থেকে বাদ নেই নারী ক্রীড়াবিদরাও। তবে এমন বৈষম্যকে পাশ কাটিয়ে বড় অঙ্কের পারিশ্রমিক নিয়ে সারা বিশ্বের নজর কেড়েছেন বেশ কয়েকজন নারী ক্রীড়াবিদ। ২০২৪ সালে সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক নেওয়া এমন ২০ ক্রীড়াবিদের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে বিখ্যাত সাময়িকী ফোর্বস। শীর্ষ বেতনভোগী নারী ক্রীড়াবিদের ১১ জনই টেনিস তারকা, ৩ জন গলফ তারকা। এ ছাড়া আছেন দুজন বাস্কেটবল ও একজন ফুটবল তারকা। আরও আছেন জিমন্যাস্ট, স্কিয়ার ও ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়। এ বিষয় নিয়ে এবারের প্রধান ফিচার
ফোর্বস বলছে, তালিকায় থাকা নারী ক্রীড়াবিদদের মধ্যে ১১ জনের এ বছর আয় ছিল ১ কোটি ডলারের বেশি। এবারই প্রথম আটজনের বেশি নারী ক্রীড়াবিদ বার্ষিক পারিশ্রমিক পাওয়ার ক্ষেত্রে কোটি ডলারের অঙ্ক ছাড়িয়ে গেলেন। আবার তালিকাভুক্ত ক্রীড়াবিদদের ১৭ জনেরই বয়স ৩০ বছরের নিচে। শীর্ষ পারিশ্রমিক তালিকার ১০ নারী ক্রীড়াবিদ হলেরÑ
কোকো গফ: মার্কিন টেনিস তারকা কোকো গফ। চলতি বছরের জুলাই মাসে প্যারিস অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি যুক্তরাষ্ট্র দলের সহপতাকা বহনকারী ছিলেন। গ্রীষ্মে তার খেলায় কিছতা ছন্দপতন হলেও শরতে তিনি আবার তার সেরাটা নিয়ে ফিরে আসেন, জিতে নেন চায়না ওপেন ও সৌদি আরবের রিয়াদে অনুষ্ঠিত ডব্লিউটিএর ফাইনাল। সর্বশেষ বিজয় তাকে ৪৮ লাখ ডলারের চেক এনে দিয়েছিল। তবে ২০ বছর বয়সি এ তারকা মাঠের বাইরে আরও বেশি অর্থ উপার্জন করেছেন। সম্প্রতি তিনি চুলের যত্নের বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন ও বিপণন ব্র্যান্ড ক্যারলস ডটার, ফ্যানাটিকস ও নেকেড জুসের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারত্ব চুক্তি করেন। চলতি বছর গফ আনুমানিক ৩ কোটি ৪৪ লাখ ডলার আয় করেছেন, যা প্রায় ৪১২ কোটি ৬৬ লাখ টাকার সমান।
ইগা সিওনতেক: পোলিশ টেনিস তারকা ইগা সিওনতেক ২০২৩ সালে ২ কোটি ৩৯ লাখ ডলার নিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি অর্থ উপার্জনকারী নারী ক্রীড়াবিদদের তালিকায় শীর্ষে ছিলেন। এ বছর তিনি ২ কোটি ৩৮ লাখ ডলার উপার্জনের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছেন। মাঠের ভেতরের চেয়ে মাঠের বাইরে থেকেই তার বেশি আয় হয়েছে। এ বছর ইগার পৃষ্ঠপোষকদের লম্বা তালিকায় যুক্ত হয়েছে ল্যানকম ও লেগো নামের আরও দুটি ব্র্যান্ড। ২৩ বছর বয়সি এ তারকা খেলোয়াড় চলতি বছর কিছু প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও পড়েছেন। তিনি কোচের কাছ থেকে আলাদা হয়ে গেছেন। এ ছাড়া টানা ৫০ সপ্তাহ পর তিনি মেয়েদের টেনিস এককে প্রথম স্থান থেকে ছিটকে পড়েছেন।
আইলিন গু: চীনা বংশোদ্ভূত মার্কিন স্কিয়ার (স্কিচালক) আইলিন গু। লুই ভুইতো, টিফানি অ্যান্ড কোংসহ বিভিন্ন পশ্চিমা অভিজাত ব্র্যান্ডের সঙ্গে চুক্তি রয়েছে তার। এই তারকা খেলোয়াড়ের সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে পোরশে, আন্তা স্পোর্টসওয়্যার, বোসিডেং জ্যাকেট ও মেংনিউ ডেইরির মতো চীনা ব্র্যান্ডগুলো। চলতি মাসে তিনি ১৬তম স্কি বিশ্বকাপ জিতেছেন। এই ক্রীড়াবিদ চলতি বছর ২ কোটি ২১ লাখ ডলার আয় করেছেন।
