ঢাকা ০৯:৩৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

১৫ লাখ বছর আগের আদিম মানবের পদচিহ্ন

  • আপডেট সময় : ০৬:৩৫:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪
  • ২০ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক: কেনিয়ার একটি লেকের তীরে কাদামাটিতে পাওয়া পায়ের ছাপ থেকে গবেষকরা নতুন তথ্য উন্মোচন করেছে। এই পদচিহ্ন থেকে প্রমাণ মিলেছে, ১৫ লাখ বছর আগে সেখানে দুই ভিন্ন প্রাচীন মানব প্রজাতি পাশাপাশি বাস করত। নতুন এই গবেষণা চলতি বছরের নভেম্বরে বিজ্ঞানভিত্তিক ‘সায়েন্স’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকদের মতে, এই পায়ের ছাপগুলো মাত্র কয়েক ঘণ্টা বা সর্বোচ্চ কয়েক দিনের ব্যবধানে একই স্থানে পড়েছে।
গবেষণার সহলেখক ও বিখ্যাত প্যালিওনটোলজিস্ট লুইস লিকি জানান, ‘এই ছাপগুলো মানব বিবর্তনের দুটি শাখা, এগুলো হলো- ‘হোমো ইরেক্টাস’ ও ‘প্যারানথ্রপাস বইসি’। এর আগে জীবাশ্মের মাধ্যমে আমরা জেনেছি, এই দুই বিলুপ্ত প্রজাতি প্রায় একই সময়ে তুর্কানা বেসিনে বাস করত।
আমেরিকান মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রির প্যালিওনটোলজিস্ট উইলিয়াম হারকোর্ট-স্মিথ (গবেষণায় যুক্ত নন) বলেন, ‘জীবাশ্মের ক্ষেত্রে কয়েক হাজার বছরের পার্থক্য থাকতে পারে। তবে ফসিল পায়ের ছাপের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মুহূর্তকে সংরক্ষিত অবস্থায় পাওয়া যায়। এটি একটি চমৎকার আবিষ্কার।’
২০২১ সালে কেনিয়ার কোবি ফোরা এলাকায় এই ছাপগুলো আবিষ্কৃত হয়। গবেষকরা ধারণা করছেন, লেক তুর্কানার পূর্ব পাশে এই দুই প্রাচীন মানব প্রজাতি হয়তো একই সময়ে বা মাত্র দু-এক দিনের ব্যবধানে চলাফেরা করেছে।
গবেষণার আরেক সহলেখক পিটসবার্গের চ্যাথাম ইউনিভার্সিটির প্যালিওঅ্যানথ্রোপোলজিস্ট কেভিন হাতালা বলেন, ‘সম্ভবত তারা একে অপরকে দেখেছে, একে অপরের উপস্থিতি টের পেয়েছে। হয়তো একে অপরকে কোনো না কোনোভাবে প্রভাবিত করেছে।’ গবেষকরা পায়ের ছাপের আকারের ভিন্নতার মাধ্যমে দুই প্রজাতির পার্থক্য নির্ধারণ করতে সক্ষম হয়েছেন। হোমো ইরেক্টাসের পদচিহ্ন আধুনিক মানুষের মতো হাঁটার ধারণা দেয়, প্রথমে পায়ের গোড়ালি মাটিতে স্পর্শ করে, তারপর ওজন পায়ের পাতা ও আঙুলের ওপর বয়ে যায় এবং আবার ঠেলে দেওয়া হয়।
অন্যদিকে প্যারানথ্রপাস বইসি প্রজাতির হাঁটার ধরন সম্পূর্ণ ভিন্ন। চ্যাথামের মানব বিবর্তন বিশেষজ্ঞ এরিন মেরি উইলিয়ামস-হাতালা জানান, এই প্রজাতির পায়ের ছাপে বড় আঙুলের বাড়তি চলন ক্ষমতার ইঙ্গিত পাওয়া যায়, যা হোমো ইরেক্টাস বা আধুনিক মানুষের তুলনায় আলাদা।
গবেষকরা বলছেন, আমাদের প্রাচীন পূর্বপুরুষদের শাখা ধরার উপযোগী ছিল হাত ও পা। তবে কালক্রমে তাদের পা দুই পায়ে হাঁটার জন্য বিবর্তিত হয়েছে। এই নতুন গবেষণা আরও বেশি করে প্রমাণ করে, দুই পায়ে হাঁটা শেখা একদিনে, এক উপায়ে হয়ে ওঠেনি। বরং প্রাচীন মানুষরা বিভিন্ন উপায়ে হাঁটা, দৌড়ানো, হোঁচট খাওয়া ও পিছলে পড়ার মতো কাজ শিখেছিল।
দুই পায়ে হাঁটতে (বিপেডালিজম) শেখা একবারে নয় বরং বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় বিকশিত হয়েছে। নিউইয়র্কের আমেরিকান মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রির বিজ্ঞানী উইলিয়াম হারকোর্ট-স্মিথ বলেন, ‘বিপেডালিজমের বিভিন্ন ধরন রয়েছে, যা আমাদের পূর্বপুরুষদের চলাচলের জটিল ইতিহাসকে আরও সমৃদ্ধ করেছে।’ সূত্র: এপি।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

