ঢাকা ০২:০৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৬ জুন ২০২৫

১৫ বছরে ব্যাংক খাত থেকে ৯২ হাজার কোটি টাকা লোপাট : সিপিডি

  • আপডেট সময় : ০২:২২:১৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩
  • ১২৬ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক :অনিয়মের মাধ্যমে গত ১৫ বছরে ব্যাংকিং খাত থেকে ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা লোপাট করা হয়েছে। ২০০৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ওই অর্থ লুটপাট হয়। গতকাল শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি ২০২৩-২৪ : চলমান সংকট ও করণীয়’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, জাল কাগজপত্রের মাধ্যমে ঋণ, অস্তিত্ববিহীন প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণসহ নানা ধরনের এসব আর্থিক অনিয়ম হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে ব্যাংকে কেলেঙ্কারি বা অনিয়ম হয় সেগুলো অফিসিয়াল সূত্রে পাওয়া যায় না। সেগুলো সংবাদ মাধ্যমে আসে। গণমাধ্যমকর্মীরা সেগুলো হয়তো অফিসিয়াল সূত্রেই আনেন। এগুলোকে কম্পাইল করে ২০০৮-২০২৩ সাল পর্যন্ত গণমাধ্যমে ২৪টি ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে। এসব ঘটনায় ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। বিশাল এই অর্থ দিয়ে কী হতে পারে সেটা আপনারা হিসাব করতে পারেন। আপনারা হিসাব করতে পারেন আমাদের রাজস্ব ঘাটতি কত? সামাজিক নিরাপত্তা খাতে কত ব্যয় হচ্ছে, শিক্ষা-স্বাস্থ্য খাতে কত ব্যয় করছি। এই পরিমাণ অর্থ দিয়ে আমরা কী করতে পারতাম। তিনি বলেন, এই পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ হচ্ছে, অপচয় হচ্ছে; ব্যাংকে যে টাকা সেটা জনগণের টাকা, সেটা কীভাবে ব্যয় হচ্ছে তা চিন্তার বিষয়। সেই প্রেক্ষিতে ব্যাংকিং খাতে নিয়ম-কানুন বাস্তবায়ন করা ও সংস্কার করা একেবারেই জরুরি হয়ে পড়েছে।
প্রবৃদ্ধি নয়, সামষ্টিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে মনোযোগী হতে হবে
সিপিডি নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি যে অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, নির্বাচনের পরই সেটি ঠিক হবে না। নীতি নির্ধারকদের এটি ঠিক করতে হবে। এ জন্য প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর মোহ থেকে বের হয়ে সামষ্টিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে মনোযোগী হতে হবে। ফাহমিদা খাতুন বলেন, আমরা আগেও বলেছি প্রবৃদ্ধির হার সাড়ে ৭ শতাংশ বাস্তবসম্মত না। সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো করতে কাঠামোগত উন্নয়নের ওপর জোর দিতে হবে।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতার অভাব আছে। এসব প্রতিষ্ঠানের গুটিকয়েক, স্বার্থান্বেষী মহলের কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ বন্ধের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার প্রয়োজন। বর্তমানে যে প্রধান সমস্যা, এটি বাজার সিন্ডিকেটের ফলে তৈরি হয়েছে। এখানেও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এই সমস্যা হচ্ছে।
সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের ঋণের পরিমাণ আশংকাজনক না। কিন্তু, এই ঋণের পরিষেবা একটা চাপ সৃষ্টি করে। আমাদের রাজস্ব আয়ের পুরোটাই চলে যায় রাজস্ব ব্যয়ে। বার্ষিক উন্নয়নের পুরোটাই ঋণ নির্ভর। তখন এই ঋণ পরিষেবার জন্যই আবার ঋণ নিতে হয়। কোনো উদ্বৃত্ত নেই। পৃথিবীতে এরকম কোনো দেশ নেই। এটাকে বলে ঋণের ফাঁদ। আমাদের যেভাবেই হোক এটা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এই মুহূর্তে আর কোনো মেগা প্রকল্পে না গিয়ে প্রকল্পগুলোকে ট্রান্সপোর্ট করিডোর নয়, বরং ইকোনমিক করিডোরে রূপান্তর করতে হবে। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন করতে কাঠামোগত উন্নয়নের ওপর জোর দিতে হবে। সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, এনবিআর, বাংলাদেশ ব্যাংক, বর্ডার গার্ড, বেপজার মতো ১২টি প্রতিষ্ঠানে সংস্কার দরকার। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে বড় ধরনের সংস্কার প্রয়োজন। এবং যে ধরনের নির্বাচন হলে সংস্কার হবে, সেটির দিকে দেশ যাচ্ছে না, আমরা এমন ইঙ্গিত পাচ্ছি।

