নিজস্ব প্রতিবেদক : সীমান্তে কিশোরী ফেলানী হত্যার ১১ বছর পূর্ণ হয়েছে আজ। ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীর রামখানা অনন্তপুর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে নির্মম হত্যার শিকার হন কিশোরী ফেলানী। দীর্ঘ সাড়ে চার ঘণ্টা কাঁটাতারে ঝুলে ছিল ফেলানীর মৃতদেহ।
নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলোনিটারী এলাকার কিশোরী ফেলানীকে এমন নির্মমভাবে হত্যার ঘটনাটি নিয়ে তোলপাড় হয় বিশ্ব। গণমাধ্যমসহ বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তীব্র সমালোচনা ও আন্তর্জাতিক মহলের চাপে বর্বোরোচিত ওই হত্যাকা-ে অভিযুক্তদের বিচারের উদ্যোগ নেয় ভারত। পরে বিএসএফের বিশেষ কোর্টে দুই দফায় বিচারিক রায়ে খালাস দেয়া হয় অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে। এ রায় প্রত্যাখ্যান করে ভারতীয় মানবাধিকার সংগঠন মাসুমের সহযোগিতায় ভারতীয় সুপ্রিমকোর্টে রিট করে ফেলানীর পরিবার।
রায় প্রত্যাখ্যান করে ভারতীয় মানবাধিকার সংগঠন ‘মাসুম’ এর সহযোগিতায় ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টে রিট আবেদন করে ফেলানীর পরিবার। সেই থেকে এখন পর্যন্ত ন্যায়বিচারের আশায় বুক বেঁধে আছে ফেলানীর পরিবার।
২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ফুলবাড়ী উপজেলার উত্তর অনন্তপুর সীমান্তে ৯৪৭নং আন্তর্জাতিক ৩নং সাব-পিলারের পাশ দিয়ে মই বেয়ে কাঁটাতার ডিঙ্গিয়ে বাবার সঙ্গে দেশে ফিরছিল ফেলানী। এ সময় টহলরত চৌধুরীহাট ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষ তাকে গুলি করেন। এতে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর তার লাশ কাঁটাতারে ঝুলতে থাকে; যা বিশ্ববিবেককে নাড়া দেয়।
২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট কোচবিহার জেলার বিএসএফের ১৮১ সদর দপ্তরে স্থাপিত জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্টে ফেলানী হত্যার বিচারকার্য শুরু হয়। ৫ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে নির্দোষ ঘোষণা করে। রায় প্রত্যাখ্যান করে ১১ সেপ্টেম্বর ফেলানীর বাবা ভারতীয় হাইকমিশনের মাধ্যমে সে দেশের সরকারকে ন্যায়বিচারের আশায় পত্র দেন। আবারও ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পুনঃবিচার কার্যক্রম শুরু হলেও বিভিন্ন কারণে তা একাধিকবার স্থগিত হয়।
এছাড়াও ২০১৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ফেলানী হত্যা ঘটনায় স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ বিচার এবং ক্ষতিপূরণ আদায়ে ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম প্রথম ও বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপ্রধান সালমা আলী দ্বিতীয় বাদী হয়ে আইন ও বিচারবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের (ইউনিয়ন অব ইন্ডিয়া) সচিব এবং বিএসএফের মহাপরিচালককে বিবাদী করে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট নয়াদিল্লিতে ভারতীয় সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩২ অনুযায়ী একটি ফৌজদারি মামলা করেন। তারা ২০১৫ সালের ২১ জুলাই ফেলানীর বাবার জন্য অন্তর্র্বতীকালীন ক্ষতিপূরণ চেয়ে আরও একটি আবেদন করেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপ্রধান মানবাধিকার কর্মী সালমা আলী মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি জানান, এখন পর্যন্ত পরিবারের ক্ষতিপূরণসহ স্বচ্ছ বিচার না পাওয়ায় ওই মামলার একজন বাদী হিসেবে আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। আশা করছি, আমরা কাঙ্ক্ষিত বিচার পাব।
এছাড়াও ২০১৫ সালে আইন ও সালিশ কেন্দ্র এবং ভারতের মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ আরও একটি ক্ষতিপূরণ মামলা করে। ৩১ আগস্ট ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন সে দেশের সরকারকে ফেলানীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে পাঁচ লাখ রুপি প্রদানের অনুরোধ করে। এর জবাবে সেদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলামকে দায়ী করে বক্তব্য দেয়।
এরপর ২০১৬ এবং ১৭ সালে কয়েক দফা শুনানি পিছিয়ে যায়। পরে ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারি শুনানির দিন ধার্য হলেও শুনানি হয়নি এখনো।
ফেলানী হত্যা মামলার বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সদস্য মানবাধিকার কর্মী, কুড়িগ্রাম জেলা জজকোর্ট পাবলিক প্রসিকিউটর আব্রাহাম লিংকন বলেন, করোনায় ভার্চুয়ালি চলছে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের কার্যক্রম। ফলে ফেলানী হত্যা মামলার শুনানি হচ্ছে না। আমরা চাই ভার্চুয়ালি শুনানি হলেও দুই দেশের সম্পর্ক আরও জোরদার হবে। মামলাটির দ্রুত নিষ্পত্তি হলে তা উভয় রাষ্ট্রের জন্য মঙ্গলজনক।
হত্যাকা-ের ১১ বছর পূর্ণ হলেও এখনো বিচার না পেয়ে ক্ষুব্ধ ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম ও মা জাহানারা বেগম। তারপরেও আশা ছাড়েননি তারা। মেয়েকে হত্যার ন্যায়বিচার না পাওয়া পর্যন্ত লড়ে যাওয়ার কথা জানান তারা।
ফেলানীর বাবা নূরুল ইসলাম বলেন, দুইবার ভারতে গিয়ে সাক্ষ্য দিয়েছি। বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের নৃশংসতার বর্ণনা দিয়েছি। তারপরও ন্যায়বিচার পাইনি। ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য ভারতের সুপ্রিম কোর্টে রিট আবেদন দাখিল করেছি। তবে শুনানি হচ্ছে না। তারপরও আশা ছাড়িনি। প্রতীক্ষায় আছি। আর যতদিন ন্যায়বিচার পাবো না, ততদিন বিচার চাইতে থাকবো।
ফেলানীর মা জাহানারা বেগম হতাশা প্রকাশ করে বলেন, মেয়ে হত্যার বিচার চেয়ে মানবাধিকার সংস্থাসহ বহুজনের কাছে গিয়েছি। কিন্তু ১১ বছরেও কাঙ্ক্ষিত বিচার পেলাম না।
১১ বছরেও ফেলানী হত্যার বিচার না পেয়ে ক্ষুব্ধ পরিবার
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ























