প্রত্যাশা ডেস্ক : বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক পুরুষ জন আলফ্রেড টিনিসউড মারা গেছেন। যুক্তরাজ্যের সাউথপোর্টের এক সেবাযত্ন কেন্দ্রে (কেয়ার হোম) গত সোমবার তাঁর মৃত্যু হয়। সেখানেই তিনি বসবাস করতেন। মৃত্যুকালে এই ব্যক্তির বয়স হয়েছিল ১১২ বছর। তাঁর পরিবারের সদস্যরা এ তথ্য নিশ্চিত করেন। চলতি বছরের এপ্রিলে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক পুরুষের খেতাব পান জন আলফ্রেড। এ বছরের এপ্রিলে ১১৪ বছর বয়সী হুয়ান ভিসেন্ট পি রেজ মোরার মৃত্যু হলে টিনিসউড বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক পুরুষের খাতায় নাম লেখান। তাঁর পরিবার জানায়, জীবনের শেষদিন সংগীত আর ভালোবাসায় মুখর ছিল তাঁর চারপাশ। ১৯১২ সালের ২৬ আগস্টে যুক্তরাজ্যের লিভারপুলে অ্যাডা ও জন বার্নার্ড টিনিসউডের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন জন টিনিসউড। একই বছর টাইটানিক জাহাজ আটলান্টিক মহাসাগরে ডুবে গিয়েছিল। ২০২০ সালে জন যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বয়স্ক পুরুষের খেতাব পান। জন আলফ্রেড সারা জীবন ছিলেন লিভারপুল ফুটবল দলের সমর্থক। ১৯০১ ও ১৯০৬ ছাড়া ক্লাবটির জেতা সব কটি ট্রফির ম্যাচ উপভোগ করেছেন তিনি। চলতি বছরের এপ্রিলে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস জন আলফ্রেডকে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক পুরুষের স্বীকৃতি দেয়।
এক বিবৃতিতে জনের পরিবার বলেছে, তাঁর অনেক সূক্ষ্ম গুণ ছিল। তিনি ছিলেন একাধারে বুদ্ধিমান, বিচক্ষণ, সাহসী, যেকোনো সংকটে শান্ত, গণিতে মেধাবী ও একজন সদালাপী। এই গুণগুলো তাঁকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় রয়্যাল আর্মি পেস কোরে সামরিক চাকরির সময় সুবিধা দিয়েছে। সেখানে তিনি হিসাবরক্ষণ ও নিরীক্ষণ, আটকে পড়া সেনাদের শনাক্ত করা এবং খাদ্য সরবরাহের ব্যবস্থা করার মতো কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। জনের সঙ্গে তাঁর স্ত্রী ব্লডওয়েনের পরিচয় হয় লিভারপুলে একটি নাচের অনুষ্ঠানে। ১৯৪২ সালে তাঁদের বিয়ে হয়। তাঁদের কন্যা সুজানের জন্ম ১৯৪৩ সালে। এই দম্পতি ৪৪ বছর দাম্পত্য জীবন উপভোগ করেন। জনের স্ত্রী মারা যান ১৯৮৬ সালে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জন আলফ্রেড রয়্যাল মেইলে কাজ করেন। পরে তিনি জ্বালানি তেল কোম্পানি শেল ও বিপিতে হিসাবরক্ষকের কাজ করেন এবং ১৯৭২ সালে অবসরে যান। জনের পরিবার বলেছে, অবসর নেওয়ার পরও তিনি বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী কাজে ছিলেন সক্রিয়। জীবদ্দশায় জন একবার বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তরুণ বয়সে তিনি অনেক বেশি সক্রিয় ছিলেন। তিনি অনেক হাঁটাহাঁটি করতেন। তবে এত লম্বা সময় কীভাবে বেঁচে আছেন, সে বিষয়ে তাঁর কোনো ধারণা নেই। তিনি অন্যদের থেকে আলাদা নন। জন বলেন, ‘আপনি হয়তো লম্বা সময় অথবা খুব কম সময় বাঁচবেন। আর এ ব্যাপারে আপনার কিছুই করার নেই।’
