নিজস্ব প্রতিবেদক : ফরিদপুরের আলোচিত দুই হাজার কোটি টাকা পাচারের মামলায় গ্রেফতার সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খোন্দকার মোশাররফ হোসেনের ভাই খোন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবরের জামিন মঞ্জুর করেনি হাইকোর্ট। তবে তাকে কেন জামিন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। খোন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবরের জামিন চেয়ে করা আবেদন শুনানি নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজহারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে মঙ্গলবার তার জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট সৈয়দ মিজানুর রহমান। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন। এর আগে তার জামিন চেয়ে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় সোমবার (১৬ মে) তার পক্ষে জামিন আবেদন করেন আইনজীবী সৈয়দ মিজানুর রহমান। গত ২৪ মার্চ এ মামলায় খোন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবরের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেছিলেন বিচারিক আদালত। ওইদিন একই সঙ্গে ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের অব্যাহতিপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও তার ভাই ফরিদপুর প্রেস ক্লাবের বহিষ্কৃত সভাপতি ইমতিয়াজ হাসান রুবেলের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন বিচারক।
এছাড়া বরকত ও রুবেলসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন আদালত। ২৪ মার্চ ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০-এর বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের আদালতে তাদের আইনজীবী জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক তাদের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেন।
২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন। একইসঙ্গে পলাতক থাকায় খোন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবর, এ এইচ এম ফুয়াদ, ফাহাদ বিন ওয়াজেদ ওরফে ফাহিম, কামরুল হাসান ডেভিড, মুহাম্মদ আলি মিনার ও তারিকুল ইসলাম ওরফে নাসিমের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
গত ৩ মার্চ ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের অব্যাহতিপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও তার ভাই ফরিদপুর প্রেস ক্লাবের বহিষ্কৃত সভাপতি ইমতিয়াজ হাসান রুবেলসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে এ চার্জশিট জমা দেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সহকারী পুলিশ সুপার উত্তম কুমার বিশ্বাস।
চার্জশিটভুক্ত অন্য আসামিরা হলেন- ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম খন্দকার লেভী, আসিকুর রহমান ফারহান, খোন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবর, এ এইচ এম ফুয়াদ, ফাহাদ বিন ওয়াজেদ ওরফে ফাহিম, কামরুল হাসান ডেভিড, মুহাম্মদ আলি মিনার ও তারিকুল ইসলাম ওরফে নাসিম।
২০২০ সালের ২৬ জুন সিআইডির পরিদর্শক এস এম মিরাজ আল মাহমুদ বাদী হয়ে অর্থপাচারের অভিযোগে ঢাকার কাফরুল থানায় বরকত ও রুবেলের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে দুই হাজার কোটি টাকা উপার্জন ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ২০১০ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত ফরিদপুরের এলজিইডি, বিআরটিএ, সড়ক বিভাগসহ বিভিন্ন সরকারি বিভাগের ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ করে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের মালিক হন বরকত ও রুবেল। এছাড়া তারা মাদক কারবারি ও ভূমি দখল করে অবৈধ সম্পদ করেছেন। এসি ও নন-এসিসহ ২৩টি বাস, ড্রামট্রাক, বোল্ডার ও পাজেরো গাড়ির মালিক হয়েছেন। সেই সঙ্গে দুই হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেন তারা। প্রথম জীবনে দুই ভাই রাজবাড়ীর এক বিএনপি নেতার সঙ্গী ছিলেন। তখন তাদের সম্পদ বলতে কিছুই ছিল না। ১৯৯৪ সালের ২০ নভেম্বর ওই এলাকায় এক আইনজীবী খুন হন। ওই হত্যা মামলার আসামি বরকত ও রুবেল।
২০০০ কোটি টাকা পাচার: সাবেক মন্ত্রীর ভাইয়ের জামিন নিয়ে রুল
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