সিনওয়েন ঝেং: চীনের জনপ্রিয় টেনিস খেলোয়াড় সিনওয়েন ঝেং। গত দুই বছরে তিনি ডব্লিউটিএ ট্যুরের বর্ষসেরা নবাগত এবং সবচেয়ে সমৃদ্ধ খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতেছিলেন। তিনি ২০২৪ সালে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনালে পৌঁছান এবং প্যারিস অলিম্পিকে একক বিভাগে সোনা জিতে ক্যারিয়ারের অনন্য উচ্চতায় পৌঁছান। এই সাফল্য তাকে চীনে বিশাল তারকাখ্যাতি এনে দিয়েছে। এরপর তিনি অডি, ল্যানকম, ভিভোসহ বিভিন্ন বিখ্যাত কোম্পানির শুভেচ্ছাদূত নির্বাচিত হন। এই ক্রীড়াবিদ চলতি বছর দুই কোটি ছয় লাখ ডলার আয় করেছেন।
আরিনা সাবালেঙ্কা: আরিনা সাবালেঙ্কা বেলারুশের পেশাদার টেনিস খেলোয়াড়। তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী ইগা সিওনতেককে পেছনে ফেলে সেরা নারী টেনিস খেলোয়াড়ের তালিকায় প্রথম স্থানে উঠে এসেছেন। অস্ট্রেলিয়ান ওপেন, ইউএস ওপেনসহ আরও দুটি টুর্নামেন্ট জিতে তিনি ডব্লিউটিএ প্লেয়ার অব দ্য ইয়ার হয়েছেন। চলতি বছর তিনি ১ কোটি ৮৭ লাখ ডলার আয় করেন। মাঠের ভেতরে ও বাইরে প্রায় সমানতালেই আয় করেছেন এই খেলোয়াড়।
নাওমি ওসাকা: নাওমি ওসাকা তার প্রথম সন্তানের জন্ম দেওয়ার পর গত বছর আর মাঠে নামেননি। তবে চলতি বছর খেলায় ফেরেন। জাপানের এ তারকা টেনিস খেলোয়াড় চারবারের গ্র্যান্ড স্লাম বিজয়ী। তার এক ডজনের বেশি স্পনসর রয়েছে। তিনি প্রযোজনা সংস্থা হানা কুমার সহপ্রতিষ্ঠাতা। নাওমি ওসাকা চলতি বছর ১ কোটি ২৯ লাখ ডলার আয় করেছেন। এ আয়ের সিংহভাগই এসেছে মাঠের বাইরের অন্যান্য কাজ থেকে। আয়ের দিক যুগ্মভাবে তালিকার ৬ নম্বরে আছেন তিনি।
এমা রাদুকানু: ২০২১ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে ইউএস ওপেন জেতেন এমা রাদুকানু। এ জয়ের পর থেকে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ, ডিওর, এইচএসবিসিসহ অনেকগুলো ব্র্যান্ডের সঙ্গে লাভজনক অংশীদারিত্ব করেন ব্রিটিশ এ টেনিস তারকা। তবে ওই জয়ের পর থেকে তিনি আঘাত, অসুস্থতাসহ নানা সমস্যায় পড়েন। আগামী বছর থেকে একজন নতুন ফিটনেস কোচকে নিয়ে তিনি নতুন করে যাত্রা শুরু করবেন। চলতি বছর শীর্ষ উপার্জনকারী নারী ক্রিড়াবিদদের তালিকায় নাওমি ওসাকার পাশাপাশি অবস্থানে আছেন এমা। এ বছর তিনি আয় করেছেন ১ কোটি ২৯ লাখ ডলার।
নেলি কোর্ডা: যুক্তরাষ্ট্রের পেশাদার গলফ খেলোয়াড় নেলি কোর্ডা। চলতি বছর এলপিজিএ ট্যুরে টানা পাঁচটি টুর্নামেন্ট এবং ঘাঁড়ে আঘাত নিয়েই সাতটি শিরোপা জিতেছেন তিনি। তিনি এলপিজিএ প্লেয়ার অব দ্য ইয়ার হয়েছেন। এ বছর তিনি ১ কোটি ২৫ লাখ ডলার আয় করেছেন। মাঠের তুলনায় মাঠের বাইরেই বেশি আয় করেছেন তিনি।
ভেনাস উইলিয়ামস: ভেনাস উইলিয়ামস মার্কিন টেনিস খেলোয়াড়। তিনি এ বছর মাত্র দুটি প্রতিযোগিতামূলক টুর্নামেন্টে খেলেছেন এবং প্রতিটিতে প্রথম রাউন্ডেই হেরেছেন। এর মধ্য দিয়ে সমাপ্তি টেনেছেন ক্যারিয়ারের। তার কিংবদন্তিতুল্য ক্যারিয়ারে রয়েছে সাতটি গ্র্যান্ড স্লাম। এ টেনিস তারকা চলতি বছর ১ কোটি ২১ লাখ ডলার আয় করেছেন।
সিমোন বাইলস: সিমোন বাইলস একজন শৈল্পিক ব্যায়ামবিদ। ২০২১ সালে টোকিও অলিম্পিকে পরাজয়ের পর চলতি বছর গ্রীষ্মকালীন খেলায় জয়ের মধ্যে দিয়ে তিনি আবার ফিরে এসেছেন। প্যারিসে তিনি তিনটি সোনা ও একটি রুপা জিতেছেন। তার প্রত্যাবর্তন নিয়ে নেটফ্লিক্সে একটি ধারাবাহিক প্রামাণ্যচিত্রও তৈরি হয়েছে। চলতি বছর ১ কোটি ১২ লাখ ডলার আয় করেছেন তিনি।
আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