 

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

১৫ বছরে ব্যাংক খাত থেকে ৯২ হাজার কোটি টাকা লোপাট : সিপিডি

আপডেট সময় : ০২:২২:১৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক :অনিয়মের মাধ্যমে গত ১৫ বছরে ব্যাংকিং খাত থেকে ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা লোপাট করা হয়েছে। ২০০৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ওই অর্থ লুটপাট হয়। গতকাল শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি ২০২৩-২৪ : চলমান সংকট ও করণীয়’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, জাল কাগজপত্রের মাধ্যমে ঋণ, অস্তিত্ববিহীন প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণসহ নানা ধরনের এসব আর্থিক অনিয়ম হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে ব্যাংকে কেলেঙ্কারি বা অনিয়ম হয় সেগুলো অফিসিয়াল সূত্রে পাওয়া যায় না। সেগুলো সংবাদ মাধ্যমে আসে। গণমাধ্যমকর্মীরা সেগুলো হয়তো অফিসিয়াল সূত্রেই আনেন। এগুলোকে কম্পাইল করে ২০০৮-২০২৩ সাল পর্যন্ত গণমাধ্যমে ২৪টি ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে। এসব ঘটনায় ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। বিশাল এই অর্থ দিয়ে কী হতে পারে সেটা আপনারা হিসাব করতে পারেন। আপনারা হিসাব করতে পারেন আমাদের রাজস্ব ঘাটতি কত? সামাজিক নিরাপত্তা খাতে কত ব্যয় হচ্ছে, শিক্ষা-স্বাস্থ্য খাতে কত ব্যয় করছি। এই পরিমাণ অর্থ দিয়ে আমরা কী করতে পারতাম। তিনি বলেন, এই পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ হচ্ছে, অপচয় হচ্ছে; ব্যাংকে যে টাকা সেটা জনগণের টাকা, সেটা কীভাবে ব্যয় হচ্ছে তা চিন্তার বিষয়। সেই প্রেক্ষিতে ব্যাংকিং খাতে নিয়ম-কানুন বাস্তবায়ন করা ও সংস্কার করা একেবারেই জরুরি হয়ে পড়েছে।
প্রবৃদ্ধি নয়, সামষ্টিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে মনোযোগী হতে হবে
সিপিডি নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি যে অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, নির্বাচনের পরই সেটি ঠিক হবে না। নীতি নির্ধারকদের এটি ঠিক করতে হবে। এ জন্য প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর মোহ থেকে বের হয়ে সামষ্টিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে মনোযোগী হতে হবে। ফাহমিদা খাতুন বলেন, আমরা আগেও বলেছি প্রবৃদ্ধির হার সাড়ে ৭ শতাংশ বাস্তবসম্মত না। সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো করতে কাঠামোগত উন্নয়নের ওপর জোর দিতে হবে।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতার অভাব আছে। এসব প্রতিষ্ঠানের গুটিকয়েক, স্বার্থান্বেষী মহলের কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ বন্ধের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার প্রয়োজন। বর্তমানে যে প্রধান সমস্যা, এটি বাজার সিন্ডিকেটের ফলে তৈরি হয়েছে। এখানেও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এই সমস্যা হচ্ছে।
সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের ঋণের পরিমাণ আশংকাজনক না। কিন্তু, এই ঋণের পরিষেবা একটা চাপ সৃষ্টি করে। আমাদের রাজস্ব আয়ের পুরোটাই চলে যায় রাজস্ব ব্যয়ে। বার্ষিক উন্নয়নের পুরোটাই ঋণ নির্ভর। তখন এই ঋণ পরিষেবার জন্যই আবার ঋণ নিতে হয়। কোনো উদ্বৃত্ত নেই। পৃথিবীতে এরকম কোনো দেশ নেই। এটাকে বলে ঋণের ফাঁদ। আমাদের যেভাবেই হোক এটা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এই মুহূর্তে আর কোনো মেগা প্রকল্পে না গিয়ে প্রকল্পগুলোকে ট্রান্সপোর্ট করিডোর নয়, বরং ইকোনমিক করিডোরে রূপান্তর করতে হবে। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন করতে কাঠামোগত উন্নয়নের ওপর জোর দিতে হবে। সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, এনবিআর, বাংলাদেশ ব্যাংক, বর্ডার গার্ড, বেপজার মতো ১২টি প্রতিষ্ঠানে সংস্কার দরকার। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে বড় ধরনের সংস্কার প্রয়োজন। এবং যে ধরনের নির্বাচন হলে সংস্কার হবে, সেটির দিকে দেশ যাচ্ছে না, আমরা এমন ইঙ্গিত পাচ্ছি।