শততম জন্মদিনের আগে জন আলফ্রেড সাউথপোর্টের হলিস রেস্ট কেয়ার হোমে চলে আসেন। সেখানেই কাটান জীবনের বাকি সময়। ২০১২ সালে ১০০ বছরে পা রাখার পর থেকে প্রতিবছর জন্মদিনে ব্রিটেনের প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ তাঁকে শুভেচ্ছা কার্ড পাঠাতেন। বয়সে জনের চেয়ে ১৪ বছরের ছোট ছিলেন রানি এলিজাবেথ। বর্তমান রাজা তৃতীয় চালর্সও কার্ড পাঠানোর এ ধারা জারি রেখেছিলেন। বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক মানুষ ছিলেন জাপানের জিরোইমন কিমুরা। তিনি ১১৬ বছর ৫৪ দিন বেঁচে ছিলেন। ২০১৩ সালে তাঁর মৃত্যু হয়। বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক নারী ও মানুষ জাপানের ১১৬ বছর বয়সী তোমিকো ইতোকা। ১১২ বছর বয়সে মারা গেলেন বিশ্বের প্রবীণতম ব্যক্তি জন আলফ্রেড টিনিসউড। গত সোমবার (২৫ নভেম্বর) যুক্তরাজ্যের সাউথপোর্টে একটি বৃদ্ধাশ্রমে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। পরিবার জানিয়েছে, তার জীবনের শেষ দিনটি ছিল সংগীত এবং ভালোবাসায় পরিপূর্ণ। ১৯১২ সালের ২৬ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন টিনিসউড। ২০২০ সালে যুক্তরাজ্যের প্রবীণতম ব্যক্তি এবং ২০২৪ সালে বিশ্বের প্রবীণতম ব্যক্তি হিসেবে স্বীকৃতি পান তিনি। ২০২৪ সালের এপ্রিলে হুয়ান ভিসেন্টে পেরেজের মৃত্যু হলে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের কাছ থেকে বিশ্বের প্রবীণতম ব্যক্তির স্বীকৃতি অর্জন করেন টিনিসউড। টিনিসউডের পরিবার জানিয়েছে, তিনি ছিলেন বুদ্ধিমান, সাহসী এবং চমৎকার এক ব্যক্তিত্ব। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় রয়্যাল আর্মি পে কর্পসে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে রয়্যাল মেইল এবং পরে শেল ও বিপি-তে হিসাবরক্ষক হিসেবে কাজ করেন টিনিসউড। অবসরের পর ব্লান্ডেলস্যান্ডস ইউনাইটেড রিফর্ম চার্চে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করতেন এবং মাঝে মাঝে ধর্মীয় বক্তৃতাও দিতেন। দীর্ঘায়ুর রহস্য সম্পর্কে তিনি বলতেন, আপনি হয় দীর্ঘজীবী হবেন বা স্বল্পজীবী, এটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। টিনিসউড আজীবন লিভারপুল ফুটবল ক্লাবের ভক্ত ছিলেন। ক্লাবের প্রায় সব সাফল্যের সাক্ষী ছিলেন তিনি। স্ত্রী ব্লডউইনের সঙ্গে ১৯৪২ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন টিনিসউড। একমাত্র মেয়ে সুসান এবং চার নাতি-নাতনি ও তিন প্রপৌত্র রেখে গেছেন তিনি। টিনিসউডের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে ‘এজ ইউকে’ অথবা কোনো দাতব্য সংস্থায় দান কারর আহ্বান জানানো হয়েছে। পুরুষদের মধ্যে এযাবৎকালে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘায়ুর রেকর্ডধারী ছিলেন জাপানের জিরোমন কিমুরা। ২০১৩ সালে ১১৬ বছর বয়সে মারা যান তিনি। বর্তমানে বিশ্বের প্রবীণতম নারী ও প্রবীণতম মানুষ জাপানের তমিকো ইতোওকা। তার বয়সও ১১৬ বছর। সূত্র: বিবিসি
১১২ বছর বয়সে মারা গেলেন বিশ্বের প্রবীণতম ব্যক্তি
জনপ্রিয় সংবাদ