ঢাকা ০২:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫

১৪ বছরেই রুশোর এমআইটি-হার্ভার্ড-স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ

  • আপডেট সময় : ১০:৪৫:৫০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ অগাস্ট ২০২২
  • ৭৪ বার পড়া হয়েছে

ক্যাম্পাস ও ক্যারিয়ার ডেস্ক : বয়স মাত্র ১৪। এই বয়সেই জটিল সব গাণিতিক সমস্যার সমাধান করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে রুশো। সমাধান করছে বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের সব অঙ্ক ও বিজ্ঞানের নানা সূত্র। এই কিশোরের পুরো নাম মাহির আলি রুশো। রাজধানীর মনিপুর হাইস্কুলের নবম গ্রেডের শিক্ষার্থী রুশো। রুশোর এমন সব আগ্রহ দেখে উচ্ছ্বসিত তার বাবা-মা, স্কুলের শিক্ষকরা। তারা চান, রুশোর প্রতিভা আরও বিকশিত হোক, দেশ এবং বিশ্ব দেখুক, বাংলাদেশের এক ক্ষুদে বালক গাণিতিক আর বৈজ্ঞানিক সমাধানে সবাইকে হার মানাচ্ছে।
রুশোর বাবা-মা দুজনেই চিকিৎসক। ছোটবেলা থেকে ছেলের বিজ্ঞান আর গণিতের প্রতি ঝোঁক দেখে কিছুটা অবাক হয়েছেন। প্রথমদিকে নিজেরাও বিশ্বাস করতে চাননি। কিন্তু যখন দেখলেন, একের পর এক জটিল এবং উচ্চপর্যায়ের গাণিতিক সমস্যার সমাধান করছেন, তখন তারা ছেলের প্রতিভা বিকাশে হাতে তুলে দিতে থাকেন বইপত্র। তারা চান, ছেলে যা করছে সেটা করুক একদম জেনে-বুঝে। তার জানা-শোনায় যেন কোনো ফাঁকফোকর না থাকে। রুশোর প্রতিভার কথা বলতে গিয়ে তার বাবা সেন্ট্রাল মেডিক্যাল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান প্রফেসর মোহাম্মদ আলী বলেন, সে যখন ক্লাস ফাইভে পড়ে, তখন থেকেই তার বিজ্ঞানের প্রতি প্রচ- ঝোঁক ছিল। সেসময় আমার একটা ল্যাপটপ ছিল, সেটাও খুব বেশি ভালো ছিল না। কিন্তু একটা পর্যায়ে আমি খেয়াল করি, সে আমার ল্যাটপটে ভিডিও দেখছে। এসব ভিডিও ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, ম্যাথের ভিডিও। সবগুলো তার চেয়ে অনেক আপার লেভেলের। সেসব ক্লাসের ভিডিও দেখে। তিনি বলেন, এরপর আমি একদিন তাকে ডেকে নিয়ে বলি, বাবা তুমি যেসব ভিডিও দেখো সেসব কি তুমি বুঝো, নাকি শুধু দেখো? তার উত্তর ছিল- বাবা আমি এসবই বুঝি। এরপর তার সঙ্গে কয়েকদিন আমি নিয়মিত কথা বলি। দেখলাম আসলেই সে বোঝে। সেসময় রুশো তার বাবা-মায়ের কাছে একটি আবদার করে বসে। সে প্রতিদিন অন্তত দুই ঘণ্টা ইউটিউবে ভিডিও দেখতে চায়। প্রথমে বাবা-মা এতো সময় ভিডিও দেখায় কিছুটা আপত্তি করলেও পরে শর্ত দেয় যে, প্রতিদিনের পড়াটুকু ঠিকভাবে সেরে সকালে এক ঘণ্টা এবং রাতে এক ঘণ্টা করে ইউটিউব দেখতে পারবে। তাতেই রাজি হয় রুশো।
