ঢাকা ০৬:৪৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫

১৯ বছর অধরা ফাঁসির আসামিকে যেভাবে ধরল র‌্যাব

  • আপডেট সময় : ১১:৫৩:০৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৪ অক্টোবর ২০২২
  • ৮২ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : নারায়ণগঞ্জে ১৯ বছর আগে দশ বছরের এক শিশুকে দলবদ্ধ ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত মো. নিজামুল হক সুজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। এ মামলায় ফাঁসির দ-প্রাপ্ত সুজনসহ চার আসামি ১৯ বছর ধরে পলাতক ছিলেন।
গতকাল সোমবার ভোরে ঢাকার বাড্ডা থেকে ফাঁসির এ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে র‌্যাব-১১ অধিনায়ক লে. কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা জানান। তানভীর মাহমুদ বলেন, ‘অভিযুক্ত সুজন নিজেকে আত্মগোপন করতে জাতীয় পরিচয়পত্র ও পার্সপোটে নাম, পরিচয় ও বয়স পরিবর্তন করেছিল। একাধিকবার দেশের বাইরে গেলেও সেখান থেকে ফিরে নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপনে ছিলেন। সবশেষ বিদেশে যাবার পরিকল্পনা ছিল তার।’
জানা গেছে, ২০০৩ সালে নারায়ণগঞ্জের আলীরটেকের একটি সরিষা ক্ষেতে খাদিজা নামে ওই শিশুকে দলবেঁধে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। সেসময় আলোচিত মামলাটিতে চারজনকে অভিযুক্ত করে নিহতের ভাই বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। ২০১৮ সালে আদালত চারজনকে ফাঁসির আদেশ দেন। তবে ঘটনার দিন থেকেই অভিযুক্তরা পলাতক ছিলেন। এখনও অভিযুক্ত তিনজন পলাতক রয়েছেন। তাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব।
যেভাবে হত্যা করা হয়েছিল: দলবেঁধে ধর্ষণের পরের দিন সরিষা ক্ষেতে মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশকে জানায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে এবং তার পরিচয় শনাক্ত করে। এই ঘটনায় ভিকটিমের ভাই বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। ঘটনাটি সেসময় গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচারিত হয়।
মামলার এজাহারের বরাতে জানা গেছে, ঘটনার দিন দুপুরে ভিকটিম খাদিজা এবং তার এক প্রতিবেশী বান্ধবী আলীরটেকের মাহফিল দেখার জন্য সুজনের বাড়ীতে যায়। সুজন নিহতের দুঃসম্পর্কের আতœীয় ছিলেন। সেই সুবাদে তার (সুজন) বাড়ীতে খাওয়া-দাওয়া শেষে বান্ধবীকে নিয়ে তার খালার বাড়িতে বেড়াতে যায়। তবে রাত হয়ে যাওয়ায় তার বান্ধবী খালার বাড়িতে থেকে যায়। আর পূর্বপরিকল্পনার অংশ হিসেবে সুজন ভিকটিমকে তার বাড়ীতে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে সেখান থেকে নিয়ে আসে। পথে সুজন এবং আগে থেকে ওৎ পেতে থাকা তার তিন সহযোগী পরস্পর যোগসাজশে ভিকটিমকে জোরপূর্বক একটি সরিষা ক্ষেতে নিয়ে যায়। এসময় তারা ভিকটিমের হাত-পা, মুখ বেঁধে ফেলে এবং পালাক্রমে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের এক পর্যায়ে চারজন ভিকটিমের বুকের পাজর, হাত-পা বিকৃত করে এবং শরীরের বিভিন্নস্থানে মারাতœক জখমসহ শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। তারা এতো তাই নৃশংস ছিল যে, ভিকটিমের মৃত্যুর পরও ধর্ষণ চালিয়ে যায়। ধর্ষণ শেষে লাশটিকে সরিষা ক্ষেতে রেখে সবাই পালিয়ে যায়। পরে আদালত চার ধর্ষককে মৃত্যুদ- দেয়।
কোথায় পালিয়ে ছিলেন অভিযুক্ত: র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার সুজনের ভাষ্য মতে, ঘটনার পরপরই তিনি দেশের বিভিন্ন জেলায় আতœগোপনে ছিলেন। দীর্ঘদিন পর নারায়ণগঞ্জে এসে পরিচয় গোপন করে ২ নম্বর রেলগেটের একটি কাপড়ের দোকানে চাকরি শুরু করে। এসময় নিজের নাম এবং বয়স পরিবর্তন করে ২০১৪ সালে পাসপোর্ট ও ২০১৬ সালে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে। ২০১৭ সালে সুজন ইরাকে চলে যায়। পরবর্তীতে ২০২১ সালে দেশে ফিরে আসে। এরপর জমি বেচাকেনার ব্যবসা করেন। এবছরের মার্চে পুনরায় সংযুক্ত আরব আমিরাত যায়। তবে সেখানে তেমন সুযোগ-সুবিধা করতে না পেরে দেশে ফেরেন। এরপর বিভিন্ন জায়গায় আতœগোপনে ছিল।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