১৫ লাখ বছর আগের আদিম মানবের পদচিহ্ন

আপডেট সময় : ০৬:৩৫:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪

প্রত্যাশা ডেস্ক: কেনিয়ার একটি লেকের তীরে কাদামাটিতে পাওয়া পায়ের ছাপ থেকে গবেষকরা নতুন তথ্য উন্মোচন করেছে। এই পদচিহ্ন থেকে প্রমাণ মিলেছে, ১৫ লাখ বছর আগে সেখানে দুই ভিন্ন প্রাচীন মানব প্রজাতি পাশাপাশি বাস করত। নতুন এই গবেষণা চলতি বছরের নভেম্বরে বিজ্ঞানভিত্তিক ‘সায়েন্স’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকদের মতে, এই পায়ের ছাপগুলো মাত্র কয়েক ঘণ্টা বা সর্বোচ্চ কয়েক দিনের ব্যবধানে একই স্থানে পড়েছে।
গবেষণার সহলেখক ও বিখ্যাত প্যালিওনটোলজিস্ট লুইস লিকি জানান, ‘এই ছাপগুলো মানব বিবর্তনের দুটি শাখা, এগুলো হলো- ‘হোমো ইরেক্টাস’ ও ‘প্যারানথ্রপাস বইসি’। এর আগে জীবাশ্মের মাধ্যমে আমরা জেনেছি, এই দুই বিলুপ্ত প্রজাতি প্রায় একই সময়ে তুর্কানা বেসিনে বাস করত।
আমেরিকান মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রির প্যালিওনটোলজিস্ট উইলিয়াম হারকোর্ট-স্মিথ (গবেষণায় যুক্ত নন) বলেন, ‘জীবাশ্মের ক্ষেত্রে কয়েক হাজার বছরের পার্থক্য থাকতে পারে। তবে ফসিল পায়ের ছাপের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মুহূর্তকে সংরক্ষিত অবস্থায় পাওয়া যায়। এটি একটি চমৎকার আবিষ্কার।’
২০২১ সালে কেনিয়ার কোবি ফোরা এলাকায় এই ছাপগুলো আবিষ্কৃত হয়। গবেষকরা ধারণা করছেন, লেক তুর্কানার পূর্ব পাশে এই দুই প্রাচীন মানব প্রজাতি হয়তো একই সময়ে বা মাত্র দু-এক দিনের ব্যবধানে চলাফেরা করেছে।
গবেষণার আরেক সহলেখক পিটসবার্গের চ্যাথাম ইউনিভার্সিটির প্যালিওঅ্যানথ্রোপোলজিস্ট কেভিন হাতালা বলেন, ‘সম্ভবত তারা একে অপরকে দেখেছে, একে অপরের উপস্থিতি টের পেয়েছে। হয়তো একে অপরকে কোনো না কোনোভাবে প্রভাবিত করেছে।’ গবেষকরা পায়ের ছাপের আকারের ভিন্নতার মাধ্যমে দুই প্রজাতির পার্থক্য নির্ধারণ করতে সক্ষম হয়েছেন। হোমো ইরেক্টাসের পদচিহ্ন আধুনিক মানুষের মতো হাঁটার ধারণা দেয়, প্রথমে পায়ের গোড়ালি মাটিতে স্পর্শ করে, তারপর ওজন পায়ের পাতা ও আঙুলের ওপর বয়ে যায় এবং আবার ঠেলে দেওয়া হয়।
অন্যদিকে প্যারানথ্রপাস বইসি প্রজাতির হাঁটার ধরন সম্পূর্ণ ভিন্ন। চ্যাথামের মানব বিবর্তন বিশেষজ্ঞ এরিন মেরি উইলিয়ামস-হাতালা জানান, এই প্রজাতির পায়ের ছাপে বড় আঙুলের বাড়তি চলন ক্ষমতার ইঙ্গিত পাওয়া যায়, যা হোমো ইরেক্টাস বা আধুনিক মানুষের তুলনায় আলাদা।
গবেষকরা বলছেন, আমাদের প্রাচীন পূর্বপুরুষদের শাখা ধরার উপযোগী ছিল হাত ও পা। তবে কালক্রমে তাদের পা দুই পায়ে হাঁটার জন্য বিবর্তিত হয়েছে। এই নতুন গবেষণা আরও বেশি করে প্রমাণ করে, দুই পায়ে হাঁটা শেখা একদিনে, এক উপায়ে হয়ে ওঠেনি। বরং প্রাচীন মানুষরা বিভিন্ন উপায়ে হাঁটা, দৌড়ানো, হোঁচট খাওয়া ও পিছলে পড়ার মতো কাজ শিখেছিল।
দুই পায়ে হাঁটতে (বিপেডালিজম) শেখা একবারে নয় বরং বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় বিকশিত হয়েছে। নিউইয়র্কের আমেরিকান মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রির বিজ্ঞানী উইলিয়াম হারকোর্ট-স্মিথ বলেন, ‘বিপেডালিজমের বিভিন্ন ধরন রয়েছে, যা আমাদের পূর্বপুরুষদের চলাচলের জটিল ইতিহাসকে আরও সমৃদ্ধ করেছে।’ সূত্র: এপি।