মোহাম্মদ আলী বলেন, তার বয়স যখন ১১ বছর, তখন সে ক্যালকুলাস এবং জ্যামিতিক বিভিন্ন সমাধান রপ্ত করে ফেলে। ১২ বছর বয়সে কলেজ পর্যায়ের গণিত ও ফিজিক্স অনায়াসে করতে পারতো রুশো। এই জানাশোনার বিষয়টা আরও বেড়ে যায় করোনাভাইরাস সংক্রমণের সময় স্কুল বন্ধ হলে। তখন অনেক বেশি সময় রুশো বিজ্ঞানের এসব বিষয়ে জানতে ব্যয় করতে থাকে। ২০২০ সালের মার্চ থেকে সে অনলাইনে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত, ক্যালকুলাস, ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি বিষয়ে অসংখ্য অনলাইন কোর্সে অংশ নেয়। তার মধ্যেই রুশো জানতে পারে অনলাইনে ‘সেন্ট জোসেফ ন্যাশনাল পাই অলিম্পিয়াড’ সম্পর্কে, অংশ নেয় এবং হয়ে যায় চ্যাম্পিয়ন। তার মনোবল বেড়ে যায়। পর্যায়ক্রমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অনলাইন কোর্সে অংশ নিতে থাকে। এখন পর্যন্ত রুশো ৫০টিরও বেশি অনলাইন কোর্স সম্পন্ন করেছে বিশ্বের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব এডিনবার্গ অন্যতম। রুশোর মা চিকিৎসক রুমা আক্তার বলেন, তাকে অনেক ছোটবেলা থেকেই দেখেছি পড়ালেখার প্রতি ভীষণ ঝোঁক। আমার জন্য যখন কোনো বই কিনেছি, তখন তার জন্যও আমি কিনেছি। আসলে সন্তানকে বুঝতে হবে। সে কী চায় সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা অনেক সময় তার চাওয়ার থেকে আমাদের চাওয়াকে বেশি গুরুত্ব দেই, যা তাদের বিকাশকে বাধা দেয়। কিশোর মাহির আলি রুশো তার অর্জনে গর্বিত। তার কাছে মনে হয়, সায়েন্স আসলে ভয়েস অফ গড, যার মধ্যে ডমিনেন্ট করে ফিজিক্স। আর এর মূলে রয়েছে ম্যাথ। যা জানার কোনো বিকল্প নেই। রুশো জানায়, সে আসলে কোনো কিছু কীভাবে, কেমন করে হচ্ছে সেটা জানতে চেয়েছে। আর এর জন্য অবশ্য পড়োশোনা এবং জ্ঞান অর্জন করতে হবে। কেউ কাউকে শেখাতে পারে না। নিজে থেকে শিখতে হয়। আমাদের সবসময় অ্যাকাডেমিক বইয়ের বাইরে পড়ার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। কেননা আমরা নিজের বই তো পড়বোই, তার বাইরে সেটা কেন হচ্ছে সেটা জানতে অন্য বইও পড়বো। আমরা আসলে যা পড়ি সেটা খুব শর্টকাট। সেখানে গভীরভাবে কোনো কিছু দেখানো হয় না। তাই সেটা জানতে হলে পড়াশোনার বিকল্প নেই।
বিভিন্ন প্রতিযোগিতা ও অর্জন
এই ক্ষুদে জিনিয়াস দেশে এবং দেশের বাইরের অসংখ্য প্রতিযোগিতা ও অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে ওপেন কনটেস্ট অলিম্পিয়াডে রুশোকে প্রতিযোগিতা করতে হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় স্কলারদের সঙ্গে এবং রুশো প্রায় সবগুলোতেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ‘ওয়ার্ল্ড গ্লোবাল চাইল্ড প্রডিজি অ্যাওয়ার্ড কমিটি’ মাহির আলি রুশোর সম্মানসূচক অর্জনগুলোর প্রসংসা করেছেন। কমিটি জানিয়েছে, তারা রুশোকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করবে। সেন্ট জোসেফ ন্যাশনাল পাই অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়ে নটরডেমের শিক্ষার্থীকে হারিয়ে হয়েছেন চ্যাম্পিয়ন। বাংলাদেশ ম্যাথমেটিক্স অলিম্পিয়াড, বাংলাদেশ ফিজিক্স অলিম্পিয়াড, জামাল নাল কেমিস্ট্রি অলিম্পিয়াড চ্যাম্পিয়ন এবং জামাল