নিয়ম না মেনে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর দফতরের ১৫ গাড়িচালকের নামে ঝিলমিলে প্লট বরাদ্দ

১৯ বছর অধরা ফাঁসির আসামিকে যেভাবে ধরল র‌্যাব

আপডেট সময় : ১১:৫৩:০৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৪ অক্টোবর ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : নারায়ণগঞ্জে ১৯ বছর আগে দশ বছরের এক শিশুকে দলবদ্ধ ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত মো. নিজামুল হক সুজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। এ মামলায় ফাঁসির দ-প্রাপ্ত সুজনসহ চার আসামি ১৯ বছর ধরে পলাতক ছিলেন।
গতকাল সোমবার ভোরে ঢাকার বাড্ডা থেকে ফাঁসির এ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে র‌্যাব-১১ অধিনায়ক লে. কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা জানান। তানভীর মাহমুদ বলেন, ‘অভিযুক্ত সুজন নিজেকে আত্মগোপন করতে জাতীয় পরিচয়পত্র ও পার্সপোটে নাম, পরিচয় ও বয়স পরিবর্তন করেছিল। একাধিকবার দেশের বাইরে গেলেও সেখান থেকে ফিরে নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপনে ছিলেন। সবশেষ বিদেশে যাবার পরিকল্পনা ছিল তার।’
জানা গেছে, ২০০৩ সালে নারায়ণগঞ্জের আলীরটেকের একটি সরিষা ক্ষেতে খাদিজা নামে ওই শিশুকে দলবেঁধে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। সেসময় আলোচিত মামলাটিতে চারজনকে অভিযুক্ত করে নিহতের ভাই বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। ২০১৮ সালে আদালত চারজনকে ফাঁসির আদেশ দেন। তবে ঘটনার দিন থেকেই অভিযুক্তরা পলাতক ছিলেন। এখনও অভিযুক্ত তিনজন পলাতক রয়েছেন। তাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব।
যেভাবে হত্যা করা হয়েছিল: দলবেঁধে ধর্ষণের পরের দিন সরিষা ক্ষেতে মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশকে জানায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে এবং তার পরিচয় শনাক্ত করে। এই ঘটনায় ভিকটিমের ভাই বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। ঘটনাটি সেসময় গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচারিত হয়।
মামলার এজাহারের বরাতে জানা গেছে, ঘটনার দিন দুপুরে ভিকটিম খাদিজা এবং তার এক প্রতিবেশী বান্ধবী আলীরটেকের মাহফিল দেখার জন্য সুজনের বাড়ীতে যায়। সুজন নিহতের দুঃসম্পর্কের আতœীয় ছিলেন। সেই সুবাদে তার (সুজন) বাড়ীতে খাওয়া-দাওয়া শেষে বান্ধবীকে নিয়ে তার খালার বাড়িতে বেড়াতে যায়। তবে রাত হয়ে যাওয়ায় তার বান্ধবী খালার বাড়িতে থেকে যায়। আর পূর্বপরিকল্পনার অংশ হিসেবে সুজন ভিকটিমকে তার বাড়ীতে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে সেখান থেকে নিয়ে আসে। পথে সুজন এবং আগে থেকে ওৎ পেতে থাকা তার তিন সহযোগী পরস্পর যোগসাজশে ভিকটিমকে জোরপূর্বক একটি সরিষা ক্ষেতে নিয়ে যায়। এসময় তারা ভিকটিমের হাত-পা, মুখ বেঁধে ফেলে এবং পালাক্রমে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের এক পর্যায়ে চারজন ভিকটিমের বুকের পাজর, হাত-পা বিকৃত করে এবং শরীরের বিভিন্নস্থানে মারাতœক জখমসহ শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। তারা এতো তাই নৃশংস ছিল যে, ভিকটিমের মৃত্যুর পরও ধর্ষণ চালিয়ে যায়। ধর্ষণ শেষে লাশটিকে সরিষা ক্ষেতে রেখে সবাই পালিয়ে যায়। পরে আদালত চার ধর্ষককে মৃত্যুদ- দেয়।
কোথায় পালিয়ে ছিলেন অভিযুক্ত: র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার সুজনের ভাষ্য মতে, ঘটনার পরপরই তিনি দেশের বিভিন্ন জেলায় আতœগোপনে ছিলেন। দীর্ঘদিন পর নারায়ণগঞ্জে এসে পরিচয় গোপন করে ২ নম্বর রেলগেটের একটি কাপড়ের দোকানে চাকরি শুরু করে। এসময় নিজের নাম এবং বয়স পরিবর্তন করে ২০১৪ সালে পাসপোর্ট ও ২০১৬ সালে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে। ২০১৭ সালে সুজন ইরাকে চলে যায়। পরবর্তীতে ২০২১ সালে দেশে ফিরে আসে। এরপর জমি বেচাকেনার ব্যবসা করেন। এবছরের মার্চে পুনরায় সংযুক্ত আরব আমিরাত যায়। তবে সেখানে তেমন সুযোগ-সুবিধা করতে না পেরে দেশে ফেরেন। এরপর বিভিন্ন জায়গায় আতœগোপনে ছিল।