নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকায় গতকাল শনিসবার সকালে বৃষ্টিপাত হয়েছে। দুপুরেও বৃষ্টি হয়। এতেই ঢাকায় ১১১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। বিকেলে আবহাওয়াবিদ ড. মো. আবুল কালাম মল্লিক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘ঢাকায় আজ অতি ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। সকাল ৬টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত সময়ে ঢাকায় ১১১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আজকে আরও বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পশ্চিমা লঘুচাপের সঙ্গে পূবালী বাতাসের মিশ্রণের ফলে বজ্রমেঘ তৈরি হয়েছে এবং এই বজ্রমেঘ থেকেই বৃষ্টিপাত হয়েছে।’
এদিকে সকাল ৯টা পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায়; রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের কিছু কিছু এবং খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে সারাদেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে।
লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশ এলাকায় অবস্থান করছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ইয়াঙ্গুন উপকূল পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছে এবং তা আরও অগ্রসর হওয়ার জন্য আবহাওয়াগত পরিস্থিতি অনুকূলে রয়েছে। আগামী তিন দিনে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু টেকনাফ উপকূল পর্যন্ত অগ্রসর হতে পারে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। তারা আরও বলছে, রংপুর, দিনাজপুর, নীলফামারী ও চাঁদপুর জেলাসহ ঢাকা, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এই বৃষ্টিপাতের কারণে তাপপ্রবাহ কিছু এলাকা বয়ে যাওয়া বন্ধ হতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
জলাবদ্ধতায় জনভোগান্তি : বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা। সড়কপথ দেখলে মনে হয় এ যেন নৌপথ। বৃষ্টি থেমে যাওয়ার তিন থেকে চার ঘণ্টা পরেও জলাবদ্ধতা থাকে অনেক এলাকায়। এটি রাজধানী ঢাকার নিয়মিত চিত্র। বারবার আশ্বাসের কথা শোনা গেলেও এই ভোগান্তি থেকে নিষ্কৃতি মিলছে না নগরবাসীর। তারা এখন এটাকে অনেকটা নিয়তি হিসেবেই মেনে নিচ্ছেন।
শনিবার সকালে প্রথম দফায় বৃষ্টি হয় রাজধানীতে। দুপুর ২টার দিকে শুরু হয় আরেক দফা বৃষ্টি। এই বৃষ্টিতে মিরপুরসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে।
মিরপুর-১, মাজার রোড, লালকুটি, টোলারবাগ, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, মিরপুর-২, মোল্লাপাড়া, কালসি, তালতলা, মিরপুর ১০, ১১, ১২ ও ১৩ নম্বর এলাকা, রোকেয়া সরনিসহ আশপাশের প্রায় সব সড়কেই জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। শেওড়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম আক্ষেপ করে বলেন, ‘বৃষ্টির ভোগান্তি মিরপুরের নিয়মিত চিত্র। বৃষ্টি হলে ভোগান্তি হবেই। পানি জমবেই। মেয়ররা শুধু আশ্বাস দিতে পারেন, কাজ করতে পারেন না।’ মিরপুরের মতো প্রায় একই অবস্থা সিটি করপোরেশনে নবযুক্ত হওয়া উত্তরখান, দক্ষিণখান এলাকার। এসব এলাকার মূল সড়ক কিছুটা ভালো থাকলেও এলাকার ভেতরের বেশির ভাগ সড়কই কাঁচা ও ভাঙা। ফলে বৃষ্টি হলেই কাঁদা ও পানিতে ভরপুর থাকে এসব এলাকা। সড়ক হয়ে যায় চলাচলের অযোগ্য। উত্তরখান এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম জানান, বৃষ্টি শুরুর প্রায় সঙ্গে সঙ্গে রাস্তা কাঁদায় ভরে যায়। আর আধ ঘণ্টার বৃষ্টি মানেই জলাবদ্ধতা। নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ঢাকায় থাকি না কোথায় থাকি বুঝি না। এটি একটি রাজধানীর চিত্র হতে পারে না।’
টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে মোহাম্মদপুরের নি¤œাঞ্চল হিসেবে পরিচিত নবীনগর এলাকার রাস্তা। কর্দমাক্ত হয়ে পড়েছে পার্শ্ববর্তী চাঁদ উদ্যান, সাত মসজিদ হাউজিং, তুরাগ হাউজিং এলাকার পথঘাট। এসব এলাকার বাসিন্দাদের চলাচল করতে হয়েছে কাঁদাপানি মাড়িয়ে। উত্তর সিটির মতো একই অবস্থা দক্ষিণ সিটিতে। ধানমন্ডি, কলাবাগান, কাঁঠালবাগান এলাকায় বৃষ্টি হলেই পানি জমার চিত্র নিয়মিত। এর ব্যত্যয় ঘটেনি আজকের বৃষ্টিতেও।
সকালে বৃষ্টির পানি দুই ঘণ্টার মতো স্থায়ী হয়েছিল। দুপুরে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় আবারও জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে এলাকাগুলোতে। সড়কে পানি জমার ফলে জন চলাচলও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আশপাশের সড়কে সৃষ্টি হয়েছে যানজট। জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে মগবাজার, নয়াটোলা এবং পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায়। এর আগে চলতি মাসের প্রথম দিন ২১ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড হয়েছিল ঢাকায়। আর সে বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধ হয়েছিল প্রায় পুরো ঢাকা। সে দিন বৃষ্টি পরবর্তী এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস জানিয়েছিলেন, ঢাকাকে জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষায় তারা কাজ করছেন। আগামী দুই বছরের মধ্যে জলাবদ্ধতাকে সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসার আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন মেয়র তাপস।
১১১ মিলিমিটার বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় জলজট
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