নাক্রল জ্যোতির্বিদ্যা উৎসব, ন্যাশনাল সাইবার অলিম্পিয়াড, বাংলাদেশ জ্যোতির্বিদ্যা অলিম্পিয়াডসহ অসংখ্য প্রতিযোগিতায় আঞ্চলিকভাবে বিজয়ী হয়েছে রুশো। এছাড়া বাংলাদেশ আইকিউ অলিম্পিয়াডে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে এবং ভারতের সিপিএস অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছে রুশো। বাংলাদেশ বিজ্ঞান সংগঠন থেকে ‘গুগল-আইটি অলিম্পিয়াডে চ্যাম্পিয়ন পদক পেয়েছে। দঐরমংরহহড় ইরড়ষড়মু ঙষুসঢ়রধফ’ বিজয়ীও হয় রুশো। এছাড়াও বিভিন্ন মেধা প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা এবং অর্জন
দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক দঙহষরহব চযুংরপং ঙষুসঢ়রধফ-২০২১’ এ তার দল ওহারঃধঃরড়হধষ জড়ঁহফ বিজয়ী; তার অধিনায়কত্বে ১৫ সদ্যসদ্যের একটি দল আন্তর্জাতিক দচবৎঢ়ষব গধঃয ঈড়সবঃ গবঃ’ প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান দখল করে।
ভারতে জ্যোতির্বিদ্যার সর্বোচ্চ আসর আইওএসএ-২০২১ একক প্রতিযোগিতায় গোল্ড মেডেল অর্জন করে এবং আন্তর্জাতিক আসরে দঝপযড়ড়ষ ঈড়হহবপঃরড়হ গধঃয, ঝপরবহপব অহফ অৎঃরভরপরধষ ওহঃবষষরমবহপব ঈড়হঃবংঃ’ এ স্বর্ণপদক পায়। দঝঃবসপড় রহঃবৎহধঃরড়হধষ চযুংরপং, ঈযবসরংঃৎু, ইরড়ষড়মু’ প্রদত্ত বিষয়ে দইবংঃু অধিৎফ’ পায় এবং সেরা মেধা তালিকায় থাকার গৌরব অর্জন করে।
এই মেধাবি কিশোর দেশভিত্তিক আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা দঙষিঢ়ুধ ঝপরবহপব অহফ ঞবপয ঈড়হঃবংঃ’ এ পরপর দুবার রৌপ্য, একবার স্বর্ণপদক এবং দুবার ব্রোঞ্জ পদক নিয়ে বিজয়ী হয় এবং বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জের জন্য ২০২২ সালের জুনে যুক্তরাজ্য সফরের জন্য আমন্ত্রণপত্রও পায়।
রুশো যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক অলিম্পিয়াড দএবহরঁং ঈবৎবনৎঁস ঙষুসঢ়রধফ’ থেকে আর্ট, জেনারেল নলেজ এবং সাইবারে জিনিয়াস পদক পায়।
এছাড়া সম্প্রতি হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি স্নাতকোত্তর স্টুডেন্ট কর্তৃক চালিত দওহঃবৎহধঃরড়হড়হধষ খবধফবৎংযরঢ় বঃযরপং ধহফ ষরভব ংশরষষ ঙষুসঢ়রধফ’ এ শ্রেষ্ঠ ৫০ জনের মধ্যে স্থান পেয়েছে।
গবেষণা ও প্রকাশনা
রুশো ৫০টিরও বেশি অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স শেষ করেছে এবং এমআইটি, হার্ভার্ড, স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে সনদ লাভ করেছে। রুশো বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, ক্যামব্রিজের আওতায় ম্যানুফ্যাকচার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে মাইক্রোমাস্টার্স কোর্সে অধ্যয়নরত।
একই সঙ্গে সে বিশ্বখ্যাত হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে কেমিস্ট্রিতে মাইক্রোমাস্টার্স কোর্সে সুযোগ করে নিয়েছে। ১৪ বছর বয়সে আইজেএসআর, আইওএসআর, কোয়েস্ট-এ তার অনেক জার্নাল ও গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

১৪ বছরেই রুশোর এমআইটি-হার্ভার্ড-স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ

আপডেট সময় : ১০:৪৫:৫০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ অগাস্ট ২০২২

ক্যাম্পাস ও ক্যারিয়ার ডেস্ক : বয়স মাত্র ১৪। এই বয়সেই জটিল সব গাণিতিক সমস্যার সমাধান করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে রুশো। সমাধান করছে বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের সব অঙ্ক ও বিজ্ঞানের নানা সূত্র। এই কিশোরের পুরো নাম মাহির আলি রুশো। রাজধানীর মনিপুর হাইস্কুলের নবম গ্রেডের শিক্ষার্থী রুশো। রুশোর এমন সব আগ্রহ দেখে উচ্ছ্বসিত তার বাবা-মা, স্কুলের শিক্ষকরা। তারা চান, রুশোর প্রতিভা আরও বিকশিত হোক, দেশ এবং বিশ্ব দেখুক, বাংলাদেশের এক ক্ষুদে বালক গাণিতিক আর বৈজ্ঞানিক সমাধানে সবাইকে হার মানাচ্ছে।
রুশোর বাবা-মা দুজনেই চিকিৎসক। ছোটবেলা থেকে ছেলের বিজ্ঞান আর গণিতের প্রতি ঝোঁক দেখে কিছুটা অবাক হয়েছেন। প্রথমদিকে নিজেরাও বিশ্বাস করতে চাননি। কিন্তু যখন দেখলেন, একের পর এক জটিল এবং উচ্চপর্যায়ের গাণিতিক সমস্যার সমাধান করছেন, তখন তারা ছেলের প্রতিভা বিকাশে হাতে তুলে দিতে থাকেন বইপত্র। তারা চান, ছেলে যা করছে সেটা করুক একদম জেনে-বুঝে। তার জানা-শোনায় যেন কোনো ফাঁকফোকর না থাকে। রুশোর প্রতিভার কথা বলতে গিয়ে তার বাবা সেন্ট্রাল মেডিক্যাল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান প্রফেসর মোহাম্মদ আলী বলেন, সে যখন ক্লাস ফাইভে পড়ে, তখন থেকেই তার বিজ্ঞানের প্রতি প্রচ- ঝোঁক ছিল। সেসময় আমার একটা ল্যাপটপ ছিল, সেটাও খুব বেশি ভালো ছিল না। কিন্তু একটা পর্যায়ে আমি খেয়াল করি, সে আমার ল্যাটপটে ভিডিও দেখছে। এসব ভিডিও ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, ম্যাথের ভিডিও। সবগুলো তার চেয়ে অনেক আপার লেভেলের। সেসব ক্লাসের ভিডিও দেখে। তিনি বলেন, এরপর আমি একদিন তাকে ডেকে নিয়ে বলি, বাবা তুমি যেসব ভিডিও দেখো সেসব কি তুমি বুঝো, নাকি শুধু দেখো? তার উত্তর ছিল- বাবা আমি এসবই বুঝি। এরপর তার সঙ্গে কয়েকদিন আমি নিয়মিত কথা বলি। দেখলাম আসলেই সে বোঝে। সেসময় রুশো তার বাবা-মায়ের কাছে একটি আবদার করে বসে। সে প্রতিদিন অন্তত দুই ঘণ্টা ইউটিউবে ভিডিও দেখতে চায়। প্রথমে বাবা-মা এতো সময় ভিডিও দেখায় কিছুটা আপত্তি করলেও পরে শর্ত দেয় যে, প্রতিদিনের পড়াটুকু ঠিকভাবে সেরে সকালে এক ঘণ্টা এবং রাতে এক ঘণ্টা করে ইউটিউব দেখতে পারবে। তাতেই রাজি হয় রুশো।
মোহাম্মদ আলী বলেন, তার বয়স যখন ১১ বছর, তখন সে ক্যালকুলাস এবং জ্যামিতিক বিভিন্ন সমাধান রপ্ত করে ফেলে। ১২ বছর বয়সে কলেজ পর্যায়ের গণিত ও ফিজিক্স অনায়াসে করতে পারতো রুশো। এই জানাশোনার বিষয়টা আরও বেড়ে যায় করোনাভাইরাস সংক্রমণের সময় স্কুল বন্ধ হলে। তখন অনেক বেশি সময় রুশো বিজ্ঞানের এসব বিষয়ে জানতে ব্যয় করতে থাকে। ২০২০ সালের মার্চ থেকে সে অনলাইনে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত, ক্যালকুলাস, ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি বিষয়ে অসংখ্য অনলাইন কোর্সে অংশ নেয়। তার মধ্যেই রুশো জানতে পারে অনলাইনে ‘সেন্ট জোসেফ ন্যাশনাল পাই অলিম্পিয়াড’ সম্পর্কে, অংশ নেয় এবং হয়ে যায় চ্যাম্পিয়ন। তার মনোবল বেড়ে যায়। পর্যায়ক্রমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অনলাইন কোর্সে অংশ নিতে থাকে। এখন পর্যন্ত রুশো ৫০টিরও বেশি অনলাইন কোর্স সম্পন্ন করেছে বিশ্বের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব এডিনবার্গ অন্যতম। রুশোর মা চিকিৎসক রুমা আক্তার বলেন, তাকে অনেক ছোটবেলা থেকেই দেখেছি পড়ালেখার প্রতি ভীষণ ঝোঁক। আমার জন্য যখন কোনো বই কিনেছি, তখন তার জন্যও আমি কিনেছি। আসলে সন্তানকে বুঝতে হবে। সে কী চায় সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা অনেক সময় তার চাওয়ার থেকে আমাদের চাওয়াকে বেশি গুরুত্ব দেই, যা তাদের বিকাশকে বাধা দেয়। কিশোর মাহির আলি রুশো তার অর্জনে গর্বিত। তার কাছে মনে হয়, সায়েন্স আসলে ভয়েস অফ গড, যার মধ্যে ডমিনেন্ট করে ফিজিক্স। আর এর মূলে রয়েছে ম্যাথ। যা জানার কোনো বিকল্প নেই। রুশো জানায়, সে আসলে কোনো কিছু কীভাবে, কেমন করে হচ্ছে সেটা জানতে চেয়েছে। আর এর জন্য অবশ্য পড়োশোনা এবং জ্ঞান অর্জন করতে হবে। কেউ কাউকে শেখাতে পারে না। নিজে থেকে শিখতে হয়। আমাদের সবসময় অ্যাকাডেমিক বইয়ের বাইরে পড়ার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। কেননা আমরা নিজের বই তো পড়বোই, তার বাইরে সেটা কেন হচ্ছে সেটা জানতে অন্য বইও পড়বো। আমরা আসলে যা পড়ি সেটা খুব শর্টকাট। সেখানে গভীরভাবে কোনো কিছু দেখানো হয় না। তাই সেটা জানতে হলে পড়াশোনার বিকল্প নেই।
বিভিন্ন প্রতিযোগিতা ও অর্জন
এই ক্ষুদে জিনিয়াস দেশে এবং দেশের বাইরের অসংখ্য প্রতিযোগিতা ও অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে ওপেন কনটেস্ট অলিম্পিয়াডে রুশোকে প্রতিযোগিতা করতে হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় স্কলারদের সঙ্গে এবং রুশো প্রায় সবগুলোতেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ‘ওয়ার্ল্ড গ্লোবাল চাইল্ড প্রডিজি অ্যাওয়ার্ড কমিটি’ মাহির আলি রুশোর সম্মানসূচক অর্জনগুলোর প্রসংসা করেছেন। কমিটি জানিয়েছে, তারা রুশোকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করবে। সেন্ট জোসেফ ন্যাশনাল পাই অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়ে নটরডেমের শিক্ষার্থীকে হারিয়ে হয়েছেন চ্যাম্পিয়ন। বাংলাদেশ ম্যাথমেটিক্স অলিম্পিয়াড, বাংলাদেশ ফিজিক্স অলিম্পিয়াড, জামাল নাল কেমিস্ট্রি অলিম্পিয়াড চ্যাম্পিয়ন এবং জামাল নাক্রল জ্যোতির্বিদ্যা উৎসব, ন্যাশনাল সাইবার অলিম্পিয়াড, বাংলাদেশ জ্যোতির্বিদ্যা অলিম্পিয়াডসহ অসংখ্য প্রতিযোগিতায় আঞ্চলিকভাবে বিজয়ী হয়েছে রুশো। এছাড়া বাংলাদেশ আইকিউ অলিম্পিয়াডে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে এবং ভারতের সিপিএস অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছে রুশো। বাংলাদেশ বিজ্ঞান সংগঠন থেকে ‘গুগল-আইটি অলিম্পিয়াডে চ্যাম্পিয়ন পদক পেয়েছে। দঐরমংরহহড় ইরড়ষড়মু ঙষুসঢ়রধফ’ বিজয়ীও হয় রুশো। এছাড়াও বিভিন্ন মেধা প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা এবং অর্জন
দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক দঙহষরহব চযুংরপং ঙষুসঢ়রধফ-২০২১’ এ তার দল ওহারঃধঃরড়হধষ জড়ঁহফ বিজয়ী; তার অধিনায়কত্বে ১৫ সদ্যসদ্যের একটি দল আন্তর্জাতিক দচবৎঢ়ষব গধঃয ঈড়সবঃ গবঃ’ প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান দখল করে।
ভারতে জ্যোতির্বিদ্যার সর্বোচ্চ আসর আইওএসএ-২০২১ একক প্রতিযোগিতায় গোল্ড মেডেল অর্জন করে এবং আন্তর্জাতিক আসরে দঝপযড়ড়ষ ঈড়হহবপঃরড়হ গধঃয, ঝপরবহপব অহফ অৎঃরভরপরধষ ওহঃবষষরমবহপব ঈড়হঃবংঃ’ এ স্বর্ণপদক পায়। দঝঃবসপড় রহঃবৎহধঃরড়হধষ চযুংরপং, ঈযবসরংঃৎু, ইরড়ষড়মু’ প্রদত্ত বিষয়ে দইবংঃু অধিৎফ’ পায় এবং সেরা মেধা তালিকায় থাকার গৌরব অর্জন করে।
এই মেধাবি কিশোর দেশভিত্তিক আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা দঙষিঢ়ুধ ঝপরবহপব অহফ ঞবপয ঈড়হঃবংঃ’ এ পরপর দুবার রৌপ্য, একবার স্বর্ণপদক এবং দুবার ব্রোঞ্জ পদক নিয়ে বিজয়ী হয় এবং বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জের জন্য ২০২২ সালের জুনে যুক্তরাজ্য সফরের জন্য আমন্ত্রণপত্রও পায়।
রুশো যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক অলিম্পিয়াড দএবহরঁং ঈবৎবনৎঁস ঙষুসঢ়রধফ’ থেকে আর্ট, জেনারেল নলেজ এবং সাইবারে জিনিয়াস পদক পায়।
এছাড়া সম্প্রতি হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি স্নাতকোত্তর স্টুডেন্ট কর্তৃক চালিত দওহঃবৎহধঃরড়হড়হধষ খবধফবৎংযরঢ় বঃযরপং ধহফ ষরভব ংশরষষ ঙষুসঢ়রধফ’ এ শ্রেষ্ঠ ৫০ জনের মধ্যে স্থান পেয়েছে।
গবেষণা ও প্রকাশনা
রুশো ৫০টিরও বেশি অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স শেষ করেছে এবং এমআইটি, হার্ভার্ড, স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে সনদ লাভ করেছে। রুশো বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, ক্যামব্রিজের আওতায় ম্যানুফ্যাকচার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে মাইক্রোমাস্টার্স কোর্সে অধ্যয়নরত।
একই সঙ্গে সে বিশ্বখ্যাত হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে কেমিস্ট্রিতে মাইক্রোমাস্টার্স কোর্সে সুযোগ করে নিয়েছে। ১৪ বছর বয়সে আইজেএসআর, আইওএসআর, কোয়েস্ট-এ তার অনেক জার্নাল ও গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে।